July
-
শিরোনামহীন
হাশেম খান বাংলাদেশের চিত্রকলার সৃজনধারায় এক সমাজমনস্ক চিত্রকর। তাঁর ক্যানভাসে ধরা আছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবন-অভিজ্ঞতার নানা রূপ। প্রকৃতি, পরিবেশ ও মানুষ তাঁর চিত্রের মুখ্য বিষয়। চাঁদপুরে শৈশবে বা কৈশোরে দেখেছিলেন গরিব নিরন্ন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। এই স্মৃতি তাঁর সৃষ্টিতে নানাভাবে প্রভাব ফেলেছে। পাখি ও কাক তাঁর প্রিয় বিষয়। এদের মধ্যে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন চলমান…
-
নারীশিক্ষা বিস্তারে বিদ্যাসাগরের চিন্তা ও উদ্যোগের সামাজিক তাৎপর্য
আজ থেকে প্রায় একশ পঁচাত্তর বছর পূর্বে বাঙালি সমাজে নারীশিক্ষা বিস্তারে ঈশ^রচন্দ্র বিদ্যাসাগরের (১৮২০-১৮৯১) চিন্তা ও কর্মোদ্যোগ আরম্ভ হয়। দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছর তিনি বাংলায় নারীশিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে অনেক চিন্তা করেছেন, স্থাপন করেছেন অনেক প্রতিষ্ঠান, গ্রহণ করেছেন নানামাত্রিক উদ্যোগ। নিজের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে বিদ্যাসাগর সর্বদা দেখেছেন বাঙালি নারীর স্বার্থ – বাঙালি নারীর উন্নতিকেই ভেবেছেন নিজের উন্নতি…
-
দেশভাগ, বিভাজন, মানবমণ্ডলী
বাংলার লোকসাহিত্যে মৈমনসিং গীতিকা নামের পালাগুলির সিংহভাগই কিশোরগঞ্জের, কিছু পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনার। ব্রিটিশ আমলের বৃহত্তম জেলা ময়মনসিংহের অংশভুক্ত হওয়ায় গ্রন্থের এরূপ নামকরণ। নিজস্বতার পাশাপাশি কিশোরগঞ্জের ভৌগোলিক সীমানা চারপাশ থেকে চার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জনপদকে আলিঙ্গন করেছে : উত্তরে গারো পাহাড়ের উপত্যকা, দক্ষিণে ঢাকা-ভাওয়ালের অরণ্য, পূর্বে চিরায়ত সিলেট-কামরূপ, পূর্ব-দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লার নদী অববাহিকা আর পশ্চিমে বৃহত্তর ময়মনসিংহের বাদবাকি অংশ।…
-
ক্যাশলেস লাইফ
অ্যাডভান্স গ্রুপ অব কোম্পানিজের প্রধান কার্যালয়, যারে ব্যাপ্টাইজ করে আজকাল আবার করপোরেট অফিস বলা হয়, তাতে আমার পা পড়তেই পুরো রিসিপশন এরিয়া যেন সচলতায় পা দেয়। আগাগোড়া সবাই চঞ্চল হয়ে ওঠে। পিয়ন-দারোয়ান তো বটেই কাচের ঘেরাটোপ থেকে পুরোদস্তুর একজন রিসিপশনিস্ট, সাজেগোজে পুতুলের আদল নেওয়া চেহারার এক মেয়ে বের হয়ে আসে। একেবারে আমার কোলঘেঁষে দাঁড়ায় –…
-
শান্তিনিকেতন ব্রহ্মবিদ্যালয় থেকে বিশ্বভারতী : আদর্শ ও বাস্তবের প্রেক্ষিত
বিশ্ব ভারতীর ভাবনা ও আদর্শের কথা বলতে গেলে গোড়াতেই শান্তিনিকেতন ব্রহ্মবিদ্যালয়ের দিকে চোখ মেলতে হয়। বিদ্যালয় সম্পর্কে কি ভেবেছিলেন সেদিনের তরুণ রবীন্দ্রনাথ? দেখতে পাই, সেদিনের কবি প্রাচীন ভারতের তপোবনের আদর্শে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তাঁর শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের ভিত্তি। যদিও স্পষ্ট জানতেন, তপোবন আশ্রমের হবহু নির্মাণ এ-কালে কখনোই সম্ভব নয়, তবে তার ‘বিলাসমোহমুক্ত বলবান আনন্দের মূর্তি’ প্রতিষ্ঠা…
-
কাঁথা
