কামরুল হাসানের প্রচ্ছদচিত্রের অন্বেষণে : একটি জরিপ

(উৎসর্গ : মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের স্মৃতিতে)
শিল্পী কামরুল হাসানের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন উপলক্ষে কয়েকবার দেখা করেছি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরে। মতিঝিলে বিসিকের ডিজাইন সেন্টারে প্রথমবার যাই দৈনিক বাংলার ফটোগ্রাফার গোলাম মওলার সঙ্গে। দ্বিতীয়বার বাসায় গিয়েছিলাম শিশুসাহিত্যিক এখলাসউদ্দিন আহমদ ও বাংলা একাডেমির সহপরিচালক লেখক আবুল হাসনাতের সঙ্গে। সেন্ট্রাল রোডের ওই বাসায় মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের সঙ্গে গিয়েছি বেশ কয়েকবার।
তবে মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর-সম্পাদিত প্রবন্ধপত্রিকা বক্তব্যের প্রচ্ছদের ছবির জন্যে জাহাঙ্গীর যখন গিয়েছিল, তখন আমি তার সঙ্গী ছিলাম কি না, মনে নেই। বক্তব্যের তিনটি সংখ্যায় কামরুল হাসানের ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল, নির্বাচন শিল্পীর। প্রথম সংখ্যায় (১৯৭৬) ছাপা হয় ‘স্নান’ (লিথোগ্রাফ ১৯৫৮)। আরেকটি সংখ্যায় মুদ্রিত হয়েছিল ‘রায়বেশে নৃত্য’ (লিনোকাট ১৯৭৪)। জাহাঙ্গীর ও আমি যে আরো কয়েকবার বক্তব্যের প্রচ্ছদচিত্র সংগ্রহ কিংবা গল্প করতে তাঁর বাসায় গিয়েছিলাম, তার উল্লেখ আছে তাঁর খেরোখাতার পাতায়। সেটা জানতে পারি ‘খেরোখাতা’ দৈনিক জনকণ্ঠে ধারাবাহিক ছাপার সময়ে।

দুই
শিল্পী কামরুল হাসানের বইপত্রের ইলাসট্রেশন ও প্রচ্ছদচিত্র রচনার একটি অর্থনৈতিক ইতিকাহিনি আছে। তাঁর পিতা পুত্রের ছবি আঁকার বিরোধী ছিলেন; আর্ট স্কুলে পড়ার খরচ দিতেন না। কামরুল পড়ার খরচ জোগাড়ের জন্যে নানা ধরনের অর্থোপার্জনকারী কাজের শেষে পত্রিকায় অলংকরণের কাজ শুরু করেন কলকাতায়। ত্রিশের দশকে আবুল কালাম শামসুদ্দীন-সম্পাদিত দৈনিক আজাদের ঈদ সংখ্যায় কিংবা আরো পরে কাজী মোহাম্মদ ইদরিস-সম্পাদিত ও আবুল হাশিম-প্রতিষ্ঠিত সাপ্তাহিক মিল্লাত পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় (১৩৫৩ ব.) কামরুলের অলংকরণ দেখেছি। সেকালে তাঁর আগে সাময়িকপত্রে অলংকরণ করতেন এবং বইয়ের প্রচ্ছদপট রচনা করে খ্যাতি লাভ করেছিলেন কাজী আবুল কাসেম ও জয়নুল আবেদিন। কামরুল মাসিক মোহাম্মদী, হানাফী Ñ এসব পত্রিকায় অলংকরণ করতেন ও মিল্লাতে ‘ভীমরুল’ ছদ্মনামে কার্টুন আঁকতেন। পাকিস্তানের অভ্যুদয়ের পর
১৯৪৮-এ ঢাকায় চলে আসেন কামরুল হাসান। ওই সময়ে তাঁর আর্থিক অবস্থা ও প্রচ্ছদচিত্র-চর্চার বিশদ বিবরণ পাই আনিসুজ্জামান ও মোহাম্মদ আবদুল কাইউমের বর্ণনায় :
