গানে তাঁর ইন্দ্রধনু

স্বপন সোম

গত শতকের পঞ্চাশের দশক। অগ্রদূত গোষ্ঠীর পরিচালনায় অগ্নিপরীক্ষা ছবির কাজ চলছে। ছবির একটি গান – ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’র সুরটা ঠিক পছন্দ হচ্ছিল না অগ্রদূত গোষ্ঠীর বিভূতি লাহার। ইউনিটের অন্য কেউ কেউও আপত্তি তুললেন যে, গানটি সিচুয়েশনের সঙ্গে ঠিক খাপ খাচ্ছে না। বিভূতি লাহা ছবির সুরকারকে ডেকে জানালেন সে-কথা। সুরকার একদিন সময় চাইলেন ভেবে দেখার জন্য। পরের দিন সুরকার দৃঢ়ভাবে তাঁর মত ব্যক্ত করলেন : ‘এই সিচুয়েশনে এর চেয়ে ভালো গান আর কী হতে পারে, তা আমার জানা নেই।’ সঙ্গে-সঙ্গে এ-ও বললেন দুঃখের সঙ্গে : ‘বিভূতিবাবু, আপনার হাতে আরো কয়েকটি ছবি আছে। আপনি আরো সুযোগ পাবেন। এই অগ্নিপরীক্ষার গান ফ্লপ হলে আমি কিন্তু বাংলা ছবি থেকেই সরে যেতে বাধ্য হব।’ বিভূতিবাবুরা তখন আর আপত্তি করেননি। তারপর ছবি রিলিজ করেছে। অগ্নিপরীক্ষার বিভিন্ন গান – বিশেষত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া সেই ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’ ছবি, হল, সমসময় সবকিছু ছাড়িয়ে চিরকালীন হয়ে গেছে। যে-কোনো অনুষ্ঠানে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে যে-গানটি গাইতেই হতো তা এই ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’। আজো হৃদয়স্পর্শী এবং আকর্ষক। অগ্নিপরীক্ষার অনুপম গানগুলোয় সুরকার ছিলেন অনুপম ঘটক। এরপর তাঁর আরো এগিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বিধি বাম। শুধু বাংলা ছবি কেন, এ-জগৎ থেকেই সরে গেলেন তিনি অকস্মাৎ। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ১৯৪৭-র ১২ ডিসেম্বর তাঁর অকালপ্রয়াণ বাংলা সংগীত-জগৎকে স্তব্ধ-বিমূঢ় করে দিয়ে গেল। মনে পড়ে যায় আর-এক অসামান্য সুরস্রষ্টাও এই ৩৬ বছর বয়সেই চলে গিয়েছিলেন – সুরসাগর হিমাংশু দত্ত।

অনুপম ঘটকের জন্ম ১৯১১-র ১১ এপ্রিল অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহকুমার পাথরাইল গ্রামে। পিতা অতুলচন্দ্র ছিলেন গানবাজনার বিশেষ অনুরাগী, আর তা পুত্র অনুপমের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছিল। কর্মসূত্রে অতুলচন্দ্র কলকাতা থাকাতে অনুপমকে ছোটবেলার কিছুকাল কলকাতায় কাটাতে হয়েছিল। সে-সময় সংগীতপ্রিয় পিতার সঙ্গে একাধিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল ছোট অনুপমের। ভালও লাগত। তবে এতে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছিল। তা বুঝে অনুপমকে পাথরাইল গ্রামে পাঠিয়ে দেন অতুলচন্দ্র। তবে সেখানেও ছোট অনুপমের সংগীতপিপাসু মন খুঁজে নেয় নদীর মাঝি বা বাউলের গান।

