রাজধানী ঢাকা শহর আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যাবতীয় কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু। ১৬০৮ সালে সুবেদার ইসলাম খান সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাদেশিক রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত করেন। তারিখটি ছিল ১৬ জুলাই। বলা যায় এই দিনটি ঢাকা শহরের জন্মদিন। ঢাকা প্রথম স্থাপিত হয় বিক্রমপুরের সেন আমলে এবং পরে স্বাধীন সুলতানি আমলে তার আরো উন্নতি হয়। এইসব কারণে মোগলরা রাজধানী হিসেবে এই শহরকে বেছে নিয়েছিলেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় চারশ বছরে চারবার বিভিন্ন সময়ে এই শহরটি রাজধানী হয়েছে। তাই ঢাকা শহর মোটামুটি বিচ্ছিন্নভাবে গড়ে উঠেছে। একটি শহরের ভাগ্যে এমন বৈচিত্র্য পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেছে কিনা জানি না। এদিক থেকে ঢাকা শহরটি একটি অনন্য রেকর্ডের অধিকারী। এদেশের রাজধানী বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক কারণে সোনারগাঁ, গৌড়, তা-া বা তাড়া, রাজমহল, ঢাকা এবং মুর্শিদাবাদে বারবার বদল করা হয়। ১৭০৬ সালে বর্গীদের অত্যাচারের কারণে রাজধানী স্থানান্তরিত হলে ঢাকা শহর প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে ওঠে। মুর্শিদাবাদের তখন প্রচুর সুনাম। লন্ডন শহরের চেয়েও মুর্শিদাবাদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আর আকারে-আয়তনে বড় ছিল। ইংরেজ আমলে ঢাকা শহর আবার গুরুত্ব পেতে থাকে। বিশেষ করে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ববঙ্গের আঞ্চলিক রাজধানী হিসেবে এই শহরে- সপ্তদশ শতাব্দীর মোগল আমলে নির্মিত লালবাগ দুর্গের সরকারি নির্মাণ ও পরিকল্পনার পর – প্রথম কাজ শুরু হয়। কিন্তু স্থায়িত্বকাল ছিল মাত্র ছয় বছর অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে গেলে আবার ঢাকা শহরের উন্নয়নে ভাটা পড়ে। এরপরে ১৯৪৭ সালে ভারতভাগের পরে আবার আঞ্চলিক রাজধানী এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের পরে পূর্ণ রাজধানী হিসেবে আত্মপ্রকাশ। ঢাকা শহরের বয়স এখন ১৬০৮ থেকে ধরলে এই ২০০৩-এ- দাঁড়ায় ৩৯৫ বছর। কলকাতার চেয়েও তা পুরনো। আর মাত্র ৫ বছর পর অর্থাৎ ২০০৮ সালে ঢাকার বয়স ৪০০ বছর পূর্ণ হবে। আমাদের দেশটি অতীতকাল থেকে বিভিন্ন বিদেশী শাসকের দ্বারা শাসিত হয়ে এসেছে। সরকারি ভাষা পর্যন্ত এদেশীয় ছিল না। সংস্কৃত, ফারসি এবং সবশেষে ইংরেজি ছিল রাজভাষা। এইসব কারণে একেক সময়ে সেই শাসকদের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির ছাপ এদেশে পড়েছে, বিশেষ করে এই ঢাকা শহরের ওপর। এর মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মোগল এবং ব্রিটিশ আমল। সেইসব আমলের কীর্তি স্থাপত্যশিল্পে দেখা যায়। লালবাগ দুর্গ, ছোট কাটরা, বড় কাটরা থেকে বড়লাট ভবন, কার্জন হল, পুরনো হাইকোর্ট ভবন ইত্যাদি। তাতে একথা প্রমাণিত হয় যে, রাজনৈতিক শাসন থেকেই একটি রাজধানী শহরের যাবতীয় উন্নয়নমূলক কর্মকা- আবর্তিত হয়। অন্যদেশের সংস্কৃতি ও ভাষা এই শহরের ওপর বারবার আরোপিত হয়েছে, কখনো ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব হয়নি। এতে