জলের অক্ষরে লেখা   

পর্ব : ১৫

অংশু আর অবন্তির দেখা হলো পরের দিন, অংশুর অফিসে। অবন্তি বেশ গম্ভীর, মনে হচ্ছে কোনোকিছু নিয়ে খুব চিন্তিত। সবসময় যে হাসি-আনন্দ-উচ্ছলতায় মেতে থাকে, তার এই গাম্ভীর্য মোটেই ভালো লাগছে না। অংশু বললো, কী হয়েছে তোর?

– কই কিছু হয়নি তো!

– তাহলে এরকম ঝিম মেরে আছিস কেন?

– মাথার ভেতরে সব জট পাকিয়ে গেছে। খুলতে পারছি না।

– সব মানে কী?

– আমার নিজের জীবন, ঋভুর সঙ্গে সম্পর্ক, শুভর হঠাৎ ফিরে আসা, পারিবারিক ঝামেলা এইসব আর কি!

– পারিবারিক ঝামেলা আবার কী? তুই না বললি, সব সহজেই হয়েছে!

– তা হয়েছে। ভাইয়ারা আমাকে আমার প্রাপ্য অংশ দেবে কি না, এই নিয়ে বড় ভাবি খুব চিন্তায় ছিল। কিন্তু এসব নিয়ে কোনো প্রশ্নই ওঠেনি। ঢাকার বাড়িটা চার ভাইবোনের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ হবে, গ্রামের জমিজমাও। তবে গ্রামের বাড়িটা ভাগ হবে না। ওটাতে যেহেতু চাচা-ফুপুদেরও অংশ আছে, বাড়িতে কেউ থাকেও না, কেউ ভাগ চাইছেও না, তাই ওটা ওরকমই থাকবে।

– বাহ্ ভালো তো! বড় ভাবি চিন্তা করছিল কেন?

– তার ভাইয়েরা তাকে বাবার সম্পত্তির অংশ দিতে চায় না, উল্টো খোঁটা দেয় যে, আমার ভাইয়েরা আমাকে অংশ দিয়েছে কি না …

– খুব কমন প্র্যাকটিস।

– কোনটা?

– এই যে মেয়েদের তার বাবার সম্পত্তির ভাগ না দেওয়ার ব্যাপারটা।

– হ্যাঁ। আমার মা-খালারাও কিন্তু কিছু পায়নি। মামারা দেয়নি আর কি!

– তোদের তো কোনো তর্ক-বিতর্ক ছাড়াই হলো। ঝামেলাটা কোথায়?

– ঝামেলাটা ঢাকার বাড়ি নিয়ে। ভাইয়ারা এই বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি করতে চান।

– তাতে সমস্যা কী?

– নিজেরাই করতে চান। সেক্ষেত্রে সবাইকেই খরচ বহন করতে হবে। কিন্তু শুভ তো কেবল ছাড়া পেল, ওর তো টাকাপয়সা নেই। দেবে কোত্থেকে?

– হুম। সেটা একটা সমস্যা।

– শুভ তুলেছিল কথাটা। বলেছিল ডেভেলপারকে দিয়ে কাজটা করানো যায় কি না? মানে ওরা যেভাবে করে,

অর্ধেক-অর্ধেক ভাগাভাগি …

– হ্যাঁ, বুঝেছি। ভাইয়ারা কী বললো?

– রাজি হলো না। অর্ধেক যদি ডেভেলপারদের দিতে হয়, বাকি অর্ধেকে সবার হবে না।

– হবে না কেন?

– মানে, সবারই তো ছেলেমেয়ে আছে। ওরা সবাই যেন অন্তত একটা করে ফ্ল্যাট পায়, সেই হিসাব করছে ভাইয়ারা।

– স্বাভাবিক। ভুল কিছু বলছেন না।

– কিন্তু শুভ কী করবে? টাকা পাবে কোথায়? আর আমিই বা এত ফ্ল্যাট দিয়ে কী করবো?

– তুই ফ্ল্যাট দিয়ে কী করবি, এই প্রশ্নের চেয়ে জরুরি হলো এখানে ইনভেস্ট করার মতো টাকা কি তোর আছে?

– কিছু টাকা আছে। কত লাগবে আর কত আছে হিসাব করিনি অবশ্য। কিন্তু আমি নিজেকে নিয়ে ভাবছি না, ভাবছি শুভকে নিয়ে।

– ভাইয়ারা এ-বিষয়ে কিছু বলেননি?

– বলেছেন।

– কী বলেছেন?

– বলেছেন, এখনই তো আর কাজ শুরু হচ্ছে না। সময় লাগবে। ততদিনে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।

– কী ব্যবস্থা হবে?

