কিস্সা বলেন শেহ্রজাদে

রবিশংকর বল

\ ৭ \

 

বামন লোকটিকে এই এলাকায় আগে কখনো দেখা যায়নি। পাঁচ-ছদিন হলো রঘুপতি তাকে দেখছে। সামনের পার্কের এক বেঞ্চে আস্তানা গেড়েছে, সঙ্গে নানারকম কাপড়ের তালিমারা একটা ব্যাগ, কত কী যে আছে তার মধ্যে, কে জানে, পোস্টাপিসের পেট-মোটা বস্তার মত। ভোরবেলা সে একাই প্রভাতফেরিতে বেরোয়, হেঁড়ে জড়ানো গলায় গান করে… রাই জাগো, রাই জাগো…। তারপর সারা দিনে তাকে আর দেখা যায় না; রাতে ফিরে সামনের রাস্তায় রাস্তায় টহল দিয়ে পার্কের বেঞ্চে গিয়ে শুয়ে পড়ে।

– এই লোকটা কোত্থেকে এলো? রঘুপতি একদিন মৃত্তিকাকে বলে।

– কে জানে! কেউ জিজ্ঞেস করলেও বলে না। তারপর হেসে ওঠে মৃত্তিকা। – ও নাকি সিন্দবাদ।

– মানে?

– আরব্যরজনীর সিন্দবাদ। পাড়ার অনেকে গল্প শুনতে চেয়েছিল, তুমি যখন সিন্দবাদ নাবিক, তবে গল্প শোনাও।

– বাববাঃ। রঘুপতি হাসে। – এদিকে শেহ্রজাদে-শাহরিয়ার এসেছে, আবার সিন্দবাদও হাজির।

– আমরা তো সব পুরনো কিস্সার চরিত্র হয়ে গেলাম। মৃত্তিকা বলে।

– সিন্দবাদকে পাকড়াও করতেই হবে – কত অ্যাডভেঞ্চারের গল্প তার কাছে।

– সে তো বলে, গল্প জানে না। গল্প শোনাই তার কাজ। সে নাকি গরিব সিন্দবাদ। কুলির কাজ করে। বড়লোক, নাবিক সিন্দবাদ তাকে গল্প শোনায়। ভাল ভাল খাবার, মদ খাবে, আরাম করবে বলে সে ধনী সিন্দবাদের গল্প শুনতে যায়। নাবিক সিন্দবাদও তাকে ছাড়তে চায় না।

সকালে আর রাতে কয়েকদিন যাওয়া-আসা করে বামন সিন্দবাদের সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেলে রঘুপতি। সে এখন হেসে হেসে, সহজভাবে কথা বলে রঘুপতির সঙ্গে।

মজার কথা বলতে বলতে দু-এক পাক নেচেও ফেলে।

– আচ্ছা সিঙ্গম, লোকটা কি সত্যিই সিন্দবাদ কুলি? রঘুপতি জিগ্যেস করে।

– জি, হুজুর।

– সেও কি এমন বামন ছিল?

সিঙ্গম অনেক ভেবে বলে, ‘না বোধহয়। মনে তো পড়ছে না। এই  শহরে আসার পর সব গুলিয়ে যাচ্ছে জাঁহাপনা, কিছুই ঠিকঠাক মনে করতে পারি না। তা যাক। বামন হলেই বা ক্ষতি কী?’

– মানে?

সিঙ্গম হেসে বলে, ‘সব গরিব লোকই তো বামন, হুজুর।

– শালা ফিলোজফার –

– কিছু বললেন?