একদিকে যেমন বলা যায় পরাধীন থাকায় অতীতে আমরা কখনো নিজেদের মতো করে কোনো কিছু গড়ে তুলতে পারিনি, আবার অন্যদিকে বলা যায় ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি এসে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির মাত্রা ও বোধকে সমৃদ্ধ এবং বিস্তার করতে সাহায্য করেছে। এই ঋদ্ধবান সংস্কৃতির উপলব্ধি যখন শীর্ষ পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল তখনই এদেশের মানুষ স্বাধীনতার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং এতে তারা সফলকাম হয়েছিল। সে-কারণে আজ আমরা স্বাধীন এবং সার্বভৌম একটি দেশের অধিবাসী। এই স্বাধীনতা যে কত বড় অর্জন তা আমরা যতই সময়ের সঙ্গে এগোতে থাকব, ততই প্রবল ও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারব। স্বাধীনতা-সংগ্রামে ঢাকা শহরেরও উজ্জ্বল অবদান আছে— অর্থাৎ বলা যায়, এই শহরটি আমাদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ে এমনভাবে ওতপ্রোতভাবে জড়িত যে বাংলাদেশ এবং ঢাকা শহর একে অপরের পরিপূরক হিসেবে পরিগণিত হয়ে পড়েছে।
ঢাকার কথা বলতে গেলে বাংলাদেশ নামে এই ভূখ-ের কথা চলে আসে। মানবসভ্যতার প্রথম বিপ্লব বলা হয় কৃষিকর্মকে এবং দ্বিতীয় বিপ্লব নগরায়ণ। সারা বাংলার প্রথম নগরায়ণ শুরু হয়েছিল তৃতীয় শতকে। বড় ফকিরের হঠাৎ পাওয়া ৬ লাইনের ৮৫ অক্ষরবিশিষ্ট মহাস্থান শিলালিপিতে এই কথা প্রথম জানা যায়। হিউয়েন সাং বাংলার প্রাচীনতম রাজধানী শহরে এসেছিলেন সেই সময়ে। নাম ছিল পু-্রনগর বা পু-্রবর্ধন। পু-্র অর্থাৎ আখ বা কুশোর প্রচুর উৎপাদিত হতো বলে এই নাম। তিনি বর্ণনা করেছেন যে, বহুদূর থেকে এই নগরের মন্দির-চূড়া দেখা যেত যার উচ্চতা ছিল ১৫০ ফুটের মতো। নগরায়ণের সঙ্গে স্থাপত্যের নিবিড় সম্পর্ক। সামগ্রিকভাবে মানুষের রাষ্ট, বাণিজ্য ও সংস্কৃতি পরিচালনা ও বিকশিত করার জন্যে নগরায়ণের উদ্ভব। ব্যক্তিগত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাষ্ট্রিক বিভিন্ন প্রশাসনিক চাহিদার নিরসনে একটি কেন্দ্রীয় জনপদের দরকার যেখানে সুপরিকল্পিতভাবে সবকিছু স্থাপনা করা হয় সকলের সুবিধার্থে, এইরকম জনপদের নামই নগর। এই নগরকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্যে অন্য সবকিছুর মতো স্থায়ী কার্যালয়ের দরকার, দরকার আবাসভূমির, বিনোদনের। আর যে শিল্পের দ্বারা এই কর্মকা-ের বাস্তব রূপ দেওয়া হয় সেটিই হলো স্থাপত্যশিল্প যা ব্যবহারিক গুণে সমৃদ্ধ, নান্দনিক গুণে ভাস্বর এবং সর্বোপরি কালের বিরুদ্ধে সময়ের সঙ্গে টিকে থাকায় পারঙ্গম। এইজন্যে নগরায়ণের সঙ্গে নগর- পরিকল্পনা ও স্থাপত্যশিল্পের কথা চলে আসে। তৃতীয় শতকের মহাস্থানগড়ের পর অষ্টম শতাব্দীর ময়নামতি-পাহাড়পুরের নগরবিন্যাস, বৌদ্ধবিহার এবং মন্দিরের উচ্চমান, দেশীয় ও ঐতিহ্যময় স্থাপত্য-পরিচয় পাওয়া যায়। প্রাচীনকালে রাজা বা সামন্তপ্রভুরা যেখানে বাস করতেন সেটিকেই ঘিরে নগরায়ণ শুরু হতো। সাধারণত বহিরাক্রমণ এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে নগর হতো পরিখা বা প্রাচীরবেষ্টিত । এইসব দুর্গ-নগরী প্রাচীনকালে দিনাজপুর এবং রংপুরে প্রচুর নির্মিত হয়েছিল, সেগুলোর ধ্বংসাবশেষ এখনো কিছু দেখা যায়। দুর্গ বা গড় ছাড়া দেয়ালহীন