ক্যামেরাপ্রেমী ওল্ড মাস্টারদের ক্যানভাস

চিত্রকরের তুলি, রং আর ক্যানভাসের সমন্বয়ে আঁকা শেষে তা হয়ে ওঠে মূর্ত এক চিত্র। দর্শকের কাছে তা কখনো কখনো সেরা এক ছবি মনে হয়। আবার না হলেও কিছু বলার নেই; কিন্তু আলোকচিত্রীর কাজটা ঠিক উল্টো, এখানে চোখে ধরা দেয় যে-দৃশ্য তা ক্যামেরার চোখেও ধরতে হয়, জানতে হয় আলো-আঁধারের খেলা। মোদ্দাকথা আলোকচিত্রীকে সেই মন ও পরশপাথরের অঙ্গুলিস্পর্শটা জানতে হয়, যার জন্য তাঁর ক্যামেরায় বন্দি হয় একটি প্রাণবন্ত ছবি। স্থিরচিত্রমাধ্যমে এ-কৌশলটি বড্ড আশ্চর্য আর জাদুকরী ব্যাপার। মুহূর্তের দৃশ্যকে ক্যামেরাবন্দি করার ভাগ্য ক’জনেরই হয় এমন? খুব বেশি আলোকচিত্রীর জীবনে এমন হয় না। যাঁরা এই আশ্চর্য স্পর্শের কাজটি ঠিকঠাক সময়ে করে নিতে পারেন – তাঁরা আলোকচিত্রের ইতিহাসে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে থাকেন।

তবে মূল আলোকপাত, এ-বিষয়ে লেখাপত্র নিয়ে। আলোকচিত্র একটি আর্ট, এ-সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন বা এর টেকনিক্যাল দিকগুলো নিয়ে কথা বলতে পারার মতো লেখকের সংখ্যা বাংলাভাষায় খুব একটা নেই – এমনটিই আমরা জানি। গত শতকের শেষদিকে এসে বাংলাদেশে আলোকচিত্রের প্রসার ঘটতে শুরু হয়েছে। কিন্তু এর পূর্বে যে আলোকচিত্র নিয়ে কাজ হয়নি তা কিন্তু নয়, কাজ হয়েছে; আলোকচিত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহও তৈরি হয়েছে সেই সময়ে। বিগত চার দশকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আলোকচিত্র বিষয়ে শিক্ষার্থী ও আগ্রহী মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

আলোকচিত্র বিষয়ে আমার বিশেষ আগ্রহের কারণ আরো একটি আছে, সেটি হলো, মুহূর্তে তোলা যে ছবি বদলে দেয় খবরের পাতা, রাজনীতির ইতিহাস এবং বন্ধ করতে পারে যুদ্ধ – সেই আশ্চর্য বিষয় নিয়ে কেন চমৎকার কোনো লেখা বা পত্রিকা বাংলায় নেই – এমন ভাবনা অনেকদিন আগে থেকে মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেত। হঠাৎ আমার এ-প্রশ্নের উত্তর দিতে হাজির ড্যাডিসমগ্র। ড্যাডি! কে সে? বাংলাদেশে ফটোগ্রাফির জনক তিনি, গোলাম কাসেম। এত বিপুল কাজ তিনি করেছেন যা সত্যি অবিশ্বাস্য। একদিকে তাঁর সৃজনশীলতার বহুমাত্রিক চর্চা, আরেকদিকে ফটোগ্রাফি – সত্যি বিস্ময়জাগানিয়া কাজের প্রতিভা ছিলেন তিনি। আর এই ড্যাডির সমস্ত কাজকে একত্র করে তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়েছেন আরেক দীপ্ত তারুণ্য আলোকচিত্রশিল্পী গবেষক সাহাদাত পারভেজ।

ড্যাডিসমগ্র প্রকাশিত হয় পাঠক সমাবেশ থেকে সাহাদাত পারভেজের সম্পাদনায়। তিনি খুঁজে খুঁজে কী করে এ-কাজটি করেছেন তা নিয়ে জ্ঞানপিপাসু পাঠকের আগ্রহের কমতি নেই। এ-আগ্রহ আমারও ছিল। সে-কারণে সাহাদাত পারভেজ আমার কাছে আগ্রহের বিষয় হয়ে ওঠেন।

