ধীরাজ চৌধুরী
Calcutta Painters-এর সূত্র ধরে বিজনদার সঙ্গে পরিচয় – দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া ফাইন আর্টস অ্যান্ড ক্রাফট্স (AIFAC) – রফি মার্গে প্রথম প্রদর্শনী হয় – যেখানে মহিম রুদ্র, প্রকাশ কর্মকার, নিখিল বিশ্বাস, রবিন মন্ডলের ছবি প্রদর্শিত হয়েছিল – Calcutta Painters-এর যাত্রা শুরু। বিজন চৌধুরী তার মধ্যমণি। তাঁর drawing যেমন শক্তিমান, paintingও সাবলীলতার পরিচয় বহন করে… সবচেয়ে বড় যা – সেটা হলো, সুবক্তা ছিলেন। অনেক গুছিয়ে কথা বলতেন। শিল্পকলার জটিল বিষয় ছিল তাঁর নখদর্পণে। মানুষ হিসেবে সহজ-সরল, সদাহাস্য, সবাইকে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা ছিল।
Calcutta Painters-এর সদস্যপদ নেওয়ার পর বিজনদার সঙ্গে আরো কাছাকাছি আসার সুযোগ পেলাম। বিশেষ করে শিল্পী থাপার জন্য ওই group-এর রাজধানীতে। প্রদর্শনী করার কথা হয়েছিল। এই প্রদর্শনী আয়োজনে আমার একটা ভূমিকা ছিল। তাছাড়া দিল্লিতে আমি তখন স্থায়ীভাবে বাস করছিলাম বলে আমার বাড়িতে সবার অবাধ আসা-যাওয়ার জন্য… সব সদস্যকে অনেক কাছ থেকে দেখার-বোঝার ব্যাপার থেকে যেত। ঠিক ওই কারণে পরের দিকে কামরুল হাসান, আমিনুল ইসলাম, রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল দিল্লিতে। মুস্তাফা মনোয়ার কলকাতায় আমাদের সঙ্গেই আর্ট কলেজে ছিলেন। যেহেতু বিজনদা ঢাকা আর্ট কলেজ থেকে পাশ করেছেন, জয়নুল আবেদিনের স্নেহধন্য ছাত্র – এবং কলকাতার সঙ্গে সবারই একটা common bonding … সবার সঙ্গে আমাদের আরো অন্তরঙ্গ হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছিল।
বিজনদার সঙ্গে অনেক art camp-এ কাজ করার, তাঁকে অন্তরঙ্গভাবে দেখার, কথা বলার জন্য পরস্পরকে বোঝার সুযোগ হয়েছিল। শিলচর চা-বাগানের art camp-এর স্মৃতি তো অম্লান হয়ে আছে।… বিশেষ করে ঢাকার বেশকিছু art camp-এ একসঙ্গে কাজ করেছি। ‘শেকড়ে থেকে ফেরা’ শীর্ষক একটি প্রদর্শনী হয়েছিল ঢাকায়। আমরা যেসব বাঙালি শিল্পী দেশত্যাগ করে চলে এসেছিলাম তাদের সবাই প্রদর্শনীতে ছিলাম। প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন, থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল ঢাকা ক্লাবে। এসব স্মৃতি এখনো সমুজ্জ্বল। আমিনুলদা, বিজনদার নানা প্রসঙ্গের আলোচনা… বিশেষ করে দুই বাংলার সমসাময়িক শিল্প-সমস্যা – ভাবিয়ে তুলত।

এই কয়েক মাস আগেই Calcutta Rowing Club-এ রবিন মন্ডল, তপন ঘোষ, অনিন্দ্য রায়চৌধুরী এবং পঞ্চাশ জন শিল্পীর সঙ্গে বিজনদাও ছিলেন। দারুণ উৎসাহের সঙ্গে একটা ক্যানভাসে ছবি এঁকে ফেললেন। এটাই সম্ভবত তাঁর শেষ চিত্র-কর্মশালা।
দিল্লিতে calcutta Painters-এর প্রদর্শনী শ্রীধরণী গ্যালারিতে চলেছে সগৌরবে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১-এ আমাদের বাংলাদেশের প্রদর্শনীর catalogue-এ introduction লিখে দিয়েছিলেন। তাঁকে এক শিল্পরসিক প্রশ্ন করেছিলেন – Calcutta Painters Groupটা Calcutta-র – যেখানে Delhi-র অনেক সদস্য ছিলেন – বিমল দাশগুপ্ত, ফাল্গুনী দাশগুপ্ত, জগদীশ দে, নীরেন সেনগুপ্ত এবং আমি – সবাই দিল্লি আর্ট কলেজের অধ্যাপক – এবং ‘painters’… যেখানে অনেকে sculpture-এ আছেন, বিপিন গোস্বামী প্রমুখ। সহাস্যে শ্রীমতী গান্ধী বলেন – ‘What’s in a name?’
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.