ঢাকায় এসে প্রথমটায় তাঁর কোনো চাকরি ছিল না। মখদুমী লাইব্রেরি ও আহসানউল্লা বুক হাউসের মালিক ও সাহিত্যিক মোহাম্মদ কাসেম কামরুল ভাইকে দিয়ে অনেক ইলাস্ট্রেশন ও প্রচ্ছদ করিয়ে নিয়েছিলেন, তাতে কিছু সুবিধা হয়েছিল। … ১৯৪৯-৫০ সালে মখদুমী লাইব্রেরি ছাড়াও প্যারাডাইস লাইব্রেরি ও ওয়ার্সী বুক সেন্টারের বইয়ের এবং কিছু কিছু অন্য বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকে তিনি খুব সুনাম অর্জন করেন।
(আনিসুজ্জামান, ‘কামরুল হাসান’, আমার চোখে, ঢাকা : অন্য প্রকাশ, ১৯৯৯, পৃ ৫৬)
মখদুমী অ্যান্ড আহসানউল্লা লাইব্রেরির মালিক মোহাম্মদ কাসেমের পুত্র মোহাম্মদ আবদুল কাইউম চারণ করেছেন তাঁর স্মৃতি :
গ্রন্থ-পরিকল্পনা ছাড়াও গ্রন্থের প্রচ্ছদ অঙ্কনে বা অলংকরণে তাঁর [পিতার] বিশেষ হাত ছিল। এ ব্যাপারে তিনি জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান এবং কলকাতার খালেদ চৌধুরীর শরণাপন্ন হয়েছিলেন।
কামরুল হাসান ছিলেন তখন কলকাতা থেকে সদ্য আগত এবং ঢাকায় চারুকলা কেন্দ্র স্থাপনে সচেষ্ট। মোহাম্মদ কাসেম তাঁকে এ কাজে [অলংকরণ] সার্বক্ষণিক দায়িত্ব প্রদান করেন।
(ভূমিকা, মোহাম্মদ কাসেম রচনাবলী, ঢাকা : বাংলা একাডেমি, ২০১৬, পৃ ১৯-২০)
পঞ্চাশের দশকে কামরুল হাসান ঢাকায় ‘ভিবজিওর’ নামে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সূচনা করেন বিজন চৌধুরী ও আবদুস সবুরের সহযোগে। এই প্রতিষ্ঠানের নাম সৈয়দ শামসুল হকের তাস (১৯৫৪) ছোটগল্প বইয়ের প্রচ্ছদকার রূপে উল্লিখিত বলে পিয়াস মজিদ জানিয়েছেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের (ওই বইয়ের প্রুফ সংশোধক ও শেষ প্রচ্ছদে বইয়ের পরিচিতি-লেখক) স্মৃতি : ওই তাসের প্রচ্ছদশিল্পী ছিলেন আবদুস সবুর।
কামরুল হাসানের অলংকরণ ও প্রচ্ছদচিত্র রচনার মনোজ্ঞ ইতিবৃত্ত পাই তাঁর ছাত্র (পরে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ প্রচ্ছদশিল্পী ও ইলাসট্রেটর) কাইয়ুম চৌধুরীর বয়ানে :
স্টেপস টু ইংলিশ নামে স্কুল পাঠ্য বইয়ের ইলাসট্রেশন ও কভার আমার চোখে এখনো জ্বলজ্বল করে। সৈয়দ আলী আহসানের লেখা নজরুল ইসলাম, শুধু তুলিতে ক্যালিগ্রাফী, আশরাফ সিদ্দিকী [ও আবদুর রশীদ খান]-সম্পাদিত নতুন কবিতা [১৯৫০] সংকলনের প্রচ্ছদ, কমলা রঙের তুলির টানে এক পোচ রং, ড্যাবড্যাবে ডগায় লালফুল ও কালোতে দ্রুত টানে লেখা নতুন কবিতা। অপূর্ব সুন্দর। কিংবা কালি-কলমে আঁকা মুখচ্ছবি, সূক্ষ্ম লাইনে আড়াআড়ি টানে, অনেকটা এচিং-এর মতো, তালেব মাস্টার ও অন্যান্য কবিতা অথবা তিন নং তুলিতে ফুটকি ফুটকি দাগে, সোনালী হলুদ ও কাপড়-ধোয়া নীলে নদী ও মানুষের ছবি Ñ নকশী কাঁথার সানাউল হকের কাব্যগ্রন্থ নদী ও মানুষের কবিতা আমি বোধহয় কোনদিন ভুলবো না।
