মরীচিকা
রোকেয়া সুলতানার দীর্ঘদিনের সৃজনধারায় বহুস্তর আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। বিশেষত আশির দশকের প্রারম্ভে শান্তিনিকেতনের শিক্ষা তাঁর শিল্পীসত্তা ও মানসভুবনে যে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি এনে দিয়েছিল, পরবর্তীকালে তা হীরের দ্যুতির মতো ঝলমলে ও একজন অগ্রসর চিত্রী হিসেবে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। টেম্পেরা ও তাম্রতক্ষণ মাধ্যমে তিনি ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছেন।
রোকেয়া সুলতানার আশির দশকে করা ফিগার হয়ে উঠেছিল ললিত, সরল শিশুর কল্পনার সাজুয্যে বিচিত্রমুখী। এ-সময়ে করা ম্যাডোনা সিরিজ শিল্পিত ব্যঞ্জনায় ব্যতিক্রমী সৃষ্টি। তিনি নারীর সত্তা-সংকট, দৈনন্দিন জীবনসংগ্রাম ও নারীর বেদনাকে পরম মমতায় রূপায়িত করেছেন। তিনি ‘জল, বায়ু, মাটি’ সিরিজে বেশ কিছু কাজ করেছেন। বড় ও ছোট ক্যাভাসে করা এই সময়ের সৃজনে তাঁর শক্তিমত্তা নতুন মাত্রা নিয়ে উন্মোচিত হয়েছিল। এই সিরিজেই একটি কাজ এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে পুরস্কৃত হয়।
পরবর্তী পর্যায়ে রোকেয়া সুলতানাকে আমরা মানব-মানবীর অন্তর্নিহিত সম্পর্ক নিয়ে কাজে নিমগ্ন হতে দেখেছি। প্রথাবিরোধী এসব সৃষ্টিতে তিনি নারীর কামনা, বাসনা, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন ও যৌনতাকে অবলম্বন করে উল্লেখযোগ্য চিত্র সৃষ্টি করেছেন। চেতন ও অবচেতনও উপেক্ষণীয় ছিল না এই চিত্রগুচ্ছে। চিরাচরিত ধারা থেকে ভিন্নধর্মী বলে তাঁর কাজ সে-সময়ে খুব সাহসী বলে বিবেচিত হয়েছিল। এই সৃজনধারায় তিনি নারীমুক্তির অভিযাত্রাকে বাধামুক্ত করার প্রয়াসী হয়েছিলেন।
২০১১ সালে তিনি এক বছরের জন্য ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে আমেরিকার নেব্রাস্কা লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। এই সময়ে তিনি ছাপাই ছবির করণকৌশল সম্পর্কে উচ্চতর জ্ঞান অর্জন করেন ও তাঁর সৃষ্টি হয়ে ওঠে নানা নিরীক্ষায় ঋদ্ধ। ‘মরীচিকা’ সিরিজ এই সময়ে করা।
প্রচ্ছদের ছবিটি তাঁর সাম্প্রতিক ‘মরীচিকা’ সিরিজের একটি।
রোকেয়া সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৮০ সালে বিএফএ ও বিশ্বভারতী থেকে ১৯৮৩ সালে এমএফএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
রোকেয়া সুলতানার জন্ম ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রামে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.