সামাজিক আন্দোলনের অনন্য ইতিহাস
পিয়াস মজিদ
উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গে ব্রাহ্ম আন্দোলন
মুনতাসীর মামুন
অনন্যা প্রকাশনী
ঢাকা, ২০১৭
১২৫০ টাকা
উনিশ শতক এবং পূর্ববঙ্গ – দুই-ই মুনতাসীর মামুনের গবেষণা-আগ্রহের কেন্দ্রপ্রতিমা। উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গের সমাজ (১৯৮৫) শীর্ষক গবেষণাগ্রন্থ দিয়ে আজ থেকে ত্রিশ বছরের অধিককাল পূর্বে এ-বিষয়ে তাঁর যে গবেষণা-যাত্রা তা ২০১৭-তে এসে পূর্ণতা পায় উনিশ শতকের পূর্ববঙ্গ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায় চল্লিশটি গবেষণাকর্মে। পূর্বোক্ত গ্রন্থটির পাশাপাশি চৌদ্দ খ-ে উনিশ শতকে বাংলাদেশের সংবাদ সাময়িকপত্র (১৮৪৭-১৯০৫), উনিশ শতকে বাংলাদেশের থিয়েটার, উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গের থিয়েটার ও নাটক, উনিশ শতকে পূর্ববাংলার সভা-সমিতি, ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ ও পূর্ববঙ্গে প্রতিক্রিয়া, দুই শতকের বাংলা সংবাদ-সাময়িক পত্র, উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গের মুদ্রণ ও প্রকাশনা, উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গে মুদ্রিত পুঁথি, কোই হ্যায়, বঙ্গভঙ্গ, পূর্ববঙ্গের বিচিত্র সব বই, বাংলাদেশের উৎসব, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও বাঙালি সমাজ, বাংলাদেশ; নিম্নবর্গ, দ্রোহ ও সশস্ত্র প্রতিরোধ, উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গে গরিবদের জীবন – এমনসব গ্রন্থের ধারাবাহিকতায় ২০১৭-এর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বাংলার বিদ্বৎসমাজের কাছে মুনতাসীর মামুনের নিবেদন – উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গে ব্রাহ্ম আন্দোলন। প্রায় আটশো পৃষ্ঠার এ-মহাকায় গ্রন্থের উৎসর্গলিপি থেকেই আঁচ করা যায় পূর্ববঙ্গে ব্রাহ্মজাগরণের সূত্রসার এবং এর নেপথ্যকর্মীদের নাম। যেমন – ব্রজসুন্দর মিত্র, শ্রীনাথ চন্দ, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়, নবকান্ত চট্টোপাধ্যায়, গিরিশচন্দ্র মজুমদার, কালীনারায়ণ গুপ্ত প্রমুখ। অতঃপর বইয়ের ভেতরভাগ অধ্যায়ে অধ্যায়ে ধারণ করে সেই জাগরণের পূর্বাপর। ভূমিকাগদ্য থেকেই এই গবেষণাকর্মের ইতিবৃত্তের পাশাপাশি আমাদের সংরক্ষণ ও
গবেষণা-অনীহ সামাজিক সত্তার সন্ধান মেলে। এটি যে তাঁর চার দশক পূর্বের পরিকল্পিত গবেষণা সেই তথ্যের পাশাপাশি সুদীর্ঘ সময়ের ক্ষান্তিহীন অন্বেষণ ও আবিষ্কারের লেখ্যরূপ যে আলোচ্য গ্রন্থ – সেটিও গোচরে আসে আমাদের। আদিনাথ সেনের দীননাথ সেন ও তৎকালীন পূর্ববঙ্গ বই থেকে শুরু করে ব্রিটিশ লাইব্রেরি, কলকাতার ব্রাহ্মসমাজ গ্রন্থাগার হয়ে নানা বই, ঘটনা ও ব্যক্তিসূত্র কীভাবে এটি সুবিশাল উন্মোচক গবেষণাকর্মের ভিত্তি রচনা করে তার উল্লেখ উত্তরপ্রজন্মের গবেষকদের জন্য শিক্ষাযোগ্য হতে পারে।
‘উনিশ শতকের পূর্ববঙ্গে ব্রাহ্ম আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশ (১৮৪৬-১৯০০)’ এবং ‘পূর্ববঙ্গ ব্রাহ্ম আন্দোলন সম্পর্কিত সংবাদাবলীর সংকলন’ – এই দুই মূল পর্বের সঙ্গে আলোচ্য গ্রন্থে যুক্ত হয়েছে ব্রাহ্ম চরিতাভিধান, ব্রাহ্মসংগীত এবং ১৩টি পরিশিষ্টাংশে ব্রাহ্মসমাজের সংখ্যা, গৌতম ঘোষকৃত ব্রাহ্ম আন্দোলনের কালপঞ্জি, ব্রাহ্ম সম্মিলনীর সম্পাদকবৃন্দের তালিকা, পূর্ব্ববাঙ্গালা ব্রাহ্মসমাজের ট্রাস্ট ফান্ডসমূহ, পূর্ব্ববাঙ্গালা ব্রাহ্মসমাজের ট্রাস্টিগণের নাম, পূর্ব্ববাঙ্গালা ব্রাহ্মসমাজের সংশোধিত নিয়মাবলি, পূর্ব্ববাঙ্গালা ব্রাহ্মসমাজের গৃহনির্ম্মাণার্থ চাঁদাদায়ীদিগের নিরূপিত নিয়মাবলী, বরিশাল ব্রাহ্মসমাজের ট্রাস্টডিড, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা ‘ব্রাহ্মধর্মের পত্তনভূমি, ব্রাহ্মধর্ম গ্রন্থ, ব্রাহ্মধর্ম বীজ এবং ব্রাহ্মসমাজের বৃত্তান্ত’, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর রচনা ‘আমার জীবনে ব্রাহ্ম সমাজের পরীক্ষিত বিষয়’, শিবনাথ শাস্ত্রীর ‘আমার জীবনের প্রধান কাজ’, গুরুচরণ মহলানবিশের ‘সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা’, নবকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের ‘কেন কীভাবে ব্রাহ্ম সমাজে আসিলাম’। গ্রন্থে যুক্ত হয়েছে পঁচিশটি দুর্লভ আলোকচিত্র।
