চারদিকে বিষাদের ছায়া। এত বেদনা, এত বিষাদ এভাবে পোহাতে হবে কখনো ভাবিনি। সব কেমন যেন বিবর্ণ ও ধূসর হয়ে উঠছে। একরাশ শূন্যতা ঘিরে ফেলছে আমাকে। কী ভয়াবহ দুঃসংবাদ – হাসনাতভাই আর থাকবে না এ-পৃথিবীতে? আমার মা যখন চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে তখন দলাপাকানো একটা কষ্ট দীর্ঘদিন ঝুলেছিল কণ্ঠলগ্ন হয়ে। ঠিক সেরকম একটা কষ্ট অনুভূত হচ্ছে আমার ভেতরে! ‘নেই’ এ-শব্দটি শুনতে আর ভালো লাগছে না! খুব সকালে কবিবন্ধু সৌভিক রেজা ফোন করে হাসনাতভাই নেই যখন বললেন, তার আগেই আশফাকের পোস্ট চোখে পড়ে আমার! কী ভয়াবহ দুঃসংবাদ! হারানোর বেদনা বড় কষ্টের স্মৃতিগুলোও সব স্তব্ধ করে দেয়। সবাই যখন আমাকে সংবাদ এবং কালি ও কলমের লেখক বলত, আমি অবশ্যই গর্ববোধ করতাম। মাথার ওপর থেকে সরে গেল আশীর্বাদের হাত।
আত্মার রোদনধ্বনি আমাকে ক্রমশ অন্য দিগন্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছে! কেন ঈশ্বর এত মর্মনাশের দিকে নিয়ে যায়? এভাবে অভিভাবকশূন্য হয়ে গেলে জগতে বেঁচে থাকাটাই অর্থহীন! আমার দেখা সবচেয়ে সৎ ও নির্মোহ মানুষটি আজ এ-পৃথিবীতে নেই। যাঁর সামনে কখনো কোনো কথা বলতে পারিনি; কিন্তু শ্রদ্ধায় কতটা অবনত থাকতাম সে কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। হাসনাতভাইয়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে খুব কম। ডাকে লেখা পাঠিয়েছি। সেই ডাকে পাঠানো কবিতা হাসনাতভাই কত যত্নসহকারে ছাপতেন তা বলে বোঝানো যাবে না। যাঁরা সংবাদ সাময়িকীর নিয়মিত পাঠক তাঁরা নিশ্চয় দেখে থাকবেন। যশোরের জীবন তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে যখন ঢাকায় এলাম জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে চাকরিতে ঢুকলাম। সে এক মহাযজ্ঞ। সাহিত্যের শহর ঢাকা। অধিকাংশ কবি-সাহিত্যিকই এ-শহরে বাস করেন। সবার সঙ্গে কমবেশি দেখা হয়। হাসনাতভাইয়ের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় একুশের বইমেলায়। সঙ্গে ছিলেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার। কাছে গিয়ে সালাম জানিয়ে বললাম, ‘হাসনাতভাই আমি সুহিতা।’ ভীষণ খুশি হয়েছিলেন আমাকে দেখে। এখনো কানে বাজে, ‘আপনার লেখার হাত ভালো, লেখাটি বন্ধ করবেন না।’ ধীরে ধীরে কত আপন মনে হতো হাসনাতভাইকে। তারপর হাসনাতভাই যখন কালি ও কলমের সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হলেন, তখনো সেই আগের মতো। ফোন করে অভিনন্দন জানালাম। হাসনাতভাই খুব কম কথা বলতেন, ‘হুম, ভালো থাকবেন’ বলে ফোন রেখে দিলেন। এটা তাঁর স্বভাবজাত। উন্নয়নশীল একটি দেশে সাহিত্যপাতা সম্পাদনা করা দুঃসাধ্য তো বটেই। আমি তাঁকে লেখক তৈরির কারিগর বলব। তিনি যাদের লেখা প্রকাশ করেছেন তাঁর বিবেচনা দিয়ে তারা অধিকাংশই আজ প্রতিষ্ঠিত লেখক।