দুই বছর আগে সাহাদাত পারভেজ নামে মানুষটির সঙ্গে পরিচয় ঘটে। পরিচয়পর্বটি শীতসন্ধ্যার, ভাস্কর চক্রবর্তীর ‘শীতকাল কবে আসবে, সুপর্ণা’ কবিতার মতো করেই বুঝি শীত এসেছিল অনেক অপেক্ষার পর সেবারে ঢাকার বাংলামটর মোড়ে, রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারের সামনে; চা চক্র-ধূমপান চলছে, এরই মধ্যে হঠাৎ ছোটখাটো সাধারণ গড়নের একজন মানুষ শিশুসুলভ হাসি নিয়ে সালাহউদ্দিন শিমুল আর আমার আড্ডায় ঢুকে পড়লেন। সদাদুরন্ত তৎপর শিমুল আনন্দ নিয়ে হেসে পরিচয় করালেন। তারপর অনেক কথা শেষে সেদিনের মতো বিদায়। বিনিময় হলো তারহীন কথোপকথনের নাম্বার।

তারপর অনেকদিন …

আমরা মধ্যবিত্ত খেটেখুটে খাওয়া শহরে আসা গ্রামছেঁড়া মানুষ। কাজের জন্য ছুটে চলা নিরন্তর, বাধাহীন সে-ছোটার নির্নিমেষ সময়। পুনরায় কথা হয়ে গেল তারহীন সংযোগে। লেখা চাইলাম সাহিত্যপাতার জন্য। অদ্ভুত সংরাগে রাজি হলেন, সাহিত্যপাতায় লেখা ছাপা হলো। আমাদের দেখা হলো আবার। এভাবেই একটু একটু করে বিরতিতে দেখা, তারপর কথায় কথায় জানতে থাকি গজারিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য গ্রন্থের রচয়িতা সাহাদাত পারভেজকে – কী করে বেড়ে ওঠে ছেলেবেলার দুরন্ত ইচ্ছেরা তাঁর, সেসব গল্পের ঝুলিতে টান পড়ে একদা।

নব্বইয়ের দশকে সাহাদাত পারভেজ ক্লাস সেভেনে পড়তেন। সে-সময় স্কুলের পাশের বর্ণালী স্টুডিওটি তাঁর ওপর

ভর করে। সে-স্টুডিওতে কাজ করতেন সাহাদাত পারভেজের প্রাইমারি স্কুলের সহপাঠী বিশ্বনাথ দাস, যাকে সবাই ডাকে বিশা নামে। স্টুডিওর ডার্করুমে ঢুকে অবাক হয়ে বিশার কাজ দেখতেন কিশোর সাহাদাত। কেমিক্যালের একটা চিরচেনা কড়া গন্ধ তাঁর ভালো লাগত। ভালো লাগতো ফিল্ম ডেভেলপ ও ছবি প্রিন্ট করা দেখতে। দিনের পর দিন স্টুডিওর মালিকের অগোচরে দু-বন্ধুতে ডার্করুমেই সময় কাটাতেন। একদিন স্টুডিও মালিক পলেন দাসের কাছে তাঁরা ধরা পড়ে যান।

স্টুডিও মালিক স্থানীয় স্বজনপুত্রের ফটোগ্রাফির আগ্রহকে সুনজরে নিয়েছিলেন। কিশোর সাহাদাত ধীরে ধীরে ক্যামেরায় ছবি তোলেন সেই স্টুডিও মালিকের বিশেষ প্রশ্রয়ে। তিনি ক্যামেরা ভালোবাসেন, কবিতা লিখতে ভালোবাসেন; কিন্তু এরও বাইরে তিনি আরো একটি কাজ ভালোবাসতেন, তা হলো গবেষণা। প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতিতে স্নাতক সম্পন্ন করে ভর্তি হন ‘পাঠশালা’র ফটোগ্রাফির তিন বছরের প্রাতিষ্ঠানিক কোর্সে।