– সক্রেটিসের বাবা তুমি।

সিন্দবাদ কুলি জানায়, গল্পই যদি শুনতে চাও, তবে কিস্সামহলে যেতে হবে। এমন কোনো বাড়ির নাম তো রঘুপতি শোনেনি। সিন্দবাদ কুলি বলে, তুমি শোনোনি, দেখোনি বলে কি তা নেই? এই যে সিঙ্গম, ওকে কি সবাই দেখতে পায়? তা বলে কি সিঙ্গম নেই? ওর যাকে পছন্দ, তার সামনে দেখা দেয়। তা চাইলে রঘুপতি কিস্সামহলে যেতে পারে। সেই মঞ্জিল আছে কি নেই, নিজের চোখে দেখে আসুক, কত মানুষ সেখানে অপেক্ষা করে আছে কিস্সা বলার জন্য। তবে মনে রেখ, তারা কিন্তু কেউ বেঁচে নেই, ভয় পেলে চলবে না। আর ভয়ের আছেই বা কী? জ্যান্ত মানুষ আরেক জ্যান্ত মানুষকে ভয় পেতে পারে, কিন্তু মরা মানুষের তো ক্ষতি করার ক্ষমতাই নেই। বরং তারা অপেক্ষা করে থাকে, সিন্দবাদ কুলি বলে, কবে একজন জ্যান্ত মানুষ তাদের কাছে আসবে, তাদের না-বলা কিস্সা শুনতে চাইবে, শুনতে শুনতে জ্যান্ত মানুষটার মুখে আলো ফুটে উঠবে, মরা মানুষেরা তখন দুদ- শামিত্মতে চোখ বুজতে পারবে।

হ্যাঁ, সিন্দবাদ কিস্সামহলে নিয়ে যেতে পারে রঘুপতিকে, তবে একটা শর্ত আছে। বিরিয়ানি-চাপ-ফিরনি খাওয়াতে হবে তার আগে। অনেকদিন এসব সুস্বাদু খাবার খাওয়া হয়নি সিন্দবাদ কুলির। মোগলাই রেসেত্মারাঁয় গিয়ে সিন্দবাদের খাওয়া দেখে চোখ কপালে উঠল রঘুপতির। চার পেস্নট করে বিরিয়ানি-চাপ খেল সে, ফিরনি দশ ভারের কম নয়।

– মরে যাবে না তো? সিঙ্গমও দেখতে-দেখতে হাঁসফাঁস করে বলে উঠল।

– অত সোজা? সিন্দবাদ দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা মাংস খুঁটতে খুঁটতে বলে। – একটু ঘুমোলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এসব আমার অভ্যেস আছে। তোমরা বোধহয় গরিব মানুষের খাওয়া দেখোনি?

– তাই বলে রাক্ষসের মতো? সিঙ্গম বলে।

– হে-হে। সিন্দবাদ হেসে উঠল। – জিন গালাগালি দিচ্ছে রাক্ষসকে।

– অত আমি খেতে পারি না। ধোঁয়ার শরীর তো।

– তা বটে। বামন সিন্দবাদ হাই তুলে বলে, ‘পারলে ব্রহ্মা-টাই খেয়ে নিতাম।’

সিঙ্গম হেসে ওঠে, ‘পেট ফেটে মরে যেতে।’

– অত সোজা না। হাঁটতে হাঁটতে বিড়িতে সুখটান দিয়ে বলে সিন্দবাদ, ‘শালা, হাজার হাজার বছরের খিদে পেটের ভেতরে জমে আছে। যত ঢালো, নিমেষে মিলিয়ে যায়। অন্ধকূপ দেখোনি? মানুষকে ছুড়ে ফেলছে তো ফেলছেই – শেষ আর হয় না – অন্ধকূপও কখনো ভরে না।’

রঘুপতি তার ডায়েরিতে লিখে রাখছিল :

