শঙ্খ ঘোষ : অন্তরস্থিত সত্তা ও কবিতার অভিব্যঞ্জনা

কবি শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে আমার তিন-চারবার দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে অল্প। তাঁর কবিতা পাঠ শুনেছি কাছে থেকে, কলকাতার এক অনুষ্ঠানে, আমার কবিতাও তিনি শুনেছেন – সেই অনুষ্ঠানে। তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়া বা কথা বলার আগে থেকেই তাঁর কবিতার সঙ্গে আমার পরিচয়, বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রজীবন থেকে – তা দিন দিন আরো গভীর হয়েছে। সেই থেকে তাঁর কবিতার ও অন্যান্য বই সংগ্রহ করি, নিয়মিত পড়ি। এই তো ২০১৫ সালে কলকাতায় গিয়ে কলেজ স্ট্রিটের আনন্দ পাবলিশার্সের বিক্রয়কেন্দ্র থেকে মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে নামের কবিতার বইটি সংগ্রহ করি। এই কবিতার বইটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। এরপর ২০১৫-তে এর একাদশ মুদ্রণ হয়। তবে ১৯৮২ সালে দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত শঙ্খ ঘোষের শ্রেষ্ঠ কবিতা-র দ্বিতীয় সংস্করণটি আমার সংগ্রহে তখন থেকেই ছিল। শঙ্খ ঘোষের শ্রেষ্ঠ কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে, কবির ৩৮ বছর বয়সে। তবে শুধু কবিতার বই নয়, তাঁর ছন্দবিষয়ক বিখ্যাত বই ছন্দের বারান্দা আমার জন্য এক অত্যাবশ্যকীয় পাঠ, যেরকম পাঠ কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ছন্দ নিয়ে লেখা বই কবিতার ক্লাসে। ছন্দবিষয়ক আরো বই তো আমার কাছে রয়েছে। আমরা যাঁরা কবিতা চর্চা করি, তাঁদের কাছে ছন্দবিষয়ক এসব বইয়ের কদর অনস্বীকার্য। শঙ্খ ঘোষের ছন্দের বারান্দা প্রথম বের হয়েছিল ৫০ বছর আগে, ১৩৭৮ সনে, আমার কছে আছে বইটির ১০৪১ সনের সপ্তম মুদ্রণ। শঙ্খ ঘোষের আরেকটি ভিন্নধারার গদ্যের বই কবিতার মুহূর্ত, বের হয়েছিল ১৩৯৩ সনে। এর ১৪০৪ সনের চতুর্থ মুদ্রণটি আমার কাছে রয়েছে। না, আর কোনো বইয়ের উদাহরণ আপাতত প্রয়োজন নেই। এসব বইয়ের উল্লেখ করলাম এজন্য যে, তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হওয়ার পরও তিনি জানেননি, আমি তাঁর একজন গুণগ্রাহী পাঠক, সেই কবে থেকে। এই যে অদৃশ্যে, অলক্ষে পাঠক হিসেবে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক, এই সম্পর্ক হচ্ছে নিখাদ এবং অমলিন। শুধু তাঁর লেখার গুণেই এর ভিত্তিমূল তৈরি হয়েছে। এ-কারণে লেখকের জীবন ও আয়ুষ্কাল আরো দীর্ঘ হয়।

শঙ্খ ঘোষের জন্ম ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২, বাংলাদেশের চাঁদপুরে, তৎকালীন অবিভক্ত ভারতে, মৃত্যু হলো ২১ এপ্রিল ২০২১ বিভক্ত হয়ে থাকা ভারতের কলকাতায়, মৃত্যুর সময়ে বয়স হয়েছিল ৮৯। কবির করোনা হয়েছিল। তিনি হাসপাতালে যেতে চাননি, বাড়িতেই ছিলেন। এমনিতেই তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুর কদিন আগে ১৪ এপ্রিল পরীক্ষার পর জানা যায়, তিনি করোনায় আক্রান্ত। এরপর তাঁর শরীর খারাপ হতে শুরু করে। অক্সিজেন নিতে হয়। শরীর আরো খারাপ হলে চিকিৎসকরা শঙ্খ ঘোষকে ভেন্টিলেটারে রাখেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। শেষমেশ করোনায় তাঁর মৃত্যু হলো। আশ্চর্য, তাঁর মৃত্যুর কদিন পরেই তাঁর দাম্পত্যসঙ্গী প্রতিমা ঘোষও ২৯ এপ্রিল মৃত্যুর কাছে পরাজিত হন, প্রতিমা ঘোষের  জন্ম হয়েছিল ১৯৩১ সালে। করোনায় শুধু ভারতে নয়, বাংলাদেশেও বহু বিশিষ্টজন প্রাণ হারিয়েছেন, সে-তালিকাও দীর্ঘ!