নগরও নির্মিত হয়েছিল। বিশেষ করে নিম্নঞ্চলের লালমাটি আর পাহাড়ি এলাকায়। কিন্তু কালে কালে সব ধ্বংস হয়ে বিলীন হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এইসব কীর্তি যে কখনো টেকেনি, তার তিনটি প্রধান কারণ : ক. এদেশের পলিমাটির নরম ভূগঠন, খ. মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হওয়ায় বৃষ্টিবহুল, তাই আর্দ্র আবহাওয়াযুক্ত এবং গ. স্থায়ী নির্মাণ-উপকরণ যেমন, পাথর, লোহার অভাবহেতু ভবনের স্থায়িত্বলাভে অনিশ্চয়তা। এই কারণে এদেশের নদীর নাম হয় কীর্তিনাশা এবং কীর্তিগুলোকে চাক্ষুষ দেখানো যায় না। তাই আমাদের ঐতিহ্য নেই, এইরকম আশংকায় সব সময়ে যে আমরা ভুগি, তা ঠিক নয়। এবং সেইজন্যে এই দেশকে একটি বৃহৎ গ্রাম বলা হয় এবং দেখা হয় গ্রামীণ সংস্কৃতি বা সভ্যতার কেন্দ্রভূমি হিসেবে। কিন্তু এই ভূখণ্ডের ওপর হাজার হাজার বছর ধরে যে ক্রমাগত ঝড়-ঝাপটা বয়ে চলেছিল সেগুলো নিয়েও ভাবা দরকার। বেশিরভাগ পরাশক্তির কারণে নিজের ধারাবাহিকতায় নিজের ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলতে পারেনি। এই ছোট্ট দেশটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বহিরাগত রাজা- বাদশাহ-নৃপতি শাসন করেছেন গরিবের ঘরে সুন্দরী নারীকে পাওয়ার মতো। ঐতরেয় আরণ্যকে বাংলাদেশ সম্বন্ধে প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। তারপর ষষ্ঠ শতাব্দীতে এই দেশের পূর্বাঞ্চলের রূঢ় মানুষেরা মহাবীরের জৈন ধর্মপ্রচারে বিঘœ ঘটায়, তাই এর নাম হয় রাঢ় অঞ্চল। মহাভারত, রামায়ণ, পুরাণে এবং প্রাচীন গ্রিক ও ল্যাটিন ঐতিহাসিকদের গ্রন্থে বাংলাদেশের উল্লেখ আছে। গঙ্গারিডি বা গঙ্গাঋদ্ধির নৃপতি ছিলেন উগ্রসেনের পুত্র। ৩২৭ খ্রিষ্টপূর্ব আলেকজান্ডার এই বাংলার সমর-সজ্জা, নদ-নদী, খাল-বিল সম্পর্কে শুনে এদেশে আসার সাহস করেননি, এইসব জেনে আমরা পুলকিত ও গর্বিত বোধ করি। তৃতীয় শতাব্দীতে সম্রাট অশোক, এরপর মৌর্য এবং চতুর্থ শতাব্দীতে গুপ্ত সম্রাটেরা, ষষ্ঠ শতাব্দীতে গোপচন্দ্রদের রাজ্য, সপ্তম শতাব্দীতে মহারাজ শশাঙ্ক, এরপর সম্রাট হর্ষবর্ধন। ৬৪৭ খ্রিষ্টাব্দে হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর এই বাংলা শুধু উত্তরাঞ্চলে একশ বছরব্যাপী অন্ধকার অর্থাৎ পরবর্তীকালে মাৎস্যন্যায় যুগে প্রবেশ করে যেখানে ছিল না ন্যায়-নীতি বা আইনের শাসন। এসময়ে অবশ্য সমতট অর্থাৎ বাংলাদেশের দক্ষিণ এবং পূর্ব অঞ্চলে এই যুগ প্রভাব ফেলেনি। সেখানে ভদ্র, খড়্গ, রতি, লোকনাথ, দেব ও পরে চন্দ্রবংশ সপ্তম থেকে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত রাজত্ব করেছিল। গৌড়রাজ্যে মাৎস্যন্যায়ের পর অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বট্যপপুত্র গোপাল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজা হন— তা এই ভূখ-ের প্রথম গণতান্ত্রিক উদাহরণ এবং তা প্রায় চারশ বছর ধরে পালবংশ হিসেবে টিকে থাকে। এই বৌদ্ধধর্ম-অনুসারী পাল রাজবংশের রাজত্বকালে বাঙালির জাতিসত্তা প্রথমবারের মতো বিকশিত হয়। স্থাপত্য, ভাস্কর্য, চিত্রকলা- এ সময়ে সবদিক থেকে পৃথিবীর চিরকালের প্রতিভাধর শিল্পী-ভাস্করদের দ্বারা সৃষ্ট হয়। তাঁদের মধ্যে
