উদার শিক্ষা ছাড়া গণতন্ত্র হয় না

পরিচিতি : ক্রিস্টোফার চার্লস বেনিনজার, যিনি শুধু ক্রিস্টোফার বেনিনজার নামেই পরিচিত। তিনি ১৯৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার অধ্যাপক। তিনি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) নগর পরিকল্পনা ও হার্ভার্ডের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব ডিজাইনে স্থাপত্যবিদ্যা পড়েছেন।

ক্রিস্টোফার বেনিনজার অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালে বি ভি দোশির আমন্ত্রণে তিনি হার্ভার্ডের চাকরি ছেড়ে পাকাপাকিভাবে ভারতে চলে আসেন। তিনি আহমেদাবাদে স্কুল অব প্ল্যানিং স্থাপন করেন। ১৯৮৪ সালে ইউনাইটেড নেশনস কমিশন অন হিউম্যান সেটেলমেন্টের থিম পেপার রচনা করেন তিনি। এরপর ১৯৮৬ সালে তিনি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের আমন্ত্রণে নগর উন্নয়নের পজিশন পেপার রচনা করেন। নগর উন্নয়নের জন্য যে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে, এই যুক্তি তিনিই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের বাসস্থান ও নাগরিক-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন, যার মধ্যে কলকাতার বস্তি উন্নয়ন কর্মসূচির কথা উল্লেখ করা যায়। নগর দরিদ্রদের জীবনমান উন্নয়নে তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ স্থপতি। তিনি মনে করেন, স্থপতিদের কাজ স্তম্ভ নির্মাণ করা নয়, তাঁদের কাজ দরিদ্র মানুষের আবাসন নির্মাণ করা।

সম্প্রতি বেঙ্গল পাবলিকেশনস থেকে তাঁর বই লেটার্স টু আ ইয়াং আর্কিটেক্টের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি মার্চে ঢাকায় আসেন। তখন সমাজতাত্ত্বিক, গবেষক ও ত্রৈমাসিক প্রতিচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক খন্দকার সাখাওয়াত আলী এবং বইটির অনুবাদক প্রতীক বর্ধন তাঁর সাক্ষাৎকার নেন।    

প্রশ্ন : আপনি তো অনেক দিন ধরে ভারতে আছেন। অনেকে আপনাকে মার্কিন-ভারতীয় স্থপতিও বলে থাকেন। ভারতীয়  সমাজ ও মার্কিন সমাজের মধ্যে কী পার্থক্য দেখেন?

ক্রিস্টোফার বেনিনজার : প্রথমত, আমি যদি পারতাম তাহলে ভারতীয় নাগরিক হতাম। আমার অনেক ভারতীয় বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। সেখানে কয়েক বছর থাকার পর তাঁরা মার্কিন নাগরিকত্বও পেয়েছেন। আমি ১৯৭১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ভারতে থাকছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি ভারতীয় নাগরিকত্ব পাইনি হ্যাঁ, আমার সম্পদ আছে, ব্যাংক হিসাব আছে; আমি শুধু ভোটটা দিতে পারি না। এতকাল থাকার পর আমাকে ভারতে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় নাগরিক হতে পারলে আমি নিজেকে গর্বিত মনে করতাম। ধারণা করি, বাংলাদেশেও আমি নাগরিকত্ব পেতাম না। ব্যাপারটা হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসীদের জন্য দরজা খুলে রেখেছে। তারা অভিবাসীদের কোটা কিছুটা হ্রাস করলেই এখানকার মানুষের মন দুঃখভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। ভারত নিজের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করতে পাঠাতে চায় কিন্তু আমাদের নাগরিকত্ব দিতে চায় না। তবে অনেকে যে আমাকে ইন্দো-মার্কিন স্থপতি বলে থাকেন, সেটা আমার কাছে অদ্ভুত মনে হয়। মার্কিন সমাজে এটা করা হয় না। সেখানে জাতি বা ধর্মগত পরিচয়ে কারো গায়ে লেবেল সেঁটে দেওয়া পরচর্চার শামিল।

প্রশ্ন : ভারতে আসার পর প্রথমদিকে কী কী কাজ করলেন? সেগুলোর বৈশিষ্ট্য কী?

