‘ষোলো আনা’ বাঙালির গল্প

গপ্পোবাজ  বাঙালির  জীবনে  আর  যা  কিছুর  অভাব থাক, গল্পের অভাব নেই। আর গল্পের অভাব হবেই বা কেন – আমাদের স্বপ্নবিলাসী মন ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখে। তাই তো গপ্পোবাজ টেনিদা বা কাঠিমামা আমাদের এতো প্রিয়। কী নেই আমাদের গল্পে – দেশ, দশ, বিশ্ব থেকে মহাবিশ্ব। গল্পে আমরা দেশোদ্ধার করি, গল্পে আমরা রাজা-উজির পরাস্ত করি, গল্পে আমরা হাতি-ঘোড়াও মারি। আমাদের মন বড় কল্পনাবিলাসী। আর বাঙালির কল্পনাবিলাসের মূল কেন্দ্রে বোধহয় রয়েছে তার ‘বাঙালিয়ানা’। এটাই বোধকরি বাঙালির সব থেকে বড় বাঁধনহারা কল্পনার প্রকাশ। কিন্তু বাঁধনহারা এই কল্পনাকে বাঙালি আবার মাপে টাকা-আনা-পাই দিয়ে, নয়তো এ-নিয়ে গপ্পো করার সুযোগটা আবার না হাতছাড়া হয়!! কে কার চেয়ে বেশি বাঙালি তার তুল্যমূল্য করার গপ্পোগুলোও কিন্তু বেশ জমাটি। ‘ষোলো আনা’ না হলে আবার বাঙালি কিসে! তাই আমাদের চিরন্তন গল্পগুলো হলো ‘ষোলো আনা’ বাঙালিয়ানার গল্প। 

কী আছে এই ‘ষোলো আনা’ বাঙালিয়ানার গল্পে? প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, দেশবিভাগের কাঁটাতারের যন্ত্রণা পেরিয়ে, বিশ্ববাঙালি হয়ে উঠবার নিরন্তর সংগ্রামের পরও আমাদের ছোট ছোট অনুভূতি, দুঃখ-সুখ-শোক-আনন্দ-যন্ত্রণা, নিয়ম ভাঙার উচ্ছ্বাস আর আড্ডার উল্লাস চিরন্তন। সেখানে আমরা সবাই সেই ‘ভেতো’ বাঙালি – ভুলেও যেন ‘ভোঁতা’ ভাববেন না। অনুভূতির পরাকাষ্ঠা আমাদের বড়ই টনটনে – বড় অনন্য। এমনসব অনুভূতির প্রকাশ আমাদের শব্দকোষে আছে যার প্রতিশব্দ কিন্তু জগতের আর কোনো ভাষায় পাওয়া যাবে না। এই যে ভাবুন, আমাদের বাঙালিমন জানে ‘অনুরাগে রাঙা’ হতে আবার সেই আমাদেরই অল্পতেই ‘আঁতে ঘা লাগে’;  কিংবা মাঝেসাঝেই আমরা ‘আহ্লাদে আটখানা’ হই; অথবা ধরুন যখন-তখন আমাদের ‘মেজাজ খিঁচড়ে’ যেতেই পারে – এখন এই অনুভূতিগুলো প্রকাশ করুন তো অন্য ভাষাভাষীর কাছে, অবাঙালির সঙ্গে গল্পে! ‘হাল ছেড়ে’ দেওয়া ছাড়া গতি নেই, কারণ এসব অন্যদের ‘পাতে দেবার মতো’ নয়। এসব আমাদের একান্ত নিজেদের অনুভূতি, আমাদের চিরন্তন গল্পের উপাচার। আর তাতেই গল্পবাজ ‘ষোলো আনা’ বাঙালির গল্প কাঁটাতারের এপারে কিংবা ওপারে; দেশে কিংবা বিদেশে; ছোটবেলায় কিংবা বুড়োবেলায়; এই প্রজন্মে কিংবা পঞ্চাশ বছর আগে কিংবা পরে – সবখানে, সর্বত্র এক সুতোয় গাঁথা। 