ধীমান এবং বীটপাল চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। যদিও তাঁদের সৃষ্টিকর্ম বিশেষভাবে দেখানো যায় না তবু বর্তমান সময়ে এঁদের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেদেরকে গণ্য করে
বাংলাদেশ এর উজ্জ্বল সংস্কৃতির গৌরব ধারণ করে গর্বিত। বস্তুত বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বীজ এইকালে প্রথম রোপিত হয় যা এখন ধারাবাহিকতার অভাবে হারানো সোনালি যোগসূত্র হিসেবে বিবেচিত। পালবংশের পর কর্ণাটক থেকে আগত হিন্দুধর্মী সেনবংশ দ্বাদশ শতাব্দীতে সমগ্র বাংলাদেশের শাসনভার নেয়। সেন রাজারা সেই সময়ে হিন্দু পুনর্জাগরণের নামে এদেশে প্রথম সাম্প্রদায়িক অরাজকতা শুরু করে এবং তা এত প্রবল হয় যে তার জন্যে বহু বৌদ্ধধর্মাবলম্বী বাঙালি চিরকালের জন্যে এদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। ইতিহাসে এই ঘটনা গ্রেট এক্সোডাস বা বৃহৎ অভিনিষ্ক্রমণ হিসেবে পরিচিত। ধারণা করা হয় যে, সে-সময়ে এদেশের প্রচুর বৌদ্ধ শিল্পী, কারুকর্মী, জ্ঞানী-গুণী প্রাণভয়ে পাশের অন্য দেশগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং এইভাবে এদেশের শিল্পসংস্কৃতি প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে অন্যান্য দেশে স্থানান্তরিত হয়। এ কারণেই পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহারের প্রভাব নিয়ে স্থাপিত হয় কম্বোডিয়ার অ্যাংকর ওয়াট এবং অ্যাংকর খম্ব, পরে জাভার বরবুদরের বৌদ্ধমন্দির। সেনবংশের পর এদেশ মুসলমানদের অধিকারে আসে ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ১২০৪ সালে তুর্কি সমরবিদ বখতিয়ার খিলজির আক্রমণে। তখন পর্যন্ত বাংলার দক্ষিণাঞ্চল মুসলিম শাসনে আসেনি। গৌড় থেকে বৃদ্ধ রাজা লক্ষ্মণ সেন বিক্রমপুরে এসে হাজির হন। ১৩৩৮ সালে সোনারগাঁয়ের সুলতান ফখরউদ্দিন দিল্লির শাসন থেকে স্বাধীন হয়ে সুলতানি রাজত্ব শুরু করেন এবং তা ১৫৩৮ পর্যন্ত টিকে ছিল। এই দুশ বছরের সুলতানি আমলকে সোনালি অধ্যায় বলা হয়। কারণ এ সময়টি আবার বাঙালি চেতনাবিকাশের ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রাখে। বিশেষ করে, ইলিয়াস শাহি আমলে সুলতানদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উদার সহযোগিতায় হিন্দু মন্ত্রী ও পরামর্শকদের সাহায্যে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, ব্যাবসা-বাণিজ্য, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, শিল্প- সাহিত্যের প্রভূত উন্নতি হয় যা বিগত কোনো হিন্দু রাজার আমলেও দেখা যায়নি। এ সময়ে স্থাপত্যশিল্প পাল আমলের পর আবার এদেশের উপকরণ ইট, কাঠ, দেশীয় আবহাওয়া, জীবনযাত্রা, সর্বোপরি কার্যকুশলতা নিয়ে নতুনভাবে সৃষ্টি হয়। সেসবের উদাহরণ বাগেরহাটের মসজিদ ও স্মৃতিসৌধে দেখা যায়, যেগুলো বাংলার স্থাপত্যের প্রকৃত ধারা হিসেবে পরিগণিত। এইসব কারণে বখতিয়ার খিলজির আবির্ভাবকে স্মরণ ও উদযাপন না করে ইলিয়াস শাহিকে মনে করলে বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উৎসকে সম্মান করতে পারা যায়। সুলতানি আমলের পর এদেশ আসে শেরশাহের করতলে। এরপর সম্রাট আকবরের সময়েও এদেশ পাঠানবংশীয় সুলতান কররানিরা শাসন করেন। স্বাধীন বারভূঁইয়ারা ঈসা খাঁর নেতৃত্বে এ সময়ে মোগলদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরে সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে এদেশে মোটামুটি একটা স্থিতি আসতে থাকে। এই আলোচনায় দেখা যায়, এই দেশে নগরায়ণ যা হয়েছে, তা প্রায় সব সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে এক ধারাবাহিকতাহীনতার মধ্য দিয়ে। ঢাকা শহরের বেলায়ও একথা প্রযোজ্য। যেখানে একটি দেশ বা জনগোষ্ঠী বিভিন্নকালে বিভিন্ন উপায়ে বারবার পীড়িত হচ্ছে, সেখানে সেই দেশের প্রধান নগরের ভাগ্যেও একই ঘটনা ঘটা খুব স্বাভাবিক।
১৭০০ সালে ঢাকা পৃথিবীর দ্বাদশ বৃহত্তম নগরী ছিল। এই দেশ একদা ভারতের শস্যভা-ার বলে পরিচিত ছিল। এই ঢাকা শহর একদা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিসর্গ নগরী ছিল। আমরা স্বভাবতই অতীতগবী, যেহেতু বর্তমানে ক্ষীণ ও দুর্বল। এই অবস্থাকে পাশ কাটিয়ে উত্তরণের জন্যে তাই দরকার ইতিহাস-চেতনা নিয়ে অগ্রসরযাত্রা।কিন্তু আমরা এত ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে এগিয়ে গিয়েও ঢাকা শহরের সার্বিক উন্নতি করতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছি। অতীত নিয়ে গর্ববোধের পাশাপাশি বর্তমান ঢাকার চেহারা দেখে শঙ্কিত হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। ঢাকার একদিকে ভয়াবহ রূপ আর অন্যদিকে এসব সত্ত্বেও তার প্রতি প্রবলভাবে নির্ভরশীল হওয়া— এই অবস্থা একটি বিস্ফোরক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। যে কোনো মানুষ — তিনি উপায়হীন, হতদরিদ্র, ভাগ্যবিড়ম্বিত বা দুচোখভরা স্বপ্ন-নিয়ে-আসা ভাগ্যান্বেষী যুবক যেই হোন না কেন— পতঙ্গের মতো ছুটে আসেন এই শহরের দিকে শেষ আশ্রয় খুঁজতে। প্রাকৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক নির্যাতন একটি মানুষকে সবচেয়ে বেশি গৃহহীন করে তোলে- সেই মানুষকে বুকে টেনে নেয় এই ঢাকা শহর। ফলে দিনদিন ঢাকার জনসংখ্যা এমনভাবে বেড়ে যাচ্ছে যা প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফলে অসহ্য যানজট, বাসগৃহ-সমস্যা, ভাসমান বস্তি, সন্ত্রাস আর আইন- শৃঙ্খলার অবনতি— সব মিলিয়ে একটি অসহনীয় অবস্থা। তার ওপর পরিবেশ-দূষণ, ধোঁয়াশা, সবুজ গাছ-পালা নিধন, জলাভূমি ও মুক্ত সবুজভূমির স্বল্পতা—এসব তো আছেই। যাতায়াত-ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশন, গ্যাস, পানি-সরবরাহ-
এসবের ওপরও প্রবল চাপ। এইরকম একটি নেতিবাচক পরিবেশই কিন্তু ঢাকা শহরের বর্তমান পরিচয়। অথচ ১৮৯৫ সালে ঢাকা শহরের প্রথম নগর-পরিকল্পনানুযায়ী গে-ারিয়া আবাসিক এলাকা হিসেবে পরিকল্পিত হয়। ১৯১৭ সালে প্রখ্যাত নগরবিদ প্যাট্রিক গেডিস দ্বারা একটি মতামত নেওয়া হয়েছিল। নিসর্গবিদ প্রাউডলক রমনার নিসর্গ পরিকল্পনা করেছিলেন। ১৯৫৯ সালে ব্রিটিশ উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান মিনোপ্রিয় অ্যান্ড স্পেনলি অ্যান্ড পি ডব্লিউ ম্যাকফারনেল ঢাকা নগরীর মহাপরিকল্পনা করেন। এখন পর্যন্ত তাঁদের পরিকল্পনাই বহাল এবং সেইমতো ঢাকা শহর গড়ে উঠেছে। ১৯৮০ সালে আরেকটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান শ্যাকল্যান্ড কক্স পার্টনারশিপ কর্তৃক এর মূল্যায়ন করা হয়। তারপর আরো নাকি কাজ হয়েছে পরিকল্পনার ক্ষেত্রে, সে-বিষয়ে