ব্রাহ্ম আন্দোলন বলতে মুনতাসীর মামুন কী বোঝেন তার দেখা মেলে ভূমিকা গদ্যে –
উনিশ শতকের পূর্ববঙ্গ নিয়ে কাজ করার সময় একটি বিষয় নিয়ে অভিসন্দর্ভে একটি অধ্যায় রচনা করার প্রচেষ্টা নিই। বিষয়টি হলো সামাজিক আন্দোলন। সামাজিক আন্দোলনের একটি আন্দোলন ছিল ব্রাহ্ম আন্দোলন।
এ-গ্রন্থ যেমন সামাজিক আন্দোলনের ইতিহাস হিসেবে গুরুত্ববান তেমনি এটি মূল্যাঙ্কিত হবে পূর্ববঙ্গের সংশ্লেষের মধ্য দিয়েও। লেখক তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতায় গবেষণার প্রথম প্রভাতে দেখেছেন ‘বঙ্গের ইতিহাসে পূর্ববঙ্গের কোন স্থান ছিল না।’ এই গ্রন্থ আলোচনার সূত্র ধরেই প্রথমে আমরা মুনতাসীর মামুনকে অভিনন্দন জানাই পূর্ববঙ্গকে তাঁর নিরবচ্ছিন্ন গবেষণার বিষয় করার মধ্য দিয়ে বৃহত্তর বাংলার ইতিহাসচর্চার কেন্দ্রভাগে পূর্ববঙ্গকে প্রতিষ্ঠার জন্য এবং একই সঙ্গে
ব্রাহ্ম-আন্দোলনের ন্যায় একটি ক্ষীয়মাণ অথচ প্রভাবসঞ্চারী সামাজিক আন্দোলন বিষয়ে এই সমীহ-উদ্রেকী সন্দর্ভ প্রণয়নের জন্য। লেখকের সঙ্গত মতে –
ব্রাহ্ম আন্দোলন সামাজিক আন্দোলনেরই অন্তর্গত। এর প্রকৃতি ছিল সংস্কারমূলক। অর্থাৎ, এ-আন্দোলন সমাজের একটি গ্রুপের সদস্যদের বিশ্বাস, ব্যবস্থা ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেছিল। এ-আন্দোলনের ছিল একটি আদর্শ। মুষ্টিমেয় কয়েকজনের মাধ্যমে হলেও
ব্রাহ্ম-আন্দোলন সমাজ ও রাজনীতি সম্পর্কে একটি জনমত গঠনে সহায়তা করেছিল। খানিকটা পরিবর্তনও ঘটিয়েছিল ঐতিহ্যগত শক্তি সাম্যের। তবে, এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য, বাংলার তথা ভারতের সামাজিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে সমসাময়িক ইংল্যান্ডের চিন্তা, আদর্শ প্রভাব বিস্তার করেছিল। (পৃ ১৬)
লেখক ব্রাহ্ম আন্দোলনের সূত্রপাত ধরেছেন ১৮১৫-তে রামমোহন রায়ের ‘আত্মীয় সভা’র প্রতিষ্ঠার সময় থেকে। নিরাকার পরম ব্রহ্মতত্ত্বের মধ্যে বিশ্বজনীন ধর্মের গ্রাহ্য উপাদানের সন্ধানে তাঁর আত্মীয়সভার প্রতিষ্ঠা। উনিশ শতকের শেষ থেকে বিশ শতকের গোড়ায় প্রায় একশ বছর নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এই আন্দোলন অগ্রসর হয়েছে। রামমোহনের ব্রাহ্ম-উদ্যোগ ধর্ম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নয়, বরং ধর্ম সংস্কারমূলক সামাজিক আন্দোলন বলেই মুনতাসীর মামুন মনে করেন। সমকালীন সমাজের অনাচার, দুর্নীতি ও রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে সর্বধর্মীয় মানুষের জাগরণ সংহত করতেই এ-আন্দোলনের উদ্ভব। ব্রাহ্ম আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের পুরোধা হিসেবে তিনি দেখেছেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। তাঁর সঙ্গে রামমোহনের মতের পার্থক্য সূচিত থাকে ‘আত্মীয় সভা’ আর ‘তত্ত্ববোধিনী সভা’র নামায়নের অন্তর্গত আদর্শের মধ্য দিয়েও। তবে তত্ত্ববোধিনী সভার সঙ্গে যুক্ত তরুণদের অনেকেই যে পরে সার্বিক বঙ্গীয় জাগরণের পুরোধা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন সে-তথ্যও পাওয়া যাবে এখানে। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র। এ-আন্দোলনের
তৃতীয় পর্যায় হিসেবে ড. মামুন দেখেছেন ১৮৫৭-তে কেশবচন্দ্র সেনের এই আন্দোলনে যোগদানকে। দেবেন্দ্রনাথ ও কেশবচন্দ্রের মধ্যে নীতিগত বিরোধের জের ধরে কেশবের অনুসারীরা ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’ আর দেবেন্দ্রনাথের অনুসারীগণ পরিচিতি পান ‘আদি ব্রাহ্মসমাজ’ হিসেবে।
উনিশ শতকের ব্রাহ্ম আন্দোলন যে একটি ক্রমব্যাপ্ত আন্দোলন ছিল তার প্রমাণ, ১৮৩০ সালে একটি ব্রাহ্মসমাজ থেকে ১৮৭৭-এ দাঁড়ায় ১০৭টি ব্রাহ্মসমাজে। প্রচ- ধর্মীয় ও সামাজিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ সিভিল ম্যারেজ অ্যাক্টের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ নিরোধ, নারীর অবস্থার উন্নতি, শ্রমজীবীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি সমাজকর্মে অগ্রসর হয়। প্রতিষ্ঠিত ধর্ম ও সামাজিক স্থিতাবস্থার সঙ্গে ক্রমবিকাশমান প্রগতিশীল ব্রাহ্মমতের নীরব ও সরব সংঘর্ষকে মুনতাসীর মামুন বিপুল তথ্য এবং যথাযথ বিশ্লেষণে তুলে ধরেছেন।