গল্পবাজ ‘ষোলো আনা’ বাঙালির গল্পে ঠাকুর বলতে রবিঠাকুর, ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো মানেই নজরুল, ভালো ‘বই’ দেখা মানে উত্তম-সুচিত্রা, ‘গোল’ মানে দুরকম – লুচির গোল আর ফুটবলের ‘গোল’। ‘রামগরুড়ের ছানা’ শব্দযুগল আমাদের গল্পে চরিত্র-বিশ্লেষক অনন্যমাত্রিক এক বিশেষণ। আমরা সবাই একেকজন ফেলুদা কিংবা ব্যোমকেশ। পরের হাঁড়ির খবর নেওয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য, না হয় আর আমরা বাঙালি কিসে (বের করুন তো প্রাইভেসির বাংলা প্রতিশব্দ!)! আমাদের রাগে অনুরাগ আছে, বিরহ আছে, আছে অভিমান, যা একান্ত আমাদের (বের করুন না ইংরেজি প্রতিশব্দ অভিমানের!)। আর কখনো ভেবে দেখেছেন কি ‘ষোলো আনা’ বাঙালির গল্প বা তার জীবনচর্চা এমন ‘কান্নাহাসির দোল দোলানো’ বৈপরীত্যময় কেন, কেনই বা ক্ষণে ক্ষণে আমাদের আবেগের এতো টানাপড়েন চলে? বাঙালিই মনে হয় পৃথিবীর একমাত্র জাতি যার কাছে একই শব্দে ক্রোধ আর প্রণয় প্রকাশমান হয়। অবাক হলেন? ভাবুন তো ‘রাগ’ শব্দটা – একদিকে এর মানে প্রেম, প্রণয়; অন্যদিকে রোষ, ক্রোধ। তো আমাদের জাতিচরিত্রে বৈপরীত্য থাকবে না তো কাদের থাকবে! আর তাই শুধু সুয়োরানিকে নিয়ে আমাদের গল্প পূর্ণতা পায় না। দুয়োরানি না হলে চলে নাকি!  আর সেই দুয়োরানিকে সুখের মুখ দেখিয়ে তবেই আমাদের গল্পের ‘নটে গাছটি মুড়োয়’। 

দুয়োরানির কথায় মনে হলো আমরা বাঙালিরা কিন্তু বড্ড দুঃখবিলাসীও বটে। চিরকাল দুঃখকে, দুঃখী চরিত্রদের আমরা বেশি ভালোবেসেছি। ‘ষোলো আনা’ বাঙালির কাছে নিরঙ্কুশ সুখ কিংবা নিরবচ্ছিন্ন আনন্দ খানিকটা নিষিদ্ধ বস্তুর মতো, খানিক সময়ের জন্য দেখা মিললেও আমরা সুখের সময় কাটাতে গিয়ে খানিক  অপরাধবোধে ভুগি বা মন ‘কু গাইতে’ থাকে। ভাবুন তো, খুব ছোটবেলাতে খুব হাসি-আনন্দে সময় কাটাতে থাকলেই পরিবারের গুরুজনেরা এসে বলতেন – ‘যত হাসি, তত কান্না, বলেছেন রাম সন্যা’। ওই রাম সন্যা ব্যক্তিটিকে যদি খুঁজে পেতাম কোনোদিন, তাঁকে ‘এক চোট দেখে নিতাম’ ছোটবেলাকার সকল আনন্দের মুহূর্তে খানিক করে ‘জল ঢেলে দেবার জন্য’।  কিংবা  ভাবুন তো, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্কুলপড়ুয়া বাঙালিমাত্রেই খাতার পৃষ্ঠাভরে ভাব সম্প্রসারণ করেছে ‘দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে’। এই যে গল্প পড়ে কিংবা শুনে দুয়োরানির জন্য চোখের জল ফেলে বড় হতে হতে, আমরা কোথাকার কোন রাম সন্যার শাসানিতে আনন্দ করতে করতেই কান্নার জন্য মন তৈরি করে ফেলি আশৈশব, তো আমরা দুঃখবিলাসী হবো না তো কে হবে? তাই তো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে দেবদাস আমাদের নায়ক হয়, ‘দুঃখ অসীম পাথার পার’ করে শেষকালে ‘তোমার বীণার তার হল’। দুঃখবিলাসী ‘ষোলো আনা’ বাঙালি দুঃখ আর কান্না নিয়ে যত গান-কবিতা লিখেছে আর কেউ লিখেছে কি না তার সিকি ভাগও সে নিয়ে আমার যারপরনাই সন্দেহ আছে – ‘দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক’ ভাবা যায়! বাসর রাতেও দুঃখের ছাড় নেই, দুঃখবিলাসী হতে বাধা নেই! 

