শামসুল ফয়েজ

  • কন্যাটি আঁচড়ায় চুল

    শামসুল ফয়েজ আমার কন্যাটি আঁচড়ায় লম্বা চুল; তার চুলের গোছায় ঢাকা পড়ে তার দু-কানের দুল। কে যেন আমার কন্যার মাথার ওপরে লাগিয়ে দিয়েছে আমার মায়ের দিঘল কেশ। যা দেখে একসময় স্বপ্না ফুপু বলত ‘কী দারুণ, চমৎকার – বেশ’ কন্যাটির সুশ্রী অবয়বে কে যেন বসিয়ে দিয়েছে হুবহু আমার মায়ের মুখ!! তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে নস্টালজিয়ায় উপচে পড়ে…

  • চিতই পিঠার নৃত্য

    শামসুল ফয়েজ   সাদা চাল গুঁড়া মাটির ডহির ভিতরের ফুটন্ত পানির তাপে জমে তৈরি হলো কবোষ্ণ চিতই পিঠা। মালগুদামের বস্তির উদাম মেয়েটি চিতই পিঠাটি দুই হাতে ধরে মাথার উপরে তুলে দারুণ খুশিতে নাচে। ভরতনাট্যম-কথাকলি-মণিপুরি কোনো ছকে মেয়েটির নাচটি পড়ে না। যেন চাটাই-বিছানো ধান শুকানোর লেপাপোছা রোদ-ছড়ানো উঠানে নাচে উৎফুলস্ন খঞ্জনা। যেন ‘কমলায় নৃত্য করে ঠমকিয়া…

  • রামবাবু রোডের সন্ধ্যামালতি (মঞ্জুশ্রী বিশ্বাসকে)

    শামসুল ফয়েজ   রামবাবু রোডের ভাড়াবাসার বারান্দায় ফুটে থাকত লাজুক সন্ধ্যামালতি সকাল-সন্ধ্যায় বেলপাতা-জবাফুল দিয়ে চলত তার পবিত্র আরতি। সন্ধ্যামালতির কপালের মাঝখানে জ্বলজ্বল করত সিঁদুররঙের টিপ। কোলাহলমুখর শহরে নির্জন বাড়িটা ছিল যেন এক আত্মমগ্ন অভিমানী দ্বীপ। তুলসীতলায় প্রতিটা সন্ধ্যায় জ্বলত সুস্নিগ্ধ প্রদীপ।   ব্রহ্মপুত্রের কিনারে, বুড়াপিরের মাজারে, কালীবাড়ি রোডে, লোকনাথ মন্দিরের আঙিনায় থরে থরে ফুটে থাকা…

  • সময়ের হাতে চাবিকাঠি

    শামসুল ফয়েজ   সময়ের হাতে চাবিকাঠি। কী দেবে সময়? আকাশ না মাটি?   সময় পালটায়, প্রীতি হয়ে যায় স্মৃতি। ঠুনকো অজুহাতে ঘটে সম্পর্কের ইতি। বন্ধু হয়ে যায় সুযোগসন্ধানী আততায়ী। হিংসার ইন্ধনে প্রিয়জন হয়ে পড়ে ড্রাকুলার মতো রক্তপায়ী।   সময়-ই নির্ধারণ করে দেয় স্বজন – দুর্জন। না চাইলেও মানতে বাধ্য সময়ের প্রয়োজন।   যত মনোহর হোক…

  • সজল করুণাধারা

    শামসুল ফয়েজ   হঠাৎ দুপুরে বৃষ্টির নূপুরে নেমে আসে সজল করুণাধারা। হলুদ জন্ডিস, শ্বাসকষ্ট ছেড়ে জেগে ওঠে ঘাসপাড়া।   আয়না হয়ে যায় ভাঙা রাস্তার নয়ানজুলি; আনন্দধ্বনিতে নেচে ওঠে বস্তির কমলাফুলি; সজল সোহাগে নাচতে থাকে অনাবৃত শিশুগুলি; টাটকা রক্তস্রোতে চাঙ্গা হয় হতোদ্যম শতমূলী।

