গোলাম কিবরিয়া পিনু
ঘরের ভেতর পড়ে আছি
নিজেকে করেছি বিচ্ছিন্ন ও দূরবর্তী
– নক্ষত্রের আলো!
স্পর্শ যেন না করি কেউ কাউকে
যেন কেউ কাছে না আসে,
যত বিচ্ছিন্নতা – ততই নিরাপদ!
মনে হয় ভেঙে-পড়া ঘর
ভস্ম হওয়া উঠানের গাছ
মুখের নিকটে মুখ ফুটে কথা বলছে না কেউ
বিষণ্নতার ভেতর শুধু নীরবতা,
সপ্তাহের প্রতিটি দিনই ঊর্ণা মেঘ দিয়ে তৈরি
সূর্যডোবা হয়ে – সুনসান, নিঝুম ও নিশুতি!
বিলাপধ্বনির ভেতর ডুবে গিয়ে
একটা জলহস্তীর গ্রাস থেকে বেঁচে উঠবার
আগ্রহ ও উদ্দীপনা – প্রতি কোষে কোষে
জেগে তুলতে হচ্ছে!
যুগজীর্ণ এ-কোন সময় দীর্ণ করে ফেলছে!
মনে হচ্ছে কত হাজার বছরের বন্দিত্ব ও শৃঙ্খল
বিপুল শক্তির আধার হয়ে – আমাকে আটকে রেখেছে!
যে ঘরে আছি – সে ঘর থেকে
প্রতিটি ঘর লাগোয়া হলেও – তা এখন দূরবর্তী,
মায়ের ঘরও!
পাশে থাকা সন্তানের ঘরও যোজন দূরে,
জীবনসাথিও – সেও গুটিয়ে রেখেছে তার ছায়া
কোনো এক বেলাভূমিতে!
আমি এখন নিজেকে ছাড়া
কাউকে ছুঁতে পারি না!
এমন সময় অস্থির সময়
হৃদয়ের ভূগোলে পড়ে থাকে রক্তাক্ত জ্যোৎস্না!
এরপর কুয়াশার ভেতর ছুটতে ছুটতে
একা একা সঙ্গীসাথিহীন হয়ে –
পড়ে থাকা নিজের জীবনটাকে কুড়াতে হচ্ছে!
জীবনের দোঁআশলা মাটিতে ফোটে যে-সকল স্বর্ণপুষ্প
তা থেকেও বেশ দূরে থাকতে হচ্ছে এ-মুহূর্তে!
আমি এখন নিঃসঙ্গ একা
নিজ ঘরে – নিজের আস্তানায়,
কাকতাড়ুয়ার পোশাক পরে আছি যেন!
স্তব্ধতার অশ্রু হয় না – হয় শুধুই পাথর
পাথরের মধ্যে বসবাস!
আমি যেন আমারই প্রতিবেশী
আমি যেন আমারই পরিত্রাণকারী;
প্রতিকূলতার ভেতর শোকাচ্ছন্ন হয়ে আছি!
ঘরময় এক শিলালিপিতে শুধুই নিয়মাবলি লেখা আছে
এ-এক অভিনব রাজত্বকাল,
কোনো এক প্রাচীন রাজ-অনুশাসনের অধীনে যেন একাকী থাকা!
মনে হয় পড়ে আছি – মৌর্য আমলের
গহিন অরণ্যের লবণাক্ত অঞ্চলে!
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.