অপ্রকাশিত পত্রগুচ্ছ

পরিচিতি : ভূঁইয়া ইকবাল
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অনিল চন্দকে লেখা বুদ্ধদেব বসু, পূর্ণেন্দু দস্তিদার, যোগেশচন্দ্র বাগল,  আবদুল্লা রসুল, অখিলচন্দ্র দত্ত, শোভনলাল
গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের চিঠি।
বুদ্ধদেব বসু ও খ্যাত-অখ্যাত নয়জনের ১০টি অপ্রকাশিত চিঠি পাওয়া গেছে। অক্ষয়কুমার ভট্টাচার্য, আহমদ হুসেন ও রোস্তম আলী লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে, কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথকে লেখেন অখিলচন্দ্র দত্ত। আর অন্যেরা লেখেন কবির সচিব অনিলকুমার চন্দকে। ১৯২৬-এর ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৪৮-এর এপ্রিলের মধ্যে এই ১০টি পত্র লেখা। পত্রকারদের ঠিকানা : কুমিল্লা, বরিশাল, কলকাতা, দার্জিলিং, ময়মনসিংহ, বগুড়া, চট্টগ্রাম ও কলকাতার উপকণ্ঠে বেলঘরিয়া।
প্রথম চিঠির লেখক কুমিল্লার খ্যাতনামা রাজনীতিক কংগ্রেস নেতা অখিলচন্দ্র দত্ত। ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯২৬-এ কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অখিলবাবু কুমিল্লা থেকে এই চিঠিটি লেখেন। অখিল দত্তকে কুমিল্লায় প্রেরিত রথীন্দ্রনাথের তারবার্তার জবাবে এই চিঠি। ১৯ ফেব্র“য়ারি কবি কুমিল্লায় আসেন। অভয় আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি (পরে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী) সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৮৭-১৯৬১) কবিকে কুমিল্লায় আমন্ত্রণ জানান। কুমিল্লা সফরের ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্ভবত রথীন্দ্রনাথ তার করেছিলেন অখিল দত্তকে। অখিলবাবু তখন কুমিল্লায় ছিলেন না। তবে টেলিগ্রাম পেয়েই মিসেস দত্ত অভয় আশ্রমের সুরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে খবর দিয়ে সব জানিয়েছিলেন। অখিলবাবু কুমিল্লায় প্রত্যাবর্তন করে রথীবাবুকে ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯২৬ তারিখে লেখা এই চিঠিতে জানান যে, ১৬ ফেব্র“য়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাউন্সিলের সভা চলবে। তাই কবি ও তাঁর সফরসঙ্গীদের কুমিল্লায় ‘শুভাগমনের সময়’ অখিলবাবু কুমিল্লায় থাকতে পারবেন না। তবে কলকাতায় যাওয়ার আগে অখিলবাবু কুমিল্লায় কবির অনুষ্ঠানসূচি ঠিক করে যাবেন।
কুমিল্লায় রবীন্দ্রনাথের অবস্থানকালে ২১ ফেব্র“য়ারি অভয় আশ্রমে সুরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রীগৌরাঙ্গ মঞ্চস্থ হয়েছিল। কবি অভিনয় উপভোগ করেন। রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সফর-সঙ্গীদের দত্তবাড়িতে আপ্যায়ন করা হয়।
রবীন্দ্রনাথ ও রথীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরেও অখিলচন্দ্রের যোগাযোগের কথা জানা যায়। শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর মহাফেজখানায় ৮ জানুয়ারি ১৯৪০ তারিখে অখিলচন্দ্রকে লেখা কবির একটি চিঠির সচিবকৃত অনুলিপি, ১৯৩৭-এর ১৪ সেপ্টেম্বর সিমলা থেকে শান্তিনিকেতনে প্রেরিত একটি এবং ১৯৪১-এর ৯ মে কুমিল্লা থেকে বোলপুরে প্রেরিত আরেকটি টেলিগ্রাম রক্ষিত আছে।
প্রথম তারে অখিল দত্ত রথীবাবুকে বার্তা পাঠালেন, ‘Anxious poet’s health. Praying recovery.’ দ্বিতীয় তারে কবির নিকট মিসেস দত্ত ও অখিলবাবুর বার্তা, ‘Our fervent prayer for many more birthdays. India needs inspiration from you in all spheres.’ সংকলিত দ্বিতীয় চিঠির লেখক অক্ষয়কুমার ভট্টাচার্য। বরিশাল থেকে ২৮ জুন ১৯৩৫-এর এই চিঠি কবির সচিব অনিল চন্দের চিঠির জবাব।
