আমগ্ন কাটাকুটির কবি

ক্ষুধার্ত ক্রুদ্ধ লাবণ্যের কবিতা
যার হাতে গড়ে ওঠে মানুষের বাস্তু-সংস্থান, একটা জাতির কীর্তি, স্মৃতিস্তম্ভ, সৌধমালা, গগনস্পর্শী ঘরবাড়ি আবার সেই হাতেই যখন রচিত হয় অনর্গল ধারায় কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ভারী ভারী নিবন্ধ সন্দর্ভ, কলা সমালোচনা Ñ তখন যে কোনও বিশেষণই তার জন্য বাহুল্য মাত্র। রবিউল হুসাইনের কবিতার নির্মাণ স্থাপত্যশিল্পের মতোই হিমায়িত ধ্রুপদী সঙ্গীত।
বাংলাদেশের রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক নিসর্গের বাস্তবতাকে সম্বোধন করে রবিউলের যে কোনও লেখারই একটা আলাদা স্বাদ। দৃশ্যমান সৃজনশীলতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ তার কবিতা। অভিব্যক্তি প্রকাশের রীতি সে যাই হোক না কেন; মেধা, হাত, মস্তিষ্ক ও হৃদয়ের সমবায়ে সৌন্দর্য ও আনন্দ অন্বেষী রবিউল খর-জ্যোৎস্নাকেও চোলাই করে নেন অনায়াসে।
Ñ বেলাল চৌধুরী

রবিউল হুসাইন সম্পূর্ণ ভিন্নধারার কবি। তাঁর কবিতায় শব্দের ভেতরেও ধ্বনিত হয় নবীন এক অনুভব। আমরা তাঁর কবিতার অন্দরমহলে খুব সহজেই চেনা অনুষঙ্গকে ভিন্নবোধে ও প্রতীকে শনাক্ত করি। রোমান্টিকতাকে পরিহার করে এই কবি হতাশা, বিষাদ ও আনন্দকে আলিঙ্গন করেন সম্পূর্ণ বিপরীত মনীষা ও মননে। তাঁর কবিতার ব্যঞ্জনা ও বাকপ্রতিমাকে অচেনা মনে হলেও পারিপার্শ্বিক চেনা জগৎ থেকেই এ আহরিত। বাস্তবতা উপলব্ধি, কখনো অনুভবের রহস্যময় ভুবন আমাদের কাছে নবীন সুর ও অনুরণনে ধ্বনিত হতে থাকে।
Ñ আবুল হাসনাত

