মাহমুদ কামাল

  • আয়না

    কেন ফিরিয়ে দিচ্ছো আমাকে ক্রূর বর্তমান এখন সকালবেলা তুমি দেখতে না পেলেও এখনো সবুজ দেখো আমার পেছনে এখনো বাতাস আমাকে দোলা দিয়ে যায় চাঁদনী রাতের মতো মুখরিত আমার শরীর তবু কেন ফিরিয়ে দিচ্ছো আমাকে শনপাপড়ির মতো চুল বলে? খরায় চৌচির হওয়া জমির মতো এই মুখ আমার তো নয় আমি তো সময়কে বাঁধতে চেয়েছি নদীর স্রোতের…

  • সময়ের শরিকানা

    সময়ের শরিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত আছে তবুও সবার দিনের আলোর মতো বয়ে যায় সময়ের স্রোত সময়ের জাতপাত নেই যার যার করে নিতে হয় সময়ের আলো আছে শব্দ নেই, ব্যাকুলতা নেই কেউ বা সৃজনশক্তিতে সময়কে ধরে রাখে কারো হাত ফসকে যায় সমূহ সংবেদ মুহূর্ত লুকিয়ে থাকে শরীরে শরীরে অশরীরী মুহূর্তমা ডেকে আনে রাত সময়ের শরিকানা…

  • উড়াল-আড়াল

    মাহমুদ কামাল পর্বে পর্বে ভাগ করা লৌকিক জীবন কোন পর্বে আছি তবে নিসর্গ-জমিনে! প্রতিটি পর্বেই ছিল অবিশুদ্ধ আলো জিজ্ঞাসাসমূহ থেকে মেলেনি উত্তর দেখা-না দেখার মাঝে ছিল প্রতারণা জানা ও অজানা তাই বড় ব্যবধান। প্রস্তুতিপর্ব শেষ অনেক আগেই আত্মসমর্পণ ছিল দুপুরে-বিকেলে এখন যে পর্বে আছি নামটি দিলাম উড়াল-আড়াল পর্বে পর্বে ভাগ করা এই নিসর্গ জীবনে শুধু…

  • বঙ্গবন্ধু এই সময়ে

    সমুদ্রকে কি খণ্ড করা যায়? পর্বত কিংবা পাহাড়! এবং আপনাকে – ? আপনি খণ্ডিত নন, সকলের সর্বজনীন … আপনার অবিচল বিদ্যমানতা আমাদের চেতনায় এবং শোণিতে আপনি কখনো শৃঙ্খলিত নন কিন্তু শৃঙ্খলিত … বাণিজ্যপ্রভুরা আপনাকে গ্রাস করতে শিকল পরাতে চায়। তারাই খণ্ডিত করে আমাদের পরম পিতাকে। তিনি তো তিনি আর কেউ নন আমরা চাই শৃঙ্খলমুক্ত বঙ্গবন্ধু…

  • অমিয় বৃক্ষ অধরাই থেকে গেল

    মাহমুদ কামাল হেঁটে যেতে যেতে যতটা পেয়েছি, আলো অন্ধকারেই চাদরের মধুরিমা যেটুকু সকাল সজীবতা এনে দিতো সেটুকুই ছিল প্রাপ্তির জিজ্ঞাসা একজীবনের আয়ুরেখা গতিহীন নদীপথগুলো ছোট হতে হতে মৃত দেখা না দেখার মাঝখানে যত বাধা অমিয় বৃক্ষ অধরাই থেকে গেল ছন্দই ছিল একান্ত অনুভবে অপছন্দের অতিরেক ঢেউগুলো ভেঙে দেয় বৃতি নিয়ে যায় দূর দেশে… কেউ কি…

  • সময়ের কাছে নতজানু যত মেধা

    সময়ের কাছে নতজানু হয় মেধা আলোকের মাঝে তীব্র অন্ধকার মেঘ নয় তবে মেঘের উপমা যত তত ঢেলে দেয় শুভ্র চাদরে কালি উজানের সাথে দূরপালস্নার ঢেউ সংক্ষুব্ধ শরীরের কোষগুলো অনতিক্রান্ত বৃত্তের ঘুরপাকে মেধা ও মনন পাশ ফিরে শুয়ে থাকে সময়ের কাছে নতজানু যত মেধা পরিপূরকের বিপরীতে হয় নীল একজীবনের হালখাতা খুলে দেখে দ্বৈরথে শুধু চিৎকার-চেঁচামেচি।