কালি ও কলম অফিসেও আমার কখনো সেভাবে যাওয়া হয়নি। তবে হ্যাঁ অনুজ কবি গিরীশ গৈরিকের অনুরোধে একবার বিমানবন্দর রোডে যখন অফিস ছিল তখন গিয়েছিলাম, সঙ্গে গিরীশ ছিল। সেদিন শনিবার ছিল, হাসনাতভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো না, দেখা হলো সংগীতশিল্পী লুভা নাহিদ চৌধুরীর সঙ্গে। খুব ভালো ব্যবহার করলেন, চা-বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ন করলেন, বললাম, ‘আমি কিন্তু আপনার গান নিয়মিত শুনি লুভা আপা’, খুশি হলেন বুঝলাম। কী চমৎকার অফিসের পরিবেশ, সবুজ অরণ্যে ভরা। ছায়ানিবিড় পরিবেশ। পরে কালি ও কলমের ঠিকানা বদল হওয়ায় মন খারাপ হয়েছিল খুব। দেশে কত বাটপার কত জমি গিলে খায় আর সাহিত্যের জন্য একটা মনোরম জায়গা নির্দিষ্ট থাকবে না? বেঙ্গল শিল্পালয়ে গিয়েছি কয়েকটি অনুষ্ঠানে, হাসনাতভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কিন্তু কথা হয়েছে কম।
এই পরিমিতিবোধই ছিল তাঁর অলংকার। হাসনাতভাই মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন, সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে কেমন ছিলেন – তা সবাই জানেন। খোলা চোখে সাদা মন দিয়ে তাঁকে দেখলে মহৎ মনে হয়। মাহমুদ আল জামান নামে কবিতা লিখতেন। কবিতার গভীরতা ছিল, সময়োপযোগী কবিতা লিখে পাঠকের চিন্তাকে প্রগাঢ় করতে পারার মতো ক্ষমতা তাঁর ছিল। গত বছরের আগের বছর বাংলা একাডেমির বার্ষিক সভায় হাসনাতভাইয়ের সঙ্গে দেখা, মধ্যাহ্নভোজের পর আমরা আয়েশ করে মিঠে রোদে গা এলিয়ে দিয়ে বসেছি একটা লম্বা বেঞ্চে – হাসনাতভাইয়ের পাশে কবি দিলারা হাফিজ ও আমি, ছবিও তোলা হলো যথারীতি। পিনুভাই (কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু) বললেন, ‘কী সাহস আপনাদের!’ মাঝে মাঝে হাসনাতভাইকে ফোন দিতাম, বড়ভাই কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন ওপাশ থেকে বলে উঠত, ‘তোর কী সাহস!’ আমি হাসনাতভাইকে কখনো ভয় পাইনি, সম্মান করেছি, শ্রদ্ধা করেছি, আমাদের পরম আশ্রয় নির্ভরতা মনে করেছি তাঁকে। কালি ও কলমের সঙ্গে যুক্ত কবি আশফাক খান দুঃখ প্রকাশ করে বলল, ‘হাসনাতভাইয়ের সঙ্গে ওর কোনো ছবি নেই’, আমিও ভাবলাম হাসনাতভাইয়ের সঙ্গে আমারও তেমন ছবি নেই বললেই চলে, যে-ছবিটি অধিকবার খুঁজে পেলাম সেটা অন্যপ্রকাশ-আয়োজিত হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠান। ছবিতে কথাশিল্পী সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, হাসনাতভাই ও মিনু ভাবির সঙ্গে আমি। তবু ছবিটি পেলাম তো। স্মৃতি আরো যন্ত্রণা বাড়িয়ে দেয়। তাঁর প্রস্থানে সাহিত্যজগতের কত অপূরণীয় ক্ষতি হলো তা বলে বোঝানো কী সম্ভব? সাহিত্যের বারান্দা থেকে খোলা চোখে যেটুকু দেখা যায় … একটা বিশ্বাস নির্ভরতা নিয়ে যিনি পাশে দাঁড়াতেন তিনি আর কেউ নন আমাদের পরম শ্রদ্ধার সেই মানুষটি শূন্যতা উড়িয়ে দিয়ে নিজেও চলে গেলেন :
সবকিছু বিবর্ণ হয়ে নিজেকে ছড়িয়ে দূরে/ স্বপ্নের অলিন্দে পাখি মেলে দেয় ডানা/ বিশ্বাসে আবার চোখ রাখি, মৃত্যু তুমি কী খোঁজো?