‘ভিখিরি, অন্তত প্রাচীনকালে, সব দেশেই ছিল। তবে এ দেশে সুপ্রাচীনকাল থেকেই অন্নভিক্ষা নানা ধরনের শাস্ত্রের সমর্থন পেয়েছিল। আশ্রমধর্মে ব্রহ্মচারী পরান্নে পালিত এবং সে ভিক্ষা করে খেত এবং ভিক্ষান্ন আচার্যের বাড়িতেও আনত। যতি বা সন্ন্যাস আশ্রমে, মানুষ ফলমূল সংগ্রহ বা ভিক্ষা করে। জৈন সন্ন্যাসীও ভিক্ষা করত। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর ভিক্ষার কথা জাতক ও অন্যান্য সব বৌদ্ধগ্রন্থে বহুবিসত্মৃত কাহিনির মধ্যেও পাওয়া যায়। অন্যান্য নানা সম্প্রদায়ের কথা, বিশেষত বুদ্ধ বোধিলাভের পূর্বে যেসব সম্প্রদায়ের সংস্পর্শে আসেন তাঁদের কথাও পাওয়া যায়। এঁরা ছিলেন ভ্রাম্যমাণ সন্ন্যাসী সম্প্রদায়, অতএব এঁদের ভিক্ষান্নে এবং সংগৃহীত ফলমূলেই ক্ষুধা নিবারণ করতে হতো।’

‘পরাশরের ভিক্ষুসূত্র গ্রন্থ এবং অন্যান্য দার্শনিক ও ধর্মীয় প্রস্থানেও ভিক্ষার নির্দেশ দেওয়া আছে। ‘অগেহী’ বা ‘অনিকেত’ মানুষ সমাজে এক ধরনের সম্মান পেতেন। এঁরা যেহেতু নিজের বাড়িতে রান্না করতেন না, তাই পরের বাড়ি ভিক্ষা করেই দিনপাত করতেন। অনেক ধরনের পাপের প্রায়শ্চিত্তেও ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে খাওয়ার বিধান ছিল, কোনো কোনো ব্রতেও ভিক্ষা করার বিধান ছিল। কাজেই সমাজে গৃহীর পাশাপাশি ভিক্ষাজীবীর জন্যও একটা ব্যবস্থা ছিল। তীর্থযাত্রী ভিক্ষা করেই খেতেন, বহু তীর্থস্থানেও অন্নসত্র থাকত। কাজেই বহু ক্ষুধিত মানুষ ভিক্ষায় পাওয়া খাদ্যে জীবনধারণও করতেন। ভিক্ষা পাওয়ার জন্য সমাজে বেশ কিছু গৃহীর প্রয়োজন ছিল, যাঁরা ভিক্ষা দেবেন। অর্থাৎ এসব সংসারী লোকেদের – বৌদ্ধ সাহিত্যে যাদের প্রধানত ‘গহপতি’ (গৃহপতি=গৃহী) বলা হয়েছে – বাড়িতে রান্না হতো, এবং সে-রান্নাটা শুধু বাড়ির লোকজনদের পরিমাপে নয়, কিছু বাড়তিও থাকত। দৈবাৎ এসে-পড়া অতিথি বা বুভুক্ষু ভিখিরিকে বা নিয়মিত ভিক্ষার্থী সন্ন্যাসীকে তারই থেকে ভিক্ষা দেওয়া হতো। ভিক্ষা দেওয়া, বিশেষত অন্নদান, তাই বরাবর সব শাস্ত্রেই পুণ্য কাজ। অর্থাৎ রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এমন কখনোই ছিল না, যাতে রাষ্ট্র থেকে ক্ষুধিতের ক্ষুধা নিবারণের দায় বহন করা হবে। তাই যার জমি নেই, যে ভাগচাষি সামান্য জমিতে মজুর খাটে, যে দুর্বৎসরে খাদ্য পেত না, বাধ্য হতো ভিক্ষা করতে। তাই পেশাদার ভিক্ষুক ছাড়াও বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে নিজের শ্রম বিক্রি করেও খিদে মিটত না বহু তথাকথিত ‘নিম্নবর্গের’ মানুষের।’ (‘বেদে ক্ষুধা প্রসঙ্গ’, সুকুমারী ভট্টাচার্য)।