স্কুলের গ– পেরিয়ে অনুপম কলকাতায় এসে ভর্তি হলেন আশুতোষ কলেজে। এর মধ্যেই মাস্টার গামার তত্ত্বাবধানে শিখেছেন সাঁতার, সাইকেল-চালানো, শরীরচর্চা আর অবশ্যই গান। চমৎকার বাঁশি বাজাতে পারতেন। বাজাতেন অর্গ্যান। কলেজের পড়া শেষ করার পর পেলেন রেলের চাকরি। কিন্তু সংগীতের দুর্নিবার আকর্ষণ। চাকরি ছেড়ে দিয়ে অজানা পথে পা বাড়ালেন অনুপম – নাড়া বাঁধলেন বিখ্যাত সংগীতগুরু প–ত কেশব গণেশ ঢেকনের কাছে।

১৯৩০ সালে মাত্র উনিশ বছর বয়সে রেডিওতে গান গাওয়ার সুযোগ পেলেন। ১৯২৭-এ শুরু হওয়া বেতারের তখন শৈশবাবস্থা। কিছুদিনের মধ্যে পরিচয় হল একাধারে গায়ক-গীতিকার-সুরকার-চলচ্চিত্র-পরিচালক-অভিনেতা-সাহিত্যসেবী হীরেন বসুর সঙ্গে। সম্ভাবনাময় অনুপমকে তিনি ঠিকই চিনেছিলেন। নিয়ে গেলেন সে-সময়ের দিকপাল সংগীতব্যক্তিত্ব রাইচাঁদ বড়ালের কাছে। তিনিও অনুপমকে খুবই উৎসাহ দিলেন।

হীরেন বসুর সৌজন্যেই অনুপমের ছায়াছবিতে প্রথম সুযোগ পাওয়া। মহুয়া (১৯৩৪) ছবিতে সহকারী সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব পেলেন। একটা ছোট চরিত্রে একটা গানও গাইলেন। পরের বছর বিদ্রোহী ছবিতে তিনি ও শচীন দেব বর্মণ গাইলেন দুই চারণের ভূমিকায়। ইতোমধ্যে অনুপমের বেসিক রেকর্ডও প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৩২-এ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল হিন্দুস্তান রেকর্ড। সেখানে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় রেকর্ডের শিল্পী ছিলেন যথাক্রমে রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ ও রেণুকা দাসগুপ্ত। চতুর্থ রেকর্ডটি অনুপমের। প্রথম সেই রেকর্ডে (H4, আগস্ট, ১৯৩২) অনুপম শোনালেন নিজের সুরে আধুনিক – ‘আজি সখী ঝর ঝর’ (কথা : তারাপদ রাহা) এবং ‘আজি তোমার সাথে’ (কথা : নৃসিংহ নারায়ণ মুখোপাধ্যায়)। পরের বছর আবার আধুনিক (H43, জুন, ১৯৩৩) নিজের সুরে : ‘আয় আয় বাদল পিয়াসী’ (কথা : অনিল কুমার বিশ্বাস) ও ‘ঐ তো এল ঝড়ের রাত্রি’ (কথা : মোসাহের হোসেন চৌধুরী)। তারপর