আসাদ চৌধুরী

  • এই বেলা

    তাড়া নেই কোথাও যাওয়ার, অপেক্ষায়ও ব’সে নেই কেউ – বিছানায় রোদের ধমক নির্বিকার পর্দা জানালার। সাদা-কালো ফটো ঝাপসা বড়ো – কালো চুল। বিস্মিত নয়নে শুধু ওড়ে শুভ্র কেশদাম। কাজ নেই, অবসরও নেই বইপত্র নাড়াচাড়া করি, সময়ের ধুলোর আলপনা মুছে রাখি, ফেরে না সময়। মন চায় যেতে যে আড্ডায় হায় নেই শরীরের সায়। চমকে উঠি রিকশায়…

  • আমাকে দিয়েছিলে তুমি অসীম আকাশ

    আমাকে দিয়েছিলে তুমি অসীম আকাশ। আকাশটা পেয়েছিলাম আমি-আমরাই। পিতামহের সেই সৌভাগ্য হয়নি। আর পেয়েছিলাম অনেক অনেকের ত্যাগে আর সাধনায়। পেয়েছিলাম কেননা তুমিই চেয়েছিলে আমাদের ঘাড় থেকে নেমে যাবে দুঃখ অপমানের ভারি ভারি বোঝা দু’চোখ থেকে দুঃস্বপ্নের দিনগুলো রাতগুলো চিরকালের জন্য অদৃশ্য হয়ে যাবে; ক্ষুধা আর অভাব আঁতিপাঁতি করে খুঁজলেও এ দেশে আর পাওয়া যাবে না,…

  • আশঙ্কা

    আসাদ চৌধুরী   হকিন্স সায়েব শেষে নিদান দিলেন ‘আর দেরি নয়, ধ্বংস হবে এ পৃথিবী।’ মানুষের কীর্তি, কৃতী, পুঞ্জীভূত ঘৃণা ও প্রণয় – তাহলে কী থুবি, দিবি? আরো কিছু সঙ্গে নিবি? মধুর সুরের গান, ফুলের বাগান, ওষুধ-বিষুদ আর অনেক স্বাদের মুখ-রোচক আহার … কিন্তু যুক্তিটা কী? ব্যাখ্যা বা বাখান? এ সব বলার আগে নিজেই কেমন…

  • অপারগতা

    আসাদ চৌধুরী   না তুষার ঝড় না মাইনাস ফোর্টি শীতের রাত তো, বুড়োটা কিছুক্ষণ আগেও কাঁপছিল ঠকঠক ক’রে এখন কাঁদছে হুহু ক’রে কোনো লুকোছাপা নেই ছেঁড়া কাঁথাটা আর কত লড়াই করতে পারে?   সূর্য দেখার ভাগ্য কি তার হবে? রোদকে পিঠ দেখিয়ে কড়-কড়ে ঠান্ডা ভাত আর মাছের ঝাল-ঝোল যেনবা থক্-থকে জেলি কয়েকটা কাঁচা লঙ্কা এই…

  • আসমান বইয়া কথা কয় জমিন বইয়া শোনে… মনোমোহন দত্ত

    আসাদ চৌধুরী   তোমার শরীরে মাটি শাদা কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে আকাশ দেখার সাধ কৌতূহলী কিশোরীর মতো কাজে ও অকাজে। সুন্দরবনের কোন দিকে তোমার বসত, তোমার ফেরার পথ বাঘের থাবার কাছাকাছি?   শাসিত্ম কীভাবে মকুব হলো? মাটির গভীরে গিয়ে ফিরে আসা ছোঁয়নি তো মাছি। সমুদ্রে তলিয়ে গিয়ে আকাশে আকাশে ডানা মেলা পুনরায়।   ও ভাই, ভাই…

  • ফাউ অর্থাৎ কনজুমার্স সারপ্লাস

    আসাদ চৌধুরী টিকা-টিপ্পনী-বিহীন জ্বলে-ওঠা আড্ডা-লাইব্রেরি (প্রকাশনা-সন-তারিখের নাম গন্ধ নেই)। তাত্ত্বিক এবং অ্যাকটিভিস্ট সিগারেট ভাগাভাগি করে, বাক্যে গরম হরফ নেই, তাদের আস্তিন যথাস্থানে, হয়নি গোটাতে। আমার নিজস্ব জ্ঞান-চর্চা এই মতো, বাপ-চাচাদের কাছ থেকে পাওয়া, (প্লিজ, আমাকে না দেখাবেন এথেন্স শহর, না হাইকোর্ট)। মনে-মনে আরো একবার হেমন্তের ইয়াব্বড়ো চাঁদটিকে শশি বলে ডেকে উঠলাম। এই নামে নবাগতা এক…