– তা তো জানি না। শুভ তো কেবলই ছাড়া পেল, ভাইয়ারা বোধহয় এখনো ওকে নিয়ে কিছু ভাবেননি।

– তাহলে এই সময় ভাগাভাগির প্রসঙ্গ না তুললেই হতো।

– আমি চলে যাবো যে! আবার কবে আসি না আসি …

– ও আচ্ছা, বুঝলাম।

– শুভকে নিয়ে কী করা যায় বল তো? আমি কোনো দিশা পাচ্ছি না।

– শুভ ভাই নিজে কিছু বলেছে?

– ওরও একই অবস্থা। কোনো পথ পাচ্ছে না। গুছিয়ে কিছু ভাবতেও পারছে না।

– ব্যবসা-ট্যবসা কিছু করবে?

– টাকা পাবে কোথায়? ভাইয়ারা বোধহয় আর ভরসা করবে না। আর যদি দেয়ও, ও কি ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবে? সেই মানসিক জোর ওর আছে? মনে হয় না।

– তাহলে চাকরিবাকরি?

– ওকে চাকরি দেবে কে? দুর্নীতির দায়ে জেল-খাটা অপরাধী!

– চাকরি করবে কি না সেটা বল।

– পেলে তো করবেই।

– আচ্ছা ঠিক আছে। দেখা যাবে ব্যাপারটা। এখন এই প্রসঙ্গ থাক। তুই অন্য প্রসঙ্গে কী যেন বলতে চাইছিলি।

– দেখা যাবে মানে? বুঝলাম না। – অবন্তি প্রসঙ্গ পাল্টাতে দিলো না।

– শুভ ভাইয়ের একটা ভালো চাকরি দরকার, এই তো? ওটা আমি ম্যানেজ করে দেবো। তুই একটা সিভি নিয়ে আসিস।

অবন্তি কতক্ষণ চুপ করে রইলো, তারপর ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো, দুই হাতে মুখ ঢাকলো কান্না আড়াল করতে।

– আরে, এই অবন্তি, কান্নার কী হলো? আরে কী মুশকিল!

অবন্তি তারপরও মুখ থেকে হাত সরালো না।

– এই গাধা, কান্না থামা। আজব তো!

চোখ মুছে একটু হাসলো অবন্তি। বললো, আমি শুভকে নিয়ে কী যে দুশ্চিন্তা করছি! ও একদম ভেঙে পড়েছে, জানিস! কারো সঙ্গে সহজভাবে কথাও বলতে পারে না। কেবল আমাকে সব বলে। মনে হয়, ছোট হয়ে আছে সবার কাছে। এত খারাপ লাগে দেখলে।

– এখন শুভ ভাই থাকছে কোথায়?

– এই বাসাতেই। তিনতলাটা তো খালিই ছিল। ওখানেই থাকবে।

– ভাবি চাকরি করে না?

– হ্যাঁ, করে।

– তাহলে তো অত সমস্যা হওয়ার কথা না। চলে যাবে।

– সমস্যা তো থাকা-খাওয়া নিয়ে নয়। এভাবে বসে থাকলে ও অসুস্থ হয়ে পড়বে। কিছু একটা তো করা দরকার, তাই না?

– হ্যাঁ, সেজন্যই তো চাকরির কথা বললাম।

– আমি ভাবতেও পারিনি, তুই ব্যাপারটা নিজের কাঁধে নিবি। এত সহজে সমস্যাটার সমাধান হবে। ইস! তোকে যদি কোনো উপহার দিতে পারতাম!

– দে! এখনই দে!

– কী দেবো?

– চুমু দে!

– যাহ!

– যাহ মানে কী? তুই উপহার দিতে চাইছিস, আমি আমার পছন্দের কথা বললাম। এখন তো পেছানোর সুযোগ নাই।

– তুই সত্যি বলছিস? চুমু চাস?

– অবশ্যই চাই। দে।

অবন্তি প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে অংশুকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর এক দীর্ঘ চুম্বনে সিক্ত করলো ওকে।

আলিঙ্গন থেকে ছাড়া পেয়ে অংশু বললো, কী ডাকাত মেয়েরে বাবা! আল্লায় বাঁচাইছে যে তোর প্রেমে পড়ি নাই।

অবন্তি হাসছিল, মুখের ওপর এসে পড়া চুলগুলো সরাতে সরাতে বললো – খুব তো বলেছিলি, একা এলে পস্তাবো। এখন কে পস্তাচ্ছে?

– আমি না, ঋভু পস্তালো।

হো-হো করে হেসে উঠলো অবন্তি। বললো, ও দেখতে এসেছে নাকি?

