গল্পগুলোর ডানা ছিল

মিনার মনসুর

ঘোড়াটিই আমাকে নিয়ে গিয়েছিল রূপকথার সেই মাঠে। দিগন্তছোঁয়া তার পৌরুষ। সেখানে উড়ত দূর পৃথিবীর স্বপ্নরাঙা রাজকন্যাদের গল্প। দুঃখ ও বিলাসের বিচিত্র হীরকখচিত নেকাবে ঢাকা থাকত তাদের মুখ। সূর্যের রথে চেপে তারা আসতেন। আর ধূলি ও অগ্নির মধ্যে পৃথিবীর দীর্ঘতম সেতু হয়ে আশ্চর্য সব আলো ছড়াত তাদের সোনালি চুল।

কৃষকের এসবে আগ্রহ ছিল না। সকালসন্ধ্যা তারা মগ্ন থাকত স্বর্ণমুদ্রা সংগ্রহে। তার মায়াবী আভায় ঝলমল করে উঠত তাদের বঞ্চনার ছানিপড়া চোখ। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, দারিদ্রে্যর চাবুকে পিঠ রক্তাক্ত হলেও বংশানুক্রমিক বৈরাগ্যের মাদুলিটি তারা কখনো হাতছাড়া করেনি। ধীরে, আশ্চর্য এক সাংগীতিক লয়ে তারা স্বোপার্জিত সেই স্বর্ণমুদ্রা জড়ো করত বাড়ির আঙিনায়। চাষি-বউয়ের কামরাঙা পায়ের স্পর্শে স্বর্ণমুদ্রাও শিহরিত হতো। কিন্তু আমাদের অপাপবিদ্ধ চোখ থাকত ইঁদুরের কোষাগারে। কী যে মধুর ছিল সেই স্বৈরথ!

কত দ্রম্নতই না ফুরিয়ে যায় সব। কৃষক বিষণ্ণ চোখে দেখত রূপকথার সোনাঝরা সেই মাঠজুড়ে গ্রীষ্ম ও বর্ষার বর্গিদের তা-ব। কিন্তু গল্প ফুরোত না। কেননা কালান্তরের গাঢ় দীর্ঘশ্বাসে মোড়া খেজুরগুড়ের সুঘ্রাণমাখা সুস্বাদু সেই গল্পগুলোর ডানা ছিল।