আমরা এখনো কিছু জানতে পারিনি। পরিকল্পনা হয়েছে কিন্তু এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে সুষ্ঠু পরিকল্পনা-প্রণয়ন একান্তভাবে কাম্য। এর মাধ্যমেই সম্ভব জনগণের মত ও বিবেচনাসহ অংশগ্রহণ, সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মীদের একান্ত বলিষ্ঠ সৃষ্টিশীল প্রয়াস, যা হবে সুদূরপ্রসারী এবং দেশের প্রতি ভালোবাসাসহ একটি সর্বজনগ্রাহ্য মহাপরিকল্পনা-অনুসারে এসবের দৃঢ় বাস্তবায়ন। আর এইসঙ্গে দরকার সমগ্র দেশের মহাউন্নয়ন-পরিকল্পনা। খ-িত বা আংশিক পরিকল্পনা অবশ্যই সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হতে হবে। গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা যখন আমাদের রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি তখন সংশ্লিষ্ট সবার মতামত ও তাদের পর্যালোচনাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। সব মিলে আলোচনা করে একটি জনকল্যাণমুখী ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুদৃঢ় আইন প্রণয়ন করে সেটিকে কঠোরভাবে অনুসরণ করা দরকার। সারা বিশ্বে প্রচলিত অতি আধুনিক নগরবিজ্ঞান-অনুযায়ী নগর-পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। প্যাট্রিক জিদি-অনুযায়ী জরিপ, বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনা— এই তিন-অধ্যায়ী পুরাতন নগর-পরিকল্পনার বদলে নীতিমুখী পরিকল্পনা করা দরকার যেখানে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করা অপরিহার্য, বিশেষ করে গণতান্ত্রিক পরিবেশে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে বিবেচিত।
বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম স্বল্পনগরায়িত দেশ, কিন্তু বর্তমানে তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় নগর-জনসংখ্যার বৃদ্ধিহার এখানে খুব বেশি। মোট জনসংখ্যার ৩২ ভাগ মানুষ ঢাকা শহরে বাস করে এবং তার প্রায় ৬০ ভাগ অধিবাসীর জন্ম ঢাকা শহরের বাইরে। বর্তমানে নগরীর ৬২ শতাংশ মানুষ বস্তি এলাকায় বাস করে; ছিন্নমূল ভাসমান অবস্থায় বসবাস করে ২.৫ শতাংশ মানুষ। এরা ঢাকা শহরের আবাসিক জমির শতকরা ০.৫ ভাগেরও কম জায়গা নিয়ে বাস করে। ঢাকা শহরের অধিবাসী ৮০ লাখ হলে তার ২৫ লাখই বস্তিবাসী। দেশের পরিবেশরক্ষায় শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার। আমাদের আছে শতকরা ৫ থেকে ৭ ভাগ। একটি শহরের মোট আয়তনের তুলনায় রাস্তাঘাট হওয়া দরকার শতকরা ২৫ ভাগ, সেখানে আমাদের আছে ৮ থেকে ১০ ভাগ। রাস্তায় নামলে মনে হয় এদেশের মানুষ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সময়ানুবর্তী এবং দায়িত্ববান, যেহেতু তারা ভীষণ ব্যতিব্যস্ত সময়ের প্রতিযোগিতায়, কে যাবে কার আগে। আরো লক্ষ করলে দেখা যায়, চারিদিকের অনিয়মের এই দেশটি সত্যিকার অর্থে মুক্ত স্বাধীন। কেউ কারো কথা শুনছে না, মানছে না। যে যার মতো অতি স্বাধীন। ঢাকা শহর দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহাপরিকল্পনা আছে ৩৫০ বর্গমাইলের, এখন ১৫০ মাইলের। শহরের মধ্যে অবস্থান করছে কিছু কিছু অনড় অচল স্থান, সেখানে সাধারণ মানুষ যেতে পারে না। যখন শহর ছিল ছোট তখনকার পরিপ্রেক্ষিতে তা হয়তো ঠিক ছিল, কিন্তু