অক্ষয়কুমার ‘বলাকা কাব্যের সুর’ নামের একটি প্রবন্ধ পাঠিয়েছিলেন কবিকে। রচনাটি সম্পর্কে কবি ওই বছর ১৩ জানুয়ারি এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘তোমার লেখাটি ভালো লাগল। এতে চিন্তার বিষয় অনেক আছে।’ কবি অক্ষয়বাবুর সম্মতিসাপেক্ষে পরিচয় পত্রিকায় লেখাটি পাঠানোর অভিপ্রায় জানিয়ে বলেছেন, ‘অথবা যদি ইচ্ছা করো তবে আমার অভিমতসহ বিচিত্রায় পাঠালে সম্পাদক ফেরত দেবেন না।’ রচনাটি রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে তবে তা প্রবাসী বা বিচিত্রায় প্রকাশ পায়নি। একালে বিস্মৃত লেখক অক্ষয়কুমার ছিলেন বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক কামিনীকান্ত বিদ্যারতেœর জ্যেষ্ঠ পুত্র। (দ্র, নির্মলকুমার ভট্টাচার্য্য, ‘চিঠিপত্র’, দেশ, কলকাতা, ২০১১, পৃ ৮০)
কবির সচিবকে লেখা (তারিখবিহীন তবে অভ্যন্তরীণ অনুষঙ্গ থেকে অনুমেয় ১৯৩৬-এর সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরের গোড়ায়) পত্রের লেখক যোগেশচন্দ্র বাগল বিশিষ্ট গবেষকরূপে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। তিনি ১৯০৩-এ বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন ও ১৯৭২-এ কলকাতায় মারা যান। প্রবাসী ও মডার্ন রিভ্যু পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ভারতের মুক্তিসন্ধানী, হিন্দুমেলার ইতিবৃত্ত, মুক্তির সন্ধানে বাংলা, কলিকাতার সংস্কৃতিকেন্দ্র, Peasant Revolution of Bengal ইত্যাদি। ১৯৩৫-এ তিনি দেশ পত্রিকায় যোগ দেন। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের ভারতকোষ ও সাহিত্যসাধক চরিতমালায় লিখেছেন। সম্প্রতি তাঁর আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়েছে।
চতুর্থ পত্রকার আবদুল্লা রসুল তাঁর চিঠি লেখার সময়ে (১৯৩৭) ইংরেজি সাপ্তাহিক কমরেড পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পত্রে উল্লিখিত শরৎবাবু সুভাষচন্দ্র বসুর অগ্রজ আর রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায় (১৮৮৪-১৯৬৩) ছিলেন জাতীয় আন্দোলনে সহযোগী। তিনি কাশী, মহিশুর ও লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের বিরোধী দলের নেতা, জাতিসংঘের FAO-এ ভারতের প্রতিনিধি ছিলেন। পদ্মভূষণ উপাধিতে সম্মানিত হন।
আবদুল্লা রসুল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বঙ্গীয় কৃষকসভা ও সারাভারত কৃষকসভার সভাপতি এবং ১৯৭৭-এ পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন বলে বদরুদ্দীন উমর জানিয়েছেন। তিনি কৃষকসভার ইতিহাস ও ইংরেজিতে History of All India Kishan Sabha এবং একাধিক বাংলা উপন্যাসের লেখক।
পত্রমালার পঞ্চমটির লেখক বুদ্ধদেব বসু, প্রাপক অনিল চন্দ। ১৯৩৮-এর ৩০ সেপ্টেম্বর দার্জিলিং থেকে পাঠানো এই চিঠিতে হুমায়ুন কবিরের সহযোগে সম্পাদিত চতুরঙ্গ পত্রিকায় প্রকাশার্থে কবির ‘নারী’ কবিতার উল্লেখ আছে। হুমায়ুন কবিরকে লেখা রবীন্দ্রনাথের ৭ আগস্ট ১৯৩৮ তারিখের এক চিঠিতে গল্প না পাঠিয়ে ‘নারী’ কবিতা  পাঠানোর উল্লেখ আছে (দ্র. রবীন্দ্রনাথের একগুচ্ছ পত্র, ঢাকা; বাংলা একাডেমী, ১৯৮৫)। কবিতাটি চতুরঙ্গের প্রথম সংখ্যায় (আশ্বিন ১৩৪৫) প্রকাশ পায়। ১৯৩৭-এর ১৮ মে কবিতাটি আলমোড়ায় লিখিত ও পরে সানাই কাব্যগ্রন্থে সংকলিত। পত্রিকা ও গ্রন্থের পাঠে কিছু ভেদ আছে। রবীন্দ্ররচনাবলীর চতুর্বিংশ খণ্ডে (বিশ্বভারতী, পুনর্মুদ্রণ ১৯৭০) ‘গ্রন্থপরিচয়ে’ এই পাঠভেদের বিস্তারিত উল্লেখ আছে।
ষষ্ঠ চিঠি এবং সঙ্গে ১০ চরণের কবিতার লেখক ময়মনসিংহের হুসেনপুর হাইস্কুলের তৎকালে দ্বিতীয় শ্রেণির (এখনকার নবম শ্রেণি) ছাত্র আহমদ হুসেন। ১৯৩৭-এর ২রা নভেম্বর তারিখের এই চিঠি ‘ভারতীর বরপুত্র পরম শ্রদ্ধাষ্পদ শ্রীলশ্রীযুক্ত কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের করকমলে এক দীনহীন বালকের সশ্রদ্ধ অভিনন্দন।’ এই কবি কিশোরের পরিচয় অজ্ঞাত।
বগুড়ার পল্লীমঙ্গল পত্রিকার সাবএডিটর রোস্তম আলী লিখেছিলেন কবিকে। প্যালেস গেট থেকে ১৯৪০-এর ২৫ নভেম্বর লেখা এই চিঠিতে কবির রোগমুক্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। সাবএডিটর সাহেবের আর কোনো পরিচয় সংগ্রহ করতে পারিনি।