  • ভাঁটবনে বসন্ত উৎসব

    শামসুল ফয়েজ   রাঘবপুরের ভাঁটঝাড়ে বসন্তবাহার মৌমাছি ও প্রজাপতি মেতেছে উৎসবে রেললাইনের দুধারে, ধানক্ষেতের চিকন আলে বাঁশঝাড়ের কিনারে ভাঁটফুল ফুটেছে থরে-বিথরে ভাঁটবনে সারা বাংলায় পথপাশে প্রচারের শুভেচ্ছাবিহীন প্রতিটি বছর এই অঘোষিত বসন্তবরণ মৌমাছি ও প্রজাপতির নাচে তো কমতি নেই। নেপথ্য সংগীতে দূরাগত কুহুতান। বিমুগ্ধ হাওয়াও মাতোয়ারা ছড়ানো সৌরভে না থাকুক বাতিসাজ, গিটারের টুংটাং কী যে…

  • দগ্ধ শিশুর জন্য এলিজি

    শামসুল ফয়েজ আনন্দের যাত্রা ছিল শাপলা ফোটা ভোরে শিশুটি নিশ্চিন্তে সুখী তৃপ্ত মাতৃক্রোড়ে প্রতিরোধ টিকা নিল সাদা হাসপাতালে অগ্নিবোমা ছুড়ে দিলো অচেনা মাতালে মা ও শিশু অবরুদ্ধ চলমান বাসে কড়ি ও মাদুলি ছিটকে পড়ে দূর্বাঘাসে খুশিতে হলো না শিশুটির বাড়ি ফেরা টক শোতে কথা হবে খুব চুলচেরা দগ্ধ শিশুটি নিস্তব্ধ বার্ন ইউনিটে দোষী ব্যক্তি সাজা…

  • বৃষ্টিস্নানে বসুন্ধরা

    শামসুল ফয়েজ   সড়কদ্বীপের ঘাসের দঙ্গল, পথের পাশের তরুবীথি, ছাদবাগানের টগরবেলির পুষ্পকলি; লোহার রেলিং জাপটে-ধরা কুঞ্জলতা হঠাৎ সুখের বৃষ্টিস্নানে আত্মহারা।   লাউয়ের জাংলায় উন্মথিত তানপুরাটায় খুশির দোলে বিপুল সাড়া। ঝর্ণাজলে আনন্দিত ঝুলবারান্দা, দালানকোঠা, ধুলার বহর, ধুঁকতে থাকা গরম শহর, পিপাসার্ত বসুন্ধরা।   জলের ফোঁটায় হয় কুপোকাত কণ্ঠনালি রুদ্ধ করা রুদ্র খরা। মুখ খুলে খায়, হৃদয়…

  • ঝরাপাতার অন্তিমযাত্রা

    শামসুল ফয়েজ   ঝরাপাতার শুকনা শবে ধুলার দলে পরায় কাফন; পথের পাশে গোরস্তানে অচিহ্নিত নীরব দাফন। ক্ষণিক শোকে মৌন থাকে দন্ডায়মান বৃক্ষসারি; হাওয়ার করুণ ভায়োলিনে থমকে দাঁড়ায় পথচারী। আগুনচুলা বিবর্ণ-ম্লান – দীর্ণ কায়ার দুঃখ নেভায়; ঝরাপাতার যাত্রা শুভ অন্তবিহীন কালের খেয়ায়।  

  • উঁকি দিচ্ছে আলোর অ্যান্টেনা

    শামসুল ফয়েজ অনেকদিন তো ছিলাম প্রগাঢ় অন্ধকারের জিম্মি। পাঁজর ফাটিয়ে ফুটছে আলোর কমল পাপড়ি তার অমলিন-নিদাগ-অমল। বুকের চাতালে নাচছে যেন ‘আন’ সিনেমার নৃত্যপরা নিম্মী।   খুলির ভিতরে তিমির কর্দমে উঁকি দিচ্ছে আলোর অ্যান্টেনা। করোটির আঙিনায় ভরা পূর্ণিমায় ফুটছে সুগন্ধি ল্যান্টানা।

  • অদ্ভুত অপেক্ষা

    শামসুল ফয়েজ নিষ্প্রভ সন্ধ্যায় অনাত্মীয় রেস্তোরাঁয় বসে থাকা। এই বসে থাকা কোনোকিছুর অপেক্ষা নয়। চোখ খোলা থাকে উন্মুক্ত দরজার দিকে। চোখ বুঝি চায় কোনো সুস্মিত মুখের হঠাৎ ঝলক। কান বুঝি শুনতে চায় কোনো মধুর গৎ-এর সুধাময় গিটকিরি। চারপাশে অচেনাজনের বহু ব্যবহৃত কথার জাবর কাটা। ডাইনে-বাঁয়ে-সামনে-পিছনে সবাই অচেনা। তবু পরিচিত স্থানে অভ্যাসবশত বসে থাকা। এ যেন বা…