মগ্ন কাটাকুটি খেলা (বেঙ্গল পাবলিকেশন্স, জুলাই ২০১২) রবিউল হুসাইনের শেষ পর্যায়ী কবিতার বই। কবিতাবইয়ের এই নামের মতো তাঁর সৃষ্টিসমগ্রেও দৃষ্টিগ্রাহ্য কাটাকুটির খেলা। রবিউল হুসাইন (১৯৪৩) কবিতা বা লেখনভঙ্গিতে যেমন ব্যতিক্রমী, তেমনি প্রকাশেও গড়বাঙালি কবি-লেখকের নন পথানুগামী, তাই দেখি প্রথম কবিতাবই সুন্দরী ফণা প্রকাশ পায় উত্তর-চল্লিশে, ১৯৮৪-তে। এরপর নিয়মিত বিরতিতে কোথায় আমার নভোযান, কেন্দ্রধ্বনিতে বেজে ওঠে, আরো ঊনতিরিশটি চাঁদ, কী আছে এই অন্ধকারের গভীরে, কর্পূরের ডানাঅলা বরফের পাখি, এইসব নীল অপমান যে নদী রাত্রির। তাঁর কবিতা সংকলনও ‘সমগ্র’ বা ‘সংগ্রহ’ জাতীয় মনোহর শব্দবন্ধের বিপ্রতীপ কিছুটা Ñ কবিতাপুঞ্জ (২০০১)।
রবিউল হুসাইনকে জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুত্তর ‘কবি ও স্থপতি’ ছাড়া খুব কমই বিশেষত হতে দেখেছি, আর এবার আমরা দেখতে চাই তাই তাঁর কবিতার স্থাপত্যে কী করে এসেছে স্থাপত্যকলা Ñ
এবং মানুষের ইচ্ছা বা আশা আর কতোটুকু সুবিন্যস্ত
হলে তবে তৈরি হতে পারে আপনার দ্বারা একখানা
হৃদয়-খোলা আলো-হাওয়া-ভরা বাসা
হে অসহায় ও মাননীয় স্থাপত্যকলা?
(‘মাননীয় স্থাপত্যকলা’)
জীবনের নঞর্থকতাকে আলিঙ্গন করলেও শেষ বিচারে তিনি তাঁর কবিতার ভাষায়ই স্বপ্ন-শাসিত জীবনের অভিগামী কবি-পথিক। স্মরণ করতে পারি, তারুণ্যে তিনি যে ছোটকাগজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তার নাম Ñ না (প্রথম প্রকাশ ১৯৬৭)। নার রবিউল হুসাইন কবিতায় নিজ জীবনকে কীভাবে দেখেন? Ñ
তখন ছিল বৃহৎ জীবন ক্ষুদ্র বৃত্ত
এখন অনেক ক্ষুদ্র জীবন বৃহৎ বৃত্ত
পেয়ারা লাটিম উধাও এখন
তার বদলে আমিই লাটিম
বৃত্তের ভেতরে ঘুরছি আমি ঘুরছি আমি
ঘুরে ঘুরে মরছি আমি জন্মবধি
(‘লাটিম’, আমগ্ন কাটাকুটি খেলা)
লাটিমের রূপকে, জীবনকে দেখা নতুন কিছু নয়, তবে জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি ঘূর্ণ্যমান মানুষ জীবনের ফাঁপাত্ব, নিরর্থকতা, অন্তঃসারশূন্যতা যেন কবিতায় বলতে ব্যাকুল রবিউল। ‘জামা’ কবিতায় যেমন Ñ
মানুষের প্রধান অভিনয় এত পোশাক পরেও পারে না ঢাকতে
তার আসল পরিচয় বিভাব
অন্তরের প্রান্তরে সেই গা-ঘিন্-ঘিন্ নোংরামি স্বভাব
(‘জামা’)
‘বিভাব’ ও ‘স্বভাব’ Ñ অন্তমিলের জন্য খাপে খাপ হলেও রবিউল হুসাইন কবিতায় মোটেও সে-উদ্দিষ্টগামী নন, বরং ‘বিভাবে’র লাবণ্যের সঙ্গে ‘নোংরামি স্বভাবে’র নিকটান্বয় করাতেই জীবনের নোংরা রূপ সাকার-অভিলাষী যেন তিনি। আলো ভুরভুর দিবসের ব্যঞ্জনার ভিড়ে তাঁর মতো নিকষ রাত্রির আরাধক আর কে আছে? ‘ঈশ্বর’ নয়, ‘একটি ঈশ্বরে’র এমন ধারণা বাংলা কবিতাতেই মৌলিক ও অভিনব Ñ
চারদিকে অন্ধকার শীতের প্রবল বিস্তার
তার মধ্যে সূর্য ওঠে তাপ দ্যায় আলো দ্যায়
উত্তাপের যাবতীয় সংজ্ঞায় ঈশ্বর কোথায়
দূর থেকে মানুষ নয় একটি ঈশ্বর দূরের মধ্যে
একা একা হেঁটে চলে যায়
আহা তার মতো নিঃসঙ্গ আর কেউ নয়
(‘মানুষ ও ঈশ্বর’)
রবিউল হুসাইনের জন্মগ্রাম ঝিনাইদহের শৈলকূপায়, রতিডাঙ্গা বসন্তপুর। ‘এই পথ অনগণ্য ভূমি’ কবিতায় নজর নিবদ্ধ করলে দেখব, এখানে যেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা জগদীশ গুপ্তের ঘনীভূত অন্ধকারের সম্মোহক মেহফিল Ñ
এই পথ অনগণ্য ভূমি
চারিদিকে মোহন বিপদ মহামারি চোরাবালি
শ্মশানের শ্বাপদ বিকেল
সন্ধে হয় হয়
তার মধ্যে শ্যাওড়া গাছের পাশে
এই অগ্নি এই কাল এই জীবন এই জমি
আলোকিত হয়
… … …
এই পথ অনগণ্য ভূমি
এই পথ অসামান্য জমি
এই পথ সুদূর
ততোদূর জীবন যতোদূর রতিডাঙ্গা বসন্তপুর।
(‘জীবনকে’, জীবনানুষঙ্গ)
আমরা কবিতা বা গানের সুতোয় বাঁধি। রবিউল হুসাইন বাঁধেন নিরেট গদ্যের দড়িতে। যেমন অমিলাত্মক, খটখটে, রুক্ষতার সাধনবিন্দুতে ভরা তাঁর সমগ্র, তেমনি তাঁর কবিতার নাম ‘প্রবন্ধ এই পাথরভূমি’।
রবিউল হুসাইন এন্তার জাদুঘরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন Ñ জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, বাংলা একাডেমি লোক ঐতিহ্য জাদুঘর। এসব জাদুঘর তাঁর কবিতায় কী আলকেমিতে উদ্ভাসিত, তা জানার কৌতূহল হয় বইকি Ñ
সবই আছে তবু
পৃথিবীর কোনো জাদুঘরে এখনো ঠাঁই হলো না
খাঁ-খাঁ রৌদ্রের খানিক ঝলক
পুরনো বৃষ্টির ফোঁটা
একটুকরো ঐতিহ্যবাহী মেঘবল্লরী কিংবা প্রাচীন
ঐতিহাসিক বিদ্যুতের একটি উজ্জ্বল তরবারি
(‘জাদুঘর’)
নিজে কবিতা রচনা করেও ‘কবি ও কাক’ কবিতায় উচ্চারণ করেন প্রবাদের প্রায় Ñ
এই শহরে তাই অমøান,
কবি ও কাকের সংখ্যা সমান সমান।
(‘কবি ও কাক’)
এভাবে তিনি সংযোগ চেষ্টার প্রতারককালে বলেছেন, ‘বিভাজন ভাল ও সুন্দর’ কারণ তিনি জানতেন ‘সরলতার জটিল ফলাফল’। দেখেছেন দশদিক সাজানো ‘শুয়োরের সৌন্দর্য’। মানুষের অন্তরের প্রান্তরে হেঁটে বেড়িয়ে আবিষ্কার করেছেন ‘দুঃখকষ্টই সার ও প্রোটিন’।
জীবন-বিবিক্ত তিনিই তো বলতে পারেন Ñ
বিচ্ছেদ কী সুন্দর সহজ
এক অমলিন মিলন
স্মৃতি ও স্বপ্নের পাখি ওড়ে
শুভ বিদায় হে আমার মরণ