ক্রিস্টোফার বেনিনজার : আপনারা জানেন, আমি বালকৃষ্ণ দোশির আমন্ত্রণে ভারতে চলে আসি। যদিও মীর মোবাশ্বার আলীর সঙ্গে আমার পূর্ব পাকিস্তানে আসার কথা ছিল, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে আমার আর আসা হয়নি। ১৯৭১ সালে আমি যখন পাকাপাকিভাবে ভারতে চলে আসি, তখন আহমেদাবাদে স্কুল অব প্ল্যানিংয়ের কাজ শুরু করি। বরোদায় এক বন্ধুর জন্য আমি বিনামূল্যে কিছু কাজ করেছিলাম। সেই বন্ধু এরপর কংগ্রেসে যোগ দিয়ে গৃহায়নমন্ত্রী হন। এটাই হলো সৌভাগ্য। তিনি দোশিসহ আমাকে অনেক কাজে যুক্ত করেন। আমি তখন বয়সে অনেক তরুণ, অনেকেই আমার নাম দেখে আঁতকে উঠেছিলেন। আমার মন্ত্রীবন্ধু তাঁদের উদ্দেশে বললেন, ‘আপনারা যখন ঘুমাচ্ছিলেন, তখন এই তরুণ আমার জন্য কাজ করেছেন’। সেটা ছিল হাডকোর অর্থায়নে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষদের জন্য গৃহায়ন প্রকল্প; কিন্তু আমি ছাড়া অন্য কোনো স্থপতি কাজ শেষ করেননি। বিশ্বব্যাংক আমার প্রকল্প দেখতে এসে আঁতকে উঠল, কারণ তারা এর আগে ১০০ বর্গফুটের উঠানসহ ২০০ বর্গফুটের বাড়ি দেখেনি। প্রতিটি বাড়ির ছাদে যাওয়ার সিঁড়িও ছিল। গুজরাটের মানুষ ছাদে ঘুমাত বলে এই ব্যবস্থা রেখেছিলাম। তো বিশ্বব্যাংক আমাকে বলল, ‘আপনি মাদ্রাজের নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করুন’। আমি সেখানে গেলাম। কিন্তু তারা এক বা দুটি শয়নকক্ষের
যে-ঘর বানিয়েছিল তা নিম্ন আয়ের মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে ছিল না। ফলে নিম্নমধ্যবিত্তও নয়, মধ্যবিত্তরা এসব ফ্ল্যাট কিনে নেয়। তখন আমি বললাম, আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্প করতে হবে, গৃহায়ন প্রকল্প নয়। মানুষকে আশ্রয় দিতে হবে, নির্মাণ প্রকল্প করার প্রয়োজনীয়তা নেই। আমি বললাম, আমাদের ৩০০ থেকে ৪০০ বর্গফুটের প্লট বানাতে হবে। প্লট যতই সংকীর্ণ হবে, ততই পানির পাইপ, বিদ্যুতের লাইন ও রাস্তার সঙ্গে তার দূরত্ব কমবে। মানে প্লট যত সংকীর্ণ ও গভীর হবে, ততই তার কার্যকারিতা বাড়বে। হার্ভার্ডে পড়ার সময় আমি এটা শিখেছি। মোদ্দা কথা হলো, এসব প্রকল্পের প্রাথমিক খরচ কম রাখতে হবে। সব পরিষেবা যাতে মানুষ পায় এবং সবকিছু যেন এই নিম্ন আয়ের মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। সাধ্যের মধ্যে রাখার কথা বলছি যাতে এই মানুষেরা মাসে মাসে কিস্তি দিয়ে প্লটের মালিকানা পেতে পারে। মালিকানা পেলে তারা প্লটের উন্নয়নের চিন্তা করবে। এরপর তাদের সামাজিক নিরাপত্তার প্রশ্ন আসবে। এ বিষয়গুলো আমি তরুণ স্থপতিকে লেখা পত্রাবলি বইয়ে উল্লেখ করেছি। তারা যদি বোঝে, সরকার একদিন সেখান থেকে তাদের উচ্ছেদ করতে পারে, তাহলে তারা কখনো সেই ভূমির উন্নয়ন করবে না। আর এসব যদি তাদের সাধ্যের বাইরে চলে যায়, তাহলে নিম্নমধ্যবিত্তও নয়, দেখা যাবে, মধ্যবিত্তরাই এসব কিনে নেবে। তখন ১০ বছর পর লোকে বলবে, আমরা মধ্যবিত্তদের জন্য বিনা পয়সায় ভালো প্রকল্প করেছি। হ্যাঁ, মধ্যবিত্তদের সাধ্যের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প করতে হবে। এরপর যতই আমি কাজ করতে থাকি, ততই মনে হতে শুরু করল, আমি আর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কাজ করছি না; আমি রাজনৈতিক নেতাদের জন্য কাজ করছি। শ্রমিক নেতারা আমার প্রকল্প থেকে প্রচুর টাকা বানিয়েছে। এরপর আমি জলাধার, পানির নালা বাঁধাই, সেচ প্রকল্পসহ বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করেছি। কথা হচ্ছে, ভারতের মানুষ এখনো গরিব। কিন্তু লোকে কথাটা বিশ্বাস করতে চায় না। বলা হয়, ভারতের ৩০ শতাংশ মানুষ মধ্যবিত্ত। কিন্তু দেশটির মাত্র ১ দশমিক সাত শতাংশ মানুষ আয়কর দেয়। স্বাস্থ্যবীমা আছে তিন শতাংশ মানুষের। মধ্যবিত্তের তো তিন স্বাস্থ্যবীমা থাকার কথা। তাই আমার হিসাবে দেশটির তিন শতাংশ মানুষ মধ্যবিত্ত। ভারতীয় শহরগুলোর ৬০-৭০ শতাংশ মানুষ এখনো অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করছে। এই মানুষেরা এখনো মৌলিক পরিষেবা পায় না।