চট্টগ্রাম জজকোর্টের উকিল পূর্ণেন্দু দস্তিদার বি. এল. চন্দনপুরা থেকে ১৯৪১-এর ৪ এপ্রিল কবির সচিবকে অষ্টম চিঠিটি লিখেছেন। পূর্ণেন্দু দস্তিদার ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের ধলঘাটে জন্ম নেন এবং ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধকালে দেশত্যাগের সময় মারা যান। সূর্য সেনের নেতৃত্বে ১৯৩০-এ চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণে যোগ দিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবাস করেন। দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে ন্যাপের প্রার্থী ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম। তিনি রমেশ শীল ও প্রীতিলতার জীবনীকার। তাঁর অনূদিত চেকভ ও মোপাসাঁর গল্প-সংকলন বাংলা একাডেমী প্রকাশ করে।
এই চিঠিতে উল্লেখ আছে যে, ১৯৩০-৩৮ পর্যন্ত তিনি বিনা বিচারে বন্দি ছিলেন এবং ১৯৩১-এ হিজলি জেলে রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসব করেন। হিজলি জেলের বন্দিদের পক্ষ থেকে কবিকে প্রেরিত অভিনন্দনপত্রটিও তাঁর লেখা। কবির সচিবকে লেখা এ-চিঠিতে কবির শেষ জন্মদিনে চট্টগ্রামে তিনদিনের অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা লিখেছেন। ‘সারা বিশ্বে অত্যাচার, নিপীড়ন ও মানুষে-মানুষে হানাহানির যে বর্ব্বর অভিযান চলিয়াছে তার বিরুদ্ধে গুরুদেবের সুকঠিন ঘৃণা কিভাবে প্রকাশিত’ হয়েছে পত্রকার সে-সম্পর্কে ওই অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে চান বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন। বাংলা একাডেমীর জীবনী গ্রন্থমালায় মফিদুল হক তাঁর জীবনী লিখেছেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পূর্ণেন্দু দস্তিদারের পত্রবিনিময় হয়েছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম বইয়ে তিনি ১৯০৭ সালে রবীন্দ্রনাথের চট্টগ্রাম ভ্রমণের বিবরণ দিয়েছেন।
এই পত্রধারার শেষ দুটির পত্রকার শোভনলাল গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন অবনীন্দ্রনাথের দৌহিত্র, সাহিত্যিক মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের (জন্ম ঢাকা ১৮৮৮, মৃত্যু কলকাতা ১৯২৯) পুত্র ও মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভ্রাতা। আমৃত্যু রবীন্দ্রভবন মহাফেজখানায় কর্মরত ছিলেন। তাঁর সহযোগিতায় রবীন্দ্রনাথের অটোগ্রাফ-সংগ্রহ স্ফুলিঙ্গ (পরিবর্ধিত নূতন সংস্করণ বিশ্বভারতী ১৩৯৭) সম্পাদনা করেন কানাই সামন্ত। ১৯৬৪ সালে প্রকাশ পায় শোভনলালের গল্প।
শোভনলালের প্রথম পত্রে (১৬ মার্চ ১৯৪৮) যে পুলিনবাবুর উল্লেখ আছে, তিনি ছিলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রতথ্যভাণ্ডারী পুলিনবিহারী সেন (জন্ম ময়মনসিংহ ১৯০৮-মৃত্যু কলকাতা ১৯৮৪)। স্কুলের ছাত্রাবস্থায় ১৯২৫-এ শান্তিনিকেতনে আসেন। রবীন্দ্রøেহধন্য এই রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ ১৯৩৫-এ বিশ্বভারতীর গ্রন্থনবিভাগে যোগ দেন। রবীন্দ্ররচনাবলী ও চিঠিপত্র সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রবীন্দ্রজন্মশতবর্ষে দুই খণ্ডে সম্পাদনা করেন রবীন্দ্রায়ন (১৯৬১)। রবীন্দ্র-গ্রন্থপঞ্জি প্রথম খণ্ড বিশ্বভারতী প্রকাশ করেছে (১৩৮০)। তিনি শোভনলালের গল্পগ্রন্থের ভূমিকাকার। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের ভারতকোষে কয়েকটি ভুক্তি রচনা করেন। তাঁর সারাজীবনের দু®প্রাপ্য ও অমূল্য সংগ্রহ দান করেছেন বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবনে। তাঁর জন্মশতবর্ষে অনাথনাথ দাস ও সুবিমল লাহিড়ী সম্পাদিত স্মারকগ্রন্থ পুলিনবিহারী প্রকাশ করেছে বিশ্বভারতী।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : রবীন্দ্রভবন, ড. শ্যামল চন্দ ও অর্জুন দত্ত।