ঊষা ও গোধূলির গদ্য
কবিতার যমজ রবিউল হুসাইনের কথাগদ্য। উজ্জয়িনীর মকরগলি,
বিষুবরেখা, গল্পগাথা Ñ এই সব বইপত্রে পাওয়া যাবে সুধীন্দ্রিয় গদ্যতন্ত্রের টিপছাপের পরিলক্ষণ। ‘হে নিদাঘ হে প্রত্যুষ’, ‘বেলোর্মি’, ‘অনিকেতন’, ‘বৈয়ত্তিক বৈগুণ্যতায়’ Ñ এইমতো গল্পে আছে যেন নাস্তির নেমির মধ্যে জীবন Ñ
চারিদিক সুনসান। সমুদ্রও নীরব, নিথর, কোনো ঢেউয়ের দেখা নাই। সমুদ্র এক বিশাল হ্রদে রূপ নিয়েছে। বাড়িঘরগুলো আঁধারে মাখা অতিবাস্তবীয় অবয়বে। বিমূর্ত প্রকাশে সব নৈর্ব্যক্তিক স্বপ্ন-দুঃস্বপ্নের অনুষঙ্গে আধি-পরিচ্ছায়াময়, আধি-ভৌতিক বুনোটে মাখামাখি। সেই সময়ে সহসা মধ্যসমুদ্র থেকে উঠে আসে এক বিশাল জলের পাহাড়, বেলাভূমির দিকে বিকট গর্জন করতে করতে, আকাশ শূন্য, পিঙ্গল, ঘননীল, অর্ধবৃত্ত রামধনুর মধ্য দিয়ে ছুটতে ছুটতে, অতিকায় ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে আদিগন্ত কাঁপিয়ে ঝাঁপিয়ে দাপিয়ে কূলে আছড়িয়ে পড়ে ওকে অর্থাৎ সেই উদাস নয়নে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকা সমুদ্রকন্যাকে জলের নিরাপদ কোলে তুলে নিয়ে আবার চলে গেল, ফিরে গেল চিরকালের জন্য তার স্থায়ী নিবাস সমুদ্রের গহীন রহস্য আর গভীরতার ভেতরে, অসামান্য পরিসরে, সময়ের অনন্ত অফুরন্ত অনিঃশেষ মায়াবী এক নিঠুর মাধুর্যে।
(‘বেলোর্মি’, গল্পগাথা)
তাঁর কথাগদ্যে ভাব ও ভাষার যে কারু ও কুয়াশাকৃতি, তা যেন তাঁর কবিতাপথেরই মঞ্জিল বিন্দু।