প্রশ্ন : আপনি তো অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতির কথা বললেন। মানুষকে আপনি মালিকানার অংশীদারি দিতে চান। আপনি ভারতে সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের মতো প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন। এই প্রতিষ্ঠান দারিদ্র্য দূরীকরণে কীভাবে কাজ করেছে?

ক্রিস্টোফার বেনিনজার : সবাই যা করে আমিও তাই করেছি। তারপর একটি পোস্টবক্স পাওয়ার জন্য ডাক অফিসে যাই। কিন্তু তারা আমাকে একটি পোস্টব্যাগ রাখার সুযোগ দেয়, এর বেশি কিছু নয়। পরবর্তী সময়ে কাজ হিসেবে ব্যাংক হিসাব ও লেটারহেড প্যাড নিয়ে একটি ট্রাস্ট গঠন করি। বাড়ি ভাড়া করি। পাঁচজন মানুষ আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আসেন, সঙ্গে দুজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন। যারা উন্নয়নশাস্ত্র পড়েছেন, তাঁরা সবাই জেপি নায়েকের নাম শুনে থাকবেন। তাঁর পরামর্শেই আমি এই আবেদন করি। দুই মাসের মধ্যে আমি এই কাউন্সিলের নিবন্ধন পেয়ে যাই। সব ভালো কাজের পেছনে সৌভাগ্যের বড় অবদান আছে। আমার সৌভাগ্যটা হলো, জেপি নায়েকের মতো মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়া। তিনি বললেন, এরা খুবই নিবেদিতপ্রাণ মানুষ। এদের কাজের সুযোগ দেওয়া যায়। এরপর আমরা পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতির জন্য আবেদন করি। সেটাও সহজে পেয়ে যাই। এটা ছিল প্রথম ধাপ। পরবর্তী ধাপে আমরা মূল কাজ শুরু করে দিই। ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়নে আমরা আদিবাসীদের নিয়ে গবেষণা শুরু করি। এখানেও জেপি নায়েকের ভূমিকা আছে। কেন্দ্রীয় সরকার দেখল, সামাজিক বিজ্ঞানের কোনো গবেষণা সংস্থাই আদিবাসীদের নিয়ে গবেষণা করছে না। অথচ এর জন্য টাকা বরাদ্দ আছে। তাই আমরা এই টাকা পেয়ে যাই। যাহোক, ভারতের গ্রামীণ অঞ্চলে লিড ব্যাংক দারিদ্র্য দূরীকরণে কাজ করছিল। কিন্তু তাদের মডেলের কারণে গরিবরা আরো গরিব হচ্ছিল। সেখানে হতো কি, আদিবাসীরা একবার ঋণখেলাপি হয়ে গেলে তাদের বলা হতো, আরেকটি ঋণ নাও, তা দিয়ে ঋণ শোধ  করো। এর মধ্য দিয়ে তারা প্রকৃতপক্ষে আরো গরিব হতো। আমরা এই গরিবীকরণ মডেলের ওপর কাজ শুরু করি। আমরা তখন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি। আমরা তাঁদের বললাম, আপনারা গরিবদের সহায়তা করতে চাইলেও প্রকৃতপক্ষে তাদের আরো গরিব বানাচ্ছেন। এই বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। কথা হলো, আমরা যদি গরিব মানুষের উপকার করতে চাই, তাহলে তাদের জীবন-জীবিকা সহজতর করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের কিছু প্রকল্পে আমি কাজ করেছি। অনেকগুলো স্কুল নিয়ে আমরা কাজটা করেছি। আমার কথা ছিল, আমরা তো শিক্ষক দিতে পারব না; তার বদলে স্কুলে ফ্যান, বাতি, বাথরুম ঠিকঠাক আছে কি না, তা নিশ্চিত করতে পারি। এতে পড়াশোনার পরিবেশটা উন্নত হবে। আজকের মুম্বাইয়ের সব সরকারি স্কুলেই আমরা এ-কাজ করেছি। এরপর সরকার ও স্কুল বাকিটা করে নিতে পারবে। এটাই আমার দর্শন। আরেকটি কথা, আমাদের গবেষক নয়, দরকার থিঙ্কার-ডুয়ার বা চিন্তককর্মী। আমি যখন উন্নয়নশাস্ত্র পড়াতে শুরু করি, তখন পাঠ্যবই বা স্টুডিও ছিল না। আমাদের কথা ছিল, আপনি যদি বস্তি নিয়ে কাজ করতে চান, তাহলে আগে সেখানে যান। যদি গ্রামীণ উন্নয়নে কাজ করতে চান, তাহলে আগে গ্রামে চলে যান। সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে চলে আসুন, কাজে নেমে যান। আহমেদাবাদে আমরা ছাত্রদের প্রথম সিমেস্টারে এভাবে প্রশিক্ষিত করেছি। মানে প্রথমে বস্তিতে চলে যাও, যে-গ্রাম থেকে মানুষ বস্তিতে এসেছে, সেই গ্রামে চলে যাও। সেই গ্রামের পরিবেশ উন্নয়ন করো। তো আমরা প্রথম তিন সিমেস্টারে ছাত্রদের প্রথমে বস্তি, গ্রাম, শহর ও তারপর বড় নগরের পরিকল্পনা করতে শিখিয়েছি। এই ছাত্ররা সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, স্থাপত্য, ভূগোল প্রভৃতি বিভিন্ন শাস্ত্র থেকে এসেছিল। তবে তখনকার এক নারীকর্মী এখনো সেখানে কাজ করছেন, যদিও আমি তেইশ বছর আগে এই ইনস্টিটিউট ছেড়ে মূল পেশা স্থাপত্যে ফিরে আসি। সিদ্ধান্তের সঙ্গে আবেগ জড়িয়ে আছে। তবে উন্নয়নশাস্ত্রের ফল পেতে অনেক সময় লাগে বা অনেক সময় তা দৃশ্যমান নয়, স্থাপত্যের ক্ষেত্রে যা ঠিক উলটো।

প্রশ্ন  :  ভারত বা বাংলাদেশের মতো দেশের  মূল সমস্যা কী বলে আপনি মনে করেন?

