রাতুল দেববর্মণ
-
নরকে মোমের আলো
রাতুল দেববর্মণ এখানে কুরাত্রি ধড়ফড় করে নিবিয়ে দিয়েছে কুমারী চন্দ্রোদয় বুকের বেবাক ঢেউ উথালপাতাল – নীরবে দেখেছে সব অরণ্যচর তদন্তে এসেছে যারা – তারা শোনে পাতার ক্রন্দনধ্বনি কিছু পোকা ওড়াউড়ি করে পাতার ফাঁক দিয়ে দেখছে বেওয়ারিশ রোদ নষ্টনাকফুল ছুঁয়ে গন্ধশুঁক গোয়েন্দা কুকুর ফ্যালফ্যাল তাকায় নেশাগ্রস্ত মনিবের দিকে মরা রক্তের ভাষা বদল হতে…
-
জীবন একটাই
রাতুল দেববর্মণ যখন বৈধ বিশ্বাসের ডানা ভেঙে পড়ে শরীরের পলেস্তারা সব খসে যায় তখুনি বুকের ভিতরে এসে নীলকণ্ঠ পাখি ডানা ঝাপটায় চেপে ধরে সময়ের নগ্ন অসুখ বুকে লেগে থাকে ভোরের শিশির যেন ডাকে মৌনী চিতা সমন জারি করে ‘কাছে আয়’ সবাই কি আর জানে জীবনের সব মানে – শুধু তাকে কেউ নিয়ে যায় নীরব…
-
আগুনপ্রেমিক
রাতুল দেববর্মণ প্রাত্যহিকতার থেকে দূরে সরে এসে ভোর হলো আজ কীর্তনখোলার জলে, জীবনানন্দ যে-লয়ে ধানসিড়ি পার হতেন ভোঁ-শব্দে থেমে গেছে ভৈরোঁ সুর, এখন কুশায়া নেই, জলে ভাসে শুধু তনদ্রাহারা ঢুলুঢুলু পাখি শঙ্কা ফেলে দূরে, কেবিনের জানালা দিয়ে দেখি শূন্য নগরী সূর্যের আলো কাঁপে নীল ঢাকা মেখলায়, দূরে সবুজ ধানের গন্ধ আসে, হাতছানি দেয় হৃদয়ের…
-
তোমাকে বিদায়
রাতুল দেববর্মণ আয়নায় ছায়া ফেলে কখন যে চলে গেল হৃদয়ে আকাশ মুদ্রণ করে ফেলে রেখে দীর্ঘশ্বাস বিদায় বিদায় ধীরে বয়ে চলে চাঁদ বাতাসের ধ্বনি নারী একাকিনী ললাটের বিন্যস্ত চুল অনন্ত স্বপ্নে লুটোপুটি খায় বিদায় বিদায় ফিরে যে চলে যায় তার গান শুনি দূরের হাওয়ায় যেভাবে নদীতরঙ্গের কল্লোল ভাটিয়ালি সুরে বেসে যায় বিদায়…
-
পদ্য-গদ্য
রাতুল দেববর্মণ একটি পালক উড়ে এসে পড়ল পায়ের কাছে পায়ের তলায় হলুদ ঘাসে দগ্ধ পোড়া দাগ কে জ্বাললো কে জ্বেলেছে রাখবে খবর কে পালক কী তার দায় নিয়েছে দাগ সে দেবে মুছে পদ্মের পাতা ওড়ে না কখনো পদ্যের পাতা ওড়ে কীসের জোর দু-চার লাইনের শেকড়হীন দোলে জল ভাঙলেও জল সরে না শব্দ ভাঙলে…
-
মাদলকন্যার ডাক
রাতুল দেববর্মণ আঠারো বছর বয়সেই ঘর থেকে পালিয়ে উত্তরের এক চা-বাগানে ধ্রুপদি হাওয়ায় আশ্রয় নিয়েছিলাম, ষাট-সত্তরের টালমাটাল সময় সমস্ত শরীর জুড়ে আছে তপ্ত অপমান আমি এক পাহাড়ি সন্তান, ঘরের বন্ধন, ভালোবাসাহীন ঘরে রাত জেগে বসে থাকে মা, তবে কী ভালোবেসে ফেলেছিলাম চা-পাতার ঘ্রাণ, দুটি হাতের মুদ্রায় ক্ষুধার বিপুল সংকেত, বাগান বস্তির অদূরেই ব্রিটিশ…
-
জীবন আমার
রাতুল দেববর্মণ রুমাল চুরির খেলার সময় কিশোর বয়স, কীর্তিগাথা নেশায় ভ্রমণ, জল থইথই পাখি ভাসে অতল জলে জলের ভিতর তোমায় ভাঙি জলের ঢলে, আবার ফিরি স্বাধীন হাওয়ায় আবার ফিরি সাইট্যা চালের ভালোবাসায়, বুকের ভেতর আউলা ঝংকার উথাল-পাথাল হেই-হুই ওই নৌকা যায় আমার আবার ফিরে আসা পুকুরপাড়ের বাঁশের ঝোপে টিলার গায়ে; তবু ডাকে এখনো ডাকে…