চর্যাপদ নিয়ে কথাসাহিত্য

কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালের লুইপা’র কালসাপ গতানুগতিক ভাবধারা ও শ্রেণিবিন্যাসের দিক থেকে ভিন্ন আঙ্গিকের উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম সাহিত্যিক নিদর্শন চর্যাপদের আলো-আঁধারীতে লুকিয়ে থাকা বর্বরতা এবং যাপিত জীবন নিয়ে নির্মিত হয়েছে এ-উপন্যাসের কলেবর। সর্বস্তরের মানুষের পাঠ-উপযোগী করে সচেতনভাবে উপন্যাসটি উপস্থাপনের প্রয়াস চালিয়েছেন লেখক। সংগত কারণেই উপন্যাসের কাহিনিতে আত্মনিমগ্ন হওয়ার পূর্বে লেখকের নিবেদন নামে পাঠ-পরিচিতির অবতারণা করেছেন মোহিত কামাল। এ-নিবেদনের আলোকে লুইপাসহ প্রাচীন চর্যাপদকারদের সঙ্গে পাঠক-সমালোচকদের পরিচয় ঘটে এবং চর্যাপদ আবিষ্কারের ইতিহাস সম্পর্কেও সাধারণ পাঠক অবহিত হন। ষোলোটি অধ্যায়ে রচিত লুইপা’র কালসাপ উপন্যাসের প্রথম অধ্যায় পাঠে পাঠক-সমালোচক বর্তমানের এক ভিন্নধর্মী অথচ মধ্যযুগীয় কাব্যস্তুতিবাদের সম্মুখীন হন। চর্যাপদকারগণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। বৌদ্ধ সহজিয়া সাধনতত্ত্বের মূল বাণীগুলো চর্যাপদে সংরক্ষিত হয়েছে, আলোচিত হয়েছে।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা হীনযান ও মহাযান নামে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে যায়। হীনযানপন্থিরা সংস্কারে আবদ্ধ এবং প্রাচীনপন্থি হওয়ায় এ-দলের প্রসার রুদ্ধ হয়েছে। অন্যদিকে মহাযানপন্থিরা উদারপন্থি হওয়ায় অনেক ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ধর্মান্তরিত হয়ে মহাযানপন্থিদের সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন। এ-সম্প্রদায়ের উদারতায় বিবর্তনের মাধ্যমে বজ্রযান, মন্ত্রযান এবং সহজযানপন্থিদের আবির্ভাব ঘটে। পরবর্তীকালে কালচক্রযানের অস্তিত্বও পাওয়া যায়। বৌদ্ধ সহজিয়া সাধনতত্ত্বের মূলকথা প্রচার করলেও প্রকৃতপক্ষে চর্যাপদে বজ্রযান, কালচক্র এবং মন্ত্রযান – এ সকল সাধকের সাধনতত্ত্বের ইঙ্গিত রয়েছে। এসব প্রাসঙ্গিক কথার সঙ্গে সম্পর্ক-সূত্র টেনে বলা যায়, লুইপা’র কালসাপ উপন্যাসটি প্রাচীন বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনীতির প্রামাণ্য দলিল। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজ গ্রন্থাগার থেকে চর্যাচর্যবিনিশ্চয়, সরহব্রজের দোহাকোষ, কাহ্নপাদের দোহাকোষ ও ডাকার্ণব নামক চারটি পুঁথি সংগ্রহ করেন। পরবর্তীকালে ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ’ কর্তৃক হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষার বৌদ্ধগান ও দোহা নামে তা একখণ্ডে প্রকাশিত হয়। চর্যাপদের ভাষা ও মালিকানা নিয়ে মতভেদ দেখা দিলে বিশিষ্ট ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্, ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, চর্যাপদের ভাষা প্রাচীন বাংলা ভাষা।

