আবুবকর সিদ্দিকের ‘কংকালে অলংকার দিয়ো’ পরকালযাত্রার পূর্বকথন

আবুবকর সিদ্দিক বহুমাত্রিক, বহুকৌণিক লেখক-কবি হিসেবে স্বীকৃত। তিনি বস্তুনিষ্ঠ ও জীবনবাদী লেখক। শ্যামল যাযাবর। তাঁর লেখায় বারবার বিষয়, লিখনশৈলী ও জীবনদৃষ্টির পরিবর্তন ঘটেছে – পরিবর্তিত সময়-সমাজ-জীবনবোধের পরিপ্রেক্ষিতে। অর্থাৎ শিল্প-সাহিত্যাঙ্গনে তিনি সবসময় নিজেকে আপডেট রেখেছেন। ধবল দুধের স্বরগ্রাম থেকে এইসব অন্যমানবিক কবিতা পর্যন্ত তাঁর ঊনিশটি কাব্যগ্রন্থ। এর মধ্যে কংকালে অলংকার দিয়ো বিশেষ গুরুত্ববহ, প্রকাশকাল ১৯৭৬; পরবর্তী কাব্যসমূহে নস্টালজিক ভাবনা, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ, বৃষ্টি ও বীজের কথা, নদীহারা মানুষ ও হাওরের হাহাকার প্রতিফলিত – যেখানে মানুষের অস্তিত্বই ঘোষিত হয়েছে। আর মৃত্যুকথা, কংকালে অলংকার দিয়োতেই বেশি স্পষ্ট – তাও জীবনবিচ্ছিন্ন নয়। বলতেই হয়, কালো কালো মেহনতি পাখিতে মানবতার সপক্ষে উচ্চারণ যেমন উচ্চকণ্ঠ – কংকালে অলংকার দিয়ো সে-তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়, সুর ও স্বরে নির্মিত। এ যেন এক নতুন কাব্যভুবন। গ্রন্থভুক্ত প্রতিটি কবিতার পঙ্ক্তিমালা মৃত্যুচিন্তা-আশ্রিত। রবীন্দ্রনাথসহ প্রায় সব কবিই এই ভাবনামুক্ত নন। তবে আবুবকর সিদ্দিক বর্তমান গ্রন্থে মৃত্যুচিন্তাকে অন্যতর রূপ দিয়েছেন। মানুষ মাত্রই মরণশীল। কবিকেও একদিন মরতে হবে। এজন্য তাঁর কাতরতা নেই, নেই আহাজারি; আছে মৃত্যুর আগে চোখ মেলে তাঁর কাঙ্ক্ষিত দৃশ্যাবলি দেখার কামনা, কিংবা কবরে যাওয়ার বেলায় সঙ্গে কিছু বই নেওয়া, অথবা মৃত্যুর পরে কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা।

আবুবকর সিদ্দিকের পঁচাত্তর বছরপূর্তি উপলক্ষে জিজ্ঞেস করা হয়, একজন কবি হিসেবে মৃত্যুচিন্তাকে আপনি কীভাবে উপলব্ধি করেন? কবির উত্তর – ‘বৃক্ষের মহান আকর্ষণ, নদীর নিশি আলাপন, নারীর বিস্ময়কর দেহনিকেতন, প্রেমের দুর্লভ গরল, অসংখ্য বিচিত্র মানুষের মুখদর্শন, নিত্যনতুন বই পড়ার আনন্দ, এসব কিছু চিরতরে ছেড়ে মাটির তলায় গিয়ে পচে গলে কীটের খাদ্যে পর্যবসিত হতে হবে, ছাঁঃ! কোন্ পাগলে সেধে মেনে নিতে চায় এই ধ্যাষ্টামো? জীবনযাপন যতই আজাবদায়ক হোক, জীবন ব্যাপারটা আদতে অসহ্য সুন্দর! দিকে দিকে সুন্দর! আকাশে বাতাসে প্রেমের বাঁশি! নারীপুরুষে অপ্রতিরোধ্য টান! এই আনন্দনিকেতন ছেড়ে কোন পাগলে স্বেচ্ছায় কেটে পড়তে চায়? বোকার বেহদ্দ বেরসিক দার্শনিক! আমার দুটি চক্ষু শেষ নির্বাপণের আগেও সব স-ব সুন্দর মুখ দেখতে দেখতে যেতে চাই।’ কবির এই বাসনাবিলাস কয়েকটি কবিতায় আছে, বাকি কবিতাগুলি অতিলৌকিক, অতিভৌতিক, অতিপ্রাকৃত, পরাবাস্তব, উত্তরাধুনিকতা, প্রযুক্তির মানবিকগ্রাস – সব মিলিয়ে জনমমরণ, কবর, শ্মশান, প্রকৃতির পাতা ঝরঝর, নদীর ছলাৎ ধ্বনির নীরবপতন, নিশিরাত, পাখির পাখাঝাপটানো, করুণ আর্তি পাঠকের গা ছমছম করে বইকি! কবি আবুবকর দক্ষ হাতে, সূক্ষ্মমননে, গভীর জীবনাভিজ্ঞতায় নির্মাণ করেন এসব মৃত্যুচিন্তাচ্ছন্ন কবিতা।