মুনতাসীর মামুনের গবেষণা-আগ্রহের অন্যতম বিশিষ্টস্থল সংবাদ-সাময়িকপত্র। তাই তিনি সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের মুখপত্র হিসেবে ১৮৭৮-এর ২১ মার্চ ব্রাহ্ম পাবলিক ওপিনিয়নে প্রকাশিত বক্তব্যকে তুলে ধরেন যেখানে ব্রাহ্ম স্পিরিটের উপাদান খুঁজে পাওয়া যায় –
আমরা দেখতে চেষ্টা করব যে, ব্রাহ্মধর্ম শুধু আধ্যাত্মিকভাবেই মানুষকে উন্নত করবে না বরং সামাজিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, শারীরিক এবং রাজনৈতিকভাবেও উন্নত করবে। ফলের পরোয়ানা না করে আমরা নির্ভয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কার সাধনে ব্রতী হবো।
এরপর ভারতবর্ষীয় ইতিহাসে পূর্ববঙ্গের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন –
১৮৪৬ সালে স্থাপিত ঢাকার সমাজ ছিল কলকাতার বাইরে স্থাপিত প্রথম সমাজ। সমাজ গড়ে উঠেছিল কলকাতা সমাজের সঙ্গে সমান্তরালভাবে। (পৃ ২৭)
এবং ১৮৪৬-এ ঢাকার ব্রাহ্মসমাজ স্থাপনের বছরপঁচিশের মধ্যে অর্থাৎ ১৮৭০-এর মধ্যে পূর্ববঙ্গের প্রধান শহরগুলোতে ব্রাহ্মসমাজ স্থাপিত হওয়ার তথ্য এই সত্য প্রতিষ্ঠা করে যে, এটি কেন্দ্র থেকে প্রান্তমুখী আন্দোলন হিসেবে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে। ব্রাহ্মসমাজ আন্দোলন যে সরলরেখায় চলেনি তার ইঙ্গিত পাই এই তথ্যে যে, কলকাতার মতো পূর্ব্ববাঙ্গালা সমাজ ভেঙেছে তিনবার। একটু দীর্ঘ উদ্ধৃতিতে আমরা বুঝতে সমর্থ হবো পূর্ববঙ্গে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠায় আদিপর্বের চালচিত্র –
ঢাকা তথা পূর্ববঙ্গে প্রথম ব্রাহ্মসমাজ স্থাপনে উদ্যোগ নিয়েছিলেন ব্রজসুন্দর মিত্র ও তার কয়েকজন বন্ধু। ব্রজসুন্দরের বয়স তখন ২৬, ঢাকার আবগারি বিভাগের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক। তিনি থাকতেন, ‘ঢাকাতে এখন যেখানে মুনসেফি আদালত (বর্তমান নিম্ন আদালত) অবস্থিত তাহার পশ্চিম দক্ষিণাংশে শাঁখারিবাজার প্রবেশের মুখে, রাস্তার উত্তর পার্শ্বে একখানি ক্ষুদ্র দোতলা’ বাড়িতে। ব্রজসুন্দর তার রোজনামচায় লিখেছিলেন, ২৩ অগ্রহায়ণ ১২৫৩ সনে কুমারটুলিতে তার বাসায় ব্রাহ্মসমাজ প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি লিখেছেন, যারা এর উদ্যোক্তা ছিলেন, তারা হলেন, যাদবচন্দ্র বসু, রামকুমার বসু, গোবিন্দচন্দ্র বসু, বিশ্বম্ভর দাস ও নরোত্তম মল্লিক। এই দিনটিকেই ঢাকা ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠার দিন বলে ধরা হয়। (পৃ ২৮)
মুনতাসীর মামুনের দৃষ্টি সর্বতোবাদী। তাই তৎকালীন ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সরবরাহের পাশাপাশি ঢাকার নগরচিত্রও উদ্ভাসিত হয় তাঁর আলোচনায়। নৌনির্ভর পূর্ববঙ্গ, ঢাকার বাংলাবাজার, নলগোলা, আর্মানিটোলা, চাঁদনীঘাট ইত্যাদি এলাকায় সমাজ-সংস্কার আন্দোলনের শাখা-প্রশাখা বিস্তার এবং পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের ঢাকায় ব্রাহ্ম-আন্দোলনে যুক্ততা কেন্দ্রপ্রান্তের সংযোগকেও পরিস্ফুট করে। পূর্ববঙ্গে ব্রাহ্ম-আন্দোলনের বিস্তারলগ্নে সমকালীন সাময়িকপত্রে এর উপস্থিতির কথাও জানতে পারি আমরা যেমন সাপ্তাহিক ঢাকা প্রকাশে ১৯৬১ সালে শাখা ব্রাহ্মসমাজের একটি বিজ্ঞাপনবাণী ছিল এরকম –
ধর্ম্ম ও নীতি বিষয়ে উপদেশ শ্রবণের জন্য সকলকে আহ্বান করেন এবং কাহারও মনে সংশয় জন্মিলে তাহার মীমাংসার চেষ্টা করিবেন। (পৃ ৩১)
ব্রাহ্মধর্ম বিকাশে এই আন্দোলনের নেতা ও চিকিৎসক বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর ১৮৬৪-তে ঢাকা আগমন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিস্তারে তথ্য প্রমাণ করে, ব্রাহ্ম আন্দোলনের কর্মীরা পূর্ববঙ্গে ইহজাগতিকতা চর্চা করেছেন। ঢাকায় ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কালীপ্রসন্ন ঘোষের অবদানও আলোচিত হয়েছে এই গ্রন্থের পরিসরে। ৫ ডিসেম্বর ১৮৬৮-তে পূর্ব্ববাঙ্গালা ব্রাহ্মসমাজ মন্দির উদ্বোধনের বিবরণ প্রদানের মধ্যে দিয়ে এ সামাজিক উদ্যোগের সাংগঠনিক শক্তির প্রকাশ ঘটে এবং এ-উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তৎকালীন ঢাকার সর্বসম্প্রদায়ের বিশিষ্টজনের উপস্থিতি এর সর্বজনীন চরিত্রের স্বরূপ উন্মোচন করে।