এমনটা রঘুপতির অনেকদিনের অভ্যাস। কবে শুরু হয়েছিল মনে নেই। বেশ কয়েকটি ডায়েরি ভরে গেছে। কোনো লেখার অংশ বা হঠাৎ মনে-পড়া কথা লিখে রাখে সে। সে তো লেখক নয়, কোনোদিন লিখবে, এমন বাসনাও নেই। এভাবে লিখতে লিখতে সে একদিন নিজেকে ক্রনিকলারের ভূমিকায় খুঁজে পায়। পুরনো ডায়েরিগুলো পড়তে পড়তে দেখে, ছিন্নবিচ্ছিন্ন নানা কথা, ঘটনার মধ্য দিয়ে যেন একটা গল্পের আদল ফুটে উঠছে। কিন্তু সে জানে, ওগুলোকে সাজিয়ে-গুছিয়ে গল্প করে তুলতে গেলেই, তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে যাবে। গল্প কীভাবে জন্মায়, বেঁচে থাকে, মরে যায় – তাতে মানুষের কোনো হাত নেই তাহলে? বানিয়ে তোলা গল্পদের তাই, অবাস্তব মনে হয় রঘুপতির।

তার মনে পড়ে, গান্ধীজির জীবনের সেই দিনটির কথা। ১৯৪৭-এর ১৪ আগস্ট। রাজধানীর উৎসব-অনুষ্ঠানে তিনি অনুপস্থিত। তখন গান্ধীজি কলকাতায়। এখানেও তিনি কোনো সভায় যাননি, পতাকা উত্তোলন করেননি। সন্ধেবেলা পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কাছে এসে জানতে চাইলেন, পরদিন উৎসব কেমন হওয়া উচিত? গান্ধীজির উত্তর, ‘চারদিকে মানুষ না খেতে পেয়ে মরছে, আর এই দুর্দশার মাঝখানে আপনি উৎসব করতে চান?’ হিন্দুস্তান টাইমসের একজন সাংবাদিক স্বাধীনতা উপলক্ষে তাঁর বাণী চাইলেন। গান্ধীজির উত্তর, ‘আমার ভাঁড়ার শূন্য।’ বিবিসি গান্ধীজির সচিবকে অনুরোধ করেছিল মহাত্মার একটি বার্তা রেকর্ড করার জন্য সহায়তা করতে। গান্ধীজিই ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি। তিনি রাজি হননি। জওহরলালের সঙ্গে কথা বলতে বলেছিলেন। বিবিসি গান্ধীজিকে জানায়, তাঁর বার্তা বহু ভাষায় অনূদিত হয়ে সারা পৃথিবীতে প্রচারিত হবে। তবু তিনি রাজি হননি, উত্তর, ‘আমি ইংরেজি জানি, এ-কথা ওদের ভুলতে বলো।’ আর ১৫ আগস্ট ২৪ ঘণ্টা অনশন করলেন তিনি। কেননা দেশের স্বাধীনতা ও দেশভাগ একাকার হয়ে গেছে।

এই ঘটনার কোনো নাটকীয় গল্প তৈরি করা যায় না। তাহলেই ভেঙে পড়বে এই উপমহাদেশের বাস্তবতা – স্বাধীনতা, দেশভাগ – আর মানুষ গান্ধীজির বাস্তবতা। ধারাবাহিক, চমকদার গল্প নয়, তুমি একে খ-বৈচিত্র্যের মহিমা দাও।

 

দুদিনেও বামন সিন্দবাদের ঘুম ভাঙে না। তাকে ঘিরে এলাকার মানুষের ভিড় জমে যায়, নানারকম কথার গুঞ্জন ক্রমশ ভারী হতে থাকে। সবারই প্রায় ভয়, বামন লোকটি মারা গেছে, পুলিশ আসবে, নানা ঝক্কিঝামেলার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সিঙ্গম পাগলের মতো চেহারা নিয়ে তার মাথার কাছে বসেছিল।