– আমি বলবো তো ওকে। বলে বলে ওর বুকে আগুন ধরিয়ে দেবো।

– এই না না। ছি। বলিস না।

– বলবোই। হারামিটা সবসময় আমার বউকে নিয়ে টানাটানি করে!

– হো-হো-হো … চুমুটুমুও দিয়েছে নাকি?

– জানি না। দিতেও পারে।

– আহারে! কী দুঃখ তোর! চুকচুক …

– ফাজলামি বাদ দে। এখন বল, কী করবি ভেবেছিস কিছু?

– কালকে তোকে বললাম না আমার একটু সময় দরকার?

– হ্যাঁ বলেছিস। কিন্তু আমাকে কী বলতে চেয়েছিলি? বলেছিলি কিছু আলাপ আছে।

– ওই নিজের ব্যাপারেই। কী করবো আমি বল তো?

– পরিষ্কার করে না বললে বুঝতে পারছি না তো।

– মানে, কীভাবে যে বোঝাই তোকে! এই বয়সে সংসারের ভেতরে ঢুকতে অস্বস্তি হচ্ছে।

– ঋভুও একই কথা বললো। তোরা দুজনেই কি টিপিক্যাল সংসারের কথা ভাবছিস?

– ওর কথা তো জানি না। নিজেরটা বলতে পারি।

– তাই বল।

– বিয়ে মানে তো সংসারই, তাই না?

– এক অর্থে তাই। আর কিছু?

– তারপর ধর, ও যদি বাচ্চাকাচ্চা নিতে চায়, খুবই স্বাভাবিক চাওয়া, এই বয়সে সেটা কি আর হবে?

– অনেকদূর পর্যন্ত ভেবে ফেলেছিস। নাও তো চাইতে পারে।

– যদি চায় তাহলে কী হবে তাই ভাবছিলাম।

– আমি ডাক্তার না, বলতে পারবো না। কোনো ডাক্তার বন্ধুর পরামর্শ নিতে পারিস।

– আরে ধুর। এখনই পরামর্শ কিসের? বিয়েরই খবর নেই …

– মানে, বলতে চাইলাম, যদি প্রয়োজন হয়, তখন পরামর্শ নিস।

– হুম বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাকে দিয়ে সংসার হবে নারে। যে বয়সে মেয়েরা সংসার সাজানোর স্বপ্ন দ্যাখে আমি তা অনেক আগেই পেরিয়ে এসেছি।

– ঋভুও পেরিয়ে এসেছে।

– সংসার নিয়ে ছেলেদের অত স্বপ্ন থাকে না।

– থাকে থাকে। আমার তো ছিল।

– তোর কথা আলাদা। তুই সব দিক দিয়েই অন্যরকম। এতকিছু একসঙ্গে সামলেছিস! আমরা কেউ সেটা পারিনি। 

– পামপট্টি দিস না। শোন, তোরা যেহেতু সেই বয়সটা পেরিয়ে এসেছিস, টিপিক্যাল সংসারের চিন্তা বাদ দে।

– তাহলে কী করবো?

– এক অপরের সঙ্গী হবি। এই যেমন বাচ্চারা বড় হয়ে গেলে বয়স্ক দম্পতি পরস্পরের সঙ্গী হয়ে ওঠে।

– ওরকম যদি সত্যিই হতে পারতাম!

– তোকে একটা কথা বলি শোন, আগে থেকে পরিকল্পনা করে সবকিছু করা যায় না। জীবন তো পরিকল্পনামাফিক এগোয় না, জীবন এগোয় জীবনের মতো, তার আপন ছন্দে। সময় নিতে চাইছিস নে, কিন্তু এত ভেবে লাভ নেই কিছু।

– আপন ছন্দে! ছন্দহীন জীবনও তো হতে পারে! – আপনমনে বললো অবন্তি।

– ওই ছন্দহীনতার মধ্যেও ছন্দ আছেরে। আপাতদৃষ্টিতে ধরা পড়ে না, একটু খুঁজলেই পাওয়া যায়।

অবন্তি দীর্ঘক্ষণ চুপ করে রইলো। উদাসীন, চিন্তামগ্ন, বিষণ্ন। তারপর দূরাগত কণ্ঠে বললো, জীবন যে পরিকল্পনামতো এগোয় না – এই ব্যাপারটা যদি আরো আগে বুঝতে পারতাম …

– ওসব নিয়ে আফসোস করিস না। জীবন যেকোনো সময়েই নতুন করে শুরু করা যায়।

– না রে, যায় না।

– যায়। হয়তো একইভাবে যায় না, কিন্তু ভিন্নভাবে করা যায়।

– কী রকম? উদাহরণ দে।

– একটা ব্যাপার তোদের দুজনকেই পরে জানাতে চেয়েছিলাম, কারণ এখনো ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারিনি। কিন্তু মনে হচ্ছে, এখনই বলা ভালো।

– কী সেটা?