সেলিনা হোসেনের নীল ময়ূরের যৌবন চর্যাপদের পদকর্তা ও সমাজচিত্র কেন্দ্রিক কাহিনিপ্রধান উপন্যাস। কাহিনি ও সমাজকে ফুটিয়ে তুলতে চর্যাকারদের পারস্পরিক সম্পর্কের বাঁধনে বেঁধে তিনি কাল্পনিক প্রাচীন গ্রাম পত্তন করেছেন। সেলিনা হোসেন এ-উপন্যাসে দেখিয়েছেন, বর্তমান স্বাধীন বাংলা ভাষা ও দক্ষিণে সবুজ বনঘেরা সমুদ্রবেষ্টিত স্বাধীন ভূখণ্ডের স্বপ্নবীজ গঠিত হয়েছিল চর্যাপদের সময়কালেই। কাহিনির সূক্ষ্মজাল বুননকারী শক্তিমান লেখক সেলিনা হোসেন প্রাচীন কাহিনির অন্তরালে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ও শেকড়ের অন্বেষণ করেছেন। ঐতিহাসিক সত্যতাকে অক্ষুণ্ন রেখে নমনীয়ভাবে পণ্ডিতশ্রেণির ভাষা তথা সংস্কৃত ভাষার প্রাণ প্রতিষ্ঠার অক্ষমতাকে বর্ণনা করেছেন।  শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন উপন্যাসে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আগ্রাসন অগ্রাধিকার পেয়েছে। পাশাপাশি বর্ণিত হয়েছে প্রাচীন বাংলার জীবনব্যবস্থা। রিজিয়া রহমানের বং থেকে বাংলা উপন্যাসেও আমরা দেখি একই জনপদের ওই সময়ের মানুষের সংগ্রাম-চেতনায় গেড়ে বসে আছে জাতিসত্তার শেকড়, স্বাধিকার আন্দোলনের বীজ। সাইমন জাকারিয়ার বোধিদ্রুমেও একই ধরনের স্বর ধ্বনিত হয়েছে। লুইপা’র কালসাপ উপন্যাসের বিষয়ভাবনা সম্পর্কে ‘লেখকের নিবেদন’ পর্বে স্বীকারোক্তি – ‘সেকাল-একালের সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক আবহের তুলনামূলক উপস্থাপনাও থাকছে এ উপন্যাসে। উড়াল শব্দসেতু সংযোগ ঘটাবে দুই কালের। দুই কালের ব্যবধান কতটুকু? মিল কী? অমিল কোথায়?’ লেখকের বিষয়ভাবনা, নামকরণ ও কাহিনি নির্মাণের স্বতন্ত্রতায় লুইপা’র কালসাপ উপন্যাসটিও স্বতন্ত্র হয়ে উঠেছে।

সভ্যতার বিবর্তনে বিশ্বায়নের প্রভাবে প্রযুক্তির উৎকর্ষ আবিষ্কার, উন্নততর সভ্য জীবনবোধ, মুক্তবুদ্ধির মানবিকতা ও মননশীলতার চর্চায় ঊর্ধ্বগামী আধুনিকতা-সৃষ্টিশীলতায় বিবর্তিত বর্তমান সমাজ। লাগামহীন সামাজিক অস্থির পরিবেশে প্রবলভাবে আন্দোলিত হয়েছে কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালের লেখকসত্তা। খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজ, অবিচার, নীতিহীনতা, নারীত্বের অবমূল্যায়ন ও ক্ষয়িষ্ণু মানবিকতার যুগ-যন্ত্রণায় শেকড়ের সন্ধান করেছেন লেখক। চর্যাপদকেন্দ্রিক উপন্যাস রচনায় সংগত কারণেই তিনি প্রাচীনের সঙ্গে বর্তমানের তুলনায় মনোনিবেশ করেছেন। বৈজ্ঞানিক মনোবিশ্লেষণিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পাঠকের  অনুভূতিতে শান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

চর্যাপদের সর্বাধিক পদ-রচয়িতা কাহ্নপা এবং ভুসুকুপা এ-উপন্যাসের চরিত্ররূপে প্রাণ পেয়েছে। স্বাতী  লুইপা’র কালসাপ উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র। একবিংশ শতকে আবেগের অতলে হারিয়ে যাওয়া এক নারী চরিত্র। নারীত্বের অবমাননায় স্বাতীর অস্থির অবচেতন মনকে লেখক তাঁর রচনার তীর্থস্থান নির্ধারণ করেছেন। স্বাতীর অবচেতন মনে প্রাচীন কবি লুইপার আগমন ঘটেছে। মনোকথনে লুইপার অস্তিত্ব শুধু তার অবচেতন মনের কল্পনাই নয়, প্রকৃতপক্ষে লুইপা ও লুইপার মতো কীর্তিমান মহাপ্রাণকে মহাকাল গ্রাস করতে পারে না। মহাকালের করালস্রোতে ভেসে এ-মহাপ্রাণের অস্তিত্বের বিলীন হয় না; কর্মের মধ্য দিয়েই জীবন্তসত্তার প্রকাশ ঘটায় পাঠকমনে। লুইপার মতবাদ, জীবনবোধের তত্ত্বকথাই তার প্রাণ; তার অস্তিত্ব। হাজার বছর পরেও সাধনতত্ত্বের চির অমোঘ গূঢ়বাণী অমর, অজর ও অক্ষয়রূপে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ও স্বাতীর মতো সাহিত্যানুরাগীর হৃদয়ে, চেতনার অন্তস্তলে অস্তিত্ববান হয়ে ওঠে।

