মমি তাহমিন
প্রিয় কাদম্বরী দেবী,
কেমন আছেন আপনি? সুখে নিশ্চয়ই!
সুখের জন্যেই তো মৃত্যুর সাথে সখ্য গড়লেন।
শুনেছি মৃত্যুর আগে
আপনি নীল শাড়ি পরেছিলেন
– কোন নীল? ময়ূরকণ্ঠী?
পূর্ণিমার নীল আগুনে পুড়ে ছাই হতে হতে
গায়ে জড়িয়ে নিলেন নয়নসুখ সিল্ক।
সুখ বোধকরি তখন উপচে পড়ছিল আপনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে
কাউকে পরাজিত করার সুখ।
জানেন!
আমিও নীল আগুনে পুড়ি।
পুড়ে পুড়ে নীল থেকে আরো নীল হতে হতে
এমন এক বীভৎস রূপ নিয়েছি যে
আয়নায় দেখে নিজেকে নিজেই আর চিনতে পারি না।
অবশ্য কোন মানুষ আর নিজেকে নিজে দেখেছে বলুন!
আমরা তো শুধু প্রতিবিম্বই দেখি
আয়নায় কিংবা অন্যের চোখে…
আমার চারপাশের পৃথিবী
এখন পুড়ে খাক হয় শুধু ঘৃণার আগুনে
কিন্তু তারপরও চোখের গহিনে
কোথায় যেন জ্বলে এক টুকরা ভালোবাসা
ভীষণ নীল!
আচ্ছা, আপনি কি এখনো
চাঁপাফুলের ঘ্রাণ মেখে ঘুরে বেড়ান?
আপনার ওই সুগন্ধি মাখার ধরনটি
আমার ভীষণ পছন্দের
কিন্তু এখানে আর চাঁপাফুল কোথায় বলুন!
সেই যে পিজি হাসপাতাল
আর বারডেমের সংযোগ ঘটিয়েছে যে ওভারব্রিজ
ওর উপরে আমি প্রথম দেখেছিলাম চাঁপাফুল
সদ্য কলেজ পেরোনো এক তরুণের হাতে।
তারপরে আরো বহুবার দেখেছি ফুলার রোডে,
পলাশীর মোড় আর কলাভবনের আশেপাশে।
সোনালি হলুদের মাঝে একটু কমলা ছোপ
আর কী দুর্নিবার গন্ধ!
পাগল করে ছেড়েছিল আমাকে…
খর গ্রীষ্মের দুপুরে বারবার ফিরে গেছি তার কাছে
মোহিতের মতো…
আপনাকে এখন ভীষণ প্রয়োজন কাদম্বরী দেবী
আমাকে শিখিয়ে যাবেন কী করে পারলেন আপনি!
কী করে মানুষকে পরাজিত করতে হয়,
গুঁড়িয়ে দিতে হয় অহংবোধের পাহাড়…
আমার খুব ইচ্ছে
কাউকে হারিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে চলে যাব
আমার না অনেক নীল শাড়ি আছে
আকাশ নীল, ময়ূরকণ্ঠী নীল,
নীলচে তারার মতো আবছা নীল
আর্মেনিয়ান গির্জার সাথে লাগোয়া
গ্রেভইয়ার্ডের এপিটাফের লেখাগুলোর মতো নীল।
কিন্তু আপনার মতো নীল শাড়ি পরবো না আমি
পরবো লাল…
কৃষ্ণচূড়ার মতো লাল
আমি চাঁপাফুলের সুগন্ধি নয়
বরং ঢাকা শহরের সমস্ত চাঁপাফুল জড়ো করবো আমার ঘরে
তার প্রতি আমার শেষ অর্ঘ্য হিসেবে
আর আমার কপালের টিপ হয়ে
দাউ দাউ জ্বলতে থাকবে একটি সূর্য…
একটি মুখ
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.