নিজেকে সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে ভাবতে তিনি গর্ববোধ করতেন। নিজেই যখন অকপটে বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে সম্পাদনা কাজে যুক্ত থাকবার ফলে নিজের লেখালেখি অব্যাহত রাখা ছিল কষ্টকর।’ তিনি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপরে লেখেননি। সাহিত্যের নানাবিধ বিষয়ের ওপর লিখেছেন। তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়ী স্মৃতি ও অন্যান্য এবং হারানো সিঁড়ির চাবির খোঁজে গ্রন্থটি আবুল হাসনাতের ছেঁড়াখোঁড়া স্মৃতি ও প্রত্যক্ষণের বৃত্তান্ত হিসেবে চিহ্নিত করলেও জীবনবোধের কাছে এ এক অসামান্য দলিল। সংস্কৃতি, রাজনীতি ও সাহিত্যের দর্পণ এ-গ্রন্থটি পাঠের পর এটাই বলা যায়। তাঁর চোখে ষাটের দশক হয়ে উঠেছিল মুক্তির দশক। আনন্দ ও বেদনার অনুষঙ্গী হিসেবে প্রকাশিত এ-গ্রন্থখানা মেধাবী ও অনুসন্ধিৎসু পাঠকের কাছে আদরণীয় হয়ে উঠবে – এটা আমি মনে করি।
মাহমুদ আল জামান নামে তিনি কবিতা লিখতেন। দিনযাপনের দুঃখ, গ্লানি ও আনন্দ-বেদনার মধ্যে কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা পেতেন তিনি। নিরীক্ষাধর্মী প্রবণতা তাঁর লেখার ভেতরে মূর্ত হয়ে উঠেছে। ষাটের দশকের শুরু থেকেই কাব্যচর্চার দিকে মনোযোগী হন তিনি। প্রতিবাদ ও সংগ্রামমুখর সময়কে ধারণ করে তাঁর কবিতার পটভূমি নির্মিত হয়েছে –
নৈরাশ্যে নয় এই পদাবলী, সত্তা ও স্বপ্ন/ মৌনতা ও বিপন্নতা বুকে নিয়ে/ যখন নুয়ে থাকে স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ/ আরো কিছু দৃশ্যের অপেক্ষায় প্রতি প্রশ্নে/ বিক্ষত হয়ে ওঠে হৃদয়/ বলো সেই অন্ধকার চাই, সেই অন্ধকার/ ক্ষত ও ছায়া যখন মর্মমূলে আঘাত করে/ কিংবা দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে গ্রন্থাবলী/ একি রাইখন্টাগ!/ ঘুমাও নৈরাশ্য, তুমি ঘুমাও’
একজন কবি কখনো নৈরাশ্য বিশ্বাস করে না। ক্ষয় ও বিষণ্নতা থেকে সমাজ ও মানুষকে বারবার কবি মুক্ত করতে চান। উদ্ধৃত কবিতার ভেতরে তিনি নৈরাশ্যকে নিদ্রামগ্ন দেখতে চেয়েছেন।
‘এই খাণ্ডবদাহন আর বর্বরতা থেকে/ তোমার মানচিত্রে কবে ফিরব?’ তাঁর আকাঙ্ক্ষা ও তীব্রতা কবিতার ভেতরে মূর্ত হয়ে উঠেছে।
আনন্দ-বিষাদ, শূন্যতা, অস্থিরতা, নৈরাশ্য ও দেশের সংকটময় মুহূর্তগুলো তাঁকে আন্দোলিত করেছে প্রতিটি মুহূর্তে। তাঁর ‘এই আমি’ কবিতার চার লাইন এখানে উদ্ধৃত করা হলো :
