ফেলে আসা সেই কৈশোরক-কালে
সন্ধ্যাবাতি জ্বেলেই মা ডাক দিতো –
এখন পড়তে বসো।
মায়ের হাতে থাকতো রামসুন্দর বসাকের ‘বাল্যশিক্ষা’,
কখনো-বা সীতানাথ বসাকের ‘আদর্শলিপি’।
ভোরে উঠে আবার সেই একই পাঠ।
দশটা বাজতেই পৌঁছে যেতাম
কালাচাঁদ পণ্ডিতের পাঠশালায় –
কখনো হাতে থাকতো ‘বাল্যশিক্ষা’, কখনো ‘আদর্শলিপি’,
কখনো-বা মদনমোহন তর্কালঙ্কারের ‘শিশুশিক্ষা’।
‘প্রভাত বর্ণনা’য় মদনমোহন যখন আবৃত্তি করতেন –
‘পাখিসব করে রব রাতি পোহাইল।
কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল ॥’
মুগ্ধ হয়ে যেতাম।
কী আনন্দময় পাঠ, কী অপরূপ ধ্বনিসাম্য!
বারবার পড়তাম ‘প্রভাত বর্ণনা’।
কিন্তু পণ্ডিত মশাই নিয়ে যেতেন বানানের পৃষ্ঠায়।
বানান শিখতে শিখতে ‘কৃতঘ্ন’ শব্দে এসে চোখ থমকে যেত,
শিয়ালের মতো দাঁত বের করে হাসতো শব্দটা।
কী আশ্চর্য!
তিনটা বইয়েই আছে শিয়ালমুখো ওই ‘কৃতঘ্ন’ শব্দ।
অর্থ বুঝতাম না।
পণ্ডিত মশাই বলে দিতেন –
উপকারী মানুষের অপকার করে যে সে-ই কৃতঘ্ন।
মনে খটকা লাগতো।
ধাক্কা লাগতো কৈশোরক বোধে
উপকারীর অপকার করে কোন সে মানুষ?
সে কি সত্যি সত্যি মানুষ?
এতদিন পরে এখন দেখি –
রামসুন্দর-সীতানাথ ভ্রাতৃদ্বয়, কিংবা মদনমোহন
কেউই ‘কৃতঘ্ন’ শব্দ বাদ দেননি,
অথচ তাঁদের বইয়ে কোথাও নেই ‘কৃতজ্ঞ’ শব্দ।
তাহলে কি
আদিকাল থেকেই চলছে কৃতঘ্নের জয়োল্লাস।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.