বিভিন্ন রেকর্ডে শোনালেন আগমনী, ভজন, গীত, শ্যামাসংগীত প্রভৃতি। তাঁর চর্চিত কণ্ঠের গানের প্রসাদগুণ অনস্বীকার্য। তবে সুরস্রষ্টা হিসেবেই তাঁর পরিচিতি তৈরি হল এবং এক্ষেত্রে নিজের জায়গাও করে নিলেন অচিরেই। প্রথম স্বাধীনভাবে অর্থাৎ এককভাবে সংগীত পরিচালনা করলেন ১৯৩৫-এর পায়ের ধুলো ছবিতে। তারপর মুম্বাইয়ের সাগর মুভিটোন থেকে ডাক পেলেন হিন্দি চলচ্চিত্রে সুর দেওয়ার জন্য। ১৯৩৭ থেকে ১৯৩৯ মুম্বাইতে রইলেন এবং একাধিক ছবিতে মনে রাখার মত সুর করলেন। যেমন – সাধনা, উসকী তমন্না, লেডিস ওনাল ইত্যাদি। কিন্তু মুম্বাইতে থাকা হল না। বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে ফিরে এলেন কলকাতায়। তবে এসেই কাজও পেয়ে গেলেন। অভিনেতা-চলচ্চিত্রকার প্রমথেশ চন্দ্র বড়ুয়া তাঁকে শাপমুক্তি ছবিতে সংগীত পরিচালনার কাজে নিযুক্ত করলেন। ১৯৪০-এ মুক্তিপ্রাপ্ত শাপমুক্তি ছবির একাধিক গান – ‘বাংলার বধূ বুকে তার মধু’, ‘একটি পয়সা দাও গো বাবু’ (কথা : অজয় ভট্টাচার্য) ইত্যাদি গান সাড়া জাগাল। প্রমথেশ বড়ুয়ার সৌজন্যে এ-ছবিতে এক নতুন গায়ক-নায়কেরও আবির্ভাব ঘটল : রবীন মজুমদার। তারপর পরপর কর্ণার্জুন (১৯৪১), মায়ের প্রাণ (১৯৪১), পাষাণ দেবতায় (১৯৪২) সুরযোজনা। আবার ডাক পেলেন মুম্বাই এবং লাহোর থেকেও। আবার কলকাতা ছাড়লেন। যোগ দিলেন শেরি পিকচার্স এবং মাহেশ্বরী পিকচার্সে। ১৯৪৪ থেকেই বছরতিনেক লাহোরে থাকার সুবাদে কয়েকটি হিন্দি ও উর্দু ছবিতে সংগীত পরিচালনা করেন অনুপম, যার মধ্যে আছে চম্পা, বদনামি, আয়া বাহার, শালিমার, খুশনসিব, ফয়সালা, অ্যায়সা কিউ ইত্যাদি। লাহোরেই পেলেন তরুণ সুরকার নৌশাদ আলিকে, যিনি পরবর্তীকালে মুম্বাইয়ে বিশিষ্ট সুরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। লাহোরে অবশ্যি নৌশাদ অনুপমের সহযোগী সুরকারের কাজ করেছিলেন। সাম্প্রতিককালে দূরদর্শনে এক সাক্ষাৎকারে নৌশাদ সে-কথা স্মরণ করে অনুপম ঘটককে এক ব্যতিক্রমী সুরস্রষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করেন।