কাজ শুরু করেন পেশাদার আলোকচিত্রী রূপে; নেশা যার ‘গরু খোঁজা’ গবেষণা করার কথা বলছি – তিনি তো থেমে থাকবেন না। তিনি নেমে পড়েন গবেষণার কাজে। অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তিনি কাজ করছেন প্রতিনিয়ত। একদিকে দৈনিক পত্রিকার পেশাগত দায়িত্ব, অন্যদিকে গবেষণা এবং নতুন কিছুর অনুসন্ধান। এরই ফলে প্রকাশ পেয়েছে ড্যাডিসমগ্র (চার খণ্ড), একজন সাইদা খানম, শতবর্ষের পথিক, মধুরিমায় আলাপ : গোলাম মুস্তাফার সঙ্গে, আলোকচিত্রালাপ : পাভেল রহমানের সঙ্গে ও ক্যামেরার জাদুকর : চঞ্চল মাহমুদ ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য আলোকচিত্রবিষয়ক গ্রন্থ। প্রান্তিক ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা বিষয়েও তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছেন। সাহাদাত পারভেজ, কেবল একজন সাধারণ অর্থে গবেষক নন, গবেষণা করতে গিয়ে তিনি নিজেকে নিয়ে যান সেই গবেষণাগারে – যেখানে তিনি খুঁজে ফেরেন লেখক ও লেখার পেছনের টুকরো টুকরো গল্প। ফলে তাঁর কাজ হয়ে ওঠে মূর্ত আরেকটি আর্ট। সম্প্রতি তিনি খুঁজে খুঁজে প্রকাশ করেছেন এক রত্নসম্ভার, যা বাংলাভাষায় ফটোগ্রাফি নয় কেবল, শিল্প-ইতিহাসেও স্মরণীয় ঐতিহ্যের দলিল – আলোকচিত্রপুরাণ।

বাংলা সাহিত্যের যখন যৌবনকাল, ‘ফটোগ্রাফি’ তখন শিল্পমাধ্যমে কেবল হামাগুড়ি দিচ্ছে। নব জাগরণের সোনালি সময়ে শিল্পের এই নবতর মাধ্যমকে বিস্তৃতভাবে তুলে ধরতে এগিয়ে আসেন হাতেগোনা কয়েকজন চিন্তাশীল মানুষ। ফটোগ্রাফি নিয়ে তাঁদের ধ্যানমগ্নতা আর শানিত ভাবনায় বাংলায় ফটোগ্রাফিচর্চার এক শক্তিশালী ক্ষেত্র নির্মিত হয়। তখনকার দিনে ফটোগ্রাফি ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। কেননা যেখানে শিক্ষার আলোই ঠিকঠাক পৌঁছেনি – সেখানে ফটোগ্রাফি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা তো আকাশকুসুম ব্যাপার।

কিন্তু সকল দেশে সকল যুগে তো একদল অগ্রসর চিন্তার মানুষ থাকেন, যাঁরা গোটা সমাজকে আলোর দিকে টেনে নিয়ে যান। ১৮৮৫ সাল বাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ-সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম শিল্পকলাবিষয়ক যে-পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল, তার নাম শিল্পপুষ্পাঞ্জলি। এর সম্পাদক অমৃতলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পত্রিকায় ‘আলোকচিত্র’ শিরোনামে প্রকাশিত হয় বাংলা ভাষায় ফটোগ্রাফির প্রথম ধারাবাহিক প্রবন্ধ।