আর কে কোথায় আছে এ-জগতে যে কি না একই সঙ্গে দুঃখবিলাসী আর স্বপ্নবিলাসী – হোক না খুব ছাপোষা, হোক না বড্ড আটপৌরে ‘ষোলো আনা’ বাঙালির জীবন; কিন্তু আ-মরি বাংলা ভাষায় বোনা আমাদের সব গল্প দুঃখকে ভালোবেসে স্বপ্ন দেখার গল্প। আর ঠিক এখানেই আমরা অনন্য।

ওই যে স্বপ্নবিলাসী বাঙালি আর তার গল্পের কথা হচ্ছিল, তার বীজ কিন্তু সেই শৈশবেই বোনা হয় আমাদের মানসে। ঠাকুরমার ঝুলি থেকে রবিঠাকুর – সবেতেই মনে মনে রাজপুত্র আর রাজকন্যা আমরা। আবার আমাদের সবার মাঝেই সেই ছোট থেকে গুপী বাঘা বাস করে – আটপৌরে ছাপোষা মা-বাবার ঘরে জন্মেও তো ভূতের রাজার বর মিলতে পারে, তাই না? আর সে কি যে-সে বর, ‘তিন তিন বর’ আর তাতেই কেল্লা ফতে – রাজত্ব আর রাজকন্যা! 

ভূতের রাজার কাছে চাওয়া তিন বরের মধ্যে এক বর ছিল ইচ্ছেমতো খেতে পারবার বর – আর এখানেই বাঙালির অনন্য অসাধারণত্ব। উদারতা থাক বা না থাক ঔদারিকতা বাঙালির ‘ষোলো আনা’ বাঙালিয়ানার অপরিহার্য অংশ। খাওয়া আর খাবার গল্প ছাড়া বাঙালির গল্পের পূর্ণতা কোথায়! বাঙালি মাত্রেই ভোজনরসিক। তাই তো আমাদের মনের রাস্তার দেখা মেলে উদরের রাস্তা ধরে। নিজেদের খাবার তো আছেই, আমাদের রসুইঘরে নিরামিষ থেকে আমিষ, মোগলাই থেকে চীনে, প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য সব আছে। আকাশে মেঘ জমলে আমরা হাঁড়িতে খিচুড়ি চাপাই, জানালাতে হিম জমলে পিঠে-পায়েস বানাই, গরমের দুপুর আচারের বয়ামময় – তাই বাঙালির প্রবাদ হয় ‘পেটে খেলে পিঠে সয়’। তো আমাদের গল্পে খাবার গল্প থাকবে না তো কার গল্পে থাকবে!