উপন্যাসটিতে লুইপা ছাড়াও কাহ্নপা, সরহপা, ঢেন্ডনপা, ভুসুকুপাসহ অন্যান্য পদকারের রচনার আলোচনা রয়েছে। এঁদের মধ্য থেকে মহাগুরু লুইপার পরিশুদ্ধ আত্মার সৌম্যরূপকে প্রাধান্য দিয়ে লেখক উপন্যাসের নামকরণ করেছেন। কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসাসহ যাবতীয় সামাজিক বিশৃঙ্খলার মর্মমূলে রয়েছে মানবচিত্তের অস্থির ও চঞ্চলাবস্থা। মোহিত কামাল মানবাত্মার-উন্নয়ন ও সামাজিকীকরণে মনের অস্থিরতা প্রশমনে সাহিত্যের অনুষঙ্গের অংশ হিসেবে বৈজ্ঞানিক মনোচিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। সাহিত্যের কাঠামোর মধ্যে তা মিশে যায়, আরোপিত মনে হয় না। মস্তিষ্কের চিত্তচাঞ্চল্যকর সুপারনোভার বিস্ফোরিত আলোকে নিভিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে স্বাতীর আত্মার আলোয় সকলকে সচেতন করার প্রয়াস চালিয়েছেন। লেখক এখানে বিচক্ষণ বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও মরমি সাধক। দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন, ‘নিজেকে জানো।’ প্রাচীন পদাকার লুইপা নিজের আত্মার চঞ্চলতাকে দমন করতে বলেছেন। বাংলা সাহিত্যের মরমি সাধক ফকির লালন শাহের মতে – ‘আপনারে চিনলে, যায় অচেনারে চেনা।’ বিশ্বসাহিত্যসহ বাংলা সাহিত্যের বিশেষ দার্শনিক লেখকদের সাধনার মূলমন্ত্র ‘নিজেকে জানো।’ একবিংশ শতকের দার্শনিক বিজ্ঞানমনস্ক, সমাজসচেতন কথাকার মোহিত কামাল আত্মিকভাবে বাঙালি প্রাচীন কবি লুইপার আত্মানুসন্ধানকে অনুসরণ করেছেন। তিনিও দেখিয়েছেন, আত্মানুসন্ধানেই জীবনবোধের গূঢ়তত্ত্ব। চর্যাকার কুক্কুরীপার মতোই তিনি তাঁর সৃষ্ট চরিত্রের মাধ্যমে কুম্ভক সমাধির সমর্থন করেছেন। আত্মার মধ্যে নিজেকে সমর্পণ করতে বলেছেন। বৌদ্ধ সাধনতত্ত্বের নির্বাণ বা শান্তিলাভের অন্যতম পথ ‘আত্মানুসন্ধান’।

স্বাতী ও ময়ূরী চরিত্র দুটি উপন্যাসের প্রাণ। একালের স্বাতীকে লেখক মেডিটেশনের মাধ্যমে লুইপার কালে অর্থাৎ প্রাচীন বাংলা ভাষার সমকালের সমাজে  প্রবেশ করিয়েছেন। এ-কৌশলটা অভিনব। এ-ধরনের অভাবনীয় কৌশল বাংলাসাহিত্যে বিরল। এছাড়া এ-উপন্যাসে মানুষের আদিমতম প্রবৃত্তি তথা ফ্রয়েডীয় তত্ত্বের সংমিশ্রণে সাহিত্য মতবাদের আরো দুটি দিক নজরে আসে :