(উদ্ধৃত, সৈয়দ আজিজুল হক, কামরুল হাসান : জীবন ও কর্ম, ঢাকা : বাংলা একাডেমি, ১৯৯৮, পৃ ৭৬)
চল্লিশের দশকের একেবারে গোড়া থেকে প্রচ্ছদচিত্র-চর্চায় পূর্বাপর কামরুল ইলাসট্রেশন করেছেন।
কলকাতা থেকে প্রকাশিত কাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস-সম্পাদিত মিল্লাতের ঈদ-সংখ্যায় গল্প-কবিতার অলংকরণ করেছিলেন জয়নুল আবেদিন। তবে আমার অনুমান, শিরোনামলিপি কামরুলের। ওই সংখ্যায় আবুল মনসুর আহমদের ‘মডার্ন ইব্রাহীম’ রচনাটির অলংকরণ করেন কামরুল। ‘পাকিস্তানবাদীর দৃষ্টিতে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার’ প্রবন্ধের শিরোনাম-লিপিও তাঁর।
চল্লিশের দশকের দৈনিক আজাদের একাধিক ঈদ সংখ্যায় তাঁর অলংকরণ-কাজ মুদ্রিত। দৈনিক সংবাদের আজাদী সংখ্যার (আগস্ট ১৯৫৫) প্রচ্ছদপট ও অলংকরণ রচনা করেন কামরুল। পাকিস্তানের অভ্যুদয়ের পরে পঞ্চাশের দশকে ফয়েজ আহমদ-সম্পাদিত কিশোর পত্রিকা হুল্লোড়ের (প্রথম প্রকাশ ১৩৫৭ ব.) প্রচ্ছদও তাঁর আঁকা। আলী ইমাম-সম্পাদিত কাননে কুসুমকলিতে (ঢাকা : চন্দ্রাবতী একাডেমি, ২০১৬) এই পত্রিকা গরহাজির। সরদার জয়েনউদ্দীন-সম্পাদিত কিশোর-পাক্ষিক শাহীনের (১৯৫৫-৫৬) প্রচ্ছদকার কামরুল। এই দুই পত্রিকার সম্পাদকেরা ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠজন। ফয়েজ আহমদের তুলির সাথে লড়াই (ঢাকা : সাহিত্য প্রকাশ, দ্বি-স, ২০০১) ও কামরুল হাসানের চিত্রশালায় (ঢাকা : সাহিত্য প্রকাশ, দ্বি-স, ২০০২) এবং সানাউল হকের পুতুল সৈনিক (১৯৬১) ও ছড়া ঘরে ঘরের (ঢাকা : সৈয়দা আয়েশা হক, পরিবেশক নওরোজ কিতাবিস্তান, একুশে ফেব্রুয়ারি ১৯৭২) প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জা কামরুল হাসানের। শেষোক্ত পুস্তিকা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ষোলোটি স্কেচে সমৃদ্ধ। এটি বহুকাল লোকলোচনের আড়ালে। সম্প্রতি আমি সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদের সৌজন্যে এটি দেখার সুযোগ পেয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কিংবা কোনো বোদ্ধা প্রকাশক এগিয়ে এলে বইটির পুনঃপ্রকাশ সম্ভব হতে পারে। মুহম্মদ মনসুরউদ্দীনের শিরনীর (দ্বি-স, বাংলা একাডেমি) অঙ্গসজ্জাও করেন তিনি। কলকাতার দ্বি-মাসিক মৃত্তিকার মতো ঢাকা-চট্টগ্রামের আরো কয়েকটি পত্রিকার প্রচ্ছদশিল্পী কামরুল হাসান। সিকান্দার আবু জাফর-সম্পাদিত সমকালের প্রচ্ছদ সম্পর্কে কামরুল চারণ করেছেন তাঁর স্মৃতি : ‘হঠাৎ মাঝ রাতেই হয়তো টেলিফোন বেজে উঠতো Ñ জাফর ভাই বলছি … কাল সকাল দশটার মধ্যেই সমকাল-এর কভার ডিজাইন চাই।’ (‘জাফর ভাই’, বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলন ও আমার কথা, ঢাকা : প্রথমা, ২০১০, পৃ ১৯৯)। এখলাসউদ্দিন আহমদ-সম্পাদিত টাপুর টুপুরের কথা এ-প্রসঙ্গে মনে পড়ছে। মুস্তাফা নূরউল ইসলাম-সম্পাদিত সুন্দরমের রেখাঙ্কনও (১৯৮৬) কামরুলের। মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকার বৃক্ষসংখ্যার প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জাকারও তিনি। ফজলে লোহানীর অগত্যার প্রচ্ছদের বর্ণলিপিও তাঁর।

তিন
তাঁর প্রচ্ছদপট রচনার প্রায়-পেশাদার জীবনের সূচনা কলকাতার ডি. এম. লাইব্রেরি (নজরুলের বইয়ের প্রকাশকরূপে বিখ্যাত) প্রকাশিত নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি উপন্যাসের প্রচ্ছদপট আঁকার মাধ্যমে (সম্রাট ও শ্রেষ্ঠী, ১৯৪৪)। ঢাকায় এসে তিনি ঘনিষ্ঠ পরিচিতজনদের
বইয়ের কাজ করেছেন; তাঁর সুহৃদ-বন্ধুজনদের তালিকা দীর্ঘ : সৈয়দ আলী আহসান (বাংলা একাডেমির পরিচালক থাকাকালে কামরুল একাডেমির বহু বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকে দেন), আবদুল গনি হাজারী, সিকান্দার আবু জাফর, ফররুখ আহমদ, কাজী আফসারউদ্দীন
আহমদ, মোহাম্মদ কাসেম, ফজলে লোহানী, সানাউল হক (তাঁর বেশ কয়েকটি বইয়ের প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জা করেন কামরুল), হাবীবুর রহমান, শওকত ওসমান, শামসুদ্দীন আবুল কালাম, মীজানুর রহমান, ফয়েজ আহমদ ও মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, সরদার জয়েনউদ্দীন প্রমুখ।
উল্লিখিত ঘনিষ্ঠজন ছাড়াও প্রকাশকের উদ্যোগে তিনি এঁদের বইয়ের প্রচ্ছদ রচনা করেছিলেন : আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আনিসুজ্জামান, আলমগীর জলিল, আলাউদ্দিন আল-আজাদ, আশরাফ সিদ্দিকী ও আবদুর রশীদ খান, আহমদ শরীফ, আশকার ইবনে শাইখ, ইব্রাহীম খান, কবীর চৌধুরী, কাজী মোতাহার হোসেন, গোলাম সোলায়মান, জসীম উদ্দীন, তৈয়ব উদ্দিন, দিলারা হাশেম, নুরুল মোমেন, নুর মোহাম্মদ মিয়া, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, মযহারুল ইসলাম, মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন, মোহাম্মদ ফেরদাউস খান, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, মুনীর চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম, শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, শেখ আবদুর রহিম [রচনাবলী, মরণোত্তর], সিরাজুদ্দীন কাসিমপুরী প্রমুখ। দেশভাগের পরে ঢাকায় এসে তিনি এসব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বইয়ের প্রচ্ছদপটের কাজ করেন : মখদুমী অ্যান্ড আহ্ছানউল্লা লাইব্রেরি, প্যারাডাইস লাইব্রেরি, ওয়ার্সী বুক সেন্টার, কোহিনুর লাইব্রেরি, গ্রেট বেঙ্গল লাইব্রেরি, তমদ্দুন প্রেস, নওরোজ কিতাবিস্তান, পূর্ববাণী, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী, সাহিত্য প্রকাশ, মুক্তধারা, মাওলা ব্রাদার্স, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্র। ১৯৬১ থেকে ১৯৭০ Ñ এই দশকে বাংলা একাডেমির অন্তত বত্রিশটি বইয়ের প্রচ্ছদ তৈরি করেন তিনি (দেখুন, শাহিদা খাতুন-সংকলিত, বাংলা একাডেমি গ্রন্থপঞ্জি, ঢাকা : বাংলা একাডেমি, ১৯৯৭)।
একটি কথা এখানে বলা যেতে পারে, ফররুখ আহমদের সাত সাগরের মাঝির (কলকাতা : কমরেড পাবলিশার্স, ১৯৪৪) প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদশিল্পী জয়নুল আবেদিন। (দেখুন, আহসান হাবীব, ‘পঁচিশ বছর পরে’, আহসান হাবীব রচনাবলী ১ম খ-, ঢাকা : বাংলা একাডেমি, ১৯৯৫)। শিল্পী-গবেষক মামুন কায়সার তাঁর বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদ (ঢাকা : বাংলা একাডেমি, ২০০৭, পৃ ৩২) গ্রন্থে সাত সাগরের মাঝির প্রচ্ছদচিত্র প্রকাশ করে জানাচ্ছেন : কামরুল হাসানের আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রচ্ছদ কবি ফররুখ আহমদের সাত সাগরের মাঝি। এই প্রচ্ছদশোভিত তমদ্দুন প্রেস থেকে প্রকাশিত (ঢাকা ১৯৫২) যে-বইটি আমার সংগ্রহে আছে, তাতে প্রিন্টার্স লাইনে প্রচ্ছদশিল্পীর নাম নেই। প্রথম সংস্করণের জয়নুলের আঁকা প্রচ্ছদটি লুপ্ত হয়ে গেল, আশঙ্কা করি।
আরেকটি তথ্য : সরদার জয়েনউদ্দীনের জীবনীকার আহমদ কবির আমাকে জানিয়েছেন, নয়ান ঢুলী গল্পগ্রন্থের প্রচ্ছদ জয়নুল আবেদিন ও কামরুল হাসানের যৌথ রচনা।
আমাদের আবহাওয়ায় এবং গ্রন্থাগারগুলির অবস্থায় বইয়ের মলাটচিত্র দীর্ঘদিন অক্ষত থাকে না। নতুন বাঁধাইকালে জেলদগরগণ মূল প্রচ্ছদ বর্জন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত যেসব বই আমরা দেখেছি সেসবের বেশির ভাগেরই প্রচ্ছদ লুপ্ত।
এই জরিপে উল্লিখিত প্রচ্ছদচিত্রের তথ্য, প্রতিলিপি অথবা মূল বই দিয়েছেন সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ, মফিদুল হক,
