তারিক সুজাত

  • ভুবনডাঙায়

    (প্রিয় অগ্রজ আবুল হাসনাত স্মরণে) এখনই ফিরে যাব? এত যে বৃষ্টির অবিরল ধারা আকাশ কী দুঃখ পেল শুধুই কি আলো জ্বেলে গেছি নিভন্ত কলমে? নরম মাটির টানে কুমোরের হাত চলে যেত কাব্যের শরীরে গনগনে অক্ষরের ছাঁচে গড়েছি প্রতিমা উত্তাল ঊনসত্তর, মিছিলের ঘর্মাক্ত মুখ যুদ্ধদিনের ধূসর দুপুর, কোথায় হারিয়ে গেছে বিসর্জন প্রথম অর্জন কোনো এক জীবনের!…

  • মুর্তজা বশীর – কেবল শিল্পের কাছেই হাত পেতেছেন

    মুর্তজা বশীর – কেবল শিল্পের কাছেই হাত পেতেছেন

    গত ১১ ফেব্রুয়ারি চিত্রচর্চা বইটি নিয়ে শিল্পী মুর্তজা বশীরের মনিপুরিপাড়ার অ্যাপার্টমেন্টে যাই – সে-দিনটির কথা খুব বেশি মনে পড়ছে। একজন বড়মাপের মানুষ, যিনি এ-দেশের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন তরুণ বয়স থেকে। ভাষা-আন্দোলনের ওপর প্রথম যে-কজন ছবি এঁকেছেন, এর নান্দনিক দিক ও চেতনার রংকে ভাষায় রূপ দিয়েছেন, তিনি তো তাঁদেরই একজন। ৮৭ বছরে এসেও সৃজনে নির্মাণে…

  • আমি আমার আঁতুড়ঘরে পথ হারালাম

    সেই রাতেই প্রথম গুলির শব্দে আমার স্বপ্ন পোড়ে পায়রাগুলো পাথর প্রহর পাড়ি দিচ্ছে ভোরের আশায় রক্তধারায় হারায় আমার জন্মতিথি এখনও ভোর হয়নি, হয়নি সকাল খোকা তুই উঠলি না রে? মুয়াজ্জিনের আজানধ্বনি গড়িয়ে পড়ে রক্তরাগে শূন্যঘরে ফ্যানের ব্লেডে কাটছে বাতাস দীর্ঘশ্বাসে সেই সিঁড়িটিই বক্ষজুড়ে আমার স্বদেশ সেই সিঁড়িটিই ছুঁয়েছিলো অসীম আকাশ সেই সিঁড়িটিই, এই সিঁড়িটিই ……

  • পা বাড়াই প্রাণের পথে

    তারিক সুজাত   ১. ঘুমিয়ে ছিলো প্রখর রোদে একলা একটি কূপ তার গভীরের গভীর থেকে তুলে আনলে তুমি জলের ঝলকানি!   ২. আমার শহর শূন্য ব্যথাদীর্ণ বৃক্ষ সারি সারি জানায় বিদায় পা খি আ মা র মেঘে মেঘে দেবে পাড়ি   আমি ধূলিকণা স্মৃতির ডানায় ভেসে শূন্য খাঁচায় এ কা এ কা উ ড়ি  …

  • সময়ের আয়নায় ১৭-কে আমি ৭১ দেখি

    তারিক সুজাত   রাষ্ট্র যখন প্রতিদ্বন্দ্বী কী আর করা! তসবির দানার বদলে যারা আমার পূর্বপুরুষের খুলি দিয়ে জপমালা গেঁথেছিলো তাদের দাড়ি আর আলখালস্নায় আকাশ কালো করে এ-বৈশাখে ফের ঝড় ওঠে! রুগ্ণ সংবিধানটিকে যেদিন ধর্মের পোশাক পরানো হলো সেই মুহূর্তেই নগ্ন হলো মাতৃ-প্রতিভূ শহিদমিনার, ’৫২-র উৎসভূমি থেকে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে ফিরে আসে প্রতিবাদী বর্ণমালা!   সময়ের…

  • প্রহরগুলো প্রহরে নেই

    তারিক সুজাত ১. অপেক্ষায় ছিল সকাল না চাইতেই দুপুর এসে গেল বিকেলকে বলে রাখি ইশারায় তুমি দেরি করে এসো… বহুদিন পর দুপুরটাকে বেঁধেছি ভোরের স্নিগ্ধতায়! ২. রোদ, তুমি কতটা পুড়েছো বোঝেনি বিহ্বল সকাল! কাল নিরবধি – দুপুর গড়িয়ে গেল, সন্ধ্যা আসন্ন… অথচ সকাল শূন্যতার আঙুল ছুঁয়ে এখনো প্রতীক্ষায়; দুপুর দুপুর তুমি কি পথ হারিয়েছো?

  • ঋণ : সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড

    তারিক সুজাত   তখন তোমার শরণার্থী দিন শিকড়বিহীন এক ভাসমান জীবন ভিটেমাটি ছাড়া অসহায় নারী-শিশু-বৃদ্ধ অবোধ গবাদিপশু অগণন মুখের ভিড়ে দুইটি দরদি প্রাণ এ্যালেন ও সুনীল কবিতার অঞ্জলি নিয়ে শোকার্ত দাঁড়িয়ে আছে… প্রবহমান সময় থেকে ছুটি নিয়ে যশোর রোড কি থেমে আছে ভয়ার্ত সেপ্টেম্বরে?   অতঃপর একদিন নয় মাস যেন নয়টি জীবন শেষে বিপন্ন স্বদেশ…

  • শোকগাথা

    তারিক সুজাত   এক ঘুম ও জাগরণের মাঝে দূরত্ব কতোটুকু? কেউ বলবে এক চুলও না, আমি জানি মহাদেশ! – আমরা কি জেগে আছি?   দুই পতাকায় আচ্ছাদিত মুখ, অজস্র কণ্ঠে একই গান তবু কেন আত্মায় মর্মরিত সুরে তোমাকে পাই না দেশ! তোমার শিয়রে এই পোড়া দেহখানি রাখি।   এইমাত্র আগুনে পুড়েছে যে সে তো তোমারই…