অংশু তার স্বপ্নের কথা বলে। ছিন্নমূল শিশু আর বৃদ্ধদের জন্য একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি সংবেদনশীল মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা, নিসর্গের সঙ্গে তাদের নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করা, মানুষ ছাড়াও অন্য সব জীবজন্তু-পশুপাখিকে ভালোবাসতে শেখানো, বৃদ্ধদের যত্ন নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের সান্নিধ্যে থাকার ব্যবস্থা, শেষ জীবনটা

আদর-যত্নে-মমতায় ভরিয়ে তোলা, তারপর সম্মানের সঙ্গে পৃথিবী থেকে বিদায় দেওয়া …

সব শুনে অবন্তি অনেকক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে রইলো অংশুর দিকে।

– কী হলো, কথা বলছিস না কেন?

– তুই এই কাজ শুরু করতে যাচ্ছিস?

– হ্যাঁ।

– এ তো বিশাল কর্মযজ্ঞ।

– হ্যাঁ। তবে শুরু করবো ছোট করেই। শুরুতে ভুলত্রুটি হবে কিছু। সেগুলো শোধরাতে শোধরাতে এগোবো।

– কোথায় হবে এটা?

– মানিকগঞ্জে কিছু জায়গা কিনে রেখেছিলাম। আপাতত ওখানেই শুরু করবো। পরে আরো জায়গা কিনতে হবে। সেটা সময়ে দেখা যাবে।

– দারুণ! তুই কত বড় ব্যাপার নিয়ে ভাবছিস। আর আমি তো ছোট ছোট ব্যাপার থেকেই বেরোতে পারলাম না।

– আরে ধুর, কী যে বলিস! শোন, তোরা দুজনই তো খুব ভাবছিস, একসঙ্গে থাকলে কী করবি না করবি, কীভাবে সময় কাটবে ইত্যাদি। এত ভাবার দরকার নেই। যখন একঘেয়ে লাগবে, তখন ওখানে চলে আসবি। বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাবি, দেখবি ভালো লাগবে।

– আমার তো শুনেই ভালো লাগছে।

– ভাবছি, শুভ ভাইকে এই প্রজেক্টে নেবো, যদি উনি রাজি হন।

– রাজি না হওয়ার কিছু নেই। চমৎকার একটা কাজ।

– আপাতত পেপার ওয়ার্ক করুক, ডিজাইনগুলো খুঁটিয়ে দেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুক, তারপর ওখানে সবকিছু দেখাশোনার ভার নিক। আমি তো যাওয়া-আসার মধ্যেই থাকবো।

– ওর জন্য খুব ভালো হবে রে। বড় একটা কাজের মধ্যে থাকলে ফেলে আসা জীবনের ভুলত্রুটিগুলো ওকে আর পোড়াবে না। 

– হ্যাঁ, সেটাই। মানুষ তো ভুল করেই। আমরা কেউই ত্রুটিহীন না। কিন্তু সংশোধনের একটা সুযোগ মানুষের পাওয়া উচিত।

– থ্যাংকস অংশু। আমার মনের ভার অনেকটাই কেটে গেল। এবার তো ফিরে যেতে হচ্ছে। কিন্তু আমি আবার আসবো, তাড়াতাড়িই আসবো।

– গুড। এই তো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিস।

– হুম। তুই কিন্তু ঋভুর কথা কিছুই বললি না।

– তেমন কিছু বলার নেই। তোর মতোই অনেক কিছু ভাবছে।

– তোর এই পরিকল্পনার কথা ও জানে?

– না, জানে না।

– জানা ওকে। ও নিশ্চয়ই নতুন করে ভাববে।

– হ্যাঁ জানাবো। দেখা যাক ও কী বলে। কিন্তু তোর যে একেকদিন একেকজনের সঙ্গে শহর দেখার প্ল্যান ছিল, সেটার কী হলো?

– তা আর হবে না রে। দুদিন তো বাসাতেই চলে গেল। আজকে তোর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই সময় পার হয়ে গেল। কালকে একবার ঋভুর কাছে যাবো। সময় আর পাচ্ছি কোথায়?

– অপলার কাছে যে কই মাছ খেতে চাইলি!

– হ্যাঁ, সেটা খেতে হবে। কবে খাওয়াবে বলিস। আমি আসবো।

– ঠিক আছে। আজকে তাহলে চল, ঋভুর সঙ্গে আড্ডা দিই। তিনজনের আড্ডা তো হচ্ছেই না।

– তা দেওয়া যায়। তবে ওর বাসায় না। অন্য কোথাও।

– আমার বাসায় যাবি?