জাঁ-নেসার ওসমান, বদিউদ্দীন নাজির, আহমেদ মাহমুদুল হক, মাহবুবুল হক, পিয়াস মজিদ, সৈয়দ আজিজুল হক, ইফতেখার আহমেদ খান, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ইফতেখারুল ইসলাম এবং লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্র, চট্টগ্রাম।
কামরুল হাসানের প্রচ্ছদচিত্রের (অসম্পূর্ণ) খতিয়ান
১৯৪১
দ্বিমাসিক মৃত্তিকা Ñ কাজী আফসারউদ্দীন আহমদ-সম্পাদিত
১৯৪৪
সম্রাট ও শ্রেষ্ঠী Ñ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, ডি.এম. লাইব্রেরি
তারা দুই জন Ñ শওকত ওসমান, গ্রেট বেঙ্গল লাইব্রেরি
১৯৪৫
নতুন চাঁদ Ñ কাজী নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদী বুক এজেন্সী
১৯৪৮
পথ জানা নাই Ñ শামসুদ্দীন আবুল কালাম
১৯৪৯
অগত্যা Ñ স. ফজলে লোহানী
১৯৫০
তালেব মাস্টার ও অন্যান্য কবিতা Ñ আশরাফ সিদ্দিকী
নয়া জামাত (৪ ভাগ) Ñ ফররুখ আহমদ, মখদুমী অ্যান্ড আহসানউল্লাহ লাইব্রেরি
দাঙ্গার পাঁচটি গল্প Ñ স. মুস্তাফা নূরউল ইসলাম ও আলাউদ্দিন আল আজাদ, প্রকাশক হাসান হাফিজুর রহমান
১৯৫১
কবি পাগলা কানাই Ñ মযহারুল ইসলাম
হুল্লোড় (কিশোর পত্রিকা) Ñ স. ফয়েজ আহমদ
যাত্রিক Ñ স. আলীম চৌধুরী ও আহমদ কবীর
১৯৫২
নকশা Ñ তৈয়বউদ্দীন, মৌসুমী পাবলিশার্স
নয়ান ঢুলী Ñ সরদার জয়েনউদ্দীন, প্যারাডাইস লাইব্রেরি (জয়নুল আবেদিনের সহযোগে)
বগদাদের কবি Ñ শওকত ওসমান, কোহিনুর লাইব্রেরি, চট্টগ্রাম
নতুন কবিতা Ñ স. আশরাফ সিদ্দিকী ও আবদুর রশীদ খান
অগ্নিফসল Ñ নুরুন নাহার
১৯৫৩
আগামীবারে সমাপ্য Ñ মোহাম্মদ কাসেম, মখদুমী অ্যান্ড আহসানউল্লা লাইব্রেরি
রূপচ্ছন্দা Ñ শাহাদাৎ হোসেন, মখদুমী অ্যান্ড আহ্ছানউল্লা লাইব্রেরি
সাত সাগরের মাঝি (২য় সংস্করণ) Ñ ফররুখ আহমদ, তমদ্দুন প্রেস
১৯৫৪
মৃগনাভী Ñ আলাউদ্দিন আল-আজাদ
শাহীন Ñ স. সরদার জয়েনউদ্দীন
১৯৫৫
বীরকণ্ঠীর বিয়ে Ñ সরদার জয়েনউদ্দীন, কোহিনুর লাইব্রেরি, (অঙ্গসজ্জাসমেত) ঢাকা
নজরুল ইসলাম Ñ সৈয়দ আলী আহসান, মখদুমী অ্যান্ড আহসানউল্লা লাইব্রেরি (অঙ্গসজ্জাসমেত)
ঙটজ ঐঊজওঞঅএঊ Ñ সৈয়দ আলী আহসান, মখদুমী অ্যান্ড আহসানউল্লা লাইব্রেরি
শাহীন (শিশুতোষ পত্রিকা) Ñ স. : সরদার জয়েনউদ্দীন, কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি
সংবাদ (আজাদী সংখ্যা) Ñ সৈয়দ নুরুদ্দীন ও শহীদ সাবের-সম্পাদিত
বিষকন্যা Ñ আশরাফ সিদ্দিকী

১৯৫৬
নদী ও মানুষের কবিতা Ñ সানাউল হক, ওয়ার্সী বুক সেন্টার
দিশারী Ñ তালিম হোসেন
১৯৫৯
সামান্য ধন Ñ আবদুল গনি হাজারী
১৯৬০
যাত্রা শুরু Ñ সালাহউদ্দীন
১৯৬১
ঝুনঝুনি Ñ বাংলা একাডেমি-সংকলিত ও প্রকাশিত
পুতুল সৈনিক Ñ সানাউল হক (অঙ্গসজ্জাসহ), গ্রেট বেঙ্গল