পূর্ববঙ্গে ব্রাহ্মরা যে আদি ব্রাহ্মসমাজের চেয়ে বেশি কেশবচন্দ্রের নেতৃত্বানুরাগী ছিলেন, এর মধ্য দিয়ে অধিকতর সংস্কারকামী হিসেবে এই অঞ্চলের ব্রাহ্মদের পরিচিতি নির্মিত পায়। তবে ব্রাহ্ম আন্দোলনের সর্বভারতীয় বিভক্তির প্রভাব ঢেউয়ে ক্রমশ ভাববাদী-ইহজাগতিকতাবাদীদের দ্বন্দ্ব যে পূর্ববঙ্গেও অপ্রকাশ্য থাকেনি তার দেখা পাই মুনতাসীর মামুনের বিবরণে – ঢাকা ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের উপাসনাপদ্ধতির উল্লেখে।
ঢাকার পার্শ্ববর্তী স্থান – কাওরাইদ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কালীগঞ্জ, বজ্রযোগিনী পূর্বপাড়াসহ পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলা যেমন – ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফরিদপুর, বগুড়া, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুষ্টিয়া, পাবনা, সৈয়দপুর, যশোর, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, ইত্যাদি অঞ্চলে ব্রাহ্ম আন্দোলন বিস্তারের আদ্যোপান্ত বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন গবেষক।
শিবনাথ শাস্ত্রী-প্রদত্ত সমাজের সংখ্যা ৩৯ এবং কলেটের তালিকায় এ-সংখ্যা ২১ আর মুনতাসীর মামুন উল্লেখ করেছেন সর্বমোট ৯৯টি ব্রাহ্মসমাজের নাম। নতুন ৬০টি সমাজের সন্ধানদান গবেষক হিসেবে ড. মামুনের কৃতিত্বের পরিচয়বহ। তিনি পূর্ববঙ্গে ব্রাহ্ম আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশের সূত্র অন্বেষণ করেছেন এভাবে –
পূর্বধারণা, কুসংস্কার, যুক্তিহীনতা সমাজে বা মানস গঠনে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। সেখানে এতগুলি সমাজ স্থাপন একটি বড় ঘটনা। সমাজবিজ্ঞানীরা হয়ত এর ব্যাখ্যা ভালোভাবে দিতে পারবেন। এমনও দেখা গেছে ৮ থেকে ১০ জন মিলে সমাজ স্থাপন করেছেন এবং কাজ চালিয়ে গেছেন। আজকের দৃষ্টিতে তা অসামান্য কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু সে সময়ে সেটি অভাবনীয়ই বলতে হবে। অর্থাৎ, একটি সময় ব্রাহ্মসমাজকে মেনে নিতে হয়েছিল এবং ব্যক্তি বা যারা করেছেন তাদের কারণেই। তারা সমাজে প্রমাণ করতে পেরেছিলেন, তাদের বিশ্বাসের দৃঢ়তা আছে, সমাজ সেবায় তারা অগ্রণী, শিক্ষা বিস্তারে আগ্রহী, পরবর্তীকালে রাজনৈতিক আন্দোলনেও। এবং এসব গুণা বা কর্মাবলি তাদেরকে আলাদা এবং শ্রদ্ধেয় একটি কমিউনিটি বা সম্প্রদায় হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। শুধু হিন্দু সমাজেই নির্দিষ্টভাবে নয়, সামগ্রিকভাবেই তা পূর্ব সমাজে ইতিবাচক অভিঘাত হেনেছিল। (পৃ ৭৭)
লেখক একই সঙ্গে পূর্ববঙ্গ ব্রাহ্মসমাজের নেতৃবৃন্দ কর্মীবৃন্দের শ্রেণিচরিত্র, সামাজিক পরিচয় ইত্যাদির উল্লেখের মধ্য দিয়ে এর ভিত্তি গোড়া থেকে যাচাই করে নিতে চেয়েছেন। তাঁর পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, উচ্চবর্গের বিশিষ্টজনদের সমান্তরালে হতদরিদ্র মানুষও এ-আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহে এই আন্দোলন-সংঘটনে ছাত্র ও শিক্ষকদের ভূমিকা এবং বরিশালে কবি জীবনানন্দ দাশের পূর্বপুরুষ সর্বানন্দ দাসের যুক্ততা পাঠকের কৌতূহল উদ্রেক করে।
ঢাকা থেকে কালীকচ্ছ পর্যন্ত পূর্ববঙ্গজুড়ে ব্রাহ্মবিরোধী পক্ষের তৎপরতার বিশদ উল্লেখও করেছেন লেখক। বৈকুণ্ঠনাথ ঘোষের জবানিতে আমরা এমন উল্লেখ পাই –
আমি ব্রাহ্ম হইয়াছি শুনিয়া আমাকে দেখিবার জন্য নানা স্থান হইতে লোক সকল আসিত। তাহারা হয়ত মনে ভাবিত আমি একটা কিম্ভূতকিমাকার জানোয়ার হইয়াছি অনেকেই এক একবার আসিয়া কৌতূহল চরিতার্থ করিয়া যাইত। (পৃ ১০৮-১০৯)।
দেশব্যাপী ব্রাহ্মদের শিক্ষাবিস্তার কার্যক্রম, বাল্যবিবাহ নিবারণী উদ্যোগ, পত্রপত্রিকা প্রকাশসহ সমাজহিতকামী কার্যক্রমের বিস্তারিত বিবরণ এ-গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। ঢাকার প্রথম বাংলা মুদ্রণযন্ত্র বাঙ্গালা যন্ত্র, পূর্ববঙ্গের প্রথম সাময়িকপত্র মনোরঞ্জিকা, পূর্ববঙ্গের বিখ্যাত ঢাকা প্রকাশ পত্রিকা, ব্রাহ্মদের নিজস্ব মুখপত্র পাক্ষিক বঙ্গবন্ধু দি নিউ লাইট, ঈস্ট, সাপ্তাহিক শুভ স্বাধিনী, মহাপাপ বাল্যবিবাহ , অবলাবান্ধব, বান্ধব, সেবক, কামনা এবং ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত বাঙ্গালী, ভারত মিহির, বিজ্ঞাপনী, বিদ্যোন্নতি সাধিনী, চারুবার্ত্তা, সঞ্জীবনী, হরিভক্তি তরঙ্গিনী সিলেট থেকে প্রকাশিত পরিদর্শক, যশোর থেকে দ্বিভাষিক ইত্যাদি ব্রাহ্ম-পরিচালিত ও পৃষ্ঠপোষিত পত্রপত্রিকার ইতিহাস এ-গ্রন্থের ব্যাপ্তি