‘গণেশ হালুই বেঙ্গল গবেষণা বৃত্তি’ পেলেন শাওন আকন্দ

চিত্রশিল্পী ও গবেষক শাওন আকন্দ পেয়েছেন ২০২৩ সালের ‘গণেশ হালুই বেঙ্গল গবেষণা বৃত্তি’। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৫শে জুলাই ২০২৩) সন্ধ্যায় ধানমণ্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে ‘মনোনীত গবেষক পরিচিতি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী রফিকুন নবী। শাওন আকন্দের গবেষণা প্রস্তাবের বিষয় : ‘ঢাকার চারুকলার বিকল্প ইতিহাস : অপ্রাতিষ্ঠানিক ধারার সন্ধানে’।

অনুষ্ঠানে বিশেষ সম্মাননা জানানো হয় ইমরানুজ্জামান ও সানি কুমার দাশের গবেষণা প্রস্তাব দুটিকে। আয়োজকরা জানান, এবার এই গবেষণাবৃত্তির জন্য প্রস্তাব আহ্বান করা হলে মোট ১৭টি প্রস্তাব জমা পড়ে।

পশ্চিমবঙ্গের বরেণ্য শিল্পী গণেশ হালুইয়ের নামে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ২০১৭ সাল থেকে ‘গণেশ হালুই বেঙ্গল গবেষণা বৃত্তি’ প্রদান করে আসছে। বাংলাদেশের দৃশ্যকলা-চর্চা সন্নিহিত চল্লিশ থেকে আশির দশকের সময়কালের গবেষণা-প্রয়াসের নমুনা তুলে ধরাই এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য। এই বৃত্তির আওতায় যেসব বিষয়ে প্রস্তাব আহ্বান করা হয়ে থাকে সেগুলি হলো – শিল্পকলা পরিচর্যাকারী প্রতিষ্ঠানের বিবর্তন ও বিকাশ, চারুকলা প্রদর্শনী ও তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, দৃশ্যকলা-বিষয়ক উৎসব ও বিয়েনালের ভূমিকা, দৃশ্যকলা ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন, দৃশ্যকলা ও লিঙ্গ প্রশ্ন, শিল্পীদের সংগঠন ও তার প্রেক্ষাপট, চারুশিল্পী-পরিচালিত কলাক্ষেত্র (স্পেস)-এর বিকাশ, দৃশ্যকলার তথ্যায়ন এবং লোকশিল্প ও শহুরে শিল্পের পারস্পরিক বিবর্তন। এছাড়াও বাংলাদেশের দৃশ্যকলা-চর্চা সন্নিহিত ওই সময়কালের মধ্যকার অন্যান্য বিষয়েও প্রস্তাব উপস্থাপনের সুযোগ রয়েছে এই বৃত্তির জন্য।

২০২৩ সালে গবেষণাবৃত্তি প্রদানের জন্য গঠিত নির্বাচকমণ্ডলীতে ছিলেন স্থপতি ও ইতিহাসবিদ কাজী খালিদ আশরাফ, শিল্পী ইয়াসমিন জাহান নূপুর এবং প্রাবন্ধিক ও স্থপতি আলম খোরশেদ।

প্রধান অতিথি রফিকুন নবী তাঁর বক্তব্যে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদ-নদীর বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি এগুলি সংরক্ষণ ও বাঁচিয়ে রাখার ওপর জোর দেন। তিনি আরো জানান, এদেশের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। বিদেশি পণ্য-প্রযুক্তি ও সংস্কৃতি দখল করছে দেশীয় পণ্য-সংস্কৃতির স্থান। এক্ষেত্রে তিনি উল্লেখ করেন বাংলার চিরাচরিত মেলার কথা। রফিকুন নবী বলেন, ‘… যেমন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মেলার প্রতি আবেগ। ঐতিহ্য হারিয়ে এখন মেলা ভরে যায় প্লাস্টিক পণ্যে। সংস্কৃতির এসব ধারার তথ্য সংরক্ষণের জন্য গবেষণার বিকল্প নেই।’

প্রাবন্ধিক ও স্থপতি খোরশেদ আলম বলেন, ছবির বাইরে গিয়েও যে গবেষণা করার দালিলিক কাজ দেশে শুরু হয়েছে তার প্রমাণ এই গবেষণা বৃত্তি। ইয়াসমিন জাহান জানান কীভাবে ও কোন পদ্ধতিতে শ্রেষ্ঠ গবেষণা-প্রস্তাব মনোনীত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে স্থপতি ও ইতিহাসবিদ কাজী খালিদ আশরাফ মনোনীত গবেষকের নাম ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এই গবেষণাকর্ম শেষ হওয়ার পর প্রকাশিত হলে সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নির্বাচিত গবেষক শাওন আকন্দ বলেন, চারুকলাবিষয়ক কর্মকাণ্ডের বেশির ভাগ ঘটেছে ১৯৪৮ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত চারুকলা ইনস্টিটিউটকে কেন্দ্র করে। এর আগে কি ঢাকায় কোনো শিল্পচর্চার ধারা ছিল না? সেসব ঐতিহ্য খুঁজে বের করে বিশ্লেষণের চেষ্টাই এই গবেষণার উদ্দেশ্য।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।

গণেশ হালুই আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার একজন বিশিষ্ট শিল্পী। একই সঙ্গে তিনি লেখক  ও শিল্পচিন্তক। চিত্রভাষায় রূপের গাঠনিক মূল্যটি যে অপরিহার্য, তা তিনি আজীবন চর্চা করে চলেছেন। দেশভাগের যন্ত্রণা মূর্ত হয়ে উঠেছে তাঁর অনেক কাজে।

তাঁর জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর বর্তমান বাংলাদেশের জামালপুর জেলায়। তাঁর শৈশব-কৈশোর কেটেছে এখানেই। ’৪৭-এর দেশভাগ তাঁর হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে।

পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে স্থানান্তরিত হন তিনি।

গণেশ হালুই কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস থেকে ১৯৫৬ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীকালে ১৯৬৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকতা করেন তিনি।

তিনি কলকাতার অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস কর্তৃক চারুকলায় ছয়বার স্বর্ণপদক লাভ করেছেন। এছাড়াও তিনি  রবীন্দ্রভারতী বিশ^বিদ্যালয় প্রদত্ত ‘হীরাচাঁদ দুর্গা স্মারক’ সম্মাননা, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য নাট্য-সংগীত ও দৃশ্যকলা অ্যাকাডেমি প্রদত্ত ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অ্যাকাডেমি’ সম্মাননা এবং ক্যালকাটা পেইন্টার্স প্রদত্ত সম্মাননা লাভ করেছেন।

– কালি ও কলম প্রতিবেদন