– না। তোর বাসায়ও না। সোনারগাঁওয়ে চল। অপলা আর ঋভুকেও আসতে বল।

– অপলা আসবে কি না … আচ্ছা বলে দেখি।

– কেন? তুই কি এসব জায়গায় বউকে নিয়ে যাস না?

– আমি তো নিতে চাই। ও ঠিক কমফোর্ট ফিল করে না।

– কারণটা কী?

– বহু ধরনের মানুষের সঙ্গে আমার ওঠাবসা তো, তাদের অনেকের সঙ্গে এসব জায়গায় দেখা হয়ে যায়। সেদিন দেখলি না, এক বাটপার এসে কেমন জ¦ালালো আমাদের!

– হ্যাঁ। এটা ডিস্টার্বিং।

– সবার অ্যাটিচিউডও তো ভালো না। ও বলে, এইসব লোকের চোখের ভাষা নোংরা।

– এদেশে এই এক সমস্যা। মেয়েরা ঠিক কমফোর্ট ফিল করে না। পুরুষরা চোখ দিয়েই গিলে খেতে চায়।

– সব পুরুষ নিশ্চয়ই একরকম না!

– না, তা নিশ্চয়ই না। কিন্তু ওরকম দু-একটা অভিজ্ঞতা হলেও মনের ভেতরে কাঁটা ঢুকে যায়।

– অপলা সেজন্যই পরিচিত পরিবেশ ছাড়া কোথাও যেতে চায় না।

– আজকে তো আমরা আমরাই। বাইরের কাউকে অ্যালাও করা হবে না।

– ঠিক আছে বলে দেখি।

– ফোনটা আমাকে ধরিয়ে দে। আমি বলছি।

অংশু ফোন করে অবন্তির হাতে দিলো। ওপাশ থেকে অপলা ফোন ধরতেই বললো, অপলা আমি অবন্তি।

– ও, অবন্তি আপা! কী খবর?

– খবর ভালোই। তুমি একটু রেডি হয়ে নাও তো।

– কেন? কোথাও যেতে হবে?

– হ্যাঁ। একসঙ্গে আড্ডা দেবো। তোমাকে নিতে আসছি। নাকি কোনো ঝামেলা আছে বাসায়?

– না, তেমন কিছু নেই। যেতে পারবো।

– আচ্ছা, তাহলে আমরা আসছি। তোমাকে নিয়ে সোনারগাঁও যাবো। ঋভুও আসবে। সেদিন আড্ডাটা জমেনি, আজকে জম্পেশ আড্ডা দেবো।

– ঠিক আছে। আপনারা যান। একটু পর আমিই আসছি ওখানে।

– তাহলে তো আরো ভালো। রাখছি তাহলে। দেখা হচ্ছে।

– হ্যাঁ, দেখা হচ্ছে।

ফোন রেখে অবন্তি বললো, সহজেই তো আসতে চাইলো। তুই শুধু শুধুই ভাবছিলি।

– আরে না। আমি ফোন করলে গাঁইগুঁই করতো।

– আচ্ছা, ঠিক আছে। এবার ঋভুকে ফোন কর।

– তুই-ই কর।

– না, আমি করবো না। তুই কর।

অংশু কথা না বাড়িয়ে ফোন করলো, কোনো ভূমিকা না করেই বললো, সোনারগাঁও চলে আয়। আমরা যাচ্ছি।

– আমরা মানে?

– আমি আর অবন্তি।

– তা তো যাবিই, আজকে তোদেরই দিন!

– আসলেই দোস্ত। মারাত্মক ঘটনা ঘটে গেছে।

– কী ঘটনা?

– আয়, তারপর বলি।

– না, এখনই বল। নইলে যাবো না।

– অবন্তি আজকে আমাকে চুমু খেয়েছে।

– ফাজলামি করিস?

– না দোস্ত। সত্যি। কসম।

– তাহলে আর আমাকে কী দরকার? তোরাই চুমাচুমি কর।

– তোর জন্যও ব্যবস্থা আছে।

– কী ব্যবস্থা শুনি?

– অপলাও আসছে।

– তাই নাকি? তাহলে তো না গেলে পাপ হবে। কিন্তু অপলা কি আমাকে চুমু খাবে?

– তা আমি কী করে বলবো? আমি তো অবন্তির কাছ থেকে আদায় করেছি। তুই পারলে আদায় করে নিস।

– আচ্ছা দেখা যাক। মুশকিল হলো, দুজন পাহারাদারের সামনে ও বোধহয় চুমু দিতে রাজি হবে না।

– পাহারাদার! এরা আবার কারা?