  • তৃণে-ছাওয়া আদিম ঠিকানা

    আসাদ চৌধুরী   খালি হয়। ঠিক খালি হয়। দেখা যায় না, তা’তে কী! কি ওয়েস্ট, জলেশ্বরী, জোড়াসাঁকো আঁকো, যত পারো এঁকে যাও, পেনসিল কী জলরঙে অশ্রম্ন-আর্তনাদে আঁকো নানা ঢঙে কেবল ভরাট করা নয় ঠিকঠাক ছেড়ে দেওয়াই শিল্প কিছু খালি থাক শেষ অব্দি কী ক’রে যে খালি হয় সে কি নিসর্গের সরল সিগন্যালে?   বুকে পুরে…

  • তৃণে-ছাওয়া আদিম ঠিকানা

    আসাদ চৌধুরী খালি হয়। ঠিক খালি হয়। দেখা যায় না, তা’তে কী! কি ওয়েস্ট, জলেশ্বরী, জোড়াসাঁকো আঁকো, যত পারো এঁকে যাও, পেনসিল কী জলরঙে অশ্রু-আর্তনাদে আঁকো নানা ঢঙে কেবল ভরাট করা নয় ঠিকঠাক ছেড়ে দেওয়াই শিল্প কিছু খালি থাক শেষ অব্দি কী ক’রে যে খালি হয় সে কি নিসর্গের সরল সিগন্যালে? বুকে পুরে চৌষট্টি হাজার…

  • অসমাপ্ত গল্প

    আসাদ চৌধুরী শিশুর আঁকা ছবির মতোন নদীর তীরেই বাড়ি মেঘ পড়েছে, বৃষ্টি ও রোদ এসব তো তার আশৈশব প্রিয় যেমন প্রিয় মাছ আর নদী দুধেল গাভি পুঁই লাউয়ের মাচা সেই গাঙ্ ভাঙ্লো বাড়ি সবই নিলো কাড়ি’ এখন এই বুড়ো টোকাই এই শহরের আজব আমদানি। দিন কাটে তার কোথায় কোথায় রাত কাটে তার এখানে ওইখানে ধূর্ত…

  • একটি ছোট্ট ক্লু

    আসাদ চৌধুরী   তিনি আশ্বিনের পর পাতে ইলিশের আয়োজন দেখে খুশি নয়, বরং দু-চার কথা রেখেমেগে শোনাতেন। মানুষের বাড়া বেশি ভুলো মন; তাঁর উপদেশ, মুচকি হেসে, পাওনা টাকা পেতে হলে বারবার চাইতে হবে, চুল পেকে গেলে বান্ধবের ঘাটতি হবে নিজের ছায়ার সাথে শুধু স্মৃতি নিয়ে কত আর আড্ডা দেবে ভ্রাতঃ? শোনাতেন, বলদে হলুদ কেনে, আদা…

  • এইসব জানা কথা

    আসাদ চৌধুরী   পথ অফুরান হতে পারে সৌন্দর্য যেমন ঘরের প্রদীপ হাত ধরে টান দিলে ঘরে ফিরতে হয়, সব পথ ঘরে ফিরে আসে, রোমে আর কটা যায়? অথবা সন্ন্যাসী হলো কে, কে, তবু অনিচ্ছায় থেকে যেতে হয়   সূর্য ফিরে ফিরে আসে, ফিরে ফিরে যায় লাল দাগ দিগন্ত রেখায়, সোনা ও রুপার বেড়ি মানুষের খায়…

  • দশটি প্রদীপ জ্বালো

    আসাদ চৌধুরী   কোলে-কাঁখে কখনো দেখিনি চার চরণের ব্যবহারও নেই, উল্লসিত মাতৃকুল চোখ ঠেরে বলেননি ‘ও রে ভাঁদর ফিরে চা।’ শুরু থেকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছোটা দিগন্তের দিকে।   আগে-পিছে নার্সিসাস হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে। কোরাসের দলে নেই, শুধু মেঘ একাই বলেছে দগ্ধ দেহে প্রতিধ্বনি গুনগুন করে, ‘যাব, যাব’।   লাঠি ফেলে, ঘৃত ঢেলে, সোনার মেয়েরা দশটি…