বলিভিয়া যাবো, এ নিয়ে বেশ এক ধরনের উত্তেজনা ও রোমাঞ্চ ছিল। যাওয়ার আগে শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে বেশকিছু পরীক্ষা সারতে হলো, অন্য কোনো দেশে যেতে এতটা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয় না। আমি তখন আন্তর্জাতিক মিডিয়াবিষয়ক সংস্থা ‘ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড’-এর সঙ্গে কাজ করছি বাংলাদেশে। ওদেরই আমন্ত্রণে ‘ওয়াদাদা নিউজ ফর কিডস সম্মেলনে’ অংশ নিতে বলিভিয়া যাওয়া। এই সম্মেলনে ঘানা, জাম্বিয়া, নেপাল, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। ‘ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড’-এর প্রধান কার্যালয় নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে। ৫ই আগস্ট ২০১৫-তে প্রথমে দুবাই হয়ে আমস্টারডামে পৌঁছি। আমস্টারডামে ৫ ও ৬ আগস্ট অবস্থান করলাম ‘হেমস্পিয়ার হোটেলে’। তখন আমাদের সন্তান অভিনু জার্মানিতে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ড্যাড বৃত্তি’ নিয়ে পিএইচ.ডি করছিল। তাকে বলায় সে জার্মান থেকে বাবাকে দেখা ও সঙ্গ দেওয়ার জন্য চলে এলো। আমার সঙ্গে থাকল শুধু নয়, পুরো আমস্টারডাম ওর সঙ্গে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়ালাম। এরপরও আমি আমস্টারডামে এসেছি, আরো কত জায়গায় যে ঘুরেছি, সেসব স্মৃতি মনে পড়ছে। না, সেসব বর্ণনা থাক, আমাকে তো এই লেখায় দূরদেশ বলিভিয়ার পাহাড়ের তুষারধবল অবস্থা, লাল গিরিমাটির স্থল, মেঘমন্দ্রিত আকাশ, পবর্তশ্রেণি চিড়ে চলে যাওয়া রাস্তার সান্নিধ্য নিয়ে কিছু স্মৃতি টেনে নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি উন্মোচনে সচেষ্ট থাকতে হচ্ছে।
ঢাকা থেকে আমস্টারডামে আসতে লাগে ১০ ঘণ্টার মতো। আমস্টারডাম থেকে ৭ই আগস্ট রওনা দিয়ে আট ঘণ্টা লাগল পেরুর রাজধানী লিমায় পৌঁছতে। ওখানে প্রায় ছয় ঘণ্টার মতো যাত্রাবিরতি। আমরা যারা ক’দেশের প্রতিনিধি একসঙ্গে বলিভিয়া যাচ্ছিলাম, তাঁদের পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট বিভাগ হাতে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের জেরা করল বেশক্ষণ ধরে। ওরা ইংরেজি ভালো বোঝে না, ল্যাটিন ভাষায় কথা বলে ও বোঝে। আমাদের কাছে অনেক ডকুমেন্ট আছে, এমনকি ল্যাটিন ভাষায় লেখা বলিভিয়ার মাইগ্রেশন বিভাগের বিশেষ চিঠিও আছে, তারপরও অনেক জেরা। আমি তো বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছি, তাতে ওরা বেশ আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে কথা বলল, আমি ইংরেজিতে বেশকিছু যুক্তি দিয়ে বোঝালাম। এরপর আমাদের পাসপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে গেল, আমাদের অপেক্ষা করতে বলল। পাহাড়ের দেশ বলিভিয়ায় যেতে পাহাড়সম সমস্যায় আটকা পড়লাম নাকি? এই ভাবনা নিয়ে বিরতির সময় পাখির চোখ দিয়ে তবু ঘুরে ঘুরে বিমানবন্দর থেকে পেরুর লিমা শহরটাকে দেখতে চেষ্টা করলাম। লিমা সমুদ্রতীরবর্তী শহর, তারই প্রতিভাস বোঝা গেল। জনবহুল শহর, রাতের আলো ঝিলমিল করা আবহ নিয়ে তখন যেন আমাদের মতো দূরবর্তী অচেনা মানুষের প্রতি তাকিয়ে আছে। না, শেষমেশ আমার ঝামেলা হলো না, সম্ভবত ঘানা থেকে আসা আমাদের একজন সহযাত্রীকে আটকে দিলো, যেতে দিলো না! পরবর্তী ফ্লাইটে অবশ্য গিয়েছিলেন তিনি। প্রায় তিন ঘণ্টা পর অবশেষে