দুই

তাঁর বিষয়ে জানা তথ্যগুলো এখানেও চকিতে টেনে আনছি, এই কারণে যে, তিনি লেখায় ছিলেন বহুপ্রজ। তালিকাটা সে-কারণেও যে, সৃজনশীল স্পর্ধায় তিনি জীবনের সময়কে লেখায় কীভাবে নিবেদিত করেছেন তা আমরা বিবেচনা করতে পারি, তাঁর সৃজনশীলতার বিচিত্রমুখী গভীরতাও আমরা উপলব্ধি করতে পারি, সুলুকসন্ধান করে বুঝতে পারি – আমরা বিস্ময়াভিভূত হই – এমন লেখক হওয়ার দম কতটুকু লাগে! কী অলোকসামান্যতা নিয়ে তাঁর অভিনবত্ব ও রিয়ালিটি! এসব ইশারা পাওয়ার জন্য, তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকা এখানে উপস্থাপন করলাম। এখন এসব গ্রন্থ নিয়ে তাঁকে আবিষ্কার করতে পারি আরো গভীরভাবে। সেই বাজিয়ে-দেখাটা এখন অনুসন্ধানের বিষয়।

তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতার বইগুলি হচ্ছে : দিনগুলি রাতগুলি (১৯৫৬), এখন সময় নয় (১৯৬৭), নিহিত পাতালছায়া (১৯৬৭), শঙ্খ ঘোষের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৭০), আদিম লতাগুল্মময় (১৯৭২), মূর্খ বড়ো, সামাজিক নয় (১৯৭৪), বাবরের প্রার্থনা (১৯৭৬), মিনিবুক (১৯৭৮), তুমি তো তেমন গৌরী নও (১৯৭৮), পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ (১৯৮০), মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে (১৯৮৪), ধুম লেগেছে হৃৎকমলে (১৯৮৪),  লাইনেই ছিলাম বাবা (১৯৯৩) ইত্যাদি।

গদ্যগ্রন্থের মধ্যে আছে : কালের মাত্রা ও রবীন্দ্রনাটক (১৯৬৯),  নিঃশব্দের তর্জনী (১৯৭১), ছন্দের বারান্দা (১৯৭২), উর্বশীর হাসি (১৯৮১), শব্দ আর সত্য (১৯৮২), নির্মাণ আর সৃষ্টি (১৯৮২), কল্পনার হিস্টোরিয়া (১৯৮৪), জার্নাল (১৯৮৫) প্রভৃতি।

শিশু ও কিশোরদের জন্যে তিনি অনেক বই লিখেছেন। এগুলির মধ্যে আছে :  বিদ্যাসাগর (১৯৫৬), শব্দ নিয়ে খেলা : বানান বিষয়ক বই [কুন্তক ছদ্মনামে লেখা] (১৯৮০), রাগ করো না রাগুনী (১৯৮৩), সব কিছুতেই খেলনা হয় (১৯৮৭), সুপারিবনের সারি (১৯৯০), আমায় তুমি লক্ষ্মী বল (২০০৭), শহরপথের ধুলো (২০১০), সুর সোহাগী (২০১০), ছড়া সংগ্রহ (২০১০) ইত্যাদি।

তাঁর বক্তৃতা-সাক্ষাৎকারভিত্তিক সংকলনের মধ্যে আছে : অন্ধের স্পর্শের মতো (২০০৭), এক বক্তার বৈঠক : শম্ভু মিত্র (২০০৮), কথার পিঠে কথা (২০১১), জানার বোধ (২০১৩), হওয়ার দুঃখ (২০১৪)।

শঙ্খ ঘোষ বেশকিছু পুরস্কার পেয়েছেন – মূর্খ বড়, সামাজিক নয় গ্রন্থের জন্য নরসিংহ দাস পুরস্কার (১৯৭৭), বাবরের প্রার্থনা গ্রন্থের জন্য সাহিত্য একাদেমি পুরস্কার (১৯৭৭), ধুম লেগেছে হৃৎকমলে গ্রন্থের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৮৯), বিশ্বভারতীর দেশিকোত্তম পুরস্কার (১৯৯৯) এবং ভারত সরকারের পদ্মভূষণ পুরস্কার (২০১১) ও জ্ঞানপীঠ পুরস্কার (২০১৬)।