ব্রাহ্ম-আন্দোলনের ইতিহাস থেকে সাময়িকপত্রের ইতিহাস পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে। পাশাপাশি শিক্ষাবিস্তার আন্দোলন, নারীশিক্ষা এবং মাতৃভাষায় শিক্ষার প্রতি ব্রাহ্ম-তৎপরতার বিবরণ পাওয়া যাবে এখানে। ব্রাহ্ম স্কুল থেকে জগন্নাথ কলেজ প্রতিষ্ঠা, ইডেন মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠায় ব্রাহ্ম অবদানসহ ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রামে শিক্ষাবিস্তারে এই সম্প্রদায়ের উদ্যোগের পরিচয় পাওয়া যাবে। ব্রাহ্মরচিত গ্রন্থাবলি নিয়ে মুনতাসীর মামুন বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। কামিনী রায় থেকে সীতানাথ তত্ত্বভূষণ পর্যন্ত লেখকদের বইপত্রের পরিচিতি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্য ও চিন্তাধারায় ব্রাহ্ম-মনীষার অবদান অনুধাবন করা সম্ভব হয়। গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠায় ব্রাহ্মদের অবদান, জাতধর্মনির্বিশেষে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে ব্রাহ্ম-আন্দোলনের ভূমিকা আলোচিত হয়েছে।
অতঃপর উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গে ব্রাহ্ম-আন্দোলনের ক্ষয়িষ্ণু ধারা বিষয়ে মুনতাসীর মামুনের সংক্ষিপ্ত-তীব্ররেখ মূল্যায়ন –
ব্রাহ্মসমাজের একাংশের বিশ্বাস ও ঐতিহ্য নিয়ে টানাপোড়েন আন্দোলনকে দুর্বল করেছিল। অনেক সময় সনাতন ধর্ম থেকে তাদের আলাদা করাও মুশকিল হয়ে উঠেছিল। এভাবে আস্তে আস্তে ব্রাহ্ম-আন্দোলন সজীবতা হারায়। ব্রাহ্ম-আন্দোলনের সজীবতার সময় উনিশ শতকের শেষার্ধ। মাত্র ৫০ বছর। কিন্তু ঐ ৫০ বছরই যথেষ্ট ছিল সমাজকে নাড়া দেয়ার। (পৃ ২৭২)
মুনতাসীর মামুনের উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গে ব্রাহ্ম আন্দোলন গ্রন্থটি শুধু বাংলার নয়, একই সঙ্গে উপমহাদেশের ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে এক প্রামাণ্য দলিল হয়ে রইল। ইতিহাসচর্চায় সামাজিক আন্দোলনের পরিসর সংযুক্তির ক্ষেত্রেও এটি একটি উদাহরণ। যে শৃঙ্খলা, ধারাবাহিকতা, সামগ্রিকতা ও বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে উপনিবেশিত সমাজে ঘটমান একটি ধর্মতত্ত্বমূলক সামাজিক আন্দোলনকে সূত্রবদ্ধ করা হয়েছে তা আরো বহু গবেষণার বীজবিন্দু ধারণ করে চলে। কেন্দ্রীয় কোনো সামাজিক আন্দোলন স্থানীয়ভাবে কেবল চুঁইয়ে চুঁইয়ে না পড়ে যে স্বাধীনভাবেও বিকাশ লাভ করে, তার উদাহরণ পূর্ববঙ্গে ব্রাহ্মদের সমাজসংস্কার কার্যক্রম, শিক্ষাবিস্তার, নারীর অবস্থা পরিবর্তন ও ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবার বিস্তার, সাময়িকপত্র প্রকাশ ও সাহিত্যিক তৎপরতার আনুপূর্ব বিবরণের মধ্যে দিয়ে ধরা থাকল। এ-গ্রন্থ আমাদের এমন সত্যের মুখোমুখি করে যে, পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের পাটুয়াটুলির জনশূন্য ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে উনিশ শতকের পূর্ববঙ্গীয় ব্রাহ্ম আন্দোলনের উত্তরাধিকার খুঁজে পাওয়া যাবে না, বরং তার উত্তরাধিকার আরো বেশি পরিস্ফুট বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজের মতো বিদ্যায়তনে, যাদের প্রতিষ্ঠায় আছে এই অঞ্চলের ব্রাহ্মদের গৌরবজনক ভূমিকা। এ-গ্রন্থের পাঠ প্রতিটি পাঠককেই উনিশ শতকের পূর্ববঙ্গে এক কৌতূহলোদ্দীপক ভ্রমণে নিয়ে যাবে নিঃসন্দেহে।
গল্পে সুদূর আত্মস্থ নদী
অমিতাভ নৈত্র
নির্বাচিত পঁচিশটি গল্প
তৃষ্ণা বসাক
বিনিময়
২০০ টাকা
গল্পগুলো যেন সুদূর আত্মস্থ নদীর মতো নিজের ভেতর দিয়ে নিজেকে নিয়েই বয়ে যায়। তার অনুচ্চকিত স্রোত ডুবিয়ে দেয় না, জোর করে কেড়েও নেয় না কিছু। শুধু মৃদু একটা ইশারা রাখে তার সঙ্গে ভেসে যাওয়ার। বুকে চমক জাগিয়ে তার শুরু নয়। তার সমাপ্তিও তার বয়ে যাওয়ার মতো অনিঃশেষ, অন্তহীন। গল্পগুলো যেন ছুটে যাওয়া কোনো জলস্রোতের প্রতিটি সূক্ষ্ম রেখার ওপর দিয়ে ভাসতে ভাসতে চলে যাচ্ছে আর পাঠককেও সহযাত্রী করে নিচ্ছে সেই যাত্রার। পড়তে পড়তে একসময় মনে হয় স্থির কোনো গন্তব্যে নয়, বরং গল্পগুলো যেন উদ্ভাসনের পর উদ্ভাসনে সন্তর্পণে পা ফেলে ফেলে জলের ওপর কাঁপতে-থাকা আলোর অনির্দেশে এগিয়ে চলেছে। স্থির কোনো কেন্দ্র নেই গল্পগুলোর। একটা সাদা ময়ূরের ধীরে পেখম ছড়িয়ে দেওয়ার মতো গল্পগুলো আলোকে আরো বেশি উদ্ভাসিত করে ছড়িয়ে যায়, কবিতা হয়ে যায়। তৃষ্ণা বসাকের গল্প ঠিক এরকম।