প্রথমত, ম্যাজিক রিয়েলিজম : বাস্তব আর পরাবাস্তব দৃশ্যপটে ফুটে ওঠা সমাজমুখী জাদুবাস্তবতার উপকরণ দেখার সুযোগ ঘটে পাঠকের। ময়ূরীকে দুই কালেই প্রতিস্থাপন করে লেখক তুলনা করেছেন প্রাচীন বাংলা ও আধুনিক বাংলার সমাজ-জীবন ও যুগ-যন্ত্রণার। অবিশ্বাস্য ভিন্নমাত্রার  তুলনামূলক চিত্রের এ-উপহার বাংলাসাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে বিশ্বাস। অবাস্তব বিষয় হলেও একালের স্বাতী বাস্তবের মতো ঘুরেফিরে দেখতে পায় সে-সময়ের সমাজব্যবস্থা, ওই কালের ময়ূরীর জীবন। একালেরও। সঙ্গে পাঠকও। বলা যায়, পরিবেশনের নৈপুণ্যে স্পষ্ট হয়েছে জাদুবাস্তবতার জাদু-উপকরণের ব্যবহার।

অন্যদিকে দেখা যায়, প্রদোষে প্রাকৃতজন, নীল ময়ূরের যৌবন, বং থেকে বাংলা, বোধিদ্রুম গ্রন্থে সেকালের চরিত্রদের যাপিত জীবনের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে সেকালেরই জীবনব্যবস্থা। এসব উপন্যাসের সঙ্গে এটা একটা বড় পার্থক্য লুইপা’র কালসাপের।

দ্বিতীয়ত, লুইপার সঙ্গে কথোপকথনের মাধ্যমে স্বাতীর চেতন-অবচেতন বা জ্ঞান-নির্জ্ঞান  মনের মাঝে থাকা বাধা উড়ে যায়, একাকার হয়ে যায় দুই সত্তা। এ-উপকরণ সুররিয়ালিজম সাহিত্য মতবাদের বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট করে তোলে। লুইপার সংস্পর্শে স্বাতীর আত্মোপলব্ধির মাধ্যমে শোভনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের গ্লানিবোধ তুলোর মতো উড়ে গেছে। এ-গ্লানি স্বাতীর অতল মনে গেড়ে বসেছিল। লেখক এখানে ভুলের অনুশোচনায় প্রতিনিয়ত অসুস্থ, বিকারগ্রস্ত জীবনযাপনের বিপক্ষে। স্বাতীর আত্মজাগরণের মাধ্যমে সমকালীন সময়ের মোহের চটচটে আকর্ষণে ছুটতে থাকা উ™£ান্ত নারীমনের মুক্তির প্রয়াস চালিয়েছেন। পতঙ্গের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো লিবিডো তাড়নায় নারীরা ভুল পথে চালিত হয়। এমনই শতবিচ্ছিন্ন সত্তার অপরাধবোধের নিগূঢ়ভেদ করেছেন লেখক। আত্মগ্লানির নরক-অনল থেকে জাগরণের মানসে স্বাতীর মুখ দিয়ে বলিয়েছেন – ‘কেন অন্যের দোষ বহন করব নিজে?’ এমন উপলব্ধির গভীরতা স্বাতীকে মুক্তি দেয়। সেইসঙ্গে মুক্তি দেয় সমসাময়িক সমাজে ভুলে জড়ানো গ্লানি ও হতাশায় নিমজ্জিত, পরাজিত, বিকারগ্রস্ত নারীসমাজকে। উপন্যাসে অতল জগৎ থেকে স্বাতীর আত্মমুক্তির পাশাপাশি তার চেতনারও নবজাগরণ ঘটেছে।

চর্যাপদের ছয় নম্বর পদে ভুসুকুপা বলেছেন, ‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী।’ জীবনবোধে সাধনতত্ত্বের এ-বাণী শুধু হরিণ শিকারের মূলমন্ত্র নয়। প্রাচীন বাংলার নারীর শারীরিক সৌন্দর্যকেও হরিণের সুস্বাদু মাংসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। উপন্যাসের প্রাচীন নারী ময়ূরী তার শরীরিক সৌন্দর্যের জন্য ব্রাহ্মণদের লালসার শিকার হয়। শিকারির ভয়ে হরিণ চোখের পলকে তীব্রগতিতে ছুটে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে, কৌশলী হয়। ময়ূরীও নেড়ে ব্রাহ্মণকে এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল খুঁজে বের করে। দিনের আলোতে নিম্নশ্রেণির অস্পৃশ্য ময়ূরীর শরীর রাতের অন্ধকারে হরিণের মাংসের মতোই ব্রাহ্মণদের প্রিয় হয়ে ওঠে। ব্রাহ্মণরা সনাতন ধর্মীয় উচ্চবর্ণের সমাজপতি। তাদের এ-ধরনের হীনকর্মে ময়ূরীর মুখ দিয়ে লেখক মনের তীক্ষè বিদ্রƒপাত্মক বাণ নিক্ষিপ্ত হয়েছে – ‘জাতের ভয়ে মনে ভয় করছে? ধর্মনাশের ভয় করছে, না? … তোমার ভগবান দেখবে না তোমাকে? ধর্ম কেড়ে নেবে না তোমার কপালের তিলক থেকে?’