তিন

শঙ্খ ঘোষের ভাষ্যে তাঁর কৈশোরের ছবিটা তাঁর কবি হয়ে ওঠার – ‘সকলেই একদিন খেলাচ্ছলে শুরু করে কৈশোরে। তার মধ্য থেকে কখন জেগে ওঠে শরীর, তার নিজেরও অগোচরে। না-শহর না-গ্রাম আমাদের সেই পদ্মাপারের ছোট্ট জনভূমি, একদিকে নদী একদিকে বন, তার মাঝখানে বারো বছর বয়সে আমারও একদিন শুরু হয়েছিল ছন্দমেলানোর খেলা, একেবারে দায়হীন, প্রগল্ভ। … খাতার পর খাতা ভরে উঠেছিল কেবল তুচ্ছ আনন্দে। আর তারপর, প্রায় একসঙ্গেই পৌঁছল আমাদের যৌবন আর স্বাধীনতা। আর সেই আমার কলকাতায় সত্যিকারের পা দেওয়া।’ (কবিতার মুহূর্ত, পৃ ১৩)

কলকাতায় পা দেওয়ার পরের অনুভূতি তিনি এভাবে জানান – ‘বহিরাগতের ভীরুতা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগল অনেক। কেবল কলকাতাই যে নতুন ছিল তা নয়, আমাদের সামনে তখন খুলে যাচ্ছে নতুন এক আধুনিক জীবন আর কবিতার জগৎ, যার কোনো চিহ্ন জানতাম না আগে। … আর কলকাতা, কলকাতা খুলে দিল সাম্প্রতিকের দরজা।’ (কবিতার মুহূর্ত, পৃ ১৩-১৪)

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ধর্মভিত্তিক পরিচয়ে বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। ভারত বিভাগের পর ভারতের বিভিন্ন অংশের মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষেরা পূর্ববাংলায় এসে বসবাস শুরু করে, এখানকার পুরনো হিন্দু বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতে চলে যায়, তার ইতিহাসে সঙ্গে আরো আছে রক্তাক্ত দাঙ্গার ইতিহাস। এই ইতিহাসের কণ্ঠলগ্ন হয়ে শঙ্খ ঘোষের বেদনামথিত উচ্চারণে দিয়ে কলকাতার জীবনের যে বর্ণনা করেন, তা আমরা তাঁর বিভিন্ন লেখায় খুঁজে পাই।

একসময় শঙ্খ ঘোষ অনুভব করলেন – ‘একদিন কবিতার দিকে এগোনো গেল ঠিক, কিন্তু এগোনো গেল না কবিতার সমাজের দিকে। আমাদের চেয়ে বড়ো যাঁরা, তাঁদের দিকে তাকিয়ে মনে হলো কোথায় যেন এক নিয়মবৃত্ত আছে, যেন না-লেখা এক কানুন মেনে চলেন অনেকে, কবিতা যেন ভাগ হয়ে আছে মুখ না-দেখা দুই ভিন্ন শিবিরে। কী নিয়ে লেখা হবে কবিতা? আমার বাইরের পৃথিবী নিয়ে? না কি আমার ব্যক্তিগত জগৎ নিয়ে? এই ছিল তর্ক, দেশবিদেশের বহুকালের পুরোনো তর্ক। কিন্তু এই দুই কি ভিন্ন না কি? এই দুইয়ের মধ্যে নিরন্তর যাওয়া-আসা করেই কি বেঁচে নেই মানুষ?’ (কবিতার মুহূর্ত, পৃ ১৫)

এমন কৌতূহলোদ্দীপক জিজ্ঞাসা এখনো, এই সময়ের অনেক কবির চৈতন্যেও অনুরণিত হয়, নতুন নতুন বিবেচনাবোধও জাগিয়ে তোলে। কাব্যপ্রসিদ্ধির ধীশক্তিতে তা আগ্রহ নিয়ে সবসময়ে প্রশ্ন তোলে।