আবুবকর সিদ্দিকের নিজস্ব ভাষ্য, ‘মনন ও উপলব্ধির সূক্ষ্মতম কম্পনটুকু ধরা পড়ে কবিতায়।’ আমাদের দেশে জীবদ্দশায় অনেকেই গুণের কদর পায় না। মৃত্যুর পর তাঁদের গুণকীর্তনে মানুষ পঞ্চমুখ হয়, পুরস্কারে ভূষিত করে। গ্রন্থভুক্ত কয়েকটি কবিতায় কবি কিছুটা হালকা ঢঙে উপর্যুুক্ত ভাবসত্যকে উপস্থাপন করেছেন। যেমন, গ্রন্থের শিরোনামাযুক্ত কবিতার কিছু অংশ –

আমায় তোমরা নামিয়ে দেবে

দেবার আগে ভাবতে দিয়ো,

কালো খামে শুইয়ে দেবে

তার আগে চোখ মেলতে দিয়ো।

টুকুস্ একটু নোনতা মিঠে

জিভের ডগায় ধরতে দিয়ো,

সবার কাছে ভালো ভালো

ছোট্ট করে বলতে দিয়ো। …

আপন পাপে পুড়তে দিয়ো

শাপেতাপে গলতে দিয়ো,

নামিয়ে দেবার আগে শুধু

মিনিট পাঁচেক দেখতে দিয়ো।

মাংস খসে গেলে পরে

কংকালে অলংকার দিয়ো।

                    (কংকালে অলংকার দিয়ো, পৃ ৯-১০)

কত সাবলীল অথচ প্রতীকী শব্দসজ্জায় চিহ্নিত করেন মৃত্যুর অবস্থান। কবির পারদর্শিতার নিদর্শন –

মৃত্যু নিয়ে আমার কোনো দর্শনবিলাস নেই,

সে তো আসবেই। বরং আরো সত্যি করে

বলি, আছেই বিছানার শয্যাসংগী হয়ে।

আমি বালিশের উপর মাথা পেতে শুই,

সে বালিশের তলায় ঘাপটি মেরে ঘুমিয়ে থাকে।

যেন পিতলের চাবি, জেগে উঠবে যে কোনো

মুহূর্তে, শরীরের ডালা খুলে হরণ করে নেবে

অদৃশ্য জেলী।

                                       (‘এপিটাফ’, পৃ ১১)

‘শরীরের ডালা খুলে হরণ করে নেবে/ অদৃশ্য জেলী’ অর্থাৎ জীবাত্মা চলে যাবে পরমাত্মার কাছে। ‘চোট’, ‘আমি আর আসবো না’, ‘ফঙ্গবেনে’, ‘মাদুরটুকুও বাদ যাবে না’ প্রভৃতি কবিতায় মৃত্যুর পরশ আছে নীরবে কিংবা সরবে। ছোট করে দৃষ্টান্ত –