  • প্রতীকের সেই ছবি

    মাহমুদ কামাল   দূরের জানালা থেকে প্রতীকের মতো একটি সুতীক্ষন তীর ছুটে আসে … বুকের ভেতরে এই চিত্রকল্প-নদী বয়ে চলে তিরিশ বছর। আজ এই কার্তিকের আহত বিকেলে প্রতীকটি ছায়া হয়ে শরীরে লুকায়। কাছের জানালা থেকে সৌন্দর্যের নতুন উপমা যতই দৃষ্টান্ত হোক দৃশ্যের ভেতরে বাইরে দূরের জানালা থেকে প্রতীকের সেই ছায়াছবি প্রখর রোদের মতো বিকেলেও নিত্যসঙ্গী…

  • ছাই আর ধুলো

    মাহমুদ কামাল   যেখানেই ছাই আর ধুলো সেখানেই নির্মাণগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাকে যদি ভেঙে দিতে কেউ হাতুড়ির আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করে প্রতিবাদ তখন কলম। নির্মিতি হবেই বলে সে কারো শুনবে না কথা। ছাই আর ধুলো শুদ্ধ সত্যগুলো দেখো না চেষ্টা করে সরাতে পারো কি না!

  • ছন্দ

    মাহমুদ কামাল   ছন্দ আমাকে দেখিয়েছে আলো-পথ পথের মধ্যে ছিল না পাথরকুচি খোলা দরোজায় ছিল না নিষেধ রেখা একজীবনেই জেগে ওঠে স্বকীয়তা।   ছন্দ আমাকে নিয়মের মাঝে রেখে জানিয়ে দিয়েছে এভাবেই শুচি রতি ছোট এ-জীবনে কেন যে হুলস্থূল! অনতিক্রান্ত বৃত্তের মাঝে থেকে।   ছন্দ আমাকে ঢেউ হয়ে কাছে ডাকে মিথুন মুদ্রায় চলমান ছবিগুলো রক্তে রক্তে…

  • পারম্পর্যহীন পথচলা

    মাহমুদ কামাল জীবনের তীব্র স্রোত উপেক্ষা করে পড়ন্ত বেলায় চলতে চলতে তার মনে হলো এ তো ভুল পথ এটা কোনো স্বপ্ন নয় পথহারা পথিকের নিছক গল্প নয় পারম্পর্যহীন পথের বিভ্রমে হারিয়ে গেছে তার সৃজনশীলতা! ‘পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ’ এ-কথা বলার আর কেউ নেই গলিপথ, মেঠোপথ, মরু ও গিরিপথ, আর রাজপথের সৃজনে অবশেষে জেনে গেল…

  • সাদাই তো ছিল

    মাহমুদ কামাল   সাদাই তো ছিল রঙের প্রলেপ দিয়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধির যে তুলির আঁচড়ে প্রস্ফুটিত হলো প্রকৃতপক্ষে তা কালিমা লেপন। এরকম চিত্রগুলো বিচিত্র হয়ে হেসে ওঠে যেন ক্রূর হাসি… সাদাই তো ভালো ছিল ভুল ব্যবহারে রঙেরও অর্থ বদলে যায় লাল-নীল-সাদা-কালো বদলে যেতে যেতে অবশেষে পড়ে থাকে ‘ছেঁড়া টুকরো মেঘ…’

  • আত্মদর্শন

    মাহমুদ কামাল   গাছের শেকড়কে আমি যতটুকু জানি আত্মপরিচয় তারও চেয়ে কম অশ্বত্থ বৃক্ষটি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে নেই তিন পুরুষ আমার বংশলতিকা তাই শেকড়ের চেয়ে বেশি নয়। পিতা ও প্রপিতামহ এই পরম্পরা এর চেয়ে আর কোনও তথ্যসূত্র নেই। শেকড়ের আছে আমার তো নেই পিতা কিংবা প্রপিতাকে যতটুকু জানি ততটুকু নিজেকে জানি না। কেউ কি জানে?