ক্রিস্টোফার বেনিনজার : মূল সমস্যা হচ্ছে নীতিতে। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন একবার নিয়ম করল, পিএইচডি ছাড়া অধ্যাপক হওয়া যাবে না। ব্যাপারটা হলো, হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার করার জন্য কি আপনাকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী হতে হবে। এর জন্য এমন একজন মানুষ লাগবে যার হাতেকলমে এ-কাজ করার প্রশিক্ষণ আছে। এই নিয়মের কারণ হলো কি, ভারত পিএইচডি ডিগ্রিধারী মানুষে ভরে গেল। যারা কিছু করেন না, তারাও সামাজিক মর্যাদার জন্য পিএইচডি করতে শুরু করেন। কিন্তু তাদের কার্যকারিতা নেই। চারদিকে কানার হাটবাজার বসে গেল। জমির অভাবে মানুষের ঘরবাড়ি হচ্ছে না, এ-কথা বলার মানে হয় না। এটা ভুল ধারণা। ভারত সরকার যখন পনেরো বছর আগে শিল্পায়নে প্রণোদনা দিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জমি বরাদ্দ দিতে শুরু করল, তখন কিন্তু এ-সমস্যা হলো না। সরকার তখন কৃষকদের কাছ থেকে শত শত ও হাজার হাজার একর জমি নিতে শুরু করল। আমার কথা হলো, এই বিশেষ অঞ্চলে কৃষকদের কেন অংশীদার করা হয় না। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো কেন বিশেষ বসবাস অঞ্চল গড়ে তোলা হয় না। সেখানে এই মানুষেরা নিজেদের চেষ্টায় বাড়ি তৈরি করে নিতে পারে। সেখানে নানা ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে সেই মানুষেরা দক্ষ হওয়ার সুযোগ পাবে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো সমন্বিত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। উৎপাদন কারখানায় যেমন বিভিন্ন ইউনিট থাকে, ঠিক সেরকম। সেখানে কেন মানুষের আবাসস্থল থাকবে না। ফলে ব্যাপারটা নীতিগত। সঠিক নীতি গ্রহণ করলেই কেবল এসব সমস্যা দূর করা সম্ভব। ব্যাপারটা এরকম যে, শহরে কতগুলো ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে পারে, তার হিসাব করতে হবে। এর চেয়ে বেশি গাড়ি শহরে চলাচল করতে পারবে না। অতিরিক্ত গাড়ি চলাচল করতে দিতে হলে নিলামের মাধ্যমে লাইসেন্স দিতে হবে। সিঙ্গাপুর এটা করে থাকে, অতিরিক্ত গাড়ি ব্যবহারের জন্য সেখানকার মানুষের ৪০ থেকে ৫০ হাজার ডলার শুল্ক দিতে হয়। শহর কর্তৃপক্ষ সেই টাকাটা মেট্রো ও বাস ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যবহার করে থাকে। অর্থাৎ সমাধান আছে, কিন্তু রাজনীতিকরা তা চান না বলে হয় না। সিঙ্গাপুর তো গণতান্ত্রিক দেশ নয়, যদিও তারা নিজেদের গণতান্ত্রিক দাবি করে। সেখানেও পরিবারতান্ত্রিক শাসন চলছে। ব্যাপারটা হলো, অনেক সময় আধা বা সিকি গণতান্ত্রিক সরকার উন্নয়নের জন্য সহায়ক হয়।

প্রশ্ন : আমাদের দেশে উন্নয়ন আগে না গণতন্ত্র – এ নিয়ে বিতর্ক আছে। এক পক্ষ বলে আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র; আরেক পক্ষ বলে উলটোটা। তো আপনি এ দুটোর সম্পর্ক কীভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন?

