কবিতা
-
স্বাধীনতা স্বাধীন স্বাধীনতায়
রবিউল হুসাইন আমাদের সুখগুলো বিষণ্ণ হলে দুঃখগুলো হেসে ওঠে আনন্দরা অশ্রুসজল হলে বেদনারা পুলকিত বোধ করে বিখ্যাত ব্যক্তিগণ আরো খ্যাতি পান যাবতীয় খ্যাতি লোপ করে কুখ্যাতরা যাবতীয় কুকর্ম করে আরো কুখ্যাত হন এবং এভাবে অতিখ্যাতি লাভ করেন সম্মানীয়রা আরো সম্মানিত হন নিজেদের সম্মান হারিয়ে অসম্মানীয়রা আরো অসম্মানিত হন সমাজে সম্মান অর্জন করে…
-
চিরকাল ঘুমায় এবার
জহুরুল ইসলাম ঝলমলে রৌদ্রের অন্ধকারে, পথের কিনারে, জলে ছেঁড়া ফুল পড়ে থাকে অশ্বত্থের তলে। এই পথে পথিকের আনাগোনা ঢের। তবু চুপিসারে ফেলে অন্ধকারে গিয়েছে যে চলে। তরাসে বাতাসে বুক তার হিম হয়ে আসে। অাঁখি দুটি তার চিরকাল ঘুমায় এবার। আকাশের তারা ঢালিতেছে আলোর ফোয়ারা। তবু চোখে ঘুম, বাহিরে কান্নার ধুম।
-
পাহাড়ের খোঁজে
নওশাদ জামিল শহরে পাহাড় নেই। পাহাড়ের খোঁজে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছি আমি। বিসত্মৃত শহর পার হয়ে যেতে যেতে – তারপর অনেক মাইল হেঁটে গিয়ে মনে হয় – এ-শহরে আমার আপন কেউ নেই। খালা নেই, মামাও নেই। গুহাঘরে প্রতিদিন যারা কাজ করে, সুন্দর সুন্দর জামা-শার্ট তৈরি করে তারাও আপন নয়। দলবেঁধে গুহা থেকে তারা সন্ধ্যায়…
-
পাতা-পোড়ানোর কাল
সেলিম মাহমুদ আমি আমার গভীরে আর দেখি না পাতা-পোড়ানোর কাল হলুদ-বিবর্ণ পাতা সব করে কলরব রাত্রি পোহাইল, কাননে কুসুমকলি সবই ফুটিল! এক প্রহরের সেই যে অর্জন; যাকে দেখি না রুটিনে তবে খাতার পাতায় তার সীমাহীন চলাচল টের পাই ভ্রমরের গুঞ্জরণে আর পাই সুইচোরা নামে ছোট এক পাখির বাসায়।
-
সালতামামি
জাহিদ মুস্তাফা যে গেছে সে ভালোয়-মন্দে মেশা সে দিয়েও গেছে নিয়েও গেছে কিছু মহাকালের মহাজনের অযুতকালের আয়ুরেখার পিছু। বছরশেষের হিসাব-নিকাশ, সে এক অন্বেষা সময়রথের লেনাদেনায় নিত্যকালের নেশা। যে গেছে সে যাক, মনের খোরাক মেপে স্মৃতির ভেতর গতির বোরাক চেপে যাক না সময় চতুর খেলায় জিতে বিস্মৃতি-দূর অবহেলার গভীরতর শীতে। টানাপড়েন হিসাব কষে কষে বেহিসেবের…
-
হারিকেন ১২
সুহিতা সুলতানা আজ এমন দিনে তারে বলা যায় নিষ্পেষিত হাওয়ায় উলঙ্গ আনন্দ নিয়ে কালো বন্যতায় চৌদিক অাঁধার করে রাখে সে কী কখনো কারো ছিল? এত হিংস্রতা ভালো নয় জেনো, দাসত্বের চেয়ে মৃত্যু ঢের শ্রেয় দাহ আর নির্জনতায় কথার ভিন্নতা দীর্ঘ সময়ের ভেতরে ক্রমশ অচেনা শহরের উপকণ্ঠে নিয়ে যায়
-
লোকগল্পের কবিতা