কলা-সমালোচনা
বন্ধু আবুল হাসনাতের প্রেরণা ও প্রণোদনায় সংবাদ সাময়িকীতে সুদীর্ঘকাল রবিউল হুসাইন বাংলাদেশ ও বিশ্বের স্থাপত্যসংস্কৃতি নিয়ে লিখেছেন বিস্তর। এরই গ্রন্থরূপ বাংলাদেশে স্থাপত্যসংস্কৃতি, পরিবর্ধিত সংস্করণের শিরোনাম বাংলাদেশের স্থাপত্যসংস্কৃতি ও অন্যান্য রচনা। তাঁর কলা-সমালোচনায় ভিনদেশি লুই কান কিংবা বাঙালি ফজলুর রহমান খান আলোচিত হন সমান গুরুত্বে। লিখেছেন তিনি রবীন্দ্রনাথের স্থাপত্যচিন্তার বিষয়েও। স্থাপত্য বিষয়ে তাঁর অনন্য রচনার নমুনা কতক Ñ

স্থাপত্যের সমকালীন ভাষাকে ঢাকা যদিও লুই কানের মাধ্যমে ধরে রেখেছে, তবু একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে, কোনোদিনই স্থাপত্যের নিজস্বতায় সে অবগাহন করেনি বিভিন্ন কারণে। বরং সর্বদাই এর গায়ে পরজীবী লতার মতো আরোপিত বিদেশি অলংকার।
(‘লুই কানের শেরে বাংলানগর’)

আকাশচারী হলেও পাখি সন্ধ্যায় মাটির কাছাকাছি কোনো বৃক্ষের সবুজ পাতার ভেতরে আশ্রয় নেয়, এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। ড. ফজলুর রহমান খান একজন মেঘচারী, মানুষ-বিশ্বকর্মা, পরিশেষে মাটিতেই তিনি চিরশান্তির আশ্রয় নিয়েছেন।
(‘বাঙালি প্রকৌশলী ফজলুর রহমান খান : তার প্রস্থান ও আকাশছোঁয়া দালান’)

শান্তি ও কল্যাণের জন্য বিশ্বগ্রামের অখ- চেতনায় আমাদের সবার এখন প্রয়োজন রবি ঠাকুরের এই বিশেষ স্থাপত্যচিন্তার গুরুত্ব অনুধাবন করা এবং পরিশেষে রবি ঠাকুরের পরিবেশ, স্থাপত্য ও সামগ্রিক চিন্তার সুরে বলি, ‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া, বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া’, তবেই আমরা অবশ্যই সফল হবো।
(‘রবীন্দ্রনাথের স্থাপত্যচিন্তা’)