আমরা বলিভিয়ার লা পাজের মাটি স্পর্শ করলাম। নামার পরে ভয়ে ছিলাম নিশ্বাস নিতে কষ্টে পড়ি কি না! দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যভাগের দেশটি আমাদের মতো প্রাকৃতিক অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে নেই, সে দাঁড়িয়ে আছে আন্দেস পর্বতমালায় অনেক উঁচুতে, পৃথিবীর ছাদ নামেও বলিভিয়াকে ডাকা হয়। লা পাজ দেশটির প্রশাসনিক রাজধানী ও সরকারের প্রধান কর্মস্থল। লা পাজ, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০,৬৫০ থেকে ১৩,২৫০ ফুট (৩,২৫০ এবং ৪,১০০ মিটার) উচ্চতায় অবস্থিত, এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ অবস্থানের এক রাজধানী। উচ্চতা ও বিরল পরিবেশের কারণে এখানে আসা দর্শনার্থীদের নিশ^াস নেওয়া ও পরিশ্রম করা কঠিন বলে মনে হয়। এসব কারণে বুক ধুকপুক করছিল! নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশের ডেস্কের প্রধান ভদ্রমহিলা তো সেই ভয়ে বলিভিয়ায় এলেনই না, অথচ নিয়মিত বহু দেশ ঘোরাঘুরিতে তিনি অভ্যস্ত, আর আমি বাংলাদেশের সমতলভূমির এক বাসিন্দা! ভয়ে ভয়ে বলিভিয়ার বাতাসে নিশ্বাস নিতে নিতে গাড়িতে উঠলাম। ভাবছিলাম, এত দূরবর্তী দেশে এসে নিশ্বাসজনিত অসুস্থতায় কাবু হলে কে দেখবে আমাকে? এমন ভাবনার মধ্যে ‘ক্যালাকোটো’ হোটেলে ভোর-সকালে পৌঁছলাম, ৮ই আগস্ট! বিরাট পরিসরে আলাদা আলাদা অনেক ঘর নিয়ে পাহাড়ের এক টিলায় বিস্তৃত পরিসরে বাগান ও অন্যান্য সুযোগ নিয়ে হোটেলটি। হোটেলের বেশ বড় ঘরে আমার জায়গা হলো। না, আয়োজকরা কোনো কর্মসূচি আজ রাখেননি, দিনটি পুরো ছিল বলিভিয়ার আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য উন্মুক্ত। বাগানে বসে রোদঝলমল অবস্থায় দুপুরের খাওয়া, রাতে রেস্টুরেন্টে খাওয়া। দুপুরে দু-একজনের অসুস্থতা ও অস্থিরতায় ভোগার খবর পেলাম। আমাদের কিছু ট্যাবলেটও দেওয়া হলো, যদি শ্বাসকষ্ট হয়, তখন খেতে হবে। পরদিনও দুপুরের আগ পর্যন্ত বিশ্রাম ও খাপ খাওয়ানোর জন্য সময় দেওয়া হলো। দুপুরের পর কর্মশালার অধিবেশন চলল।
১৩ই আগস্ট পর্যন্ত কর্মশালার বিভিন্ন অধিবেশন চলল। এর মধ্যে একদিন ‘বারবিকিউ’ হলো – বলিভিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজন হলো, সিদ্ধ আলু, কলা-শিম-বরবটি ইত্যাদি। ছোট মাছের ভাজি-পোড়া। খাবারগুলো ভালোই লাগল। কর্মশালার নিবিড় কর্মসূচির বাইরে পাহাড়ের নিকটবর্তী হয়ে ঘোরা ও বেড়ানোর কথাই বলি। হোটেলে যখন সময় পেয়েছি, তখন দু-একজনের সঙ্গে কিংবা আমি একাই বেরিয়ে পড়েছি, আশেপাশে অনেক দূর পর্যন্ত হেঁটে শহরটা দেখেছি। হোটেলের পাশে শহরের বড় রাস্তা, বড় মার্কেট, বড় বড় বিল্ডিং। কিন্তু এর মাঝে মাঝে পাহাড়ের অংশ উঁচু হয়ে আছে, কোথাও বা জঙ্গলাবৃত পাহাড়ের খানিকটা চূড়া! খেজুরগাছের মতো গাছ কখনো কখনো রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মনুমেন্টও চোখে পড়ল রাস্তায়। তবে ঢাকার মতো পথে ভিড় নেই, বেশ ফাঁকা ফাঁকা। এর মধ্যে ১২ই আগস্ট সকাল থেকেই এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা থাকল। ‘পিকা’ নামের একটি সংগঠনের কার্যালয় ভিজিট করলাম অংশগ্রহণকারীরা। ‘পিকা’ পার্টনার সংগঠন ‘ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড’-এর। এরা চলচ্চিত্র তৈরি করে থাকে, বিশেষত শিশুদের জন্য। দু-একজন তরুণ নির্মাতার সঙ্গে