– তুই আর সুসান। গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে থাকবি। এরকম পাহারায় চুমু খাওয়া যায়?

– আচ্ছা আমরা চোখ বন্ধ করে রাখবো। তুই আয়।

– আসছি।

ফোন রাখতে না রাখতে ঝাঁঝিয়ে উঠলো অবন্তি – তুই ও-কথা বললি কেন?

– কোন কথা? – অবাক গলায় বললো অংশু।

– চুমু খাওয়ার কথা?

হা হা হা

– হাসছিস কেন? হাসির মতো কী বললাম?

– তুই ভয় পেয়েছিস?

– ভয়? না, ভয় না। কিন্তু ব্যাপারটা কেমন না? আমরা দুজন একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চাচ্ছি আর এই সময় কি না আমি তোকে চুমু খেয়ে বেড়াচ্ছি!

– আরে ধুর! ও বিশ্বাস করেছে নাকি?

– করতেও তো পারে।

– আরে না। আর যদি বিশ্বাস করেও সহজভাবে নেয়, তাতে তোর অসুবিধা কী?

– যদি সহজভাবে না নেয়?

– তুই এত প্যাঁচালো চিন্তা করিস কেন বল তো? ওসব কিছুই হবে না।

– আচ্ছা দেখা যাক। যদি সমস্যা হয়, তোর খবর আছে।

– কী খবর?

– তোর সংসার ভেঙে ছাড়বো আমি।

– সে কি! আমি তোর সংসার ভেঙেছি নাকি? – কৃত্রিম ভয়ের সুরে বললো অংশু।

– কাছাকাছি গেছিস তো! যাকগে, এখন চল, রওনা দিই।

– আচ্ছা চল।

গাড়িতে উঠে অবন্তি বললো, শোন, তুই ঋভুর সামনে তোর ওই প্রজেক্টের প্রসঙ্গটা তুলিস তো। দেখি ও কী বলে।

– ওটা তো সিরিয়াস প্রসঙ্গ।

– তাতে কী? সিরিয়াস প্রসঙ্গে কথা বলা যাবে না?

– তা বলিনি। আমরা তো একটু মজা করবো, ফুর্তি করবো, ঠাট্টা-দুষ্টুমি করবো। এর মধ্যে ওই প্রসঙ্গ ঠিক খাপ খাবে না।

– খাবে। তুই বলিস। আবার কবে আমরা চারজন একসঙ্গে হতে পারবো কে জানে! আলাপটা আজকেই হয়ে যাক।

– আচ্ছা, দেখা যাবে।

ওরা পৌঁছে গেল আগেই। তারপর এলো ঋভু। প্রথমদিনের মতো লাউঞ্জে ঢুকেই সে দেখলো অবন্তি বসে আছে প্রবেশপথের দিকে পিঠ ফিরিয়ে। পিঠের অনেকটাই উন্মুক্ত, ব্লাউজের ডিজাইনটাই ওরকম, যেমনটি সাধারণত পরে অবন্তি। সেদিন দেখে মুগ্ধ হয়েছিল ঋভু, আজো হলো। অবশ্য একটা পার্থক্য আছে। সেদিন অবন্তির শরীর ছিল অদেখা, কিন্তু এর মধ্যেই সে দেখে ফেলেছে ওর নগ্ন সুন্দর শরীরটি। নারীর শরীরের মতো আর কোনোকিছুই এত মনোহর করে রচনা করেনি প্রকৃতি, এই কথা অনেকবার মনে হয়েছে ঋভুর, আবারো মনে হলো। পারুল, আরিয়ানা, সুসান এমনকি রিনির শরীরও সে এত খুঁটিয়ে দেখেছে যে, দেখার পর মনে হয়েছে – জগতে এর চেয়ে সুন্দর কোনোকিছু সৃষ্টি করা হয়নি। এই যে, এখন তার খুব ইচ্ছে হলো দৌড়ে গিয়ে অবন্তিকে জড়িয়ে ধরতে। ইচ্ছেটা দমাতে হলো, অংশু হাসছে ওকে দেখে, ওরকম কিছু করলে মৃদু হাসিটাই পরিণত হবে অট্টহাসিতে। ওকে এই সুযোগ দেওয়া যাবে না। গিয়ে অংশুর পাশে আর অবন্তির মুখোমুখি বসে পড়লো ঋভু।

– বেশ তাড়াতাড়িই চলে এলি মনে হচ্ছে! অফিসে কাজকর্ম নেই? – অংশু খোঁচা মেরে বললো।

– চুলায় যাক অফিস। অপলা আসবে শুনে ছুটে এলাম। কোথায় ও?

