কোণের ঘর

শফিক আহমেদ

বাবার বয়স আটাত্তর
মার বয়স বাহাত্তর
মা বাকরুদ্ধ কয়েক বছর
বাবা হাঁটেন, বাবা চলেন অপরাধীর মতো।
বারান্দার কোণের ঘরে ওরা থাকেন,
ছোট্ট ঘর একটাই জানালা
বাতাস কিন্তু ঢোকে না।
ভাদ্রের গুমোটে তালপাতার পাখা নিয়ে
বাবা বাতাস করেন মাকে
তাকিয়ে থাকেন মায়ের মুখের দিকে।
বাবা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন মাকে
মার নাম সাজু, সাজেদা খাতুন।
এদিকে দুটো ঘর নিয়ে আমাদের সংসার,
বারান্দায় বিলু পড়ে মাধ্যমিকের পড়া
স্বপ্ন দেখি বিলু ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, কোম্পানির সুউচ্চ সাহেব।
বাবার চোখ অপরাধীর মতো
অসহায় বিব্রতার বিষাদ-মাখানো,
চোখাচোখি হলে বলে, ‘খোকন, কেমন আছিস?’
সংক্ষিপ্ত একই উত্তর, ‘ভালো আছি, মা কেমন আছে।’

কোণের ঘরটা বিলু চায়
মাধ্যমিকের পড়ায় মন লাগাতে পারে
প্রতিযোগিতার সোপান এখন অনেক দীর্ঘ
পার হতে দীর্ঘ অধ্যবসায়।
গভীর রাতে মশারির ভিতর শুনি
সেই পুরনো অভিযোগ
সরাসরি কোনো প্রস্তাব নয়,
বিলু যদি ঘরটা পেত
পরীক্ষার সোপানগুলি তরতরিয়ে উঠে যেত।

বাবার সাথে দেখা হলে
কেমন যেন এড়িয়ে যেতে চান
আয়হীন অক্ষমতার গস্নানিঢাকা চোখের তারা
সারামুখে অসহায় কালো ছাপ।
মায়ের মুখ মেঘে ঢাকা
তবু আমায় দেখে চোখের তারাদুটি
কেমন যেন ঝিলিক দিয়ে ওঠে।

এই কমাস আগে ঘরটা খালি হলো
নোটিশ ছাড়া বাবা-মা চলে গেলেন
মাত্র দুমাসের ব্যবধানে।