(পৃ ৫৯-৬০) উচ্চশ্রেণির সমাজপতিদের অনাচারে তিক্ত-বিষাক্ত লেখকের চেতনাস্তর। প্রাচীনকালের ক্ষুব্ধ ময়ূরীর মনোজগৎ উন্মোচনের মাধ্যমে প্রবল ঘৃণায় ব্রাহ্মণের মিথ্যা ধার্মিক অহমিকা বা ব্রাহ্মণত্বের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। ধারালো শব্দময় বাক্যবাণে তাকে চোর বানিয়ে ছেড়েছেন –

‘এ মাংস কে দিল তোমায়?’

‘ঘর থেকে চুরি করে এনেছি।’

‘গিন্নি টের পায়নি?’

‘না, না গো না। তোমার জন্য পারি না হেন কাজ নেই।’

‘ছিঃ! অচ্ছুৎ নিচুজাতের মানুষের জন্য এ কাজ মানায় আপনার মতো উঁচু জাতের গুরুকে?’ (পৃ ৬০)

নিচু জাত অস্পৃশ্য ময়ূরীর প্রতিটি কথায় রয়েছে ঘৃণার আগুন। লেখকের ভাষার শানিত তরবারির ধারালো আক্রমণ দ্বিখণ্ডিত করে নামসর্বস্ব ধর্মের লেবাস ও শ্রেণিবৈষম্যকে। ব্রাহ্মণকে উদ্দেশ করে ময়ূরীর জিজ্ঞাসা – ‘আমার দেহের গন্ধে ঘৃণা লাগবে না? অশুচি হবে না তোমার দেহ, কলুষিত হবে না তোমার আত্মা আমার স্পর্শে?’ (পৃ ৬০) প্রাচীনকালের ধর্ম ও বৈষম্যের লেবাসধারী ব্রাহ্মণ সমাজপতির অনুরূপ লেবাসধারী অন্যায়কারী একবিংশ শতকেও বিরাজমান। মানুষের ছলনা ও মুখোশের আচ্ছাদনে যেন

একাল-সেকাল অভিন্ন হয়ে ওঠে।

আধুনিক নাট্যাভিনেতা রৌদ্র চৌধুরীর আখ্যান অংশে একালের ময়ূরীর সঙ্গে প্রাচীন বাংলার ডোম্বি ময়ূরীর জীবনসমস্যার সাযুজ্য লক্ষ করে স্বাতী। চারদিকে ওত পেতে রাখা ফাঁদের মোহজালে একালের ময়ূরীরাও শিকারির শিকার হয়। স্বার্থ উদ্ধার ও আত্মরক্ষায় এ-যুগের ময়ূরীরাও কৌশলের আশ্রয় নেয়। কৌশলের অবিন্যস্ত বুননে কখনো ফেঁসে যায় অনাকাঙ্ক্ষিত ফাঁদে। বর্তমানেও নারীর শরীরের মোহে মোহাচ্ছন্ন উচ্চশ্রেণির শিক্ষিত সম্প্রদায়। ধর্মীয় জ্ঞান, নীতিশিক্ষাকে তারা পাঠ্যপুস্তকের বেড়াজালেই আবদ্ধ রাখেন; আত্মায় ধারণ করেন না। সংগত কারণে প্রাচীন বাংলার নারী আর প্রগতিশীল সমাজের নারী – উভয়েই ভোগ্যপণ্যে পরিণত হয়েছে। নারীসত্তার বিকাশ ও সচেতনতার প্রয়োজনে, স্বাতীর মতো আপন সত্তায় লুইপার দিকনির্দেশনা অতি প্রয়োজন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ওপারেতে সর্ব সুখ আমার বিশ্বাস।’ সুখসন্ধানে একাল আর সেকালের সংযোগ সাধন দুরূহ কাজ। কথাসাহিত্যিক ও মনোবিদ মোহিত কামাল দক্ষতা ও সুচিন্তিত প্রাজ্ঞতার মিশেলে সাবলীল ভাষায় দুরূহ এ-কাজটি অনায়াসে উপস্থাপন করেছেন।   