মাঝেমাঝে মনে হয় হাওয়ায় শব্দ ওড়ে। কারা যেন গান গায়। নৌকা ভাসায়। আবছা হয়ে যাওয়া নীল জলে, ভেসে থাকা সমুদ্রের ফেনার মতো পুরনো সেসব দিন ঘুরেফিরে আসে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে নিজের ভাবীকাল, অতীত, বর্তমান একাকার করে দেখা বড় বেদনার। কেন এই জন্ম, এখানে কী পাওয়ার আছে? সব হারানোর আগে কোথায় দাঁড়াবে সে? কোন মাটিতে? তখন…
-
গদ্যপরম্পরা : ভিনদেশির বাংলাচর্চা
আশ্চর্য সম্পাদক : শ্রমসাধ্য সাধনা সত্যিই ভাবতে অবাক লাগে! তিনি এলেন ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে; আর মাত্র ১০ বছরের মধ্যে তাঁর লেখা প্রকাশিত হলো। তাও আবার তিনি বিদেশি, ফরাসিভাষী। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে দেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায় তাঁর ‘ডায়েরির ছেঁড়াপাতা’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকলো। বিস্ময় বইকি! একদিন হাসতে হাসতে তিনি বলে ফেলেছিলেন – ‘আমাকে জেসুইট কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন…
-
বেদূঈন সামাদের উপন্যাসে সমাজ-ভাবনা
১৯৪৭ সালে বৃহৎ ভারতবর্ষের বিভক্তিকরণ, দেশভাগ এবং বাংলাভাগের মতো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটার ফলে বাংলা ভাষায় নতুন দুটি শব্দবন্ধ তৈরি হয়; একটি ‘দেশভাগের পূর্বে’ এবং অপরটি ‘দেশভাগের পরে’। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন তুলনায় বিভিন্ন মাপকাঠিতে শব্দবন্ধ দুটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। দেশভাগ বাঙালিদের কাছে যতটা না দেশভাগ তার চেয়ে বেশি হলো বাংলাভাগ। বাংলাভাগে কেবল বাঙালির ভূখণ্ডটিই বিভক্ত…
-
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানে ভাষা ও বাস্তবতা
অনুবাদ : সুব্রত বড়ুয়া বিজ্ঞানের ইতিহাস জুড়ে নতুন আবিষ্কার ও নতুন ভাবনাসমূহ সবসময় বৈজ্ঞানিক বিবাদের সৃষ্টি করেছে, নতুন ধারণাগুলিকে সমালোচনা করে তর্কবিতর্কমূলক প্রকাশনার পথ খুলে দিয়েছে এবং এসব সমালোচনা প্রায়শ সেগুলির উন্নয়নের সহায়ক হয়েছে। কিন্তু এসব মতবিরোধ পূর্বে কখনো এমন সহিংসতার মাত্রায় পৌঁছায়নি যেমনটা ঘটেছে আপেক্ষিকতা তত্ত্ব আবিষ্কারের পর এবং কিছুটা কম মাত্রায় কোয়ান্টাম তত্ত্বের…
-
নেই, কেউ নেই
দুপুরে খালের জল থির, জোয়ারেও হাঁটুতক, শীতের শোষণে এতো কম! তদুপরি মাছ ধরে গেছে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার অপরূপে মনভোলা, যার ছায়া ফাঁকা পড়ে ঘোলা – শীতল বাতাসে তা-ই কাঁপে রৌদ্রহীন শোকে। হাঁড়ির শুকনো মুখে শিমের সালুন টেলে লাল মরিচের সাথে মেয়ে সেও দ্রুত এই শাড়ি গুটিয়েছে পায়ের গোছায়, এক প্যাঁচে বুকে দোফলা জমিন চেপে। নুয়েছে, করেছে…
-
এক দুই তিন
নতুন বউয়ের গুণে হাঁড়ি চড়ে গুনে-গুনে একদিন, দুইদিন। তৃতীয় দিনেই চুলো ফের হিম, কালো মুখে তার ফোটে না তো আর আলোক-উত্তাপ রঙিন।
-
অন্তর্লীন
নতুন রুটিনের ছাঁচে ফেলে নিয়ে নিজেকে তৈরি করে নিচ্ছি, আমাকে আমি তুলে দিচ্ছি – রুটিন মালিকের হাতে! পাতে যা পাচ্ছি – তাই খাচ্ছি! যাচ্ছি বিউটি পার্লারে নিজেকে টেনে নিয়ে নিচ্ছি নতুন কোনো লুক! তাদের আগ্রহে স্মার্ট হতে হবে – নিজের সত্তা হারানোর বেদনায় যতই কাঁপুক বুক! হোগলা বা বাঁশের চটা দিয়ে…