সিলেটী ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা Ñ শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী, বাংলা একাডেমি
শহীদ তিতুমীর Ñ মুয়ীনউদ্দীন খান-সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি
সমকাল (বৈশাখ ১৩৬৭ ও অন্যান্য সংখ্যা) Ñ স. : সিকান্দার আবু জাফর
১৯৬২
রক্তাক্ত প্রান্তর Ñ মুনীর চৌধুরী, বাংলা একাডেমি
জরথুস্ত্র বললেন Ñ মহীউদ্দীন-অনূদিত, বাংলা একাডেমি
সমাজ-সংস্থা Ñ নূর মোহাম্মদ মিয়া-অনূদিত, বাংলা একাডেমি
উপাত্ত Ñ হাবীবুর রহমান, স্টুডেন্টওয়েজ
সম্ভবা অনন্যা Ñ সানাউল হক, পূর্ববাণী
নয়া খান্দান Ñ নুরুল মোমেন, বাংলা একাডেমি
মুঝে এছতেরাছ হ্যায় (উর্দু) Ñ মাহবুব-উল আলম, বাংলা একাডেমি
রক্তপদ্ম Ñ আশকার ইবনে শাইখ, বাংলা একাডেমি
লোকসাহিত্যে ছড়া Ñ সিরাজউদ্দীন কাসিমপুরী, বাংলা একাডেমি
১৯৬৩
আধুনিক গদ্য সংগ্রহ Ñ বাংলা একাডেমি
মধ্যযুগের কাব্যসংগ্রহ Ñ আহমদ শরীফ-সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি
ইছলাম সোপান Ñ ইব্রাহীম খান ও আহসানউল্লাহ-সংকলিত, বাংলা একাডেমি
মিট্টি কা সংসার (উর্দু) Ñ আবুল ফজল, বাংলা একাডেমি
লোকসাহিত্য সংকলন (১) Ñ বাংলা একাডেমি
সম্রাট জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনী Ñ বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর -অনূদিত, বাংলা একাডেমি
১৯৬৪
ডিগবাজী Ñ শওকত ওসমান, এ বি পাবলিকেশন্স
আধুনিক কাব্য সংগ্রহ Ñ বাংলা একাডেমি
হারামণি (৭ম খ-) Ñ মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন, বাংলা একাডেমি
রাজশাহীর ছড়া Ñ আলমগীর জলিল-সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি
আরব জাতির ইতিহাস Ñ সৈয়দ আমীর আলী, বাংলা একাডেমি
১৯৬৫
শেখ আবদুর রহিম গ্রন্থাবলী (১ম) Ñ আনিসুজ্জামানের ভূমিকা-সংবলিত, বাংলা একাডেমি
শেখ আবদুর রহিম গ্রন্থাবলী (২য়) Ñ মমতাজুর রহমান তরফদার ও আনিসুজ্জামানের ভূমিকা-সংবলিত, বাংলা একাডেমি
বাউল গান ও দুদ্দু শাহ Ñ বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, বাংলা একাডেমি
১৯৬৬
হলুদ বরণী Ñ জসীম উদ্দীন, পলাশ প্রকাশনী
রুবাইয়াত (ওমর খৈয়াম) Ñ সিকান্দার আবু জাফর-অনূদিত, বাংলা একাডেমি
বই (জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের মুখপত্র) Ñ স. সরদার জয়েনউদ্দীন
১৯৭০
শেখ হবীবুর রহমান রচনাবলী Ñ আনিসুজ্জামানের ভূমিকা, বাংলা একাডেমি
গণিত শাস্ত্রের ইতিহাস Ñ কাজী মোতাহার হোসেন, বাংলা একাডেমি