১৯৪৬-এ সারাদেশে যেন এক টালমাটাল অবস্থা। রাজনৈতিক অস্থিরতা। সে-সময় অনুপমও লাহোর ছেড়ে ফিরে এলেন কলকাতায়। হীরেন বসুর সঙ্গে সখ্য আবারো প্রাণ পেল। এই পর্বে হীরেন বসু-অনুপম জুটি প্রথম যে-ছবিতে সাড়া জাগাল তা হল শ্রীতুলসীদাস (১৯৫০)। সংগীতমুখর এ-ছবিতে ৩৩টি দোঁহা ও গান। হীরেন বসুর কথায় ও অনুপমের সুরে এ-ছবির গানগুলো একটা সম্পদ। যেমন ‘লিখিনু যে লিপিখানি প্রিয়তমারে’, ‘আমি তনু চন্দনবাটি’ ইত্যাদি। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তাঁর স্বর্ণকণ্ঠে হৃদয় উজাড় করে গাইলেন। গানগুলো যোগ্যভাবেই শ্রোতৃসমাদর পেল। এরপর যে-ছবিতে অনুপম অসামান্য কাজ করলেন তা হল অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫৪)। এ-ছবির একাধিক গান আজো সমান আকর্ষণীয় ও আবেদনময়। বিশেষত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’। এ-গান কীভাবে ইতিহাস তৈরি করেছিল তা এ-লেখার শুরুতেই বিবৃত। সতীনাথ মুখোপাধ্যায় ছবিতে বিশেষ সুযোগ পাননি নেপথ্য গানের। কিন্তু অগ্নিপরীক্ষার ‘জীবননদীর জোয়ারভাটায়’ শুধু এই একটি গানের জন্যই স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারেন। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখায় এ-গানে যেন এক জীবনদর্শন প্রতিভাত, সুর ও অনুভববেদ্য এবং অনুপমের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যেই এর চলন খুব সরল নয় – সতীনাথ তাকে পূর্ণ মর্যাদা দেন স্বপ্রাণ সক্ষম গায়নে। এ-ছবিতেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের আরো কিছু গান – ‘কে তুমি আমারে ডাক’, ‘ফুলের কানে ভ্রমর আনে’ কিংবা ‘যদি ভুল করে ভুল মধুর হল’ – একেকটি গান একেক রকম। সেভাবেই রূপায়িত করেন মধুকণ্ঠী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। সে-সময়ের এক প্রতিশ্রম্নতিময় প্রতিভাবান শিল্পী আল্পনা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও একটি গান এ-ছবিতে ছিল : ‘আজ আছি কাল কোথায় যাব’। শুধু এই শ্রীতুলসীদাস আর অগ্নিপরীক্ষার গানই উন্মোচিত করতে পারে এক সুরস্রষ্টার ব্যতিক্রমী বৈচিত্র্যময় কৃতিকে। শ্রীতুলসীদাসে ছবির বিষয় অনুযায়ী সুর এক ধারায়, আবার অগ্নিপরীক্ষায় অন্যরকম। তাঁর সুরের একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, সুরে মেলোডি থাকবে কিন্তু সুর খুব সহজপথে চলবে না। স্বরবিন্যাসে ক্রোমাটিক ব্যবহার থাকবে, থাকবে মীড়ের প্রয়োগ। মূলত তিনি উচ্চাঙ্গসংগীতনির্ভর, কিন্তু কখনো তা প্রকট হয়ে ওঠে না। যেমন দৃষ্টি (১৯৫৫) ছবিতে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও শ্যামল মিত্রের দ্বৈতকণ্ঠের সেই অসামান্য গানটি ‘কুহু কুহু বলে কোয়েলা’। মেলোডি, সুরের সূক্ষ্ম নানা কারুকাজ – সব মিলিয়ে এক অনন্য স্বাদ।