শঙ্খ ঘোষের কবিতার মুহূর্ত বইটি থেকে পেয়ে যাই তাঁর কবি হয়ে ওঠার দৃশ্য ও খণ্ড খণ্ড বর্ণনা, তা থেকে কবির কবিতা সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিও। আমরা যাঁরা কবিতা লিখি, তাঁরাও তাঁর এসব ভাষ্যের মধ্য দিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবো নিঃসন্দেহে। তিনি আরো আমাদের জানান, কীভাবে একটি পত্রিকা তাঁর প্রশ্রয়ের স্থল হয়ে ওঠে – ‘এমন সময়ে পৌঁছল এসে কৃত্তিবাস পত্রিকা, তরুণতম কবিদের মুখপত্র হিসেবে ঘোষণা করা হলো তার নাম। কৃত্তিবাসের যে কালাপাহাড়ি চরিত্রের কথা বলা হয়, সূচনায় ঠিক তেমন ছিল না তার পরিচয়। তখনো দেখা দেয়নি কোনো তেজী বিদ্রোহ, তখনো সে আকর্ষণ করে আনেনি সুসামাজিকদের কোলাহলময় নিন্দে, কিন্তু তখন থেকেই এর ছিল ভবিষ্যতের দিকে এক নিশ্চিত পদক্ষেপ, ছিল তারুণ্যের আভিজাত্যে ভরা পত্রিকার গৌরব। হিসেববন্ধন বা দলীয়তার বাইরে থেকে কৃত্তিবাস তখন ডাক দিয়েছিল সমস্ত তরুণকে, আমারও জুটল ডাক। এর পর অতিদীর্ঘকাল জুড়ে এই পত্রিকার অবাধ প্রশ্রয় পেয়েছি আমি, এতটাই, যা পাবার অধিকার ছিল না আমার। আর এরই মধ্য দিয়ে ভীরুতা একদিন পৌঁছল এসে ভালোবাসায়।’ (কবিতার মুহূর্ত, পৃ ১৬)

শঙ্খ ঘোষের কবিতাও আক্রমণের শিকার হয়েছে, কোনো কবির পথযাত্রা একেবারে বাধা-বিপত্তিহীন থাকে না, কত রকমের যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হতে হয়, রক্তক্ষরণ হয়, অবহেলা-অপমান সহ্য করতে হয়, এর অনেকটা মূর্ত হয়, অনেকটা বিমূর্ত থেকে যায়। এসব সামলে, প্রতিরোধমুখী ভূমিকায় সৃজনশীল-স্পর্ধার মাধ্যমে নিজের একটা অবস্থান তৈরি করে নিতে হয়, কবিকে তার সম্মুখযাত্রাকে সংহত করতে হয়। আত্মসমর্পণ ও পরাজিত হওয়ার পরিবেদনাকে ঘেরাটোপে রেখে কবিকে চলতে হয়। কবি বেদনাক্লিষ্ট হবেন; কিন্তু নিজের স্বভাবপ্রকৃতি নিয়ে স্বাধীন ও অনুধ্যায়ী হয়ে পথ চলবেন, যে-পথে তিনি একা।

শঙ্খ ঘোষের বোধভাষ্য থেকে আমরা আরো জানতে পারি – সুভাষ মুখোপাধ্যায় একদিন শোনাচ্ছিলেন ‘যমুনাবতী’র কয়েকটি পঙ্ক্তি। কিন্তু তাঁর কথা শেষ হবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঝাঁপ দিয়ে উঠলেন বুদ্ধদেব। একটু আগেই যে বলবেন না বলে ঘোষণা হয়েছিল, ভুলে গেলেন তার কথা। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা-রুচির, তাঁর কবিতাবিচারের প্রখর প্রতিবাদ করে বলতে হলো বুদ্ধদেবকে : যে-কোনো হাহাকারকেই কবিতা বলা চলে না। … আমার লেখাটাও যে এতে আক্রান্ত হলো, সেজন্য আমার ক্ষোভ হয়নি সেদিন।’ (কবিতার মুহূর্ত, পৃ ২২)