বর্তমানে তা সাবলীল উন্নয়নের বিরোধী ও বাধাস্বরূপ। এসব জায়গা-যেমন ঢাকা ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ রাইফেলসের পীলখানা, ঢাকা সেনানিবাস, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা জেলখানা, রাষ্ট্রপতি ভবন, ঢাকা স্টেডিয়াম, সরকারি সেক্রেটারিয়েট ভবন, সব স্থানান্তরের প্রয়োজন। এখন সময় এসেছে রাজধানী স্থানান্তরের। একটি শহরের একটি জায়গায় সরকারি প্রশাসন, সেনানিবাস, বেসরকারি বাণিজ্যিক, আবাসিক, বিনোদন – সব বিরিয়ানি বা খিচুড়ির মতো একই পাত্রে পরিবেশন করলে, আর যাই হোক, সাবলীল সুষ্ঠুতা আনা যায় না। সেরকম রাস্তা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রেও— একই সময়ে একই তলে বিভিন্নরকম যানবাহন কীভাবে চলাচল করবে? রাজধানীর বেলায় দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী বিভিন্ন শহরে- যেমন, প্রশাসনিক রাজধানী প্রিটোরিয়ায়, বাণিজ্যিক রাজধানী জোহানেসবার্গে, আইনসভার রাজধানী কেপটাউনে রয়েছে, তেমনিভাবে আমরা রাজধানী বিকেন্দ্রীকরণ করতে পারি চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীতে অথবা প্রশাসনিক রাজধানী হিসেবে ঢাকার অদূরে কোনো জায়গা গাজীপুর বা সাভারে স্থানান্তরিত করতে পারি—সঙ্গে সঙ্গে সেনানিবাস, বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরো কিছু। যানবাহনের বেলায়ও বিকেন্দ্রীকরণ-দর্শন অনুসৃত হওয়া দরকার, যেমন অন্যান্য শহরে আছে। বিকেন্দ্রীকরণ হতে হবে একেকটি জোন-শীর্ষক জনপদে, যেমন, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, বিনোদন-এলাকা, শিক্ষায়তন, সেনানিবাস, মুক্ত সবুজ নিসর্গভূমি, জলাধার ইত্যাদি অঞ্চলের মধ্যে এবং এদের মধ্যে থাকবে অবাধ সাবলীল যাতায়াত-ব্যবস্থা। আধুনিক শহরের মূল একটি প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য পাতাল-রেল। ঢাকাতেও এটা করা আশু-প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে দরকার বহুতলবিশিষ্ট উড়াল সেতু বা ফ্লাইওভার। ঢাকার পাশে প্রবাহিত নদী বুড়িগঙ্গা দিনদিন বুড়ি হয়ে যাচ্ছে। জল, আকাশ আর গাছ- গাছালিতে তার সৌন্দর্য যেরকম হওয়া দরকার ছিল, তা কিছুতেই করা যাচ্ছে না প্রশাসনিক আইন-শৃঙ্খলার অভাবে এবং মানুষের উদগ্র লোভ- লিপ্সায়। অথচ ব্রিটিশ আমলে তা ছিল নদীপাড়ের একটি সুন্দর নদী- জলোদ্যান। সেটিকে পুনরুদ্ধার করা দরকার। প্রায় প্রতিটি দেশের প্রধান শহর নদীকেন্দ্রিক হয় এবং সেটিকে রক্ষণ করার জন্যে যাবতীয় ব্যবস্থা থাকে। এখানে দুঃখজনকভাবে তা নেই। নদীর ধারের ব্যাবসাঘাট, লঞ্চঘাট সব সরিয়ে আরো দূরে নিয়ে সেটিকে সবার জন্যে উন্মুক্ত করা এখনই দরকার। আর দরকার মানুষের আইনের প্রতি পক্ষপাতী হওয়া, শ্রদ্ধাবান হওয়া। সমাজে ও সরকারে যে আইন প্রচলিত, বিশেষ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রণীত বাড়ি-ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রের আইনাবলি, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার মহান মানসিকতা অর্জন করা দরকার। তা নাহলে সেই লুই মামফোর্ডের বিন্যস্ত নগর-অধ্যায়ের শেষধাপে এই ঢাকা শহরের আশু পরিণতি হবে। তিনি ঊঙচঙখওঝ গ্রাম পর্যায়ে, চঙখওঝ ছোট শহরে, গঊঞজঙচঙখওঝ মাতৃসমা