আমাকে হত্যা করে অদৃশ্য আততায়ীর গোলকধাঁধা
বন্ধুর আশ্রয়ের হাত ছেড়ে যায়
রং বদলায় বারান্দার ছবি
রং বদলায় মুখোশের সারি
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চেতনাবোধের চিত্রায়ন উদ্ধৃত কবিতাংশে মূর্ত হয়ে উঠেছে। স্মৃতি ও মায়ার ভেতর দিয়ে তিনি বিমূর্ততা অবলোকন করতে চেয়েছেন, দেখতে চেয়েছেন দুর্বিনীত অবয়ব। নান্দনিক সৌন্দর্য তাঁর লেখার মধ্যে লক্ষণীয়, কি গদ্য কি কবিতা। বিশ্লেষণের অসীমতা তাঁর লেখার মধ্যে নতুন মাত্রা সংযোজিত করেছে। উপলব্ধি ও রোমান্টিকতা কবি মাহমুদ আল জামানের কবিতায় উঠে এসেছে। ‘কোথায়’ কবিতার মধ্যে বিমূর্ত ভাবনার জগৎ অনিঃশেষ গিটারের সুরের মতো তাঁর কবিতায় ধ্বনিত হয়েছে :
কোথায় দেখেছি তাঁকে, নৈঃশব্দ্যের/ মত মুধর/ মিছিলে কি? বৃষ্টিজলে/ চৌরাস্তায় কিংবা এভিনিউতে?/ মন্দভাগ্য; গিটারে সুরের মত ঝরতে থাকে অনিঃশেষ/ কোন কথা বলে না/ নির্নিমেষ চেয়ে থাকে; চোখ অসীম স্বয়ম্ভর। স্বচ্ছ/ নিজেকে ছেঁড়ার আগে/ বিলীন/ করে একান্ত/ এদিকে ওদিকে; অন্যদিকে/ প্রকৃতিস্থ/ নিজেরই সত্তা জুড়ে প্রখর ভাস্বর; জিজ্ঞাসা ও প্রবল/ নিজেকে ব্যাপ্ত করে দুর্মর/ এমন সুন্দর শিকড়ে/ এমন সংহত শরীরে/ বর্ষার শান্তির জলের ঐশ্বরিক গন্ধে/ হয়ে উঠে উন্মুখ/ কোথায় দেখেছি তাঁকে, নৈঃশব্দ্যের মত মধুর।
নিভৃতচারী এই কবির কাব্যিক ঐশ্বর্য আধুনিক ও চৈতন্যগত। আধুনিকতা ও অস্তিত্ব-চেতনা তাঁর কবিতায় সমানভাবে উঠে এসেছে। কবি হিসেবে তিনি অবশ্যই জীবনবাদী ।
দ্বিধাগ্রস্ত সময়কে তিনি অতিক্রম করতে চেয়েছেন, সকল বৈপরীত্য পেছনে ফেলে তিনি এগিয়ে গিয়েছেন সামনের দিকে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে তাঁর কবিতা।
তিনি একাধারে সম্পাদক, কবি ও গদ্যশিল্পী। তাঁর সম্পর্কে এত অল্পপরিসরে বলে শেষ করা সম্ভব নয়। নিজের সম্পর্কে বলতে তিনি সর্বদা কুণ্ঠাবোধ করতেন। তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অর্থে প্রচারবিমুখ একজন মানুষ।
কথাশিল্পী সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘কেন জানি, সম্পাদনায় যতটা সময় তিনি দিয়েছেন, অন্য লেখালেখিতে ততটা দেননি। কিন্তু যে-বিষয়টি আমাকে অবাক করেছে, তা হলো একটি ক্ষেত্রে তাঁর সক্ষমতাকে অন্য ক্ষেত্রে লাগানোর ক্ষমতা। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তাঁর দৃষ্টির কেন্দ্রে ছিল মানুষ-শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি মানুষ। সমাজতন্ত্রে, কমিউনিস্ট ভাবধারায় তিনি বিশ্বাসী ছিলেন। গণমুখী শ্রেণির শাসনে নিঃশেষ হতে থাকা মানুষের পক্ষে তাঁর অবস্থান তাঁকে জীবনের ভেতরে দৃষ্টি দিতে শিখিয়েছিল। এই গভীর দৃষ্টি তাঁর সাহিত্যচিন্তাকে নির্মাণ করেছে। হাসনাতভাইয়ের চিন্তার ভেতর যে পূর্বাপরতা ও শৃঙ্খলা ছিল, তা তাঁর রাজনৈতিক ও লেখক সত্তাকে পূর্ণতা দিয়েছে, তেমনি সম্পাদক হিসেবে তাঁকে গভীরতা প্রয়াসী করেছে। তাঁর সংস্কৃতি চেতনার সর্বাগ্রে ছিল গণমানুষের, প্রান্তের সম্পৃক্ততার বিষয়টি। এটি তাঁর সাহিত্যচেতনায় প্রভাব ফেলেছে। খেলার মাঠের শৃঙ্খলা চর্চা তিনি জীবনে করেছেন। আতিশয্য বলে কোনো কিছুই তাঁর কথায় অথবা কাজে আমি দেখিনি।’
যিনি আমাদের জন্য এতকিছু করলেন এবার তাঁর জন্য আমাদেরও তো কিছু করা উচিত, নয় কি? মানুষ হিসেবে এবং লেখক হিসেবে হাসনাতভাই কেমন ছিলেন এবং নির্মোহভাবে সাহিত্যের জন্য একজন তরুণ লেখককে কীভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন নেপথ্যে থেকে তার একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তাঁর যে-কটি বই প্রকাশিত হয়েছে এবং অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি নিয়েও আমাদের অসমাপ্ত কাজটি সম্পন্ন করা উচিত। আমরা এরকম সৎ মানুষ সুবিবেচক মানুষ কী আর পাবো জীবদ্দশায়?
জীবন নদীর স্রোতের মতো বহমান। কিন্তু স্মৃতি ও সম্মান মস্তিষ্কের মধ্যে রয়ে যায়। যখন দেখি দৈনিকের সাহিত্যপাতার কর্ণধাররা আমাদের চিনতেই পারেন না তখন কবি শামসুর রাহমান, কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কবি বেলাল চৌধুরী, আবুল হাসনাত, কথাশিল্পী রশীদ হায়দার, কথাসাহিত্যিক সুশান্ত মজুমদার, কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের, কবি আবু হাসান শাহরিয়ার, কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত ব্যক্তিত্বদের নাম সম্মানের তালিকায় উঠে আসে। তাঁরা কত যত্ন করে আমার/ অন্যদের লেখা গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছেন। তাঁদের কাছে আমাদের আমৃত্যু ঋণ। কালি ও কলম উঁচুমাপের সাহিত্য পত্রিকা। পত্রিকাটি যেন নিয়মিত প্রকাশিত হয় এ-প্রত্যাশা করি। তাহলে হাসনাতভাইয়ের নিষ্ঠা, দক্ষতা, সততা, আদর্শ ও মনন সম্পর্কে পরবর্তী প্রজন্ম অনুধাবন করতে পারবে। তাঁর অভাব কখনো পূরণ হবার নয়। তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.