শঙ্খ ঘোষ এমন অনুভবের পরও থেমে যাননি, বুদ্ধদেব বসু সেই সময়ের সাহিত্যজগৎকে, বলতে গেলে এককভাবে শাসন করতেন, তাঁর অনুমোদনকে কবি ও লেখক হয়ে ওঠার স্বীকৃতি বলে অনেকে  গ্রহণ করেছেন। কিন্তু যাঁরা বুদ্ধদেব বসুর কাছ থেকে স্বীকৃতি পাননি, তাঁরাও অকম্পিত ও অদমনীয় থেকে পরবর্তীতে নিজেদের কবি ও লেখক হিসেবে পরিচিত করিয়েছেন। বুদ্ধদেব বসু-সম্পাদিত পত্রিকা ছিল কবিতা, পঁচিশ বছরের অধিককাল পত্রিকাটির ১০৪টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকায় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বেশকিছু কবিতা পাঠিয়েছিলেন কিন্তু তা ছাপা হয়নি। যে-কোনো সম্পাদক তাঁর বিবেচনায় কারো কবিতা ছাপতে পারেন, নাও পারেন, তা হয়তো দোষের নয়। কিন্তু সে-সেময়ে দেশ পত্রিকার বিখ্যাত সম্পাদক সাগরময় ঘোষ নীরেন্দ্রনাথকে উৎসাহ শুধু দেননি, তাঁর কবিতা দেশ পত্রিকায় ছাপিয়েছেনও। শঙ্খ ঘোষের কবিতাও বুদ্ধদেব বসু-সম্পাদিত পত্রিকা কবিতা থেকে দূরবর্তী ছিল বলে জানা যায়। এমন উদাহরণ এই কারণে দিলাম, যে-কোনো কবি লেখার শুরুতে বিভিন্নভাবে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও তার সূচনাকে দৃঢ়চিত্তে ও অনুধ্যানে টলতে দেন না, সম্মুখযাত্রায় অবিচল থাকেন।

শঙ্খ ঘোষ লিখে গেছেন – ‘কৈশোর থেকে সেদিন পর্যন্ত, হঠাৎ হঠাৎ লিখতে ইচ্ছে করেছে কয়েকটি কথা, যে-কোনো কারণে, আর লিখে গিয়েছি তখন। সে-লেখাকে তো হতে হবে আমারই বোধমতো, আমারই জানা সত্যে। সেটা যদি শেষ পর্যন্ত না পৌঁছয় কোথাও, তাহলে সে তো আমার অক্ষমতা শুধু। সেই অক্ষমতাকে মেনে নিয়ে, জীবনটাকে সেদিন ছুঁতে চেয়েছি আমারই মতো।’  (কবিতার মুহূর্ত, পৃ ২২-২৩)

চার

শঙ্খ ঘোষের প্রথম কবিতার বই দিনগুলি রাতগুলি বের হয় ১৯৫৬ সালে। তারপর তাঁর জীবনকালে পঁয়ত্রিশের (২৬টি স্বতন্ত্র কবিতার বইসহ) অধিক কবিতার বই প্রকাশিত হয়। প্রায় ৯০ বছরের জীবনে তিনি কবিতা লেখা থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন থাকেননি। তাঁর সময়কালের কবি, যাঁরা ৮০ বছরের ওপর বেঁচে ছিলেন – কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত ও নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী – তাঁরাও জীবনব্যাপী কবিতার সাধনা করে গেছেন, কবিতা লেখা থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হননি।

কবিতায় শঙ্খ ঘোষ নৈঃশব্দ্য আর আড়ালের মধ্যে দিয়েও সমাজ ও পরিপাশর্^কে তুলে টেনে নিয়ে জাগিয়ে তুলতেন। শঙ্খ ঘোষ বিশ^াস করতেন, প্রতিটি কবিতাকে, প্রতিটি পঙ্ক্তিকে ঘিরে থাকে অনেক কথা, যারা অনুচ্চারিত রয়ে যায়। আবার কবিতার সঙ্গে তার চারপাশের একটা দূরত্বও থাকে, যা যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। এ কারণে কবিতার জগতে রহস্য জমে।

কবি-লেখক-শিল্পীরা সংগঠন সক্রিয়ভাবে করতে পারেন, না-ও করতে পারেন। তবে শিল্প-সাহিত্যের মাধ্যমে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভাবাদর্শের লড়াইটা কখনো মোটা দাগে বা কখনো সূক্ষ্মভাবে থেকে যায়, চলতে থাকে। শঙ্খ ঘোষের মধ্যেও বিভিন্ন পরিধিতে তা আমরা লক্ষ করি – তিনি কখনো মিছিলে থেকে প্রতিবাদী হয়েছেন, কখনো বা বিভিন্ন লেখায় উচ্চকিত হয়েছেন। শঙ্খ ঘোষ একজন আধুনিক মানুষ হিসেবেই স্বাধীনভাবে ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি নির্মাণ করেছেন।