আমিনুর রহমান সুলতান ঘোড়াদৌড়ের মাঠ পেয়েছেন যে খেলে যাবেন ধলপ্রহর অবধি ঘোড়া থামান ঘোড়া থামান ঘোড়া থামে থামতে থামতে তো কিছুটা সময় নেবেই সময় সে কোথায় না নেয়, নেয় না বরং দেয় দেয় মিছিলের কণ্ঠে; গণজাগরণ মঞ্চে লোকগল্পের আসর পাতিয়ে বলে যায় ভোরের দিঘিরপাড়ে গোসল সারা গৃহস্থ আর চোরের কাহিনি, যে যাকে যেভাবে নেয় কার…
-
লীলা
পার্থপ্রতিম আচার্য হাঁটুসমান জলে কাঁধ তুলে দাঁড়িয়েছে দামঘাস… তলিয়ে যাওয়া বীজতলা, দিগ্বিদিকের কাদা পায়ে পায়ে এসে ঠেকেছে ভেজা সড়কের লীলায়। ছাউনি-টানা দোকানের বেঞ্চ বিড়ি টানছে যুদ্ধফেরত রাম, চা খাচ্ছে রগচটা লক্ষ্মণ… বানিয়ে তোলা চরিত্র চরণাঘাতে আছড়ে ভেঙে হাত ফসকে পালিয়ে গেছে ধুরন্ধর রাবণ। চালের আড়ত, বৃহদাকার লজ অবৈধ অশোককাননের দখল নিয়েছে পঙ্গপাল পুলিশ,…
-
এসরাজ
তুষার কবির ফেলে-দেয়া নোটবুক খুলে তুমি পেয়ে গেছ যত ভ্রম স্বরগ্রাম – বিকেলের ধূলিরেখা – আর চেরাই কাঠের সান্ধ্যগান। মায়াজালে ঘুরপাক খাচ্ছে দ্যাখো তোমার কোটর – নেমে যাচ্ছে ঠান্ডা জলস্রোত করোটির রেখাপথে ভেঙে যাচ্ছে কৌণিক প্রিজম – টুকরো টুকরো ক্রিস্টালের কণা। এবার গানের খাতা খোলো; জমে থাকা ধূলি ঝেড়ে গোধূলির স্বরলিপি থেকে…
-
বাতিঘর
নাসরীন নঈম শাদা কাগজে একটি নিঃসঙ্গতা রাতের আকাশে ছটফট করে দিনের বেলায় বড় বেশি প্রাঞ্জল মধ্যদুপুরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে অন্যপথ ধরে। হাঁটতে হাঁটতে পুরনো রাসত্মায় এসে দেখি শিরীষের ছায়া নেই বটের ডালে নেই কোকিলের বাস নীরব দুপুর হাঁটু মুড়ে বসে আছে আগত বিকেলের ছায়ায় ভেসে ওঠে আমার বিপুল সর্বনাশ। চোখের কার্নিশে…
-
টেলিপ্যাথি
রোকসানা আফরীন ওপারে তোমার নৌভ্রমণের অলৌকিক ইস্টিমার এপারে আমি নগ্ন শুয়ে আছি যেন মৌমাছি তুমি গাছ হতে চেয়েছো বলেই এই মনে মনে কথা বলা মনে মনে ছুঁয়ে যাওয়া আমাদের পরাবাস্তব প্রেমগুলো এভাবেই ডানা মেলে কুয়াশায় – মনে করো, বিশ্বব্রহ্মা- ঘিরে যে ঘূর্ণিত তন্ত্রজাল-মন্ত্রজাল, মহাকর্ষ টান, বস্ন্যাকহোল মহাকাশের অতীন্দ্রিয়-ভুবন, চরাচর সব শূন্য হয়ে যাবে…
-
মন্ত্র
হোসনে আরা জাহান চারপাশে সব মুখস্থ বোধ ওড়ে ছকে বাঁধা দিন ছকে বাঁধা রাতগুলো মনে থাকবার মন্ত্রটি জপ করে রাখছি না খোঁজ মনের শিমুল তুলো এত তোড়জোড় ম্যারাথন দৌড় চলে তাড়াহুড়ো আর শুভঙ্করের সাজ নিমরাজি থাকি নিজেরই করতলে জগতের ভালো ভাবায় না তাই আজ বুকের ভেতর কাচের শহর পুষে মেঠোপথ বেয়ে যতই…