অ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঋড়ষশষড়ৎব ঈড়ষষবপঃরড়হ রহ ওহফরধ ধহফ চধশরংঃধহ Ñ মযহারুল ইসলাম, বাংলা একাডেমি
১৯৭১
বাংলাদেশ কথা কয় Ñ আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী-সম্পাদিত, মুক্তধারা, কলকাতা
১৯৭২
ছড়া ঘরে ঘরে Ñ সানাউল হক, নওরোজ কিতাবিস্তান (অঙ্গসজ্জাসমেত)
১৯৭৩
আধুনিক কবিতা Ñ রফিকুল ইসলাম-সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি
ঝবষবপঃবফ চড়বসং : ঘধুৎঁষ ওংষধস Ñ কবীর চৌধুরী-অনূদিত, বাংলা একাডেমি
সারেং বউ (তৃতীয় সংস্করণ) Ñ শহীদুল্লা কায়সার
১৯৭৪
যশোরের লোক-কাহিনী Ñ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান-সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি
১৯৭৮
আমলকীর মৌ Ñ দিলারা হাশেম, ইউপিএল
১৯৭৯
আমার যতো গান Ñ জেব-উন-নেসা জামাল
১৯৮০
বাংলাদেশের লোক ধাঁধা Ñ আলমগীর জলিল ও সামীয়ূল ইসলাম-সংকলিত, বাংলা একাডেমি
১৯৮১
প্রবাসে যখন Ñ সানাউল হক, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী
তুলির সাথে লড়াই Ñ ফয়েজ আহমদ, মুক্তধারা
শিরনী Ñ মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন, বাংলা একাডেমি (অঙ্গসজ্জাসমেত)
১৯৮২
খোঁয়ারি Ñ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, তন্ময় প্রকাশনী, রাজশাহী
বেলতৈল গ্রামের জরিমন Ñ ড. মুহাম্মদ ইউনূস
১৯৮৫
দুধেভাতে উৎপাত Ñ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, মাওলা ব্রাদার্স
কামরুল হাসানের চিত্রশালায় Ñ ফয়েজ আহমদ, মুক্তধারা
১৯৮৬
সুন্দরম (নামলিপি) Ñ মুস্তাফা নূরউল ইসলাম-সম্পাদিত
একাল Ñ স. নূরজাহান মুরশিদ
১৯৮৭
একাত্তরের ঘাতক দালালেরা কে কোথায় Ñ মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্র

সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি
১. কামরুল হাসান, বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলন ও আমার কথা, ঢাকা : প্রথমা প্রকাশন, ২০১০।
২. সৈয়দ আজিজুল হক, কামরুল হাসান/ জীবন ও কর্ম, ঢাকা : বাংলা একাডেমি, ১৯৯৮।
৩. মামুন কায়সার, বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদ, ঢাকা : বাংলা একাডেমি, ২০০৭।
৪. শাহিদা খাতুন-সংকলিত ও সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি গ্রন্থপঞ্জি, ঢাকা : বাংলা একাডেমি, ১৯৯৭।
৫. বাংলাদেশের লেখক পরিচিতি, ঢাকা : বাংলা একাডেমি, ১৯৮৪।
৬. আশফাক-উল-আলম ও অন্যান্য সম্পাদিত, বাংলা একাডেমি লেখক অভিধান, ঢাকা : বাংলা একাডেমি, ১৯৯৮।
৭. সানাউল হক রচনাবলী (প্রথম খ-), ঢাকা : বাংলা একাডেমি, ১৯৯৮।