ফ্রান্সে ক্যামেরা আবিষ্কৃত হয় ১৮৩৯ সালে। ঠিক এরই এক বছর পর জাহাজে চেপে কলকাতায় ক্যামেরা আসে। এ-সময়টিতে রাজা, মহারাজা, জমিদার কিংবা সম্ভ্রান্ত পরিবারের কেউ কেউ শখের বশে ক্যামেরা কিনে সীমিত পর্যায়ে লুই ডাগুয়ের নিয়মে ফটোগ্রাফিচর্চা শুরু করেন। সাধারণ মানুষের নাগালে ক্যামেরা আসতে সময় লাগে আরো অন্তত চল্লিশ বছর। ১৮৮০ থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে ফটোগ্রাফি কিংবা ছবি তোলা নিয়ে অনেক মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়। আর এ-সময়েই বাংলার শিল্পচর্চার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ফটোগ্রাফিকে দাঁড় করাতে যিনি সবার আগে ফটোগ্রাফি বিষয়ে লেখার কাজটি শুরু করেন তিনি অমৃতলাল বন্দ্যোপাধ্যায়।

এরপর ফটোগ্রাফি নিয়ে ওল্ড মাস্টারদের কত কত লেখা প্রকাশিত হয়েছে তা আমাদের অজানা ছিল। সেসব অজানা বিষয়ই আমাদের সামনে হাজির করেছেন সাহাদাত পারভেজ তাঁর আলোকচিত্রপুরাণ বইটির মাধ্যমে।

১৮৮৫ সাল থেকে দেশভাগপূর্ব সময় – এই ছয় দশকজুড়ে ফটোগ্রাফি নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন – অমৃতলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, আদীশ্বর ঘটক, মন্মথনাথ চক্রবর্ত্তী, আনন্দকিশোর ঘোষ, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, মহিমচন্দ্র ঠাকুর, সুকুমার রায়, সুকুমার মিত্র, আর্য্যকুমার চৌধুরী, পরিমল গোস্বামী, সতীশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, চারু বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন্দ্র দেব, প্রসাদদাস রায়, অনিলচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, রাজকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, পরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত এবং গোলাম কাসেম ড্যাডি। এ-লেখাগুলিকে বাংলাভাষায় ফটোগ্রাফির আদি প্রবন্ধ বলা হয়।

ডাগুয়েরোটাইপ, ক্যালোটাইপ, গ্লাস প্লেট নেগেটিভ আর সেলুলয়েড যুগের পর দুনিয়ায় এখন রাজত্ব করছে ডিজিটাল ফটোগ্রাফি। আর এ-কালে ফটোগ্রাফিকে বলা হয় দৃশ্যশিল্পের সবচেয়ে কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম। বাংলায় এই ফটোগ্রাফি মাধ্যমের যে গৌরবযাত্রা রয়েছে; তার বিভিন্ন পর্বে আলো ফেলে সাহাদাত পারভেজ তৈরি করেছেন আলোকচিত্রপুরাণ। আলোচিত এ-ফটোগ্রাফি বিষয়ক বেঙ্গল ওল্ড মাস্টারদের লেখাগুলি নিয়ে আলোকচিত্রপুরাণ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে কথাপ্রকাশ। প্রচ্ছদ করেছেন চিত্রকর আনিসুজ্জামান সোহেল। বইটির গায়ের মূল্য ৭০০ টাকা।

উৎসর্গপত্রে সম্পাদক লিখেছেন, ‘আজ হইতে ১৯০ বৎসর পূর্বে ফরাসি দেশে লুই ডাগুয়ের নামের এক ব্যক্তি ক্যামেরা নিয়া গভীর ধ্যানমগ্ন ছিলেন। তিনি মনে করিতেন, ক্যামেরায় ধারণ করা ছবি কোনও-না-কোনও উপায়ে স্থায়ী করা যাইবে। এই আশায় তিনি তাঁহার সমস্ত সময় আর অর্থসম্পদ বিনিয়োগ করিতে লাগিলেন। কিন্তু তাহাতে কোনও প্রকার ফল পাওয়া যাইতেছিল না। তিনি হতাশ না হইয়া এ বিষয়ে আরও চেষ্টা করিতে লাগিলেন। ওই সময়ে লোকে তাঁহাকে উন্মাদ ভাবিতে শুরু করিল। তাঁহার স্ত্রী সেই দেশের প্রধান বৈজ্ঞানিকের কাছে গিয়া স্বামীর চেষ্টার কথা বলিলেন এবং এ বিষয়ে কোনও আশা আছে কিনা আর এই প্রকার চেষ্টা উন্মাদের লক্ষণ কিনা – জানিতে চাহিলেন। বৈজ্ঞানিক বলিলেন, উহাতে কোনও রকম আশা নাই; তবে কেবল ওই কারণে তাঁহার স্বামীকে উন্মাদ ভাবা উচিত নহে। পরবর্তী সময়ে তামাম দুনিয়ার মানুষ লোকটিকে ফটোগ্রাফির অন্যতম জনক বলিয়া মানিয়া লন।