পত্র : এক
Legislative Council            কুমিল্লা
Bengal                ১০/২/২৬
প্রিয় রথীন্দ্রবাবু,
আমি আজ ৫ দিন পর এখানে আসিয়া আপনার টেলিগ্রাম পাইলাম। কিন্তু আমার স্ত্রী আপনার টেলিগ্রাম পাইয়াই অভয়াশ্রমের শ্রীযুক্ত সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়কে খবর দিয়া সব কথা জানাইয়াছেন। সুরেশ বাবু ইতিমধ্যে অবশ্য পত্র লিখিয়াছেন। আশা করি তাঁদের অনুরোধ রক্ষা করা অসম্ভব হইবে না।
১৬ই ফেব্র“য়ারি কাউন্সিলের মিটিং আরম্ভ হইবে। ২০শে ফেব্র“য়ারি হইতে Bengal Tenancy Amendment Bill-এর Select committee-এর মিটিং আরম্ভ হইয়া ২৭শে তারিখ পর্যন্ত চলিবে। কাজেই কুমিল্লায় আপনাদের শুভাগমনের সময় আমি কুমিল্লায় থাকিতে পারিব না। ইহা আমার পক্ষে নিতান্ত ক্ষোভের বিষয়। একথা বলাই বাহুল্য। আশা করি আপনারা আমার এই অনিচ্ছাকৃত ত্র“টী মার্জ্জনা করিবেন।
আমি কলিকাতায় যাওয়ার পূর্ব্বে এখানকার প্রোগ্রাম ঠিক করিয়া যাইব এবং আপনাকে পুনরায় পত্র লিখিব।  ইতি
ভবদীয়