আমরা জানি, শিল্প ও সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্নমুখী মতামত আছে। চিন্তক ও লেখক-সমালোচকের মধ্যে বোঝাপড়ার পার্থক্যও আছে। কোনটা ভালো সাহিত্য বা শিল্প – তা নিয়েও তর্ক আছে। কিন্তু তারপরও বলি, দেশ ও মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কি কবি-লেখক ও শিল্পীদের কোনো ভূমিকা থাকবে না? তাঁরা কি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ও অগ্রগতি চাইবেন না? নিশ্চয় চাইবেন। পূর্বেও তাঁরা নিজেদের বিবেকতাড়িত ভূমিকা রেখেছেন, বর্তমানেও তাঁরা সেই ভূমিকা শাণিত রাখবেন, সেটা অনেকেরই আকাক্সক্ষা। জীবনের প্রাত্যহিকতায় সাহিত্য-শিল্পের যোগ ঘটিয়ে মানুষের আত্মবীক্ষণের মধ্যে দিয়ে উপলব্ধির জগৎকে সমৃদ্ধ করা যায়, রুচিকে নির্মাণ করা যায়, বিকার ও অসুস্থতা থেকে ফিরিয়ে আনা যায় মানুষের মানবিক-সুস্থতা। শঙ্খ ঘোষের সাহিত্য-ভূমিকা কখনো মোটা দাগে, কখনো বা সূক্ষ্মভাবে আমরা এমন পটভূমিতে উপলব্ধি করতে পারি।

শঙ্খ ঘোষ জীবিতকালেই ছিলেন পাঠকপ্রিয় ও বিভিন্ন পরিধিতে গ্রহণযোগ্য কবি। তরুণ কবিদেরও তিনি আগ্রহের বিষয় ছিলেন। তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতার পঞ্চাশ বছরে তেইশটি সংস্করণ হয়েছে – এমন একটি উদাহরণ আমাদের বুঝিয়ে দেয়, তাঁর কবিতা পাঠকের কাছে কতটা সমাদৃত হয়েছে।

কবিতার বইয়ের চেয়ে শঙ্খ ঘোষের বিভিন্ন ধরনের গদ্যের বইয়ের সংখ্যা কম নয়। সেগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, সাহিত্য বিচারে  সেগুলোও বিশেষভাবে বিবেচিত হয়, হবে। সেসব বইয়ের আলোচনা না করে বরং তাঁর কবিতা নিয়ে আমার কিছু বিবেচনা তুলে ধরছি। তাঁর কবিতা অনেকের মতো আমার কাছেও বহুদিন হলো কিছুটা হলেও পরিজ্ঞাত ও অনতিদূর।

শঙ্খ ঘোষ তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ দিনগুলি রাতগুলির পর ছয় বছর কিছু লেখেননি। শঙ্খ ঘোষ ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে মিলিয়ে কবিতায় ঐতিহ্যলগ্ন ছন্দ ব্যবহার করে তার স্পন্দন ও বিন্যাসকে আরো গভীর প্রাণ দিয়েছেন – এমন উদাহরণ :

আমার জন্য একটুখানি কবর খোঁড়ো সর্বসহা

লজ্জা লুকাই কাঁচা মাটির তলে –

গোপন রক্ত যা-কিছুটুক আছে আমার শরীরে, তার

সবটুকুতে শস্য যেন ফলে।

(‘কবর’, দিনগুলি রাতগুলি, ১৯৫৬)

নিভন্ত এই চুল্লীতে মা

           একটু আগুন দে

আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি

           বাঁচার আনন্দে।

নোটন নোটন পায়রাগুলি

           খাঁচাতে বন্দী

দু’এক মুঠো ভাত পেলে তা

           ওড়াতে মন দি’।

(‘যমুনাবতী’,  দিনগুলি রাতগুলি, ১৯৫৬)

লৌকিক ছড়ার আদলে ‘যমুনাবতী’ কবিতাটি সার্থকভাবে নির্মাণ করেছেন তিনি। পাঠককে ঐতিহ্যের  ছন্দোবদ্ধ কবিতার স্বাদের ভেতর রেখেই ভিন্নমাত্রার বোধ জাগ্রত করার সম্মোহন ও বিস্ময়ঘোর তৈরিতে শঙ্ঘ ঘোষ সার্থক।

আমাদের শেষ কথাগুলি গড়িয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের দিকে

