গোলাম কিবরিয়া পিনু
-
জঞ্জাল
এত আবর্জনা জমছে! বলতে পারছিনে! ফেলতেও পারছিনে! দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে – আবর্জনার মধ্যে বসবাস! আবর্জনা ফেলল কে? জানার পরও তা বলতে পারছিনে! পরিবেশ এতটা অসহনীয় হয়ে উঠছে! পরিচ্ছন্নতার দিনগুলো চলে গেল! ঝকমকে থাকার দিনগুলো চলে গেল! পরিমার্জিত থাকার দিনগুলো চলে গেল! ধোপদুরস্ত থাকবে শুধু বিশেষ এলাকার মানুষ? আস্তাকুঁড়…
-
অন্তর্লীন
নতুন রুটিনের ছাঁচে ফেলে নিয়ে নিজেকে তৈরি করে নিচ্ছি, আমাকে আমি তুলে দিচ্ছি – রুটিন মালিকের হাতে! পাতে যা পাচ্ছি – তাই খাচ্ছি! যাচ্ছি বিউটি পার্লারে নিজেকে টেনে নিয়ে নিচ্ছি নতুন কোনো লুক! তাদের আগ্রহে স্মার্ট হতে হবে – নিজের সত্তা হারানোর বেদনায় যতই কাঁপুক বুক! হোগলা বা বাঁশের চটা দিয়ে…
-
ইঞ্জিন
কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখি ট্রেনের বগিগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে, ইঞ্জিনের কোনো দেখা নেই! কখন আসবে সশব্দে ইঞ্জিন? হুইসেল বাজিয়ে বাজিয়ে – বগিগুলোর সাথে মৈত্রীবন্ধন দৃঢ় হবে, বগিগুলো অসহায় পড়ে থাকবে না – অচল অবস্থা থেকে সচল হবে! কতদিন হলো বগিগুলো প্রত্যাশিত ইঞ্জিনের অপেক্ষায়! বগিগুলোতে ধুলো জমছে ইঞ্জিনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে…
-
নদী যখন নদীকে চুমো খায়
একটা নদী আর একটা নদীর কাছে জল চাইতেই পারে, নদীর সাথে নদীর মৈত্রী আছে বলেই সে খরস্রোতা বহমান উত্তাল-ঊর্মিমুখর ও হিন্দোলিত। একটি নদীর উৎসধারা কোনখানে থাকে নদী তা ভালো করেই জানে! নদীতে নদীতে স্বাভাবিক সখ্য! নদীর হিংসে নেই-আকচাআকচি করে না ঈর্ষাপরায়ণ তো নয়! হিংসালু হবে কীভাবে? জলের ভেতরÑহিংসার আগুন জ¦লতে…
-
শঙ্খ ঘোষ : অন্তরস্থিত সত্তা ও কবিতার অভিব্যঞ্জনা
কবি শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে আমার তিন-চারবার দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে অল্প। তাঁর কবিতা পাঠ শুনেছি কাছে থেকে, কলকাতার এক অনুষ্ঠানে, আমার কবিতাও তিনি শুনেছেন – সেই অনুষ্ঠানে। তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়া বা কথা বলার আগে থেকেই তাঁর কবিতার সঙ্গে আমার পরিচয়, বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রজীবন থেকে – তা দিন দিন আরো গভীর হয়েছে। সেই থেকে তাঁর কবিতার…
-
হৃদয়ের হিমালয়ে
তোমার হৃদয়ের হিমালয়ে – এখনো যাইনি পুরোপুরি ক্ষয়ে! দেখো – রয়েছে আমার জীবাশ্মের চিহ্ন! হলো অগ্ন্যুৎপাত, গলিত লাভাস্রোতে ভরে গেছে কতটুকু আশপাশ! হলো বৃষ্টিপাত, জলে জলে ডুবে গেছে কতটুকু আশপাশ! জমেছেও বরফ, কঠিন বরফে ঢেকে গেছে কতটুকু আশপাশ! আমি জানি – আমি হই আবির্ভূত তোমার কঠিন শিলার পর্বতমালায়, যদিও…
-
আবুল হাসনাত : কিছু ছিন্নভিন্ন অনুভব, তাঁর কবিতা ও স্মৃতিগ্রন্থ
ব্যক্তিগতভাবে লেখা ছাপানোর অনুমোদন আমি সম্পাদক আবুল হাসনাতের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ও ধারাবাহিকভাবে পেয়েছি, তা ভাবলে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ থাকে না। তিনি দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকী দীর্ঘ সময় ধরে সম্পাদনা করেন। তাঁর সম্পাদিত সংবাদ সাময়িকীতে আমার লেখা ছাপা হয়েছে ধারাবাহিকভাবে প্রায় ২০ বছর ধরে। ২০০৪ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি সাহিত্যপত্রিকা কালি ও কলমের সম্পাদকের…
-
ফ্যানের রেগুলেটর
শুয়ে পড়ে ঘুমাও! কিন্তু ভুললে চলবে না – ফ্যান চলছে মাথার ওপর! ফ্যান কত জোরে ঘুরছে তার স্পিডটা জেনে রাখো। তোমার কি গরম লাগছে? তাহলে স্পিড বাড়াও, হাত দাও – ফ্যানের রেগুলেটরে! তোমার কি ঠান্ডা লাগছে? তাহলে স্পিড কমাও, হাত দাও – ফ্যানের রেগুলেটরে! ঠান্ডার মধ্যে যদি বেশি স্পিডে ফ্যান চলতেই থাকে…
-
ঠোকর
একটা সাপ মানুষকে একটার পর একটা ঠোকর দেয় – একসাথে দশটি ঠোকর দিতে পারে না! একটা মানুষ একটা মানুষকে দশ থেকে একশটা ঠোকর একসাথে দিতে পারে! সে-কারণে সে সাপের চেয়েও ভয়ংকর সে গাণিতিক ও জ্যামিতিক জ্ঞান রাখে, সাপ শুধু যোগ-বিয়োগ জানে! সাপের লেজে পাড়া দিলে – সাপ কামড়ায়! মানুষ মানুষের হাতে হাত…
-
গহিন অরণ্যের লবণাক্ত অঞ্চলে
গোলাম কিবরিয়া পিনু ঘরের ভেতর পড়ে আছি নিজেকে করেছি বিচ্ছিন্ন ও দূরবর্তী – নক্ষত্রের আলো! স্পর্শ যেন না করি কেউ কাউকে যেন কেউ কাছে না আসে, যত বিচ্ছিন্নতা – ততই নিরাপদ! মনে হয় ভেঙে-পড়া ঘর ভস্ম হওয়া উঠানের গাছ মুখের নিকটে মুখ ফুটে কথা বলছে না কেউ বিষণ্নতার ভেতর শুধু নীরবতা, সপ্তাহের প্রতিটি…