শিহাব সরকার
-
জন্মান্তরের বৃত্তে
শিহাব সরকার নিশ্চিত জানি আমি এখন দিব্যজ্ঞানে আছি কোনো না কোনো জন্মের সত্মরে, এ-ভার সহে না আর, সহে না, সহে না ঢুকে পড়ি জন্মান্তরের বৃত্তে, জন্মে জন্মে বৃত্ত পুরে গেলে পরম শান্তি। বড় কষ্ট, জীবন নষ্ট – লিখেছিল বালক কোনো গতজন্মে অন্য কোনো দেশে শতাব্দী পরে নবজাতকের কান্না, কাঁদে গতজন্মের ছেলে পাহাড়পলিস্নতে না হয় ভিননগরীর…
-
গোপন পাহাড়ের রাস্তায়
শিহাব সরকার হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে ওই পাহাড়ে ওখানে মানুষেরা উঠতে ভুলে গেছে, আমি কিন্তু আজ যাবোই ওখানে চোরাপথে যাবো, যে-রাস্তায় মায়াঝোপ নেই। নিষিদ্ধ পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে জঙ্গলে কেউ কেউ দেখে, অনেকে দেখে না আমি কিন্তু বহু ভেবে নিশানা করেছি। ওখানে রূপসীরা ঘোরে নাকি ডাইনি বেশে ধেনোমদ উছলায় হাঁড়িতে হাঁড়িতে ওরা জাদু টোনা ক’রে…
-
ফিরে আসো মৌটুসিরা
শিহাব সরকার রাতগুলি দিনগুলি ক্ষয়ে ক্ষয়ে … ভোরের বেলা এসেছি নদীতীরে মাঝিমাল্লারা কী গায় বুঝি না, এ কোন ভাষা। ডাইনিরা ওড়ে সন্ধ্যার আকাশে ডাহুকের গলায় রাত্রির রক্ত বাগানে তবু নিমফল, বাতাসে ফুলরেণু। শীতের পাখিরা দূরভূমি থেকে … অরণ্য জাগে গহীনের কাদায় নক্ষত্রলীলায় পরাবাস্তব চেনা রাত্রিরা। অন্ধকারে থাকে শিখা, ঘণ্টাধ্বনি আহা, ভুলপথে…
-
তখন ছদ্মবেশ পরতে হয় (বেলাল চৌধুরীকে)
শিহাব সরকার সকলেই নিশুতি রাত্রির কথা বলে নিঃশব্দে হতে থাকে অর্চনা রাত্রির। অন্ধকার তার দরজা খুলে রাখে, তারপর কুহেলির কাছে নেমে যাওয়া ধ্রুবকথা এই যে, তুমি রাত্রির মুখোশে তবু দ্যাখোনি অন্ধকারের পিত্ত, আমার সব গদ্যকথা, বলি যা ধূলিবালি অনেক জানালার কিছু কিছু খোলা থাকে তখন ছদ্মবেশ পরতে হয়, নারীরা সব কবিতা রেশমি…
-
পর্দা উৎসবে
শিহাব সরকার ছাতার আড়ালে মুখ ঢেকে কারা যায় বড় পথ থেকে ছোট পথে কলিযুগে উল্কি-আঁকা জাদুমুখ সব, মুখ ঢেকে আছে মুখোশে, মায়াবাস্তবে বাহারি পর্দা ঝোলে না আর জানালায় কে বলে বাইজিরা না খেয়ে আছে, যাও, শহরের বারোতলা ঘুরে এসো ওরা সুরা দেবে, দ্রাক্ষা দেবে, আরো কিছু… কাউক্কেই তোয়াক্কা না ক’রে গাড়লেরা যত্রতত্র…
-
তলোয়ার মেলে ধ’রে মৃত সৈনিকেরা
শিহাব সরকার খাপখোলা তলোয়ার মেলে ধ’রে মঞ্চ থেকে লাফিয়ে নামছে সারি সারি মৃত সৈনিক শোনোনি এই গল্পগাছা; সিনেমায় দেখে চমকে ওঠোনি, পর্দায় যে-ছবিমালা দৈনিক ঘোরে আর ঘোরে অন্ধকারে সকালে সন্ধ্যায়? তার থেকে যোজন যোজন দূরে আরেক সত্য অন্য কোনো আকাশে তারা হয়ে যায়। এখন মঞ্চে ধুলোর গন্ধ, আরশোলা হাঁটে পর্দা নেমে গেছে সেই…
-
শহীদ কাদরী: কিংবদন্তি ও কবিতাবিচার
শিহাব সরকার মাত্র চারখানা বই বের করে, এবং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখে কিছু অপ্রকাশিত-অগ্রন্থিত কবিতা, একটি দেশের কবিতাভুবনে কিংবদমিত্মতুল্য খ্যাতি পেয়েছেন – এমন কবির সংখ্যা বিরল। হাতেগোনাই বলা চলে। সদ্যপ্রয়াত শহীদ কাদরী (১৯৪২-২০১৬) এই কবিদের একজন। মেধায়, মননে, পা–ত্যে এবং পাঠকপ্রিয়তার বিচারে শহীদ কাদরী বাংলা সাহিত্যে অনন্য। অতি প্রতিভাধরদের ক্ষেত্রে যা হয়। তাঁর সৃজনশীলতাসঞ্জাত আবেগ তিনি নিয়ন্ত্রণে…
-
কাটাকুটি
শিহাব সরকার ধ্রম্নবসত্য অবশেষে বোবাকান্না, কাটাকুটি ছিঁড়ে-ছেনে কত পঙ্ক্তি বানাই, পঙ্ক্তি ভাঙি ছিল এইসব আমাদের কুহেলিকালে নিকষ অন্ধকারে এখন চোখ খুলি রাত জেগে সারারাত তারা খুঁজি আকাশে। নক্ষত্রেরা জ্বলে ওঠে কী মনোহর উজ্জবল আকাশের ওপারে শোক, আহা, ওই সুপারনোভা! অন্ধগলি ধরে হাঁটার পরে মৃত্যুর কুয়াশা পথ গিয়ে ঢুকেছে হারানো গুহামুখে। ওইখানে…
-
মধ্যরাতে হাওয়াবন্দরে
শিহাব সরকার শূন্যে উড়ে অলীক মধ্যরাত্রি দেখা যায় তখন মরূদ্যানের হামামে প্রচুর হিমজল গড়ায় এরকম প্রহর অনেকের আসে কিংবা আসে না, যেরকম বাগানের ঘাসে দু’কদম পেরিয়ে শিশিরকণা দেখার ভাগ্য হয়নি আমার, দেখেছি খুব পাহাড়-পরগনা। নিষ্ফল ঘোরা শুধু উপত্যকা ও অববাহিকায় ছড়িয়েছি মোহর রাশি রাশি পাড়া-বেপাড়ায়। নিশিলাগা নরনারী নির্ভুল পড়ে যেতে পারে সময়ের ত্যানা…
-
দুটি কবিতা
শিহাব সরকার এই নিয়ে রাত দুপুরে গ্লাস-ভাঙা কে কাকে মধ্যে রেখে না ঘুরে যায় কী না ঘোরে, ঘোরে সবকিছু, আমি ও তুমি মানুষ পতঙ্গ জন্তু জীব পাখি জলকণা, ঘোরে গ্রহতারা, কবে থেকে কেন ঘোরে আখড়ার উঠানে বসে বৃদ্ধ বাউল দিশাহারা। দেখি সূর্য ঘোরে, পৃথিবী নিশ্চল শনি মঙ্গল বুধ সমুদ্রে অস্ত যায়…