ক্রিস্টোফার বেনিনজার : এটা তো অনেক বড় প্রশ্ন করে ফেললেন। এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আপনাকে সম্ভবত ঈশ্বরের দ্বারস্থ হতে হবে। তবে যেহেতু প্রশ্নটা করলেন, সেহেতু আমি উত্তর দেওয়ার একটু চেষ্টা করি। এ-প্রসঙ্গে আমি আবারো সেই নীতির প্রসঙ্গে যাব। ভারতীয় সংবিধানে বিকেন্দ্রীকরণ-সংক্রান্ত দুটি সংশোধনী হয়েছে। আমি মনে করি, এটা ঠিক হয়নি। এর ফলে আমার শহরে স্থানীয় সরকারের হর্তা-কর্তা কারা হলো : আধা অপরাধী, ভূমিদস্যু, ভূমি ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী প্রমুখ। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যবস্থা করার কারণে হলো কী, এই শ্রেণির মানুষের হাতে ক্ষমতা চলে গেল। গণতন্ত্র মানেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ফ্রান্স নয়। গণতন্ত্রের জন্য আমরা কেমন নীতি করলাম, সেটাই বিবেচ্য বিষয়। বিকেন্দ্রীকরণের জন্য আমরা যে-আইন করলাম তা সঠিক কি না, যে-নীতি করলাম, তা সঠিক কি না – এসব ভেবে দেখতে হবে। ফলে নীতির প্রশ্নটিই বারবার এসে যায়। প্রশ্নটা দারিদ্র্য ও গণতন্ত্রের সম্পর্ক নিয়ে নয়, প্রশ্নটা হলো, গণতন্ত্রের জন্য আমরা যে প্রাতিষ্ঠানিক হাতিয়ার তৈরি করলাম তাকে ঘিরে। গণতন্ত্র বাস্তবায়নের যে-হাতিয়ার আমরা তৈরি করলাম, প্রশ্নটা তাকে নিয়ে। ব্যাপারটা হলো, ভারতে এত দ্রুত বিকেন্দ্রীকরণ করা উচিত হয়নি। কারো বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ থাকলে তিনি বিধান বা লোকসভার সদস্য হতে পারবেন না – এই নিয়ম থাকা উচিত। আমি তো মহারাষ্ট্রে থাকি, আমার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি অপরাধের মামলা আছে। লোকসভার ৩৫ শতাংশের বেশি সদস্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আছে। সাংসদের সম্পদ তাঁদের জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমি কিন্তু ধীরে ধীরে মোদির ভক্ত হয়ে উঠছি। তিনি রিয়েল এস্টেট রেগুলেশন অ্যাক্ট বা রেরা নামে একটি আইন করেছেন। এই আইনের আওতায় ডেভেলপারদের বলতে হবে, তাঁর বিক্রীত ফ্ল্যাটটি কত বর্গফুটের, কত টাকায় তিনি সেটা বিক্রি করেছেন। ফলে প্রতারক প্রকৃতির ডেভেলপাররা  সত্যটা বলতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁদের ওপর এটা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপর বড় নোট বাতিল বা ডিমনিটাইজেশনের প্রসঙ্গে আসি, আমার ধনী বন্ধুরা বলেন, আহা! এতে গরিব মানুষদের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু এর ছয় মাস পর ভারতের সবচেয়ে বড় ও অন্যতম গরিব প্রদেশ উত্তর প্রদেশের বিধানসভার ভোট হলো, সেখানে মোদির বিজেপি বিপুল ভোটে বিজয়ী হলো। গরিব মানুষের ক্ষতি হলে তাঁরা মোদিকে ভোট দেবেন কেন? দ্বিতীয়ত, নোট বাতিলের কারণে সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের টাকা অচল হয়ে গেছে। যারা জাল নোট বানাত, তাদের টাকা অচল হয়ে গেছে। তাই আমি মনে করি, ডিমনিটাইজেশন সফল হয়েছে। এরপর জিএসটিও দারুণ একটা ব্যাপার। এর সমস্যা হলো, এতে অনেক বেশি স্তর আছে। সিঙ্গাপুরে সবকিছুর ওপর সোজাসুজি ১০ শতাংশ রাজস্ব দিতে হয়, ভারতে সেটা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু তারপরও তো সেটা আছে। আরেকটি ব্যাপার হলো, ভারতের আইনজীবীদের আয়করই দিতে হয় না। এর কারণ হলো, একসময় বেশিরভাগ লোকসভার সদস্যই আইনজীবী ছিলেন। ব্যাপারটা তাই নীতিগত। আর মোদি ক্ষমতায় আসার পর বড় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি। কংগ্রেসের সময় কিন্তু সবাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল।

প্রশ্ন : কিন্তু নরেন্দ্র মোদি তো পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের সাড়ে ১২ হাজার কোটি রুপি জালিয়াতির হোতা ও হীরা ব্যবসায়ী নীরব মোদির ব্যাপারে নিশ্চুপ। এ-ব্যাপারে কী বলবেন?