অনূদিত অরণ্য ও মালঞ্চ
রবিউল হুসাইন লাতিনের পাবলো নেরুদা এবং মার্কিন মুল্লুকের কবি অ্যালেন গিন্্সবার্গের বিশিষ্ট অনুবাদক। অনুবাদে এই দুই কবির অন্তর্বিন্দু কেন্দ্রধ্বনিতে যেন বেজে বেজে উঠেছে অনুবাদকের ভাষার নিবিড় নিনাদে। গিনসবার্গের হাউল ও উনিশটি কবিতা এবং পাবলো নেরুদার বিশটি কবিতা ভালোবাসার, একটি গান হতাশার বইদুটিতে দৃকপাতে আমরা এ-উক্তির নেপথ্যকার উপলব্ধির সত্যতা টের পাব। পড়ি তাঁর অনুবাদে একটুখানি নেরুদা Ñ
তোমার বুকই যথেষ্ট আমার হৃদয়ের-জন,
আর আমার ডানা তোমার মুক্তির-জন
তোমার আত্মার উপর ঘুমোচ্ছিল তা উঠে আসবে
আমার মুখের ভিতর থেকে স্বর্গের দিকে।

প্রতিদিনের বিভ্রম তোমাতে।
তুমি এলে ফুল-পাত্রের দিকে শিশিরের মতো।
তুমি ছোট করেছিলে দিগন্তকে তোমার অনুপস্থিতিতে।
অনন্ত উড্ডীন ঢেউয়ের মতো।

আমি বলেছি যে তুমি বাতাসে গেয়েছিলে
পাইন গাছের মতো এবং মাস্তুলের মতো।
তাদের মতো তুমি দীর্ঘ এবং মৌনভাষী,
এবং তুমি বিষণœ, সহসা, সমুদ্রযাত্রার মতো।

তুমি জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও পুরনো পথের মতো।
তুমি প্রতিধ্বনি আর স্মৃতিমেদুর শব্দে অধ্যুষিত।
আমি জেগে উঠলাম আর মাঝে পাখিরা উড়ে আবার চলে গেল
যারা তোমার আত্মার ভিতর ঘুমোচ্ছিল।
(‘তোমার বুকই যথেষ্ট’)

আমগ্ন কাটাকুটির কবি
রবিউল হুসাইন অনন্তের অন্তর-প্রান্তরে পা বাড়ালেন উত্তর-পঁচাত্তরে। বিচিত্র-বর্ণাঢ্য জীবন তাঁর, সৃষ্টিতে স্বল্পপ্রজ তবে বৈশিষ্ট্যম-িত। তবে আমাদের আলোচিত বইপত্রের বাইরেও রয়েছে তাঁর এমনামন সৃষ্টি; প্রবন্ধ Ñ অপ্রয়োজনীয় প্রবন্ধ; কিশোর-উপন্যাস কুয়াশায় ঘরে ফেরা, দুর্দান্ত, ছড়ায় ছড়ায় ছড়িয়ে দিলাম; একক ও যৌথ সম্পাদনা Ñ কবিতায় ঢাকা, স্থপতি মাজহারুল ইসলাম আর বিচিত্রবর্ণী লেখা সাশ্রিত হয়েছে রবিউল হুসাইন অমনিবাস শিরোনামে।
সব মিলে কোনো প্রাজ্ঞ পরিণতির জলময় সমুদ্রে পৌঁছানোর বন্দর-বাসনা ছিল না তাঁর, ছিল আমৃত্যু-আজীবন-আমগ্ন কাটাকুটি খেলার রক্তিম বাসনা Ñ
ভিত্তির ভেতর-কাঠামো শূন্য বিলাস
জলের মন্দির মূলধারায় মেঘের শরীর
করতলে শাদা পাতা সমুদ্রের ঢেউ
সারাবেলা ভেসে থাকা
অনন্ত ভেসে যাওয়া
ডোবে ওঠে ওঠে ডোবে অবিরত
আমগ্ন কাটাকুটি খেলা