আমাদের শেষ কথাগুলি

মৃত মানুষদের চোখে ভরে গেছে অর্ধেক আকাশ

আমাদের শব্দের ওপারে

(‘আমাদের শেষ কথাগুলি’, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে, ১৯৮৪)

আকণ্ঠ ভিক্ষুক, তুমি কথা বলো গৃহস্থের কানে

ভাঙো তার সব স্থবিরতা

ঝরাও প্রপাত তার সাবেক কার্নিশগুলি থেকে

পাঁজরে বাজাও বাঁশিগুলি

(‘আকণ্ঠ ভিক্ষুক’, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে, ১৯৮৪)

মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে কাব্যগ্রন্থের এ-দুটি কবিতার উদাহরণে আমরা দেখি – কবি চৈতন্যের বহু স্তরে টেনে নিয়ে পাঠককে সংবেদী করে তোলেন, সামান্য বিষয়ের মধ্যে কী-এক সূক্ষ্ম ইঙ্গিত বাজিয়ে এক জাগতিকতায় উদ্বুদ্ধ করেন। স্বগতোক্তির মতো তাঁর উচ্চারণ হলেও গভীরতায় অসামান্য অন্তর্দৃষ্টি ও উপলব্ধিতে ক্রমে ক্রমে পাঠককে নিমজ্জিত করেন।

কী হতভাগ্য সেই দিন যখন শিশুরাও জেনে গেছে গাছ

                                    কখনো কথা বলতে পারে

না আর সাতভাই চম্পাকে ডাকতেও পারে না কোনো

                    পারুলবোনের

রূপকথা

কী হতভাগ্য সেই দিন যখন বুকের ভিতর দিকে ছুটে যায়

                                   বাঁধভাঙা জল কিন্তু চোখ

তাকে ফিরেও ডাকে না শুধু অযুত আতশবাজি শোভা

                                                হতে হতে

শূন্যের গহ্বরে ভেঙে অন্ধ হয়ে দেখে

পাথরের মুখচ্ছবি নেই কিন্তু মুখের পাথরছবি আছে

(‘শিশুরাও জেনে গেছে’, ধুম লেগেছে হৃৎকমলে, ১৯৮৭)

ধুম লেগেছে হৃৎকমলে কাব্যগ্রন্থের উল্লিখিত কবিতার আঙ্গিকের মতো আরো কটি কবিতা রয়েছে এই কাব্যগ্রন্থে, আরো ভিন্ন আঙ্গিকের কবিতাও রয়েছে। শঙ্খ ঘোষ বহু ধরনের  আঙ্গিকের নিরীক্ষা করেছেন, যার ফলে এক ধরনের আঙ্গিকের কবিতা দেখেই তাঁর কবিতাকে চিহ্নিত করা যায় না, বলা যায় না সহজভাবে – এ-ধরনের, ও-ধরনের কবিতা – শঙ্খ ঘোষের কবিতা। বিচিত্রপথে তাঁর আঙ্গিকের নিরীক্ষা। যেমন তিনি বেশি কবিতা  লিখেছেন, তেমনি আঙ্গিকেরও বিভিন্ন উদ্ভাবনও দেখিয়েছেন।

লক্ষ্মীছাড়া দুঃখ এল আরো একবার এ জীবনে

বড়োই বিহ্বল আছি তোমাদের কাণ্ডকারখানায়।

সমস্ত ধন্দের থেকে মীমাংসা পেয়েছ বাচ্চা ছেলে

গোঁফদাড়ি উঠেছে বটে, বাল্যশিক্ষা এখনো মেটেনি।’

(‘দ্বিপদীমালা ২’, ধুম লেগেছে হৃদকমলে, ১৯৮৭)

ধুম লেগেছে হৃৎকমলে কাব্যগ্রন্থে শঙ্খ ঘোষ কয়েকটি দ্বিপদী লিখেছেন – ‘দ্বিপদীমালা’ শিরোনামে। বাংলা কবিতার পরিব্যাপ্তিতে কত ধরনের কবিতা লেখা হয়েছে, ‘দ্বিপদী’ – যা বাংলা কবিতার রক্তরেণুতে রয়েছে, শঙ্খ ঘোষ তা পরম্পরায় স্বীকার করে নিয়ে ভিন্ন অনুভবে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেন।

গন্ধর্ব, উন্মাদ, তুমি অর্থহীন হাতে উঠে এসে

জলমগুলের ছায়া মাখিয়ে গিয়েছ এই মুখে

তবু আজও বৃষ্টিহারা হয়ে আছে সমস্ত প্রদেশ

আমারাও পায়ের কাছে চাপ চাপ রক্ত লেগে আছে।

(‘১’, গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ, ১৯৯৪)