১.        আমি চলে যাচ্ছি। আজ ব্লাডপ্রেসার কাল

          চুলে শাদা ছোপ, পর্শু কিডনী ড্যামেজ …

          ছায়া ঘনতর ও লম্বা হয়ে আসছে, বিদায়।

                                                (‘চোট’, পৃ ১৩)

২.       চলে যাবো নদীহীন নামহীন পাথুরে প্রবাসে,

          চলে যাবো পাথরের শব আমি জলের হতাশে,

          আমি আর আসবো না উদ্ভিদের সেবাধর্ম চেয়ে।

                              (‘আমি আর আসবো না’, পৃ ১৩)

৩.       আমাকে অমিয় দাও অল্পস্বল্প,

          দাও যৎসামান্য ফুলেল তেলজল,

          হড়পা বানের মত গরল ফিরিয়ে দেবো দেখো। …

          মৃত্যুকে দক্ষিণা দিলে এভাবে গতিশীল হয়।

                                            (‘ফঙ্গবেনে’, পৃ ১৫)

৪.       আমরা সনাতন জোড়পাপী।

          পরিচয়ে কিবা প্রয়োজন? মৃত্যু এলে কাপে কাপে

          সেট হয়ে যাবো, একমাদুরেই চিরসহবাস।

                           (‘মাদুরটুকুও বাদ যাবে না’, পৃ ২২)

আবুবকর সিদ্দিকের আবাল্য নেশা বইপড়া, বইলেখা ও বইসংগ্রহ। তাঁর সংগৃহীত বইয়ের সম্ভার ঘরভর্তি আলমারি, টেবিল, মেঝে ছাড়িয়ে বিছানায় স্থান নিয়েছে। তিনি ‘বইবাসী’। বইছাড়া ছটফট করেন, ঘুমাতে পারেন না। এই বইপ্রেমিক কবির উপলব্ধি ও নিবেদন –

বন্ধুরা বানায় বাড়ি কেনে ফ্ল্যাট, আমার আজন্ম

বইতে বসত, বইঘরে আমৃত্যু রূপালী পোকা। …

আমার আর

হলো না মাটিঠাঁই। নাকি মাটি হয়ে গেল

সপরিবারে? হোক, তবু খানদুই বই দিয়ো মনে করে

বুকের বাঁ পাশে, রহিতস্পন্দন, যখন মাটিচাপা দেবে।

               (‘বন্ধুরা বানায় বাড়ি কেনে ফ্ল্যাট’, পৃ ২৫)

মৃত্যু ঘিরে রহস্য, অতিপ্রাকৃত রূপ আর উত্তরাধুনিক চেতনার প্রকাশ – যা কবির মন-মনন-রচনাশৈলীর পরিচায়ক :

১.        দুপাশে তমসাজমাট

          বিশাল আমবাগান … থম ধরা স্তব্ধ ছায়াচোখ

          মৃত্যুর ভাইরাসবাহী ভূতছায়া ছায়াভূত;

          ছায়ার মৃতমাড়ী মৃতমগজ মৃতহৃদয়

          উপচে উপচে ওঠা অশরীরী বমির কুবাস।

                                (‘সত্রাজিৎপুর ট্রাজেডি, পৃ ৪৮)

২.       হাৎড়ে হাৎড়ে কী খুঁজছো কাঙালের মত?

          কী খুঁজছো অমন হন্যে হয়ে, এই প্রাচীন

          ভাগ্য কবরে কত গভীরে পৌঁছুবে তোমার হাত?

          এই সব সাধের তৈজসপাতি সাজিয়ে নিয়ে

          বসে আছি একশতাব্দী, কী খুঁজছো তুমি

          সাড়ে ষোলো ইঞ্চি হাতে?