স্ত্রী অখিলচন্দ্র দত্ত

পত্র : দুই
Akshaya Kumar Bhattacharya    Barisal
C/O Late K.K. Vidyaratna    Dated : 28/6/1935
শ্রী শ্রী কমলেষু
শ্রীযুক্ত অনিলকুমার চন্দের চিঠি পাইয়া ‘বলাকা কাব্যের সুর’ শীর্ষক লেখাটি পুনরায় কপি করিয়া পাঠাইতেছি। যদি পড়িয়া আপনার ভালো লাগে তবে, অনুগ্রহপূর্ব্বক আপনার অভিমত স্বহস্তে লিখিয়া অন্তত একটী ছত্র আশীর্ব্বাদস্বরূপ আমাকে দিতে হইবে, ইহাই বিনীত প্রার্থনা।
ভক্তিপূর্ণ প্রণাম গ্রহণ করিবেন।
ইতি
প্রণত শ্রী অক্ষয়কুমার ভট্টাচার্য

পত্র : তিন
Ganen maharay
2B Nalin Sarkar Street
Shambazar
Calcutta
শ্রদ্ধাষ্পদেষু,
আমি গত ২৬/৯/৩৬ তারিখে শ্রীযুক্ত গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (গণেন মহারাজ) নির্দ্দেশক্রমে আপনাকে পত্র লিখিয়াছিলাম। গতকল্য মহারাজ বলিলেন যে, তিনি আপনার নিকট হইতে পত্র বা রবীন্দ্রনাথের কবিতা পান নাই। তাঁহার কথা মত অদ্য আবার আপনাকে এই অনুরোধ জানাইতেছি। আগামী শারদীয়া সংখ্যা ‘আন্দবাজার পত্রিকা’ ও ‘দেশ’-এর জন্য রবীন্দ্রনাথের কবিতা যদি পাঠাইয়া দেন তো বড়ই অনুগৃহীত হইব। মহারাজের নিকট পাঠাইলেই চলিবে। আশা করি আপনার উত্তর সমেত কবিতা শীঘ্রই তাঁহার হস্তগত হইবে।    ইতি
বিনীত
শ্রী যোগেশচন্দ্র বাগল

পত্র : চার
THE
COMPADE
WEEKLY JOURNAL

EDITOR :    249 BOWBAZAR STREET
MUJIBUR RAHMAN    CALCUTTA
২০/৮/৩৭

প্রিয় অনিলবাবু,
আপনি যে এখনো আমাদের মনে রেখে পত্র দিয়েছেন সেজন্যে আপনাকে ধন্যবাদ। আমি আপনাদের ওখান থেকে ফিরে এসেই শরৎবাবুর* সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তিনি তখনি কিছু সাহায্য করেছিলেন এবং পরেও কিছু ব্যবস্থা করিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা এখনো কোনো রকমে চালিয়ে যাচ্ছি।

রাধাকুমুদ বাবুর ওখানে কিছুই হয়নি, তিনি কবির চিঠি পেয়েও বিষয়টিকে সেভাবে নিতে পারেননি যেভাবে নেবেন বলে আশা করেছিলাম। যাই হোক, পরে আবার অবসর মতো আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করব।
আশা করি আপনি কুশলে আছেন।

মৌলানা* ও মিঃ কৃপালনীর* সঙ্গে দেখা হলে আমাদের কথা বলবেন।
আপনার
আবদুল্লা রসুল

পত্র : পাঁচ
Snowview Hotel    KAVITA
Darjeeling    202 Rash Behari Avenue
30.9.38    Ballygunge, Calcutta
শ্রীযুক্ত অনিলকুমার চন্দ
পোঃ অঃ শান্তিনিকেতন
বোলপুর (বীরভূম)