সব চোখ মেলে দিয়ে এ বাতাসে জড়িয়ে ধরেছ

তুমিই আগুন তুমি জল তুমি আকাশ বা মাটি

শরীরে শিহর তুমি মনে আমরণ আরাধনা

অমৃত পাহাড় থেকে সাগরের তরল গরল।

(‘৩৬’, গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ, ১৯৯৪)

শঙ্খ ঘোষের গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছের দুটি কবিতার কটি লাইন ওপরে উল্লেখ করা হলো। এই কাব্যগ্রন্থে রয়েছে মোট ৩৬টি কবিতা, কবিতাগুলো অক্ষরবৃত্তে লেখা, একটি মাত্র ছন্দকে কী-এক ধ্যানমগ্নতার ভেতর দিয়ে শব্দস্ফুরণে করেছেন শিল্পজাত। কবিতাগুলোতে প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান ও অনুষঙ্গ মিলেমিশে একাকার এক নিঃশব্দের শিল্প হয়ে উঠেছে, জীবনের গভীর বোধের ব্যঞ্জনা নিয়ে হয়ে উঠেছে মূর্ত ও বিমূর্ত।

শঙ্খ ঘোষ  গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছের  সূচনাকথায় বলেন – ‘কয়েক বছর আগে, বেশ কয়েকটা মাস কেটেছিল শিমলার এক পাহাড়-চূড়োয়। মেঘকুয়াশার চরাচর-ঢেকে-দেওয়া সেখানকার এক সকালবেলায় অনেকদিন পর একেবারে একঝোঁকে লেখা হয়ে গেল কয়েকটি কবিতা। পরে মনে হলো, হয়তো ঠিক ‘কয়েকটি’ নয় তারা, একটিই মাত্র লেখা, কেবল স্তরে স্তরে খোলা। (‘সূচনাকথা’, গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ, ১৯৯৪)

এই দুর্দিনের কাছে রয়ে গেল অধিকন্তু ঋণ

প্রত্যেক মুহূর্ত তুমি ইতিহাসে করেছ রঙিন।

আমি যার কথা বলি সে কখনো বোঝেনি একথা

ক্ষীণ হয়ে যেতে যেতে এখনও পালক আছে কটা।

(‘কিনারা’, ছন্দের ভিতরে এত অন্ধকার, ১৯৯৯)

আমি এই শতাব্দীর শেষ প্রান্ত থেকে কথা বলি

আমি এই শালপ্রাংশু মধ্যরাত্রি থেকে কথা বলি

আমার মায়ের রক্ত হাতে নিয়ে কথা বলি

হোলি খেলেছিল যারা আমার মেয়ের রক্ত নিয়ে

আগুন জ¦ালিয়ে যারা শবের উপরে নেচেছিল

এই শেষ অন্ধকারে তাদের সবার কথা বলি

(‘শহিদ শিখর’, ছন্দের ভিতরে এত অন্ধকার, ১৯৯৯)

ছন্দের ভিতরে এত অন্ধকার বইয়ের দুটি কবিতার অংশ টেনে নিয়ে এই লেখায় কবিতার উদাহরণ দেওয়া শেষ করব। শঙ্খ ঘোষের কবিতার যে মূল প্রবণতা – আত্মমগ্নতা ও  সমাজলগ্নতা, তারই অংশী উল্লিখিত দুটি কবিতার অংশ। ব্যক্তিবিশ^ ও সমাজবিশে^র বিভিন্ন দিক উন্মোচিত হতে দেখি তাঁর কবিতায়। আধুনিক কবিরা অরণ্যচারী ও দূরালোকের বাসিন্দা নন। শঙ্খ ঘোষকে অন্তর্মুখী মনে হলেও তাঁর অন্তরস্থিত সত্তায় জনসংলগ্ন ও দেশসংলগ্ন অভিব্যঞ্জনা অন্তঃসলিলা হয়ে থেকে যায়। বাংলা কবিতার সুলুকসন্ধান ও কূলকিনারা জানতে শুধু নয়, একজন শক্তিশালী কবির কবিতার কাছে যেভাবে বিস্ময়াভিভূত হয়ে যেতে হয়, সেইভাবে তাঁর কবিতার সান্নিধ্যে আমাদেরও যেতে হবে সবসময়ে।