প্রাচীন বাংলার বাংলাভাষী শোষিত, নিপীড়িত, নিম্নশ্রেণির মানুষের স্বপ্ন হাজার বছরের ব্যবধানে কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে? বিচক্ষণ লেখকের তুলনার মুনশিয়ানায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সমসাময়িক মানুষের মুখোশের চিত্র। কালের বিবর্তনে মানুষের পোশাকি পরিবর্তন ঘটেছে। বহুবর্ণিল পোশাকি আচ্ছাদনের অন্তরালে মানুষের কুৎসিত চিন্তা-চেতনা, নীতিহীনতা, পশুত্ববৃত্তি, মনুষ্যত্বহীনতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও লোভী শিকারি রূপটি অক্ষত রয়ে গেছে। হাজার বছরের বিবর্তনে সভ্যতার মোড়কে মোড়া সমাজের

চাকচিক্য মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ ও চেতনাস্তরকে সংযত বা পরিবর্তিত করেনি।

উপন্যাসে বাঙালির চিরায়ত সংস্কার ও আতিথেয়তার বর্ণনা রয়েছে। প্রাচীন বাংলার ময়ূরীর গৃহে ভজনায়োজনের পরিবেশনায় ফুটে ওঠে চর্যাপদে বর্ণিত অনুপম খাবারের তালিকা। খাবারের রসনার পাশাপাশি উঠে আসে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নিম্নশ্রেণির মানুষের জীবন ও জীবিকার চিত্র। উপন্যাসে ‘ভুলের সাম্পান আর মোহের বৈঠা’ নামক অণুপর্বে লেখক লুইপার মতাদর্শী। ভুলের সাম্পান বলতে তিনি শরীরকে নির্দেশ করেছেন, অর্থাৎ শরীরই মানবাত্মার সকল ভুলের সূতিকাগার। শরীরের মোহমুক্তির মাধ্যমে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। কাম, ক্রোধ সম্পর্কে কুক্কুরীপার মতে, কর্মব্যস্ততা মানুষকে প্রবৃত্তির নেশায় নেশাগ্রস্ত করে না। রাতের নির্জনতায় মানবাত্মায় প্রবৃত্তির নেশা জেগে ওঠে। মোহজাল ছিন্ন করে আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই নির্বাণলাভ সম্ভব। উপন্যাসের ষোলোটি পরিচ্ছেদেই স্বাতী ও লুইপার মনোকথনের অন্তরালে লেখক দুই কালের তুলনা উপস্থাপন করে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন।

উপন্যাসে গভীর রাতে গানের আসরে নাচের মঞ্চে নৃত্যরত ডোম্বির মাধ্যমে সেকালের মেয়েদের পোশাক সম্পর্কে ধারণা লাভ হয়। নিম্নস্তরের মানুষ প্রাচীন বাংলা ভাষায় গান করত। তাদের রচনায় স্থান পেত ব্রাহ্মণদের নানা অনাচার। সত্যকথনের মর্মজ্বালায় ব্রাহ্মণরা তাদের মুখ বন্ধ করতে সিপাহী নিয়ে আক্রমণ চালালে ময়ূরী প্রতিবাদ করে। ভাষার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় মরিয়া ময়ূরী অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে চলে নির্মম নির্যাতন। ময়ূরীর প্রতিবাদের মাধ্যমে প্রমাণ হয়, বাঙালি সত্তায় ভাষা-আন্দোলনের বিক্ষোভকাল ১৯৫২ সালই নয়, এর সূত্রপাত ও শেকড় গেড়ে আছে প্রাচীন বাংলায়।

ভীতসন্ত্রস্ত স্বাতী অনুধাবন করল, প্রাচীনকালের রাজাদের বন্দি-হত্যার যথোপযুক্ত কারণ থাকত না। অনাচার, স্বেচ্ছাচারিতা ছিল মুখ্য বিষয়। অজ্ঞাত কারণেই নির্বিচারে খুন হয়েছে সাধারণ মানুষ। উপন্যাসের শেষাংশে নিরপরাধ স্বাতী একালের দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়। বর্তমানে স্বাতীর মতো অসংখ্য তাজা প্রাণ নেকড়েসম মানুষের আক্রমণে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে। একবিংশ শতকের রাস্তায় পড়ে থাকা বেওয়ারিশ লাশ কিংবা ধর্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর করুণগাথা সমকালীন বর্বরতার প্রমাণ দেয়। আচমকা আক্রমণের কারণ অনেকেরই অজ্ঞাত থেকে যায়। মৃত্যুমুহূর্তেও সে-অসহায় প্রাণ শুধু কারণ খুঁজে ফেরে।