প্রিয়বরেষু
বন্ধুবর হুমায়ুন কবির ও আমি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করে বলেছিলাম যে ‘চতুরঙ্গ’ আশ্বিনে প্রকাশিত হবে এবং সেই অনুসারেই তিনি ‘নারী’ কবিতাটি আমাদের পাঠিয়েছিলেন। ‘চতুরঙ্গ’ ১৫ই আশ্বিন প্রকাশিত হওয়ার কথা, এতদিনে হয়তো বেরিয়েও গেছে, আমি কলকাতায় কবির কবিতা ও অন্যান্য লেখার প্র“ফ দেখে এসেছিলাম। সময়ের নিতান্ত টানাটানির জন্যে কবিকে প্র“ফ পাঠাতে পারিনি, আশা করি সেজন্য তিনি অপরাধ নেবেন না। আপনি দয়া করে ‘প্রবাসী’*কে খবরটা দিয়ে দেবেন; আশা করি তার সময় এখনো আছে।
আপনি আমার প্রীতিপূর্ণ নমস্কার জানবেন। কবিকে প্রণাম।

বুদ্ধদেব বসু

পত্র : ছয়
ভারতীর বরপুত্র পরম শ্রদ্ধাষ্পদ
শ্রীলশ্রীযুক্ত কবীন্দ্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের
করমলে এক দীন হীন বালকের
সশ্রদ্ধ অভিনন্দন

গুরো!
উচ্চারিলে মহাবাণী তুমি বিশ্বমান;
নম নম ঋষিবর নম কবিরাজ।
বাজায়েছ শান্তি-বীণা গাহিয়াছ গান
জুড়ায়েছ মানবের তাপিত পরাণ।
উদ্ধারিতে মগ্নতীরে চ’লে দিনরাত,
স্বরগ সুধার তরে বাড়ায়েছ হাত,
দেনেছ মাতৃপূজায় গীতাঞ্জলী [য. দৃ.] অর্ঘ্য,
তুষিয়াছ সাম্য গান ভূ-দেবতা বর্গ।
মন্দাকিনী তোয় ধারা সানিয়াছ সঙ্গে
ঢালিয়াছ পীযূষ সম মোদের সোনার বঙ্গে।
আর্য্য!
তোমাকে যে আমি কী বলে ডাকবো, তা খুঁজে না পেয়ে গুরু বলে মেনে নিয়েছি। আর মনে-মনে তোমাকে ডাকছি। সে ডাক শুনবে কী? নির্জ্জনে বসে বসে তোমার ছবিও আঁকছি। তাই এ ক্ষুদ্র লিপিকা দ্বারা আমার ভক্তিপ্লুত নমস্কার জানাচ্ছি। দয়া করে গ্রহণ করো তাহলে কৃতার্থ হবো। অনেক দিন হতে চিঠিপত্র না লিখতে লিখতে কায়দা কৌশল গিয়েছি ভুলে। ভ্রম ত্র“টী অনেক হতে পারে, দয়া করে সেগুলি ক্ষমা করো।

মহাভাগ!
তোমায় কোন দিন চোখে দেখি নি। সুদূর, নিভৃত এক পল্লী প্রান্ত থেকে তোমার লেখা পড়েছি। সে লেখা কোথাও বুঝেছি, কোথাও বুঝিও নাই আবার যেখানে বুঝেছি সেখান দিয়া তোমাকেও খানিকটা উপলব্ধি করতে সমর্থ হয়েছি। প্রকৃতির বস্তু নিয়ে যে একটী একটি কবিপ্রাণ সাড়া দিয়ে উঠছে তাহাও খানিকটা দেখছি।

হে তাপস!
আমি অকিঞ্চন। তোমাকে সংবর্দ্ধনা করিবার ক্ষমতা আমার নেই। ভগবানের নিকট কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি তোমার ও  শান্তিনিকেতনের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি হউক। ইতি