ক্রিস্টোফার বেনিনজার : ধৈর্য ধরুন। কেউ যদি কারো সম্পর্কে নীরব থাকে তাহলে তার মানে কিন্তু এই নয় যে, তিনি আর সেই ব্যক্তি একাকার হয়ে গেছেন। মহাত্মা গান্ধী অনেক বিষয়েই নিশ্চুপ ছিলেন। বলা যায়, তিনি সবার ব্যাপারেই নিশ্চুপ ছিলেন। নীরব থাকাটা অপরাধ নয়। হ্যাঁ, মোদির এ-ব্যাপারে আরো সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল। ভারতের জন্য অপরিহার্য ব্যাপার হচ্ছে, দেশটির শীর্ষ পর্যায়ে আগে রদবদল করতে হবে। মোদি ঠিক সেটাই করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সাংবাদিকরা অনেক সময় তাঁর সম্পর্কে ভুল তথ্য দেন। নীরবের ব্যাপারে তিনি নীরব, তাতে কী, তাঁর আমলে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়নি, বড় ধরনের সহিংসতা হয়নি। তিনি ট্রাম্পের মতো নির্বোধ নন। মার্কিন নাগরিক হিসেবে আমি লজ্জিত যে, আমার প্রেসিডেন্ট একজন নির্বোধ। মোদি যখন মঞ্চে ওঠেন তখন তাঁকে রাষ্ট্রনায়কের মতোই লাগে। তিনি একজন অসাধারণ বাগ্মীও বটে। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমের তো সংবাদ লাগবে, তাই তারা সবসময় খবর বানায়। তবে মোদি প্রতিবারই তাদের ভুল প্রমাণ করেন। ত্রিপুরা নির্বাচনেও তিনি সেটা প্রমাণ করলেন।

প্রশ্ন : পৃথিবীর ভবিষ্যৎ তো এখন এশিয়ার হাতে চলে এসেছে। স্থপতি হিসেবে আপনি ভবিষ্যৎটা কেমন দেখতে পান? আপনি ভারতে থাকছেন বলে নতুন সভ্যতায় বড় বড় স্থাপত্য নির্মাণের সুযোগও তো আপনার আছে?

ক্রিস্টোফার বেনিনজার : দেখুন, আগেও বলেছি, স্থাপত্য মানে বড় বড় স্তম্ভ নির্মাণ নয়। স্তম্ভ নির্মাণ আমাদের পেশার বিকৃতির শামিল। বাংলাদেশের সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় ছাত্রদের আমি বলেছি, স্থাপত্য মানে চমকবাজি নয়। বেইজিংয়ের সিসিটিভি ভবন বা দিল্লির পদ্মমন্দির নির্মাণ স্থাপত্য নয়। আমাদের কাজ হলো গ্রামে স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করা, কম দামে মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করা। আইকন হওয়া আমাদের কাজ নয়, আমাদের ভালো চিকিৎসক হতে হবে। ভালো চিকিৎসকের মতো স্থপতিদের মানুষের সেবা দিতে হবে। এক সংসদ ভবনের জন্য তো লুই কানকে আনা যেতে পারে, সেটা একটা আইকন। কিন্তু স্থানীয় সমস্যা স্থানীয় মানুষদেরই সমাধান করতে হবে। আমাদের পেশাজীবী হতে হবে। চীন ও ভারতের মতো বিকাশমান সমাজে পেশাজীবী স্থপতিদের দরকার হবে। রাস্তার কোনায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে দেখার মতো ভবন নির্মাণ স্থপতিদের কাজ নয়। তাঁদের এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাঁদের এসব নিয়ে মশকরা করতে শিখতে হবে, সেটা হলে রাজনীতিকদেরও বোধোদয় হবে। তখন তাঁরা ভাববেন, এত টাকা দিয়ে ভবন না বানিয়ে জাদুঘর বানানো যায় কি না। প্যারিসের মতো শহরে ইদানীং কিছু আবর্জনাসদৃশ ভবন নির্মিত হয়েছে। কিন্তু সেখানকার ৩০ শতাংশ মানুষ খুবই দরিদ্র দেশ থেকে আসা অভিবাসী। তো সেই টাকাটা এই মানুষদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় করা যেত।

প্রশ্ন : আপনি সারাজীবন সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক আদর্শের দিক থেকে আপনি তো কমিউনিস্ট নন।