                                                 (‘মুর্দা’, পৃ ৫৪)

আবুবকর সিদ্দিকের কবিতার শব্দ, প্রতীক, বাক্য – সবই মননধর্মী এবং নতুনত্বসঞ্চারী। একই শব্দের পুনরাবৃত্তি করেও তিনি কবিতার ভাব-মেজাজে ভিন্নতা আনেন। এ-বক্তব্যের সপক্ষে কয়েকটি দৃষ্টান্ত –

১.        শিল্প মানেই মূলত মানুষের চোট খাওয়া স্বপ্ন।

(পৃ ১২)

২. মানুষের কষ্ট শোকে নয়, মানুষের স্বরচিত রক্তপাতরোগে। (পৃ ৪১)

৩.       সিংহের মত বয়ে যায় নিম্নচাপের ঘূর্ণী;/ ফুসফুসের ব্লাডার চুম্সে/ উড়ে চলে যায়। (পৃ ৫৮)

৪.       বিদ্যুৎহীন বরফের মধ্যে বরফ,/ বরফের মত শাদা রক্তসমুদ্দুর। (পৃ ৪২)

৫. তুষ তুষ হয়ে উড়ে যায়/ সাধের অর্জন দেহধন।

(পৃ ৪৪)

কী সাধের জীবন কিংবা কষ্টবাস শেষে মানুষ ঝরে যায়, চলে যায়, পচে যায় – যাওয়ার আগে চেয়ে চেয়ে দেখে; হয়তো কিছু পাওয়ার আশা করে। এই আসা-যাওয়া, চাওয়া-পাওয়ার জীবন নিয়েই আবুবকর সিদ্দিকের সফল কবিতাকর্ম কংকালে অলংকার দিয়ো – জীবনমৃত্যুর সোজাসাপটা আর গভীর রহস্যাচ্ছন্ন কাব্যকলা।

এই শক্তিধর কবি, আবুবকর সিদ্দিক ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৩, নব্বই বছর বয়সে প্রয়াত হন। রেখে যান অমর স্মৃতি ও কালজয়ী সৃজনসম্ভার। আমরা তাঁকে জানাই অসীম শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসার পুষ্পাঞ্জলি। ৎ

কালি ও কলমে প্রকাশিত

আবুবকর সিদ্দিকের কবিতা

বরেন্দ্রর ভেদকথা!

বাতাসে আমগন্ধ মদির। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সড়কে

রাতভর ল্যাংড়ার ট্রাক।

উত্তরসড়ক গুঞ্জনে মর্মরে গর্জনে সবাক।

মধুভারে আক্রান্ত মৌমাছি।

বরেন্দ্রর ভেদকথা কী জানে পামর!

পুরাকণ্ঠ উজিয়ে আসে ফিস ফিস অস্ফুট কথা।

কৃষ্ণা রাত। থাম থাম ঝুপসি ছায়ার আমগাছ।

প্রেতিনীদের কলাম সারি সারি। আজ

দায়মুক্তি সংসার থেকে।

শাহ সুজার অশ্বখুরধ্বনি মিলিয়ে যায়

ধূসর কানসাট বর্ডারে।

কফিনের ঘের থেকে সত্যি দায়মুক্তি সময়ের।

কালো লেস কালো হুইলের বায়ুযান।

মহানন্দার মেঘ পেরিয়ে ওই অনন্তসোয়ারী।

বরেন্দ্রর ভেদকথা কী জানে পামর!

আকাশে আকাশে মন্দ্রধ্বনি : ‘ফিরে যাও –

– ফিরে যাও – যাও – বরেন্দ্রর বৃষ্টিসোঁদা

বাতাসে আকাশে অরণ্যে কোথাও আর

সেই আমি নেই – নেই – ফিরে চলে যাও।’

* প্রকাশকাল : নভেম্বর ২০০৪/ অগ্রহায়ণ ১৪১১

বিচ্ছেদের প্রস্তুতিগান

ধরে নাও এই শেষ দেখা,

পাকাপাকি বিচ্ছেদ এই সমুদ্রযাত্রার আগে।

কত দূরে যাওয়া যাবে? মেরুগন্তব্য? সমুদ্র

বরফ হয়ে আছে আমাদের শীত শীত

সম্পর্কের মতো।

আঁখি ফিরাও, মোছো অশ্রুকণা।

বিদায়ী আকাশপাখি চোখ ঠেরে উড়ে যায়।

ছি! সেন্টিমেন্ট চলে না এ যুগে।

শাখা নামিয়ে দিয়েছে হিজলজননী, ধরো,

ধরে উঠে দাঁড়াও। কী বিচিত্র মানবজীবন!