হুসেনপুর হাই ইস্কুল    বিনয়াবনত
পো. হুসেনপুর    আহমদ হুসেন
ময়মনসিংহ    হুসেনপুর হাই স্কুল
১৬ই কার্ত্তিক ১৩৪৪ সন    ২য় শ্রেণী
পুনঃ পত্রোত্তর আশে ডাক টিকিট পাঠিয়েছি
অনুগ্রহ পূর্ব্বক জানালে সুখী হবো।
আহমদ হুসেন
পত্র : সাত
THE PALLI-MANGAL
BOGRA
BOGRA
Ref. No. A.80    Dated 25.11.1940
Palace Gate
মঙ্গলালয়েষু
কবি পুরোহিত।
দাসের সশ্রদ্ধ অভিবাদন
আপনার রোগ-মুক্তিতে সুখী হ’লেম। আশীর্ব্বাদ পাবার আশায় একটী ‘বাসী ফুল’, বিশ্ব কবির ফুল মালঞ্চে অর্ঘ্য দিলাম। বেশী দেরী হওয়ায় আমি দুঃখিত ও লজ্জিত। ইতি।
আশীর্ব্বাদপ্রার্থী
রোস্তম আলী
Sub-editor Palli Mangal Bogra
পত্র : আট
Purnendu Dastidar, B.L    CHANDANPURA
PLEADER    Chittagong
Judge’s Court    Dated 4-4-1941
শ্রদ্ধাষ্পদেষু
একটি বিশেষ প্রয়োজনে আপনাদের বিরক্ত করছি। আমার ভরসা আছে, আমার উদ্দেশ্য জানলে হয়ত আমার এই চিঠি বিরক্তি উৎপাদন নাও করতে পারে।
চট্টগ্রামে এইবার বিশেষভাবে রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন করিবার আয়োজন হইতেছে। জেলা জজ শ্রীযুত শৈলেজগুহ রায় মহাশয়কে সভাপতি করিয়া একটি শক্তিশালী কমিটি গঠিত হইয়াছে এবং উৎসব তিন দিন ব্যাপিয়া চলিবার সম্ভাবনা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন দিক লইয়া আলোচনার ব্যবস্থা হইতেছে।
আমার ইচ্ছা তার একটি দিক লইয়া আলোচনা করা। সেই বিষয়ে সাহায্যের আশা লইয়াই এই পত্রের অবতারণা। সারা বিশ্বে অত্যাচার, নিপীড়ন ও মানুষে মানুষে হানাহানির যে বর্ব্বর অভিযান চলিয়াছে, তার বিরুদ্ধে গুরুদেবের সুকঠিন ঘৃণা কিভাবে প্রকাশিত হইয়াছে আমি সেই বিষয় লইয়াই আলোচনা করিবার ইচ্ছা করিয়াছি। নিজেও রাজরোষে ১৯৩০-৩৮ সাল পর্যন্ত বিনাবিচারে বন্দী ছিলাম এবং ১৯৩১ সালে হিজলী আটকখানায় থাকার সময় মহাসমারোহে রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসব করিয়াছিলাম। তাহার জন্য হিজলী হইতে যে অভিনন্দন প্রেরিত হইয়াছিল, তাহা এই দীন রবীন্দ্রপূজারীর রচিত, অঙ্কিত ও লিখিত। তারপর বর্তমানেও ভারত রক্ষা আইনে আমার ব্যক্তিস্বাধীনতা কিছু ব্যাহত। তাই গুরুদেবের সেই বিশেষ দিকটি লইয়া আলোচনা করার আমার এই আগ্রহ। যদি আপনি দয়া করিয়া নিুলিখিত বিষয়গুলি আমাকে পাঠান তবে আমার পূজা করিবার আগ্রহ সুসম্পন্ন হইতে পারে : –
(১) গত স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় স্পেনে ভারতবর্ষ হইতে সাহায্য প্রেরণের জন্য কবিগুরু যে আবেদন করিয়েছিলেন তাহার অনুলিপি। (WE-3, P819)
(২) জাপানের রাজকবি নোগুচির, জাপানকে চীন জাপান যুদ্ধে সমর্থন করিবার প্রত্যুত্তরের অনুলিপি। (834-45)
(৩) জাপানপ্রবাসী ভারতীয় শ্রীরাসবিহারী বসুর জাপানকে সাহায্য করিবার অনুরোধে পত্রের উত্তরের অনুলিপি।
(৪) বিশ্বমানবতার সম্পর্কে লিখিত, মানুষ মানুষে হানাহানি, জাতির উপর জাতির দেশের উপর দেশের অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে গুরুদেবের প্রকাশিত কবিতার অনুলিপি।
উল্লিখিত বিষয়গুলি দয়া করিয়া আমাকে পাঠাইলে বড়ই বাধিত হইব। গুরুদেবকে এই দীনতম ভক্তের মুগ্ধমনের গভীর শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাইবেন। আশা করি বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন। আপনি আমার প্রীতি-নমস্কার গ্রহণ করিবেন। ইতি
বিনীত
শ্রীপূর্ণেন্দু দস্তিদার

