মৃত্যুর মুখ নানাভাবে সামনে আসে আমাদের। আমরা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়াই তার সামনে। শান্ত হয়ে আসে আমাদের কোলাহল। এই মুহূর্তে মনে মনে আমি প্রয়াত আবুল হাসনাতের সামনে দাঁড়িয়ে আছি করজোড়ে। ভাষা নেই। সন্ধ্যায় সাগরতীরে কাঁপতে-কাঁপতে ঘুরে ঘুরে উড়তে থাকা ছোট ছোট মথের ঝাঁকের মতো যারা জানে না কাল সকালে তারা কেউ বেঁচে থাকবে না। আজ থেকে ঠিক একশ বছর আগে লেখা (২৫ ডিসেম্বর ১৯২০) রিলকের হাইকু কবিতাটির মথের মতো আমরা সবাই।
Little moths reel shurdderingly out of the beaech they will die this evening and never know that it was not spring.
তবু আমাদের মধ্যেই থাকেন দীপশিখার মতো কিছু মানুষ আমাদের প্রেরণা ও পথপ্রদর্শক হয়ে। আবুল হাসনাত (১৯৪৫-২০২০) ছিলেন এমনই একজন মানুষ।
তাঁর জীবন ছিল কর্মময় আর স্থির একাগ্র অভিমুখের। শুধু মাসিক কালি ও কলম পত্রিকার খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন না তিনি, একইসঙ্গে তিনি সম্পাদনা করেছেন চিত্রকলাবিষয়ক ত্রৈমাসিক শিল্প ও শিল্পীর মতো আরেকটি অসামান্য পত্রিকা। এমন উঁচুমানের দুটি পত্রিকা পৃথিবীর দূরতম কোনো প্রান্তেও আর দ্বিতীয়বার খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকী দীর্ঘ চব্বিশ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে সম্পাদনা করেছেন। তাঁর কল্যাণময় স্পর্শেই বেঙ্গল পাবলিকেশন্স প্রকাশনা জগতে বিশেষ স্থান অর্জন করেছে। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা বিপুল। সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বজনবন্দিত।
সাহিত্যের সব শাখায় তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। চারটি কাব্যগ্রন্থ – জ্যোৎস্না ও দুর্বিপাক, কোনো একদিন ভুবন ডাঙ্গায়, ভুবন ডাঙ্গার মেঘ এবং নধর কালো বেড়াল, নির্বাচিত কবিতা, এছাড়াও দুটি প্রবন্ধের বই সতীনাথ, মানিক, রবিশংকর ও অন্যান্য; জয়নুল, কামরুল, সফিউদ্দীন ও অন্যান্য এবং চারটি শিশু-কিশোর গ্রন্থ – ইস্টিমার সিটি দিয়ে যায়, টুকু ও সমুদ্রের গল্প, যুদ্ধদিনের ধূসর দুপুর, রানুর দুঃখ ভালোবাসা। আর লিখেছেন জসীমউদ্দীন, চার্লি চ্যাপলিন, সূর্য সেনের জীবনী এবং দুটি আত্মজীবনী প্রত্যয়ী স্মৃতি ও অন্যান্য, আর হারানো সিঁড়ির চাবির খোঁজে।
১৯৮২ সালে তিনি অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন তাঁর টুকু ও সমুদ্রের গল্প বইয়ের জন্য।
সরাসরি কোনো যোগাযোগ তাঁর সঙ্গে হয়নি আমার। তাঁর দেখা পাইনি। সুযোগ হয়নি কখনো। তবু যে-পথে তিনি তাঁর চরণরেখা লিখে গেছেন, যে-পথে অশোকরেণু তাঁর ধূলি রাঙিয়ে দিয়েছে সেই চিহ্ন সেই রং আমাদের মধ্যে ধরা থাকবে। তাঁর কথা মনে রেখেই ফুল ফুটবে, হারানো গান আবার ফিরে আসবে পাখির ঠোঁটে। অমৃতে ভরে উঠবে আমাদের জীবন। মৃত্যুর সামনেও তাঁর স্মরণ থেমে থাকবে না। শেষেও আসুক রিলকের একটি কবিতা –
Over past years, a wholly
Invisible star, you wheeled.
What we were will slowly
Now be in roads unreeled.
Where no road extended
Behind us, we now begin
To know we ascended Ñ the splendid
Arc of itÕs still within. Ñ Poems for Albert Lazard
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.