– আমি কী জানি! তোর সঙ্গেই তো আসার কথা।

– ফাজলামি করিস না। ওকে রেখেই এসেছিস নাকি?

– আমি যে এখানে বসে আছি তার কোনো খবরই নাই। এসেই অপলা অপলা! – অবন্তি ফোড়ন কাটলো।

– এত হিংসা করো না। পুরনো প্রেমিকাদের খোঁজখবর আগে নিতে হয়।

– ওই যে এসে গেছে। – বললো অংশু।

ঋভু দেখলো, রাজহংসীর মতো গর্বিত ভঙ্গিতে হেঁটে আসছে অপলা। এই মেয়েটাও ভীষণ আকর্ষণীয়, ঋভুর দারুণ ভালো লাগে। অংশুর বউ বলে বেশিদূর এগোয় না। কেবল একবারই কামার্ত চুম্বন বিনিময় হয়েছিল দুজনের মধ্যে, শক্ত করে আলিঙ্গন করেছিল পরস্পরকে। ঠিক সচেতনভাবে নয়, অনেকটা দুর্ঘটনার মতো ঘটে গিয়েছিল ঘটনাটা। শেষ মুহূর্তে সচেতন হয়েছিল তারা, বিছানায় যাওয়ার আগেই। ওটুকুই। সেই স্মৃতি নিশ্চয়ই ভোলেনি অপলা, কখনো-কখনো চোখের ভাষায় সেই স্মৃতি ভেসেও ওঠে। তবে শেষ পর্যন্ত সম্পর্কটা রয়ে গেছে মায়ার মধ্যে। প্রেম বা কাম এসে ভাসিয়ে নেয়নি দুজনের কাউকেই।

ঋভু উঠে গিয়ে অপলার হাত ধরলো, বললো, এসো এসো প্রিয়তমা, এসো। তোমার বিরহে কাতর হয়ে আছি।

– আহা! আর বলবেন না। হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে।

– হোক না। আমি সারিয়ে তুলবো।

– না না, জোড়াতালি দেওয়া হৃদয় আমার চাই না। – অপলা হাসছিল। ঋভু তাকে এনে অবন্তির পাশে বসিয়ে দিলো।

অংশু বললো, তুমি ওকে হাত ধরতে দিলে!

– দিলাম তো! কী হলো তাতে?

– কী হলো সেটা রাতে টের পাবে।

– আচ্ছা। অপেক্ষায় রইলাম। – হাসতে হাসতে বললো অপলা।

– রাতে টের পাবে মানে? মারামারি করবি নাকি? – অবন্তি সরলভাবে জিজ্ঞেস করলো।

– মারামারিই। অন্যরকম মারামারি। তুমি উহা বুঝিবে না বালিকা।

– থাক, বুঝিয়া কাজ নাই।

আড্ডা জমে উঠতে সময় লাগলো না।

আজকে সবারই মুড চাঙা। মুখে কিছু আটকাচ্ছে না। এমনকি অপলাও প্রগলভ হয়ে উঠেছে। একটা আনন্দের হিল্লোল বয়ে যাচ্ছে সবার মধ্যে।

একসময় অবন্তি বললো, তুই না কী বলতে চেয়েছিলি অংশু!

– কোন ব্যাপারে?

– তোর কোন এক প্রজেক্টের ব্যাপারে?

অংশু এই পরিবেশে বলতে চাইছিল না। বললো, এখন না, ডিনারের সময় বলবো। এখন রঙিন পানির ঘোরে আছি।

এড়িয়ে যেতে চাইলেও পারলো না অংশু। অবন্তি ‘এখনই বল এখনই বল’ করতে লাগলো, ঋভু আর অপলাও তাল দিলো ওর সঙ্গে।

বাধ্য হয়েই ধীরে ধীরে গুছিয়ে পুরো ব্যাপারটা বললো অংশু। অপলা আর অবন্তি আগে থেকেই জানতো, তাই খুব একটা অবাক হলো না, ঋভু হলো। বললো, এই প্ল্যান আবার কবে করলি?

– অনেকদিন আগে থেকেই প্ল্যান করছি। এখন বাস্তবে রূপ দেওয়ার সময় এসেছে।

– আমাকে কিছু বলিসনি যে!

– বলতাম। একটু গুছিয়ে নিতে চাইছিলাম।

– দুজনে মিলেও গোছাতে পারতাম!

– আরে কী আশ্চর্য! তোকে ছাড়া করবো নাকি?

– মনে তো হচ্ছে সেরকই ইচ্ছে তোর।

– ভালো হচ্ছে না ঋভু। কোনোদিন তোকে না জানিয়ে কিছু করেছি?

– করিসনি বলে যে করবি না, তার নিশ্চয়তাই বা কী?