খিচুড়ির কথায় যখন বর্ষাদিনের কথা এলোই, তখন মেঘ, বর্ষা, বৃষ্টির সঙ্গে বাঙালির গভীর আত্মিক ভালোবাসার কথা না বললেই নয়। হলফ করে বলতে পারি, আমাদের প্রত্যেকের কাছে অন্তত একটি করে বর্ষাদিনের গল্প আছে – হোক সে সুখের, শোকের, আনন্দের, বিরহের  অথবা প্রেমের। বর্ষা বাঙালির কাছে রোমান্টিকতা বা কল্পনাবিলাসের আরেক নাম। তাই বাঙালির গল্পে, গানে, কবিতায় মায় ভূতের গল্পে অবধি বর্ষা মিলেমিশে আছে যুগ থেকে যুগান্তরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। মাঝে মাঝে ভাবি, কী আছে এই বর্ষাতে কিংবা বৃষ্টিতে! বাস্তবিক অর্থে বর্ষা মানে তো দিনমান বৃষ্টি, রাস্তায় জল-কাদা, গাড়ি বন্ধ, ঘর বন্দিদশা! তবুও আমরা বৃষ্টি ভালোবাসি, কেন? ওই যে বললাম না, আমরা বৈপরীত্য ভালোবাসি – তপ্ত গরমদিনের পর বৃষ্টির আদর আমাদের ভালো লাগে। দুঃখবিলাসী মন তখন আরো বেশি দুঃখের ছবিতে স্বপ্নের রং চড়াতে পারে। আর ঘোর বর্ষার দিনে ‘ষোলো আনা’ বাঙালির অলস আড্ডা নিত্যনতুন গল্পের জোগান দেয়। এসব আড্ডায় সকলেই কিন্তু বক্তা। তার ওপর প্রজন্মান্তরে, স্থানান্তরে এসব আড্ডায় কিন্তু গুলতানি-বিশারদ এক দুজন টেনিদার দেখা মেলাও অসম্ভব নয়।  এই আড্ডা বা গুলতানি শব্দ দুটোও কিন্তু একান্ত বাঙালির, এদের পরিভাষা খোঁজা অনর্থক সময় নষ্টমাত্র। দুঃখবিলাসের সঙ্গে স্বপ্নবিলাসের মিশেল না হলে এদের দেখা মেলে না।  

স্বপ্নবিলাসী এই আমাদের মানে বাঙালিদের কিন্তু আবার বড্ড প্রেমিকমন। আর আমাদের মতোই আমাদের প্রেমও বড় সোজাসাপ্টা নয়। আমাদের প্রেমে পূর্বরাগ আছে, আছে অনুরাগ-অভিসার। মিলন আছে, কিন্তু ভীষণভাবেই আছে বিরহ। আর আছে অভিমান। এসবই বাঙালির একান্ত নিজস্ব অনুভূতি, একান্ত আপনার। যুগ বদলেছে, প্রজন্ম বদলেছে, বদল ঘটেছে আমাদের ধ্যান-ধারণাতেও। কিন্তু আমাদের প্রেমের গল্পে পূর্বরাগ, অনুরাগ, অভিসার, মিলন, অভিমান-বিরহ-বিচ্ছেদ রয়েই গেছে, আর থাকবেও চিরকাল; কারণ এ যে একান্ত আমাদের নিজের, শুধু ‘ষোলো আনা বাঙালিয়ানার’ গল্প। দুনিয়াতে আর কে এমন করে বলতে পারে ‘বিরহ বড় ভালো লাগে’ অথবা ‘গানে গানে ঢাকবো আমার গভীর অভিমান’! 

‘ষোলো আনা’ বাঙালির দুঃখবিলাসী মন তার প্রেমের প্রকাশেও ভাগ বসিয়েছে। তাই অশ্রুজল, সজল আঁখি আমাদের গানে-কবিতায় বারবার ফিরে আসে। গল্পের বই পড়ে চোখ ভেজায়নি এমন বাঙালি কই? কিংবা এতো রকম ঝুট-ঝামেলাময় জীবন কাটিয়েও আমরা আজো সিনেমা দেখে নায়ক বা নায়িকার কষ্টে কেঁদে বুক ভাসাই। কান্নাকে ঘিরে কিংবা কষ্ট বুকে চেপে চলার অনুভূতি এতো গান আর কোন ভাষায় কবে লেখা হয়েছে? ভাবছেন সে ছিল আগের কালে, এখন এসব চলে না, তবে আপনি বাঙালির দুঃখবিলাস ব্যাপারটাই ধরতে পারেননি। হয়তো সে-কারণেই আমাদের গল্পের গভীর প্রেমের অনুভূতিগুলো যুগে যুগে চোখের পাতা ভিজিয়ে দেয়, বুকের ভেতরখানা মুচড়ে দেয়। তাই তো বাঙালির গল্পে ‘প্রেমের মরাও জলে ডোবে না’। 