এমন সময় হাই তুলতে তুলতে ঘুম ভাঙল বামন সিন্দবাদের। চারপাশের সবার দিকে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে সে দুই চোখ ডলতে থাকে। এই অবসরে জমায়েত হালকা হতে থাকে। সবাই নিশ্চিন্ত, একটা মৃতদেহের ঝামেলা থেকে রেহাই পাওয়া গেল। জায়গাটা একেবারে ফাঁকা হলে সিঙ্গম ঝাঁঝিয়ে বলে, ‘আমি তখনই বুঝে ছিলাম, অত খেলে কেউ জেগে থাকতে পারে? তা বলে দুদিন ঘুম -।’

– চোপ। বামন সিন্দবাদও গলা চড়িয়ে বলে, ‘সবে বাগদাদের বন্দর ছেড়ে বসরার দিকে যাচ্ছি – ’

– মানে?

– আমাদের বুড়ো নাবিক সিন্দবাদের সঙ্গে। দ্বীপটা পর্যন্ত পৌঁছতে দিলে না।

– কোন দ্বীপ?

– আরে দ্বীপ কোথায়! সে হে-হে করে হাসল, ‘সে তো বিরাট এক তিমি মাছের পিঠ। নাবিক সিন্দবাদ সেটাকে দ্বীপ ভেবেছিল। তিমিটা নাকি বহু যুগ ধরে সমুদ্রের মাঝে ঘুমোচ্ছিল। পিঠে পলি জমে গিয়ে সেখানে গাছগাছালি জন্মে গেছে।’

– বাজে কথা ছাড়ো।

– চোরাগোপ্তা!

– মানে?

– কোথায় যে কী চোরাগোপ্তা লুকিয়ে থাকে। এই ধরো না কেন, তোমার পেটের ভেতরে কত কত কৃমি ঘুরে বেড়াচ্ছে, তুমি জানো?

– কিস্সামহলে কবে যাবে? রঘুপতির রাগত স্বর।

– আজ রাতটুকু ঘুমোতে দিন। সিন্দবাদ কুলি হাত কচলাতে কচলাতে বলে, ‘কাল ভোর ভোর আমরা বেরিয়ে পড়ব।’ বলতে বলতে আবার শুয়ে পড়ে সিন্দবাদ।

– এখনই ঘুমোবে আবার?

রঘুপতির দিকে তাকিয়ে বামন বলে, ‘হুজুর, কিছু খাবার মিলবে না? দুদিন ঘুমিয়ে বড় খিদে পেয়েছে।’

– আবার খাবে? সিঙ্গম চোখ বড়-বড় করে তাকায়।

– ধোঁয়ার শরীর তোমার। খিদের কী বুঝবে তুমি?

– কী খাবে? রঘুপতি গম্ভীর স্বরে বলে।

বামন সিন্দবাদ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর এক ঝটকায় উঠে বসে বলে, ‘আজ লাচ্ছা, পরোটা, ভুনা গোশত হলে ভালো হয়। যদি একটু বটিকাবার পাওয়া যায়। অনেকদিন কাবাব খাইনি।’

– তুমি তো জাঁহাপনাকে ভিখিরি বানিয়ে ছাড়বে। সিঙ্গম বলে।

– জাকাত কাকে বলে জানো? বামন সিন্দবাদ চোখ নাচিয়ে বলে।

– কেন, দান-খয়রাত।

– দূর, দূর। কিছু জানেই না। টাকা-পয়সা, জিনিসপত্তর দেওয়াকে জাকাত বলে না হে। নিজেকে সম্পূর্ণ দিয়ে দিতে হয়। তখন কী হয় জানো? মনের ভেতরটা মহাশূন্য হয়ে যায়। কোরআনে জাকাত মানে নিজেরে একেবারে বিলিয়ে দেওয়া, ভেতরটা মহাশূন্য হয়ে যাওয়া।

বামন সিন্দবাদ কিছুক্ষণ পর হেসে ওঠে, ‘মহাক্ষুধা আর মহাশূন্য। এই তো মানুষের দুইখানি কিস্সা বাপু।’ (চলবে) r

কৃতজ্ঞতা : রামচন্দ্র গুহ