আলাপ জমল। এদের অফিসটি ছিল লাপাজ শহরের মধ্যিখানে। ‘পিকা’তে দুপুরের খাবার খেয়ে আমরা লাপাজ নগর দেখার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। গেলাম পার্লামেন্ট ভবন এলাকায়। ওখানে পার্লামেন্ট ভবনের সঙ্গে বড় মনুমেন্ট দেখলাম, এর আশেপাশে শতশত কবুতর। ছবি তুললাম বেশকিছু। দু-একজন স্থানীয় লোকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু সেভাবে সংযোগ হলো না। ইংরেজি বোঝে না। শহর ঘুরে ঘুরে আঁকাবাঁকা সরু পথ দিয়ে একটি পুরনো ঐতিহ্যবাহী মার্কেট এলাকায় প্রবেশ করলাম। বলিভিয়ায় বসবাসকারীর মধ্যে ৬৫ ভাগ আদিবাসী। এই মার্কেটে এসে অনেক দোকান দেখলাম আদিবাসীদের দ্বারা শুধু পরিচালিত নয়, তাদের তৈরি হরেকরকমের পণ্য দিয়ে সাজানো। মনে হলো নেপাল, ভারত কিংবা বাংলাদেশের পাহাড়ি কোনো এলাকায় এসে পড়েছি। একই ধরনের জীবনের কোনো এক সহজাত সম্পর্ক নিয়ে যেন বলিভিয়ার এই ভূখণ্ডের মানুষের জীবনও প্রবহমান। অনেকটা কাছাকাছি লোকবিশ্বাস ও লৌকিকতার ছাপযুক্ত উপকরণও দোকানগুলোতে দেখলাম। আমি বেশকিছু ভিন্নধর্মী জিনিস কিনলাম।
লাপাজ শহর থেকে পাহাড়ি পথ দিয়ে এসে কেবল কারের স্টেশনে আমরা জড়ো হলাম। যেদিকে চোখ যায় পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ের বেশ নিচে কোথাও জনবসতি, কোথাও পাহাড়ের গায়ে গায়ে পাদদেশে জনবসতি, ছোট ছোট শহর। দূরে শৈলচূড়া ছুঁয়ে আছে সাদা মেঘ, কোথাও বা সবুজে ঢাকা পাহাড়ের গা। আমরা কেবল কারে ঘুরলাম। কেবল কার থেকে পাহাড়ের পরিমণ্ডল ভিন্ন একমাত্রায় ধরা দিয়ে তার উদার সৌন্দর্য উন্মুক্ত করে ইন্দ্রিয়গ্রামে যেন স্থায়ী সিলমোহর বসিয়ে দিলো। বেশ অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে, এক ধরনের শিহরণ নিয়ে, পাহাড়ের সংশ্লেষ নিয়ে, টগবগে হয়ে মুগ্ধতা নিয়ে কোথাকার কোন সমতলের একজন বসবাসকারীর চক্ষুগোচরে ধরা দিলো বলিভিয়ার ঐশ্বর্যের পাহাড়ি প্রতিবেশ। তা কি ভোলা সম্ভব হবে কখনো? ওখানকার কণ্ঠলগ্ন এক হোটেল-রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেয়ে আমার আমাদের ডেরায় ফিরলাম।
লাপাজ ত্যাগের আগের রাতে ‘পেনা মারকা টাম্বুতে’ ডিনার পার্টির আয়োজন করা হলো – শহর থেকে খানিক দূরে পাহাড়ের টিলার মধ্যে। ভিন্ন এক বলিভিয়ান পরিবেশে। গান চলল, নাচ হলো। বলিভিয়ান ঐতিহ্যবাহী সাজগোজ ছিল শিল্পীদের। অবারিত পানেরও ব্যবস্থা ছিল। আর খাওয়াদাওয়া চলল, বলিভিয়ান খাবার। ডিনার পার্টি চলল চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে। এরপর হোটেলে এসে সব গুছিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কাল বলিভিয়াকে জানাতে হবে গুডবাই।
যেখানে যাই – বই, সাহিত্য অনুষ্ঠান, জাদুঘর, লেখক খুঁজে বের করা কিংবা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড দেখার আকাঙ্ক্ষা মনের ভেতর থেকে যায়। এর মধ্যে একদিন সন্ধ্যায় সময় পেয়ে লাপাজে বইমেলার খোঁজ পেলাম, সেখানে গেলাম। বেশ সুন্দর গোছানো অল্পপরিসরের বইমেলা, ইংরেজি বই পেলাম না। একজন বয়স্ক নারী শিশুসাহিত্যিকের সঙ্গে পরিচয় হলো, তিনি নামকরা ও জনপ্রিয় সাহিত্যিক। বেশক্ষণ বসে দু-একজনের সঙ্গে কথা বললাম। আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, একজন যেন বিদ্যুৎ ঝলসিয়ে সেই বিখ্যাত জর্জ হ্যারিসনের গান ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গেয়ে