ক্রিস্টোফার বেনিনজার : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা পৃথিবীতে মানুষের মধ্যে একটা চল শুরু হয়ে যায়। সবাই নিজেকে কোনো-না-কোনো মতাদর্শের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করে। আমার মনে হয়, স্বল্পশিক্ষিত মানুষেরা ভাব নেওয়ার জন্য নিজেদের গায়ে এমন লেবেল সেঁটে দেয়। অনেক মার্কসবাদীকে আমি জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁরা অ্যাঙ্গেলসের সব লেখা পড়েছেন কি না। অনেকেই বলেছেন, পড়েছি। কিন্তু আমার মনে হয় তারা মিথ্যা বলেছেন। কারণ, অ্যাঙ্গেলসের রচনাবলি পুরোপুরি পড়া সম্ভব নয়। একইভাবে যাঁরা নিজেদের পুঁজিবাদী পরিচয় দেন, তারাও ফ্রিডম্যান ও এমনকি অ্যাডাম স্মিথও পড়েননি। যারা নিজেদের পুঁজিবাদী মনে করেন, তারা কেন অ্যাডাম স্মিথ বা জন কেনেথ গ্যালব্রিয়েথ পড়বেন না।

প্রশ্ন : গণতন্ত্র কীভাবে কার্যকর হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

ক্রিস্টোফার বেনিনজার : গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো শিক্ষা। টমাস জেফারসন বলেছিলেন, শিক্ষাই গণতন্ত্রের ভিত্তি। তিনি স্কুল পালানো বালকদের রুখতে প্রতিটি রাজ্যে ট্রুয়েন্সি আইন পাস করিয়েছিলেন, যাতে ১৮ বছরের কম বয়সী কেউ স্কুলের বাইরে থাকতে না পারে। ১৮ বছরের কম কোনো ছেলেমেয়েকে যদি রাস্তায় দেখা যেত, তাহলে পুলিশ শুধু ওই বালক-বালিকাকেই নয়, তার বাবা-বাকেও জেলে পুরে দিত। ব্যাপারটা হলো, জেফারসন মনে করতেন, জনগণ ১২ ক্লাস পর্যমত্ম প্রমিত শিক্ষায় শিক্ষিত না হলে গণতন্ত্র করা সম্ভব নয়। আমাদের উদার শিক্ষা দরকার, চাকরি পাওয়ার শিক্ষা নয়। কিন্তু ভারতের মতো দেশে মানুষ চাকরি পাওয়ার জন্য শিক্ষিত হচ্ছে। জেফারসন বলতেন, শিক্ষার কাজ হচ্ছে নাগরিক ও নেতা তৈরি করা। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, এর কাজ হবে নেতৃত্ব তৈরি করা। আলোকিত নেতৃত্ব তৈরি করা।

প্রশ্ন : ভারতে থেকে গেলেন কেন?

ক্রিস্টোফার বেনিনজার : দেখুন, ভারতে প্রতিদিন আপনাদের মতো মানুষের সঙ্গে আমার দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে এটা সম্ভব হতো না। সেখানে বসবাসরত আমার বন্ধুরা সবাই অবসরে গেছেন। তাঁদের কেউ চাকরিতে রাখতে চায় না। কারণ, তাঁদের চেয়ে তরুণদের কম বেতনে কাজ করিয়ে নেওয়া যায়। এমনকি তাদের কথা বলার মানুষও নেই। অথচ আমি ভারতে বসে দিব্যি কাজ করে যাচ্ছি, বই প্রকাশ করে যাচ্ছি। এখানে আমার খবর নেওয়ার অনেক মানুষ আছে। কিন্তু সেখানে তাঁরা বাড়ি পরিষ্কার করানোর মানুষ খুঁজে পায় না। কিন্তু ভারতে প্রতিদিনই নতুন কিছু ঘটছে। এখানে বিরক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। ভারত, চীন, বাংলাদেশ – এসব দেশই এখন সৃজনশীলতার জায়গা।

প্রশ্ন : শেষ প্রসঙ্গ, তরুণ স্থপতিদের উদ্দেশে কিছু বলবেন?

ক্রিস্টোফার বেনিনজার : আমার বই পড়ো, হা হা হা। ব্যাপারটা হলো, সততার সঙ্গে পরিশ্রম করতে হবে। নিজের পেশার নৈতিকতার সঙ্গে কখনো আপস করা যাবে না। ডিজাইন করার সময় স্থানীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। দৃষ্টি আকর্ষক কিছু করা যাবে না। আর মনে রাখতে হবে, আমাদের মূল কাজ হলো সাধারণ মানুষের গৃহায়ন সমস্যার সমাধান করা।