স্বপ্নবাজ গল্পবাজ আমাদের দুঃখবিলাসী মনের কাছে ফেলে আসা দিনগুলো সবসময় সবচেয়ে ভালো, সবচেয়ে রঙিন। আমাদের গল্পে তাই ঘুরেফিরে আসে সেই ফেলে আসা দিনের গল্প – অতীত তাই সোনালি আমাদের চোখে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বাঙালি তার পরবর্তী প্রজন্মকে বলেছে – ‘দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলো না’। দিন সোনার খাঁচায় থাকেনি হয়তো, সময়ের প্রবাহে প্রজন্মান্তরে ঘটেছে অনেক বদল, মনের ভাব প্রকাশের আঙ্গিকে, মাত্রায় এসেছে ভিন্নতা; কিন্তু বাঙালি বাবা-মায়েরা এখনো কামনা করে ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’। কালের চক্রে বাঙালি এখন ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে। কিন্তু ‘ষোলো আনা’ বাঙালি হয়ে উঠবার বাঁধনহারা কল্পনাবিলাসী পালে হাওয়া আরো জোরদার হয়েছে। তাই তো আজ বসন্ত উৎসব কিংবা বর্ষামঙ্গল বোলপুর থেকে বোস্টন বা ব্রিসবেন কিংবা ঢাকা থেকে ডালাস বা মন্ট্রিলে ছড়িয়ে পড়েছে। বৈশ্বিক বাঙালির আড্ডায় আজ শুধু বাঙালি রাজা-উজির নয়, দুনিয়াজোড়া রাজা-উজির ‘মারা পড়ছে’; শুধু নিজের দেশ নয়, অন্যের ‘দেশোদ্ধার’ও হচ্ছে; ‘গল্পের গরু আজও একইভাবে গাছে চড়ে বসছে’।  দিনান্তরে, কালান্তরে রুচির পরিবর্তন এসেছে; কিন্তু আজো কলকাতা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া, ঢাকা থেকে ডাবলিন শীতকালে বাঙালির হেঁসেলের গল্পে পিঠেপুলি, বৃষ্টিভেজা দিনে খিচুড়ি, সর্ষে ইলিশ আর চিংড়ির মালাইকারির দ্বন্দ্ব উপস্থিত, উপস্থিত ‘কব্জি ডুবিয়ে খাবার’ গল্প। নতুন নতুন অনেক শব্দ ভিড়েছে বৈশ্বিক বাঙালির শব্দকোষে; কিন্তু অভিমান, বিরহ হারিয়ে যায়নি। কেননা আজো আমাদের কাছে ‘বিরহ মধুর’। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে, দেশি, প্রবাসী, অভিবাসী – সব বাঙালির গল্প আজো দুঃখকে মহিমাময় করে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখার গল্প। আজো তেমনিভাবে অপত্যের কিংবা অনুজের গল্পে অকল্যাণকর উক্তি এলে কিংবা অমঙ্গলের চিন্তা এলে গুরুজনেরা বলে উঠবেন ‘বালাই ষাট’। এই তো আমাদের ষোলো আনা বাঙালিয়ানার চিরন্তন গল্পের রূপরেখা। বেঁচে থাকুক আমাদের ষোলো আনা বাঙালিয়ানা তার সমকালীনতায় আর চলতে থাকুক আমাদের গল্প। আমাদের গল্পও না ফুরাক আর নটে গাছটিও না মুড়াক।