সন্ত্রাসীদের আক্রমণের পূর্বে স্বাতীর চেতনায় ভেসে ওঠে বন্দি ডোমনির ক্ষুধার্ত মায়াবী মুখ। একটু ভাতের জন্য ডোমনির মরণচিৎকার লেখকের অসাধারণ বর্ণনায় জীবন্ত হয়ে সমালোচকমনে গভীর বেদনাবোধের জন্ম দেয়। ডোমনির বুকফাটা মরণচিৎকার ‘ভাত দে হারামজাদা।’ (পৃ ১৩৭) আর্তনাদে দুঃখভারাক্রান্ত স্বাতীর অন্তরাত্মা। লেখক অসাধারণ  মর্মস্পর্শী ভাষায় বর্ণনা করেছেন – জীবনের সর্বস্ব তুচ্ছ হয় একথালা ভাতের কাছে। ব্রাহ্মণ রাজার জৈবিকতার নেশা ও পশুত্বে বলি হওয়ার সময়ও ঘোরের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষুধায় ভাত চাওয়ার শেষ আর্তনাদেই ডোমনির জীবনাবসান ঘটে। আর একই সঙ্গে পাঠক-সমালোচক দেখতে পান এ-উপন্যাসের সময়কাল ৬৫০ শতক থেকে বিস্তৃত হয়ে গেছে ২০১৯ পর্যন্ত। বুক-ভেঙে-যাওয়া মর্মান্তিক মরণচিৎকারের মধ্য দিয়ে সে-যুগ-এ-যুগ বিলীন হয়ে যায়।         

বর্তমানকালের স্বাতী কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুর্বৃত্তের ধারালো ছুরির আক্রমণের সম্মুখীন হয়। মৃত্যুমুহূর্তেও স্বাতীর চেতনায় ভেসে ওঠে শত বামুনের খাবলে খাওয়া ডোমনির আর্তচিৎকার। ডোমনির চিৎকার আর মৃত্যুযন্ত্রণার সমভাগী হয় স্বাতী।

লুইপাকে ধারণ করে সদাসতর্ক স্বাতী একালের ময়ূরীকে আধুনিক শিকারির হাত থেকে রক্ষা করার মানসে রৌদ্র চৌধুরীকে নির্ভয় বলে, ‘তখনকার মেয়েরা পেটের খাবার জোগাড় করতে গিয়ে নিজেদের বিসর্জন দিতো অনিচ্ছায়। আর আমরা এ সময় মনের খাবারের নেশায় আপনার খাট পর্যন্ত চলে এসেছি। আপনার ধূর্ত ফাঁদে পা দিয়েছি। পার্থক্য আছে সেকাল আর একালের?’ (পৃ ১১৯) পারস্পরিক তুলনায় একবিংশ শতকের শিক্ষিত আধুনিক নারীর তুলনায় প্রাচীন অশিক্ষিত ডোমনিদের নীতিবোধ ও বিদ্রোহ উচ্চমার্গীয় বলেই মনে হয়। এ-কথাও যৌক্তিক, সময় এবং পরিবেশের বিবর্তনে মানুষের সীমাহীন লোভে চাহিদার পরিবর্তন ঘটেছে। জীবনবোধের সত্যতায়, চর্যাপদ বিশ্লেষণে, কাহিনির বর্ণনায় সুদক্ষ এক কারিগরের ভূমিকায়, মানুষের মনুষ্যত্বহীনতা ও পশুবৃত্তিতে ব্যথিত হৃদয়ে লেখক কলম ধরেছেন।