কাপডিশ জলাধার ভেড়িবাঁধ টুটেফেটে যায়।

কত কী যে বাকি রয়ে যায় শেষ গান

শেষ সংলাপ পানপাত্রে আখেরী চুমুক!

সূর্য ঢেকে গেছে শ্বেত ভালুকের থাবায়।

হে নদী, বিদায়! ফিরে যাও গেরস্থের দ্বারে।

হে নদী, বিদায়! দেখো বিপ্রতীপ বন্যা

ধেয়ে আসে। আদিগন্ত বিচ্ছেদবিধুর

আরোগ্যাতীত। এ সবই ভবিতব্য, কল্পনাতীত।

তবু যে খেলেছি ক’টা দিন কম কী! দুর্লভ মানবজন্ম

হেসে খেলে এইমত অশ্রুশয্যাতলে।

* প্রকাশকাল : মার্চ ২০০৫/ চৈত্র ১৪১১

সাঁঝের নিমতলা

[বন্ধু হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে ১৮.২.২০০৮-এ দিনভর আড্ডার স্মরণে]

নিমফুল! সাঁঝের নিমফুল! তোমার তেতোমধুর স্বাদে

শৈশব ফিরে আসে; নিমের বাতাস। শান্তশীল মা আমার,

জগদ্ধাত্রী। দক্ষিণসমুদ্র থেকে শুদ্ধতা – অমল শৈশব,

সব মনে পড়ে। সাঁঝের নিমতলা; জগদ্ধাত্রী মা, আঁচলভরা

নিমফুল, পাকা টসটস, দুধসবুজ গা, নরোম। পাতকুয়োয়

আকাশ টলমল। এই লবণপারাবারতীরে এসে উতরসাঁঝে

সব মনে পড়ে। জ্বরঘোরে কপালে ভেজা হাত, রিনিঠিনি

রেশমি চুড়ি, দুটি চোখ শান্তকুহকী – সব মনে পড়ে।

এই কায়ক্লেশ শ্বাস, মুহুর্মুহু বৃষ্টি, যেতে যেতে

দীর্ঘবিরতি, কেন আর? যদি ফিরে আসি, আসবো না

– অন্তঃশীল নিমের বাতাস, সবটাই মিথ? এই

অনড় চেয়ে থাকা, বুকের তলা নিঃশব্দ কাঠ, এই

অসাড় শবাধার।

            কুহেলিধূসর ঝরনাধারা গো! আমাকে

নেবে না তো! শুয়ে শুয়ে পাতকুয়োয় হারানো আকাশ

দেখা। নিমজন্ম ফিরে আসে কি?

* প্রকাশকাল : আগস্ট ২০০৮/ ভাদ্র ১৪১৫

মা-বাবাকে মনে পড়ে

মা-বাবাকে বড় মনে পড়ে আজ এই পঁচাত্তরের প্রান্তসীমা

ছাড়িয়ে এসে। তাঁদের দুজনের প্রথম যৌবনের মধু বেঁটে

আমার নির্মাণ। মধ্যবিত্ত স্বপ্নসাধ, কিছুই পূরণ করতে

পারিনি আমি এক ব্যর্থ আত্মজ। কোনোদিন বুঝতে চাইনি

কী আকাশ ধরে রেখেছিলেন বুকের ধরিত্রীটুকু ঘিরে।

ক্যান্সারে দেহ রেখেছেন দুজনেই সে আজ কতকাল

হল! জ্বরের ঘোরে মায়ের করস্পর্শ খুঁজি এখনো।

বাবা ছিলেন রসিকতাপ্রিয়। এখনো পাশের ঘর থেকে

হাসির আওয়াজ পাই তাঁর। আমার সন্তানেরা ফোন করে,

কুশল জানতে চায়। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি,

চারপাশে শূন্যতা – নিঃস্বতা – কফিন। আপনাতে

আপনি নির্বাসিত। একা একা পড়ে থাকি মাটিচাপা পাথর।

* প্রকাশকাল : ডিসেম্বর ২০০৯/ পৌষ ১৪১৬