উঠল! আমি তো অবাক, এই গান এখানকার মানুষের স্মৃতিতে শুধু নয়, কণ্ঠে! যে-গানটি ১৯৭১ সালের ১লা আগস্টে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে বিটলস গায়কদের অন্যতম জর্জ হ্যারিসন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর অনুষ্ঠানে গেয়েছিলেন, তিনি এই কনসার্টের মূল উদ্যোক্তাও ছিলেন, সেই গান দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়ার মানুষের হৃদয়ে, বুঝতে বাকি রইল না, জর্জ হ্যারিসনও এই এলাকার পরিচিত শিল্পী। এই ঘটনায় সেই মুহূর্তে আমার চোখে জল এসেছিল। এখনো এই ঘটনা মনে হলে আমার চোখের পাতা ভিজে যায় অলক্ষে! সেই গান ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ দ্রিমিদ্রিমি তালে কী এক প্রণোদনায় উন্মাতাল করে তোলে আজো।
আমি বলিভিয়ার কথা মনে করলেই বলিভিয়ার সমার্থক চে গুয়েভারার কথা মনে পড়ে যায়। বলিভিয়ায় এসে এখানকার বিভিন্নজনের সঙ্গে আলাপ করার সময়ে চে গুয়েভারার নামটি বাজিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। চে গুয়েভারার সমন্ধে যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁর নাম জানে প্রায় সবাই। কিন্তু ভেবেছিলাম চে গুয়েভারার কোনো স্মারক জাদুঘর কাছাকাছি থাকলে দেখতে যাব; কিন্তু সেটা আর হয়নি বলে এক ধরনের অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে আমাকে ফিরতে হয়েছে। চে গুয়েভারা জন্মেছিলেন আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে। ডাক্তারি সার্টিফিকেট লাভ করার পরও সে-পেশায় না গিয়ে নিপীড়িত মানুষের মুক্তির জন্য কিউবার বিপ্লবে অংশ নেন, কিউবার মন্ত্রী হোন, কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম নেতাও ছিলেন। ১৯৬৫ সালে চে গুয়েভারা স্বেচ্ছায় কিউবা ছেড়ে সশস্ত্র বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রথমে আফ্রিকার কঙ্গো, পরে গোপনে ফিরে আসেন বলিভিয়ায়। বলিভিয়ায় গেরিলা বাহিনীর নেতা হিসেবে সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। মার্কিন তাঁবেদার বলিভিয়ান সৈন্যরা চে গুয়েভারাকে আহত ও বন্দি করে মার্কিন সিআইএর হুকুমে তাঁকে ১৯৬৭ সালের ৮ই অক্টোবর হত্যা করে। চে গুয়েভারার প্রসঙ্গ টেনে আনলাম এই জন্য যে, যে ক’দিন বলিভিয়ায় থেকেছি, তাঁর কথা বারবার মনে হয়েছে। বলিভিয়ার পাহাড়ি এলাকায়, গিরিমাটিতে, প্রস্তরখণ্ডে যখনই পা রেখেছি – মনে হয়েছে, চে গুয়েভারাও হয়তো এসব অঞ্চলে পা রেখেছিলেন। চে গুয়েভারারা পদচিহ্ন রেখে যান আর সেই পদচিহ্ন ধরেই নতুন বিপ্লবীরা পথ হাঁটেন।
হোটেল ত্যাগ করে ১৪ই আগস্ট বিমানবন্দরে আসতে দেখলাম বরফাবৃত পর্বতশৃঙ্গ, সবুজ তৃণভূমি, রাস্তায় রাস্তায় বরফ জমা আর দুরন্ত হাওয়া। গাছে ও বাড়িতে হিমপাতের দৃশ্যাবলি ছবির মতো লাগছিল। আকাশে গুচ্ছ গুচ্ছ পেঁজামেঘ। সবমিলে হিমাচ্ছন্ন হয়ে লাপাজের বিমানবন্দরে পৌঁছালাম। লাপাজ থেকে লিমা, লিমা থেকে আমসটারডাম, আমসটারডাম থেকে দুবাই, দুবাই থেকে ঢাকা। ১৪ আগস্ট রওনা দিয়ে ঢাকায় পৌঁছালাম ১৬ই আগস্ট। তিন জায়গায় বিমানের পরিবর্তন। দীর্ঘ আকাশপথে যাত্রা। মনের মধ্যে সান্ত্বনা – এভারেস্ট শৃঙ্গে উঠতে পারিনি, পৃথিবীর ছাদ বলে খ্যাত বলিভিয়ায় তো উঠেছি, বিশে^র উচ্চতম রাজধানী লাপাজে তো গিয়েছি!
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.