‘এই ঘটনার ১৪৫ বৎসর পর বাংলাদেশের এক লোক জৈব রসায়নে পিএইচডি করিতে বিলেতে গেলেন। সাইকেলে চাপিয়া বিভিন্ন শহরে ঘুরিয়া বেড়ানো ছিল তাঁহার অন্যতম নেশা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাইবেন শুনিয়া তাঁহার এক সহপাঠী তাঁহাকে একটা ক্যামেরা আনিতে বলিলেন। নিউ ইয়র্ক থেকে তিনি একটা ক্যামেরা কিনিয়া আনিলেন। অনেক দিন হইয়া যায়; সহপাঠী টাকাও দেয় না, ক্যামেরাও নেয় না। লোকটি চিন্তা করিলেন, ক্যামেরাটির অনাদরে পড়িয়া থাকা ঠিক না। কিন্তু ক্যামেরাটি তিনি চালাইবেন কেমন করিয়া? তাঁহার তো এ বিষয়ে কোনও দীক্ষা নাই। তিনি নিয়মিত লাইব্রেরিতে গিয়া ফটোগ্রাফি বিষয়ে নানা বইপত্র পড়িতে শুরু করিলেন। বই পড়িতে গিয়া তিনি ছবি তোলার নেশায় বুঁদ হইয়া গেলেন। পিএইচডি তিনি সম্পন্ন করিয়াছিলেন বটে। কিন্তু তাঁহার আলোকচিত্রী পরিচয়ই বড় হইয়া উঠিল। দেশে ফিরিয়া তিনি আলোকচিত্রবিদ্যার ‘পাঠশালা’ খুলিলেন। তাঁহার দেশ যেন বিশ্ব আলোকচিত্রাঙ্গনে মাথা উঁচু করিয়া দাঁড়াইতে পারে – সে বিষয়ে তিনি গবেষণা করিতে লাগিলেন। লোকটার স্বপ্ন বিফলে যায় নাই। বিজ্ঞানী না হইয়া আলোকচিত্রী হইবেন – এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় লোকে তাঁহাকে উন্মাদ ভাবিতেন কিনা জানি না। তবে আমার কাছে লোকটাকে উন্মাদ লাগে। লোকটার নাম শহিদুল আলম।’

লেখাক্রমের দিকে লক্ষ করে দেখা যায়, সাহাদাত পারভেজ সুপঠিত এবং গবেষণালব্ধ ফুলের পরে ফুল জুড়ে যেন একটি মালা গেঁথেছেন গীতল ভঙ্গিতে, ‘নব জাগরণের স্বর্ণসময় ও বাংলায় ফটোগ্রাফিচর্চা’ শিরোনামের লেখায়। এরপর দেখা যায় ওল্ড মাস্টারদের লেখার ক্রমান্বয়ে পুরাকালে লেখা প্রবন্ধগুলো। এছাড়া রয়েছে ওল্ড মাস্টারদের তোলা আলোকচিত্র, আখ্যাপত্র, লেখক নির্ঘণ্ট ও তথ্যসূত্র – যা এ-বইটিকে করে তুলেছে সম্পূর্ণ ভিন্নরূপের একটি আকরগ্রন্থ। নতুন যুগের যাঁরা পুরনো দিনের ফটোগ্রাফি চর্চার কথা জানতে চান তাঁরা আনন্দের সঙ্গে এ-গ্রন্থের দ্বারস্থ হতে পারবেন নিঃসন্দেহে।