একটি গল্পের নাম ‘অলীক দুঃখ’। একটি মেয়ে, তার বাবা-মা আর পাঁচিলঘেরা চার কাঠা জমি বিক্রি হয়ে যাওয়ার আশা-নিরাশা নিয়ে পড়ে আছে। ভীষণ দর্শন দুটো কুকুর নিয়ে বিশা নামের এক বড়সড় চেহারার যুবক মেয়েটির মায়ের সঙ্গে কথা বলে,
চা-বিস্কুট খায়। একটি শুকনো পাতা খসেপড়ার মতো গুরুত্বহীনভাবে বিশার পটনাবাসী দিদির কথা একবার মাত্র উচ্চারিত হয়। তারপর একা হারিয়ে যায়। অনেক বছর পর এক বৃষ্টির দুপুরে গল্পের সাদা ময়ূরটি নিজেকে ছাপিয়ে-ছড়িয়ে পড়বে, যখন একজন সুবিমলদা আসবেন সেদিনের সেই ছোট্ট মেয়েটির ব্যস্ত অফিসের প্রহরে, আর কথায় কথায় এক ঘন বৃষ্টিদিনের সিনেমা হলের জলে ধুয়ে যাওয়া মেঝে আর মহিমপুর রথতলা নামের একটি জায়গার নাম ঘিরে তৈরি হবে এক অদ্ভুত বিভ্রমের দোলাচল। সুবিমলদার এক সময়ের চেনা বিশ্বরূপ বসু, যাঁর স্ত্রীকে দেখতে একবার পটনায় গিয়েছিলেন সুবিমলদা, এবং দেখা না পেয়ে ফিরে এসেছিলেন – তিনি কি বিশার সেই মহিমপুরের দিদি? খেলাচ্ছলে প্রসঙ্গটি একটু ওঠে এবং খেলাচ্ছলেই হারিয়ে যায় আবার। যেন তাৎপর্যহীন, বিক্ষিপ্ত একটি উল্লেখ স্থির উত্তর মাত্র সে। কিন্তু সম্পূর্ণ তাৎপর্যহীন এই প্রসঙ্গটি একটু একটু করে যেন জোর পেতে থাকে, ধারালো হতে থাকে।
পাঁচিলঘেরা সেই চার কাঠা জমির অস্তিত্ব-অনস্তিত্বের সবরকম সম্ভাব্যতায় বেড়ালের নিঃশব্দ পায়ে বারবার আসে বিশার সেই সময়-অতিক্রান্ত দিদি, যাকে একবারও দেখতে না পাওয়ার জন্যই হয়তো জীবন এত অসার্থক হয়ে যায়, মেয়েটির অ্যালঝেইমারগ্রস্ত মা আর সুবিমলদার। সূক্ষ্মতম একটু ইঙ্গিত, বাজনা থামার পর কাঁপতে থাকা এক শ্রবণাতীত রণন নিয়ে এখানেই শেষ হয়ে যায় গল্পটি এবং শেষ হয় না।
তৃষ্ণা বসাকের গল্প যেন হাওয়ায় দুলতে থাকা নানারকম সুতো ঠেলে এগিয়ে যায়। প্রতিটি সুতোয় সূক্ষ্ম স্পর্শ সচেতনভাবে অনুভব করতে না পারলে, গল্পটি ধরা যাবে না। আমাকে প্রতিটি গল্প বারবার পড়তে হয়েছে কখনো আড়ালে থাকা, কখনো খোলামেলা আপাত-ইঙ্গিতহীনের মধ্যে সংকেতগুলো খুঁজে পাওয়ার জন্য। যেন দর্শনের কোয়ানের মতো তাঁর গল্প যা শেখায় একটি নুড়িকে মুখের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ নাড়াচাড়া করতে করতে কীভাবে তার রসক্ষরণ টের পেতে হয়। তাঁর গল্প চায় পাঠকের গ্রাহকযন্ত্রের সূক্ষ্ম সংবেদনশীলতা, যাতে পিঁপড়ের পায়ের শব্দও অনুভব করতে পারেন তিনি।
এরকমই একটি গল্পের নাম ‘পিঁপড়ের পায়ের শব্দ’। রিমা নামের একজন তরুণী লেখিকা, পার্থ চন্দ নামের একজন উদ্যমী পাঠক, যিনি বাঙালি লেখিকাদের লেখায় ইরোটিকা খুঁজছেন, আর তিস্তাপার পত্রিকার সম্পাদক, যিনি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প থেকে বেঁচে ফিরেছেন – এরকম তিনজন মানুষের ফোনে বলে যাওয়া কথোপকথনের সাদামাটা টুকরোগুলোর ওপর পা ফেলে ফেলে গল্পটি এগোতে থাকে এক অন্য ধরনের কম্পনের দিকে, যেখানে চিহ্নিত পরিচয়গুলোর মধ্যে ফুটে ওঠে বিভ্রম আর মুখগুলো ভেঙেচুরে হয়ে ওঠে অন্য কারো মুখ। ভূমিকম্পের আসন্নতার সামান্য একটু ইঙ্গিত রেখে গল্পটি নিজের মতো নিজের স্রোতে ভেসে যায়। এই অদ্ভুত আত্মস্রোত, এই মগ্ন ভাসমানতা তৃষ্ণা বসাকের গল্পগুলোকে এত বিশিষ্ট করেছে। কাগজের নৌকার মতো ছোট ছোট ঢেউ দিয়ে পাঠককে ভাসিয়ে দেন তিনি। কোনো স্থির সময়ের বাঁধা থাকে না তাঁর গল্প। কোনো পরিণতি-উন্মুখ ঘটনাতেও সে বাঁধা পড়বে না।
‘মৃদু বসন্ত ও কয়েকটি বেড়াল’ নামের আরেকটি গল্পে এক মা তার মেয়েকে গান শেখাতে নিয়ে যায় এক আশ্চর্যপাড়ায়, যেখানে ক্রিকেট অ্যাকাডেমি সাইবার ক্যাফে এসব ছাড়িয়ে প্রধান হয়ে ওঠে প্রতিটি বাড়ির কার্নিশে, পাঁচিলে, বারান্দায়, ছাদে অজস্র আত্মরতিময় অলস বেড়ালের ভিড় ‘যারা রোদ্দুরের আঁচ নিভে আসার অপেক্ষা করতে করতে, একবারের জন্যেও তাদের চোখের সামনের থাবা দুটি থেকে সরে না।’ (এক লাইনের এই বর্ণনাটি উদ্ধৃত হলো তৃষ্ণার গদ্যভাষার কবিতাসন্নিভ বিচ্ছুরণ বোঝাতে। বেড়ালরা একবারের জন্যও তাদের থাবা থেকে সরে যায় না – এমন দেখাতে জানেন যিনি তাঁর দৃষ্টি একজন কবির দৃষ্টি। এমন দৃষ্টান্ত বইটি জুড়ে অজস্র। যেমন, ‘কালসিন্ধু’ গল্পে একটি ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে অন্য কারো নামে, যে ‘নাম যেন চৌকাঠের মতো দুটো ফ্ল্যাটের মধ্যে দাঁড়িয়ে, যাতায়াত মসৃণ নয় অর্থাৎ সেই নামকে ডিঙিয়ে যাতায়াত করতে হয় সব সময়।’) মেয়েটিকে নিয়ে মা গলির মধ্যে এক বৃদ্ধাবাসের অনন্ত পাঁচিল পার হয়ে ‘অনুগত ভ্রমণসঙ্গী’র মতো চাঁদকে সঙ্গে নিয়ে পৌঁছয় রঙের ক্যাটালগের মতো নির্ভরশীল বাড়িটিতে, যেখানে সর্বানী মাইতি নিজের আত্মার সব দিয়ে কাফি গাইছেন। সেই গানে শব্দস্তরের ওপরে ভাসমান সুরময় লোক, মাকে মনে পড়িয়ে দেয় তার স্বামীর হিংস্র শারীরিকতা, যা অতিক্রম করে ‘একটি রাতের জন্য সে শুধু গান হয়ে উঠতে চেয়েছিল।’ সে অনুভব করেছে সে শরীর নয়, শুধু যোনিরন্ধ্র নয়। ‘কিন্তু প্রতিটি সংগম শেষে সে দেখত, সে শরীর, শুধু শরীর।’ সর্বানী মাইতির সামনে মেঝেতে বিছানো সতরঞ্চির ওপরে মা ডুবে যায় সুরের পৃথিবীতে আর কাফি রাগ-আক্রোশের মতো আছড়ে পড়ে হাওয়ায়।
তাঁর অন্যান্য গল্পের মতো এই গল্পটিতেও কোনো স্থির ঘটনা পরম্পরা নেই। নির্দিষ্ট কোনো সময়ের চিহ্নও নেই। অনুভূতিশূন্য সুরবর্জিত পৃথিবীর প্রতিভূ হয়ে আসে এই বেড়ালগুলো, রিরংসার আঁশটে গন্ধে নিয়ে আসে। আর একজন মা তার মেয়েকে এসবের বাইরে এক সূক্ষ্ম জীবনে পৌঁছে দিতে চায়।
অন্য আরেক রকম পৌঁছনোর গল্প ‘মহাভার (ত)’ যেখানে নীলা ও অমিতেশ – এক সচ্ছল প্রৌঢ় দম্পতি গাড়ি নিয়ে বেড়াতে এসেছে ফ্রেজারগঞ্জে। হোটেলের ওয়ার্ড্রবে কারো ফেলে যাওয়া একপাতা কন্ট্রাসেপটিভ নিয়ে মৃদু কথাবার্তা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় অন্তর্মুখী নীলায় একাকিত্ব ও বিতৃষ্ণা। ভ্যানচালক নীলকণ্ঠের ভ্যানে হেনরি আইল্যান্ডে যেতে যেতে এক অদ্ভুত মহাভারতের গল্প শোনায় নীলকণ্ঠ, যেখানে মুক্তির খোঁজে বেরিয়ে পড়া অর্জুনের সঙ্গে এক শেয়ালের দেখা হয়, যে ধর্মভ্রষ্টের মৃতদেহ খায় না। এরপর দেখা হয় এক ছুঁচোর সঙ্গে, যার ফুটো দিয়ে হাতি গলে যায় কিন্তু ইঁদুর আটকা পড়ে। একবার অর্জুন দেখেন অদ্ভুত কলসি, যার জলে ছটা একই রকম আকারের কলসি ভরে যায়, কিন্তু ছটা কলসি মিলেও সেই একটা কলসিকে ভরাতে পারে না। প্রতিটি গল্পই ধাঁধার মতো করে বলে নীলকণ্ঠ এবং তার ব্যাখ্যাও দিয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে। তৃষ্ণা বসাকের গল্প থেকেই সেই ব্যাখ্যাগুলো এবার হুবহু তুলে দেওয়া হচ্ছে।
১. শেয়াল হেসে বলল, ‘দূর দূর, ওটাকে কী খাব? ওর চোখ শুঁকলাম। দেখলাম হারনাম শুনে কোনোদিন ও চোখে প্রেমবারি নামেনি। কপাল শুঁকলাম, দেখলাম ওই কপাল কোনোদিন কোনো কৃষ্ণমন্দিরের চৌকাঠে মাথা ঠেকায়নি। পাদুটো খাব ভাবলাম, শুঁকে দেখলাম, – ’
নীলা হাঁটু দুটো চেপে ধরলেন। ব্যথা শুরু হয়ে গেছে।
২. ‘মানে ঘোর কলিকাল। লোকে নিজের ফুর্তির জন্যে লাখ লাখ টাকা খরচা করবে, কিন্তু গরিবকে দশ টাকা দিতে বুক ফেটে যাবে।’
৩. ‘মানেটা শুনবেন না মা? এই ঘোর কলিতে একটা মা তার ছয় সন্তানের প্রতিপালন করতে পারে, কিন্তু ছয় সন্তান মিলেও একটা মাকে টানতে পারে না।’
আরো একটা অদ্ভুত গল্প নীলকণ্ঠ বলেছিল। এভাবেই সেটা লিখেছেন তৃষ্ণা –
‘তারপর আরো পথ চললেন অর্জুন, এক জায়গায় হঠাৎ দেখলেন, কী আশ্চর্য, কোথায় পুকুরে চারপাশ আল দিয়ে আটকে রাখা হয়, এখানে আলের চারপাশ পুকুর দিয়ে আটকানো।’
মানেটা এবার জিগ্যেস করলেন না নীলা। নীলকণ্ঠ বলে চলল –
‘মানে বুঝলেন না? ঘোর কলিকাল। ছোট এখন বড় হবে, বড়কে নেমে আসতে হবে ছোটর জায়গায়। কেউ কারো সম্মান করবে না।’
নিষ্প্রাণ শিকড় নিয়ে একা হয়ে যাওয়া গাছের মতো নীলার অনুভূতি আর দেখা নিয়ে গল্পটি এভাবে শেষ করেছেন
তৃষ্ণা –
‘অতিকায় কোনো প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর মতো তাঁর শরীর যেন ক্রমে বালিতে ডুবে যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। পেছন ফিরে দেখলেন, ফ্রেজার সাহেবের বাংলোর পাশে একটা গাছের গুঁড়ির ওপর জলের বোতল হাতে বসে অমিতেশ। তাঁকে অবিকল আরেকটা ভাঙা বাড়ির মতো লাগছে। অমিতেশের দিকে এগোতে এগোতে নীলকণ্ঠের দিকে ফিরে তাকালেন নীলা। কী যেন মনে পড়ে গেছে। বলতে গিয়েও বলেন না কিছু। ওকি এসব বুঝবে? ওকি বুঝবে অমিতেশ, নীলার মতো অর্জুনও যে পাখির চোখ ছাড়া কিছু দেখতে শেখেননি সারা জীবন?… তাই যুধিষ্ঠির নয়, অর্জুনের যাত্রাপথেই ছড়িয়ে থাকে শেয়াল, মড়া, ছুঁচ আর শূন্য কলসের আশ্চর্য কথামালা। অর্জুনের সন্তানের নাম যে অভিমন্যু।’