– রাগ করিস না দোস্ত। আমি এমনিতেই সাহস পাচ্ছি না।

– সাহস না পাওয়ার কী হলো?

– এত বড় একটা ব্যাপার, শেষ পর্যন্ত পেরে উঠবো তো?

– অবশ্যই পারবি। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপার নতুন করে ভাবতে হবে।

– কী রকম।

– যেমন তুই চাইছিস, বাচ্চাদের সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে, স্পর্শকাতর নয়। সেন্সিবল, নট সেন্সিটিভ। কেবল নিজেকে নিয়েই থাকবে না, অপরের দুঃখে কাতর হবে, অন্যের বেদনায় কেঁদে উঠবে …

– এক্সাক্টলি।

– এটা সহজ কাজ নয়। কারো কারো মধ্যে সংবেদনশীলতা এমনিতেই থাকে, কারো কারো মধ্যে কখনোই থাকে না।

– না থাকলে কি তৈরি করা যাবে না?

– না বোধ হয়। সংবেদনশীলতা তৈরি করার জিনিস না।

– একেবারেই সম্ভব না?

– খানিকটা পোলিশ করা যাবে, তবে একেবারে তোর মনের মতো সবাই হবে এটা আশা করিস না।

– হুম। আর কিছু?

– এই যেমন পশুপাখির প্রতি মমতা জাগাতে চাইছিস। এটাও ইন-বিল্ট ব্যাপার। সম্ভবত কারো মধ্যে তৈরি করা যায় না।

– আমার মনে হয় সম্ভব। অন্তত পরীক্ষা করা যেতে পারে।

– তা তো যেতে পারেই। শুধু একটা কথা মনে রাখবি। শতকরা দশভাগ বাচ্চাও যদি তোর মনের মতো করে গড়ে ওঠে, বাকিরা মোটামুটি উতরে যাওয়ার মতোও হয়, তোর এই প্রকল্পকে অবশ্যই সফল বলা যাবে।

– দশভাগ কি পাওয়া যাবে না?

– যাবে বোধহয়। তবে প্রথাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ওরা এসব শিখবে না। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনাটা সাধারণ স্কুলেই করবে, কিন্তু তোর প্রকল্পের মধ্যেই একটা স্কুল টাইপ কিছু থাকতে হবে। সেরকম শিক্ষকও থাকতে হবে, যাঁরা কেবল ব্যাপারটাকে চাকরি হিসেবে দেখবেন না, একটা মহৎ কাজ হিসেবে দেখবেন।

– হুম। এটা ভেবে দেখিনি। আচ্ছা, তোর সঙ্গে লম্বা সময় নিয়ে বসবো। এখনো তো কাজ শুরু করিনি। দু-একদিনের মধ্যে প্রাথমিক কাজ শুরু হবে। এর মধ্যে আমরা কথা বলে নেবো।

তখনো পানীয়র ঘোর কাটেনি, যার যার গ্লাসে চুমুক চলছে, তবে বিরতি দিয়ে, ধীরে ধীরে, কিন্তু আড্ডার মেজাজ পাল্টে গেছে। এরকম হবে অংশু তা জানতো। জলীয় আড্ডায় কখনো এরকম সিরিয়াস বিষয় তুলতে নেই। কিছুক্ষণ চুপচাপ কাটলো। তারপর ঋভু খানিকটা আপনমনেই বললো, তোরাও কি ওখানে গিয়ে থাকবি?

– থাকতেও পারি। এই শহরটাকে আর সহ্য হয় না। – খানিকটা হালকা সুরে বললো অংশু।

– তাহলে আমার কী হবে? – এবার ঋভু বিষণ্ন।

– মানে?

– ঢাকায় তো আর আমার কেউ থাকবে না। আমি কার কাছে যাবো? – হাহাকার ঝরে পড়লো তার কণ্ঠ থেকে।

– আমাদের কাছেই যাবে। তোরা দুজন একসঙ্গে যাবি।

– দুজন! যেন খুব অবাক হয়েছে ঋভু।

– হ্যাঁ। তোদেরকে আর একা একা থাকতে দেওয়া হবে না।

চকিতে একবার অবন্তির দিকে তাকালো ঋভু, দেখলো ওর চোখ নামানো, কারো দিকেই তাকিয়ে নেই। একবার ওর চোখের দিকে তাকাতে পারলে ভালো হতো, বোঝা যেত ও কী ভাবছে। তাকালো অপলার দিকেও, দেখলো গভীর মায়াভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে সে ঋভুর দিকে। মৃদু হেসে সে বললো, আপনাকে একা রেখে আমরা কোথায় যাবো, ঋভু ভাই? গেলে আপনাকে নিয়েই যাবো। (চলবে)