আদর্শ নগরে, গঊএঅচঙখওঝ পতনোন্মুখী নগরে, ঞওজঅঘঅচঙখওঝ নৈরাজ্যের শহরে এবং সবশেষে ঘঊঈজঙচ- ঙখওঝ মৃতের শহরে – এইভাবে একটি নগরের ক্রম পর্যায়ভুক্ত করেছেন। এই ছয় পর্যায়ের নিশ্চয়ই শেষের দিকে যাকে বলা যায় নৈরাজ্যকর ঞওজঅঘঅচঙখওঝ-এ অবস্থান করছে এই ঢাকা শহর। কবি শেলি লন্ডন শহরকে নিয়ে বলেছিলেন, Hell is a city, much like London, তদ্রূপ আমাদেরও না বলতে হয় Hell is a city, much like Dhaka। এখন প্রায় অধিকাংশ শহরবাসী কক্ষবাসী। তারা অ্যাপার্টমেন্টে বাস করে, সুউচ্চ দালানে, যেটি দেখে কবি জেরাল্ড র্যাফটারি লেখেন-
A filing cabinet of human lives
Where people swarm like bees in tunnelled lives,
Each to his own cell in the towered comb,
Identical and cramped we call it home.
স্থপতিরাই ত্রিমাত্রিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেন। একটি শহরের পরিকল্পনায় পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি ও প্রকৌশলীরাই মূলত থাকেন। আজ ঢাকা শহরের নির্মাণ, বিশেষ করে স্বাধীনতার পর সবই এদেশের স্থপতিদের দ্বারা করা, এক্ষেত্রে তথাকথিত বিদেশীদের কোনো অবদান নেই, এক্ষেত্রে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। অতএব এই স্থাপত্যপেশার যদি কোনো সমস্যা ঘটে, তা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে ঢাকা শহরের সার্বিক বিকাশের ওপর পড়বে। সেদিকে সংশ্লিষ্টদের খেয়াল রাখা দরকার। ঢাকা শহরের উন্নয়নের লক্ষ্যে পৃথিবীর অন্যান্য বৃহৎ নগরীর মতো ঢাকা নগর-পরিকল্পনা স্বশাসিত স্বাধীন সংস্থার দায়িত্বে রাখা দরকার এবং সঙ্গে সঙ্গে দরকার ঢাকা মেট্রোপলিটন নগর সরকার গঠন। ঢাকা শহরের এত বিয়োগচিহ্ন থাকা সত্ত্বেও গতবছর নিউজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক নগরবিষয়ক সংখ্যায় বলা হয়েছে যে, এশিয়ার ৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকার স্থান ২৬তম, দিল্লি-করাচির চেয়ে শ্রেষ্ঠ, বোম্বে-কলম্বোর সমগোত্রীয়। জনগণের আয়ুর গড়, হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা, শিক্ষার হার, বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ, গাড়ির সংখ্যা, বিনোদন, বেকারের সংখ্যা, নিরাপত্তা, সন্ত্রাস ও অপরাধের হার, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার, বার্ষিক নাগরিক জনসংখ্যার হার ইত্যাদির ভিত্তিতে এই বিচার। এইসবের উন্নতি আরো ঘটতো যদি আমরা নিঃস্বার্থ হয়ে দেশ ও মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের আরব্ধ কাজের বাস্তবায়নে নিয়োজিত হওয়ার সেই কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ ও সুযোগ লাভ করতে পারতাম। সেই পরিবেশ আমাদেরকেই সৃষ্টি করতে হবে, অন্য কেউ করে দেবে না আমাদের হয়ে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি ওয়াল্ট হুইটম্যানের ‘গ্রেটেস্ট সিটি’ শীর্ষক কবিতার অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে বিদায় নিচ্ছি : The greatest city is that which has the greatest men and women. If it be a few ragged huts, it is still the greatest city in the whole World.
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.