পত্র : নয়
শ্রদ্ধাষ্পদেষু,
রথীদার সঙ্গে দেখা করেছিলুম। এক মাসের ছুটি মঞ্জুর করিয়ে নিয়েছি। এখানে কতকগুলো মিটিং আছে। রথীদা বোধহয় ২২/২৩ নাগাৎ শান্তিনিকেতনে ফিরবেন।
Karpeles এর চিঠির কথা রথীদাকে বল্লুম। Post card এ যে চিঠিটা এসেছে সেটা বোধহয় Ordinary mail-এ এসেছে আগেরটা বোধহয় air mailএ এসেছে। যাই হোক ওঁকে আর একটা চিঠি প্রাপ্তি সংবাদ জানিয়ে লিখতে বল্লেন। ওঁর নতুন ঠিকানা রথীদার কাছে আছে। রথীদা ফিরে গেলে সেই ঠিকানাতেই চিঠি দেবেন। Karpeles এর চিঠিগুলো কি Copy হয়ে গেছে?
পুলিন বাবুর সঙ্গে দেখা করেছিলুম। উল্লেখযোগ্য কোন কথা হয়নি। কেবল রবীন্দ্রভবনকে যে উনি আর কিছুই দেবেন না সে কথা জানিয়ে দিলেন। কিন্তু সে শুধু ওঁর মুখের কথা – আসলে ‘অন্তরের কথা’ অন্য রকম তা আমাদের জানা আছে।
আমি কলকাতায় এলেই হয় দাঙ্গা নয়তো অনুরূপ কোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটবেই – দুদিন ধরে এমন অকাল বর্ষা নেবেছে যে বাড়ী থেকে বেরবার জো নেই। কলকাতায় শুনছি প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টি হয়ে গেছে। আজকের বেশ পরিষ্কার রোদ উঠেছে – ঠান্ডাও আছে। ওখানে?
আশা করি ভালোই আছেন। আমার চিঠিপত্র যা আসবে অমিয় বাবুকে বলবেন যেন দাদার আপিসের ঠিকানায়
Redirect করে দেন।
নমস্কার জানবেন।
ইতি ৩ চৈত্র ১৩৫৪
শোভনলাল

পত্র : দশ
গুপ্তনিবাস
[বেলঘরিয়া]
৮/৪/৪৮
শ্রদ্ধাষ্পদেষু,
আগের চিঠিতে আপনাকে লিখেছিলুম – বৃহস্পতিবার কিম্বা শুক্রবার ফিরব। কিন্তু কাল হাঁসপাতালে পূর্ণিমাকে আর একবার দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলুম। ডাক্তার বাবু আর একটা ওষুধ বদলে দিয়েছেন – কিরকম থাকে আর একবার সোমবার দিন নিয়ে যেতে বলেছেন। সেই জন্যে আজ আর আমার যাওয়া হল না। সম্ভবতঃ আসছে বুধবার ফিরব। শনিবার পর্যন্ত আমার ছুটি তার পরে ঐ কদিনের জন্যে আশা করি ছুটি মঞ্জুর হবে। আশা করি আপনাদের শারীরিক কুশল। নমস্কার জানবেন।   ইতি
শোভনলাল [গঙ্গোপাধ্যায়]