উপন্যাসের শেষে স্বাতীর করুণ মৃত্যু সমালোচকমনে প্রশ্ন রেখে যায়। মোহের ভুলে জড়ানো স্বাতীর আত্মা সিদ্ধাচার্য লুইপার দিকনির্দেশনায় পরিশুদ্ধ হয়। পরবর্তীকালে পথচলায় সে যথেষ্ট সতর্ক। স্বাতী চরিত্রটিকে সর্বগুণে গুণান্বিত ও প্রতিবাদী করে লেখক কেন মেরে ফেললেন? স্বাতীর হৃদয়ে লুইপার বাস।  সর্বসচেতন স্বাতীর এত বড় বিপদ মেনে নেওয়া যায় না। হয়তো প্রাচীনকালের বিচক্ষণ সর্বগুণী ময়ূরীর মৃত্যুর সঙ্গে তুলনার প্রয়োজনে লেখক স্বাতীর মর্মান্তিক মৃত্যু দিয়েছেন। অথবা অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী স্বাতীর নৃশংস মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সমকালীন সময়ের বাস্তবচিত্রকে উপস্থাপন করেছেন। বর্তমান সময়েও অতি সচেতনতার মাঝেও মানুষ নিজের অজান্তেই প্রতিনিয়ত বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে। অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু ও ধ্বংসে পতিত হচ্ছে। হয়তো এ-বিষয়টিকে ফুটিয়ে তোলার মানসে এবং মানুষের সীমাহীন পশুত্বের নমুনা উন্মোচনে স্বাতীর মৃত্যুকে লেখক যথার্থ বলেই মনে করেছেন। পাঠক হিসেবে এ-ট্র্যাজেডি মেনে নিতে কষ্ট হলেও আলোচক-দৃষ্টিতে বিষয়টি যুক্তির দাবি রাখে।

উবারে ওঠার পরে চালককে গন্তব্যের দিকনির্দেশনা দিয়েছে স্বাতী। প্রকৃতপক্ষে ওঠার আগেই গন্তব্যের কথা জানাতে হয়। এ-ছোট ভুলটুকু পরবর্তী মুদ্রণে সংশোধন করে নিলে এ-মহামূল্যবান উপন্যাসটি ত্রুটিমুক্ত হবে বলা যায়।  মূল কথা হলো, চর্যাপদের আলো-আঁধারী দুর্বোধ্য ভাষার গ্রন্থি উন্মোচিত হয়েছে এ-উপন্যাসে। স্বাতীর সঙ্গে লুইপার কথোপকথনের মধ্য দিয়ে চর্যাপদের আলো-আঁধারী ভাষার আঁধারে আলো ফেলেছেন মোহিত কামাল। আর তাই বাংলা ভাষার সাহিত্যানুরাগী ও শিক্ষার্থীদের লুইপা’র কালসাপ উপন্যাস পাঠ অপরিহার্য। চর্যাপদের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণের আলোকে উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে অন্যতম, অদ্বিতীয় রচনা। এ-উপন্যাসের পর্ব-বিভাজনে লেখক অত্যন্ত সচেতন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুরঙ্গ উপন্যাসের আদলে লুইপা’র কালসাপ উপন্যাসের কলেবর নির্মিত। চতুরঙ্গ উপন্যাসে চারটি পর্ব বা পূর্ণ চারটি গল্পের সংযোগ রয়েছে। লুইপা’র কালসাপ ষোলোটি পর্বে অর্থাৎ ছোট ছোট ষোলোটি প্রাসঙ্গিক গল্পের সংযোগে, চতুরঙ্গের মতো না হলেও সে-ধারার এক ভিন্ন আঙ্গিকের উপন্যাস হয়ে উঠেছে। বিশ্বকবির শেষের কবিতার মতো লুইপা’র কালসাপ উপন্যাসের আখ্যানে প্রাচীন ও আধুনিক কবিতার উপস্থিতি লক্ষণীয়। অন্যদিকে নাট্যিক উপস্থাপনভঙ্গিতে উপন্যাসটি হয়ে উঠেছে উত্তরাধুনিক কালের এক অনন্য সৃষ্টি। যুগ ও কালের সাক্ষী প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের একমাত্র সাহিত্যিক নিদর্শন চর্যাপদের বিশ্লেষণাত্মক উপন্যাস হওয়ায় এটিও চর্যাপদের হাজার বছরের আয়ুষ্কালের সমতালে  চিরঞ্জীব  হবে বলে বিশ্বাস রাখা যায়। উচ্ছৃঙ্খল আবেগ বিহ্বলিত মানবাত্মার পরিশুদ্ধিতে লুইপা’র কালসাপের বিষ-দংশন সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ আবশ্যক। প্রায় তেরো শতাব্দী পরিভ্রমণ করা উপন্যাসটিকে মন আলোকিত করা জীবনবোধের পরিপূর্ণ দলিল বললেও ভুল হবে না।