সম্ভাব্যতা-অসম্ভাব্যতার সব সীমা ছাড়িয়ে গল্পটি আমাদের পাপ ও পতনের ভাষা হয়ে উঠেছে, অবনত মুখ হয়ে উঠেছে আমাদের।
ঠাস বুনোট টানটান ঘটনার ঘনঘটা তৃষ্ণা বসাকের গল্পে থাকে না। কোথাও কোনো আরোপিত বর্ণচ্ছটা বা চাকচিক্য নেই। ধ্রুপদী সংগীতের মতো তাঁর গল্প সূক্ষ্ম চলনে মুখ থেকে বিস্তারে যায়, ফিরে আসে, তারপর আবার অন্য কোনো অসীমের দিকে যাত্রা শুরু করে। গল্পে ঘন দরদরে রঙের ইমপ্যাস্টো আর পুরু আস্তর তাঁর অভীষ্ট নয়। বরং ভেজা কাগজের নানা জায়গা আলতো করে নরম জল রং ছুঁইয়ে, ভেজা কাগজে সেই রঙের ছড়িয়ে যাওয়াকে দক্ষ হাতে নিয়ন্ত্রণ করার মতো তাঁর গল্প। ‘ঘর’ গল্পে সাউথ পয়েন্ট স্কুলের কয়েকটি শিশুর মা স্কুলসংলগ্ন গলির মধ্যে রোজ কয়েক ঘণ্টা বসে থাকার মতো একটা ঘর খোঁজে। গোটা গল্পটিতে সেই নারীরা হাসে, কথা বলে সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে, এবং অবশেষে খুঁজে পায় আদ্যন্ত শ্রীহীন, ক্যালেন্ডারে অন্ধ হয়ে যাওয়া দেয়াল আর হাঁড়িকুড়ি, বাক্স-পেটরায় দুর্গম একটি ঘর, যেখানে থাকেন ছেঁড়া ছাপা শাড়ি পরা অত্যন্ত শীর্ণ এক বৃদ্ধা আর তার অসুস্থ ঘড়ঘড়ে, ছবছর ধরে বেডপ্যানবন্দি বৃদ্ধ স্বামী।
বহুদিন পর মানুষের সাড়া পেয়ে পাশের ঘর থেকে অতিপ্রাকৃত চিৎকার আসে বৃদ্ধটির। যেন সেই চিৎকারের ভেতর দিয়ে তিনি যোগাযোগ রাখতে চাইছেন অবরুদ্ধ পৃথিবীর সঙ্গে। ঘর খুঁজতে আসা নারীরা ছুটে পালিয়ে যায় সেই ঘর থেকে। গল্পটির শেষ অংশটি এভাবে এসেছে – ‘সবারই দেখা গেল প্রায় একই রকম স্মৃতি আছে। পেছনে ভয়ংকর, কেউ তাড়া করে আসছে, ছুটতে ছুটতে নিরাপদ দূরত্বে চলে যাওয়া আর হেসে গড়িয়ে পড়া…।’
নরম জলরঙের ছবিতে এভাবে সহসা যেন ফুটে ওঠে নখের দাগ, রক্তবিন্দু।
‘সাদা দেওয়াল, কালো বেড়াল’ আবার অন্যরকমের একটি আশ্চর্যময় গল্প। একটা পোষা কালো বেড়াল গলির মোড়ে অপেক্ষা করে প্রতিসপ্তাহ শেষে কর্মস্থান থেকে বাড়িতে ফেরা দেবারতির। বাড়িতে তাঁর অবসরপ্রাপ্ত স্বামী সুকান্ত আর অন্তর্মুখী পাবলো – রিমির মৃত্যুর পর যেসব ছবি খুলে দেয়ালগুলো শূন্য করে দেয়। তাঁর অন্যান্য গল্পের মতোই এখানেও ঘটনার কোনো একরোখা ভাব নেই। টুকরো কথা, টুকরো ভাবনা নিজেরাই যেন নিজেদের জুড়ে নিয়ে এগোতে থাকে। গল্পের শেষে দেবারতি অনুভব করেন তাঁর দূরে থাকার মধ্যেও বাড়ির সমস্ত কিছুতে, সুকান্ত আর পাবলোর আকুল নির্ভরতার মধ্যে এমনকি পোষা বেড়ালের প্রতীক্ষার মধ্যেও তিনিই থাকেন এবং থাকবেন। ‘তাঁর চোখ ছলছল করে, তবুও সেই ছলছলেগ চোখের তলায় সুখী বেড়ালের মতো তাঁর মন আরাম পোহায়। আর সাদা দেওয়ালের দিকে চেয়ে চেয়ে পরম সন্তোষে লেজ নাড়ে।’
বইটিতে গল্প আছে পঁচিশটি। তার মাত্র কয়েকটি নিয়েই লিখতে পারলাম এখানে। অনেক অসাধারণ গল্প এই লেখাটির বাইরে থেকে গেল। রাতের অন্ধকার ঘরে সুরের স্রোতে একা ডুবে যেতে যেতে কখন যে ভোর হয়ে যায়!
কবিতার এক পরিপূর্ণ স্বর রয়েছে তৃষ্ণার গল্পে। সেটাই স্বাভাবিক কেননা গদ্যকার ছাড়াও এই সময়ে একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি তিনি। তাঁর গদ্যের পরতে পরতে কবিতা মিশে থাকে। এরকম একটি-দুটি লাইন পড়া যাক –
১. রাত্রি জাগরণের সমান্তরাল দুটি রেখা, এঘরে, ওঘরে – যারা হয়তো পরস্পরকে স্পর্শ করবে অনন্ত অসীম কোনো ভবিষ্যৎ বিন্দুতে। (গোপালের মা)
২. দুটি বটুয়া, ছোটো আর বড়ো, তাদের মাঝখানে ছবছর সময় থেমে আছে (ওই)
৩. ঝনাৎ করে একটা বিকেল পড়ে যায়, খুচরো বার করতে গিয়ে। (পিঁপড়ের পায়ের শব্দ)
৪. লাল পাপোশে ওর কালো রেশমি গা গোটা ঘরটাকে একটা উজ্জ্বলতা দিচ্ছে, যা দুপুরকে মানায় না। (সাদা দেওয়াল, কালো বেড়াল)
৫. সাদা দেওয়াল! দুটো মাত্র শব্দেও, এত শূন্যতা থাকে। (ওই) এমন অজস্র দ্যুতিময় কবিতা সারা বইয়ে রাখা আছে। পিঁপড়ের পায়ের শব্দ গল্পের একটি সংলাপ যেন তাঁর পাঠকের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক –
‘আমি দেখতে চাইছি আপনি কেমন রিসিভার, আপনার অ্যান্টেনা কতটা পাওয়ারফুল। এই যে চরাচর জুড়ে এত সংকেত, আপনার সেগুলো ধরার আদৌ ক্ষমতা আছে কিনা।’
তৃষ্ণা বসাকের গল্প বালি ভাস্কর্যের মতো – যে-বালির প্রতিটি কণায় মরুভূমির স্মৃতিরেখা আর যার অন্তর্নিহিত জলে এক সমুদ্রের জল ধরা আছে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.