চলচ্চিত্রের গানের মতো বেসিক আধুনিক গানেও সুরস্রষ্টা অনুপম ঘটক সফল ও সার্থক। আর এক্ষেত্রে প্রধান শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ১৯৪৮-এ হীরেন বসুর কথায় ও অনুপমের সুরে হেমন্ত গাইলেন ‘প্রিয়ার প্রেমের লিপি’ এবং ‘শুকনো শাখার পাতা ঝরে যায়’।

১৯৫১-তে গাইলেন ‘সেদিনের অপরাহ্ণকালে’ ও ‘মেঘমেদুর বরখারে’। হীরেন বসুর লেখায় এক স্বাতন্ত্র্য আছে, যা বিশেষভাবে প্রকাশ পায় অপ্রচল শব্দচয়নে-প্রয়োগে। যেমন – ‘পদ্মপত্রে নখ-রেখা’, ‘নখরাঘাত’, (প্রিয়ার প্রেমের লিপি), ‘পদ্মদলে’, বিদ্রোহী-বিরহ’, ‘গাহন খেলায়’ (সেদিনের অপরাহ্ণকালে), ‘মৃণাল-বলয়’, ‘মেঘ-অনুরাগে’ (মেঘমেদুর বরখারে) ইত্যাদি। পাশে অনুপমের সুর গভীর, মেলোডিভিত্তিক। অনুপমের সুরের মুন্শিয়ানার বিশেষ পরিচয় মেলে ‘শুকনো শাখার পাতা’ গানে। এক পাঞ্জাবি ‘হীর’ গান ভেঙে এ-গানের সুর রচনা করেছিলেন, যা বাংলা গানে প্রায় অভূতপূর্বই বলা চলে। তবে রবীন্দ্রনাথের মায়ার খেলা গীতিনাট্যের এক গানে – ‘কেন এলি রে’তে এ-ধরনের অলংকরণ প্রয়োগ আছে কিন্তু; ‘হীর’ শুনেই রবীন্দ্রনাথ এমনটা করেছিলেন তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। যাহোক, ‘শুকনো শাখার পাতা’ গানে সুরের চলন সরল নয়, ছোট ছোট অলংকরণও আছে। হেমন্ত তাকে সহজভাবেই রূপায়িত করেন। অথচ একটি অদ্ভুত ধারণা খুবই ব্যাপ্ত যে, হেমন্ত নাকি সহজ চালের গানেই সফল। এই অনুপম বা সলিল চৌধুরী, নচিকেতা ঘোষ – এঁদের সুর কি সহজ? ছায়াছবির মতো অনুপমের বেশ কিছু বেসিক গানের গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। গৌরীপ্রসন্ন-অনুপমের যৌথ প্রয়াসে অবশ্যই উলেস্নখযোগ্য : ‘আকাশমাটি ঐ ঘুমাল’ (হেমন্ত মুখোপাধ্যায়), ‘গানে তোমায় আজ ভোলাব’ (সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়), ‘সারারাত জ্বলে সন্ধ্যাপ্রদীপ’ (শচীন গুপ্ত), ‘কাঙালের অশ্রম্নতে যে’ (সাবিত্রী ঘোষ), ‘এই তুমি আমি’ (মাধুরী চট্টোপাধ্যায়)। শেষোক্ত গানটির কথা ভোলা যায় না : ‘এই তুমি আমি একদিন চলে যাবো, ওপারের ডাকে/ গান শুধু চিরদিন থাকে।’ সুরও তেমনি মমতাময়। অন্যান্য উলেস্নখযোগ্য বেসিক অনুপমের সুরে : ‘চৈতি গোধূলি যায় ফিরে যায়’ (অখিলবন্ধু ঘোষ), ‘পাখি বলে কারে দেব’ (তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়), ‘এই হাসি এই বাঁশি’ (কৃষ্ণা গঙ্গোপাধ্যায়), ‘চম্পাবনে চৈতি হাওয়া’ (হৈমমত্মী শুক্লা), ‘পায়ে চলা পথ’ (অরুণ দত্ত) ইত্যাদি। শামিত্ম ভট্টাচার্যের লেখা ‘পাখি বলে কারে দেব’ রেডিওর রম্যগীতির গান। গানটি পরে রেকর্ডে অরুণ দত্ত-হৈমমত্মী শুল্কা গেয়েছিলেন।

১৯৫৬ সাল। শরীরটা একদম ভালো যাচ্ছে না অনুপমের। তবু তারই মধ্যে হীরেন বসুর একতারা ছবির সুর করছেন। সংগীতময় ছবি, সুতরাং গান অনেক, শিল্পীও বহু : কৃষ্ণচন্দ্র দে, রাধারানী দেবী, ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, পান্নালাল ভট্টাচার্য, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, আল্পনা বন্দ্যোপাধ্যায়, গায়ত্রী বসু প্রমুখ। এঁদেরকে দিয়ে গাওয়ালেন গান। কিন্তু একতারার মুক্তি দেখে যেতে পারলেন না। মারণ-রোগ বাসা বেঁধেছিল শরীরে। বস্নাড ক্যানসার। ১৯৫৬-র ১২ ডিসেম্বর প্রয়াত হলেন এই অসামান্য সুরস্রষ্টা অকালে। এই কি চলে যাওয়ার সময়? আরো কত সমৃদ্ধ হতে পারত বাংলা গান তাঁর হাত ধরে! অসময়ের ডাকে ওপারে চলে গেলেও তাঁর গান থেকে গেছে। সে-গান হারিয়ে যাওয়ার নয়। এখানেই এক স্রষ্টার সার্থকতা। r