জীবনানন্দ দাশ-প্রেমিক ক্লিন্টন বুথ সিলি

বিগত শতাব্দের মাঝামাঝি সময়ে জীববিজ্ঞানের স্নাতক শীর্ণকায় এক মার্কিন যুবক সমাজহিতৈষণার ব্রত আর নীলবর্ণ চোখে রাজ্যভরা স্বপ্ন নিয়ে সেই সুদূর মার্কিন দেশ থেকে পিস কোরের ভলান্টিয়ারের কাজ নিয়ে এলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। তখন কেনেডি আমল। মানবকল্যাণে সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে পিস কোরের ছেলেমেয়েরা ছড়িয়ে পড়ল দেশে দেশে, মফস্বলে, শহরে গ্রামে-গঞ্জে। এমনি করেই রৌদ্রকরোজ্জ্বল ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের সুদর্শন যুবা ক্লিন্টন বুথ সিলি চরম আর্দ্রতাভরা বাংলার ভেনিস বরিশালের এক শিক্ষায়তনকে বেছে নিলেন তাঁর কর্মস্থল হিসেবে। ক্লিন্টের চেহারায় এবার আরেকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গেল, চুলগুলো কালোপ্রধান কাঁচা-পাকা থাকলেও দাঁড়ি একেবারে বরফসাদা।

অনিঃশেষ সবুজ গাছগাছালি আর অসংখ্য নদীনালার দেশ বরিশাল প্রথম দৃষ্টিতেই তাঁর ভালো লেগে গেল। বছর কয়েক কাজ শেষ করে ফিলে গেলেন ফের আমেরিকায়। এবার গেলেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে দেখা হলো শিক্ষাবিদ এডওয়ার্ড সি. ডিমকের সঙ্গে। ডিমক তখন বৈষ্ণব সাহিত্যের ওপর কাজ করছেন। কলকাতার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। ডিমকের ওখানেই প্রথম দেখা বুদ্ধদেব বসুর জামাতা নানাবিষয়ে উৎসাহী হলেও মূলত কবি জ্যোতির্ময় দত্তের সঙ্গে। জ্যোতির্ময় আমেরিকা যাওয়ার আগেই সাংবাদিকতার সঙ্গে বুদ্ধদেব বসুর কবিতা পত্রিকায় তিরিশের দেশী-বিদেশী কবিদের নিয়ে লেখালিখি ছাড়াও কাব্য-সমালোচনা করতেন এবং কবি হিসেবে যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছিলেন। ইংরেজি-বাংলা উভয় ভাষাতেই ছিল তাঁর সমান ব্যুৎপত্তি। জ্যোতির্ময় তখন আইওয়া থেকে শিকাগো গিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্য নিয়ে বক্তৃতা করতে।

ক্লিন্টের সঙ্গে জ্যোতির্ময়ের দেখা হতে এবং ক্লিন্টের সদ্য  বরিশাল-ফেরা প্রেক্ষাপট শুনে এবং বাংলাদেশ ও বাংলা-ভাষার প্রতি তাঁর আগ্রহ দেখে জ্যোতির্ময়ই তাঁকে পরামর্শ দেন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের ওপর কাজ করতে। জ্যোতির্ময়ের মুখে এই স্বতন্ত্র-স্বভাবী কবির জীবনকথা শুনে এবং তাঁর কিছু কবিতা বিশেষ করে ‘বনলতা সেন’, ‘ক্যাম্পে’, ‘শিকার’ শুনে বা পড়ে জীবনানন্দের প্রতি ক্লিন্ট দারুণ কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। এর আগে ১৯৬৩ সালে বরিশালে থাকতেই ক্লিন্টের মনে হয়েছিল এক ভিন্নভাষী সমাজ ও তার ব্যবহারিক রীতিনীতিকে জানতে হলে সর্বাগ্রে সেই ভাষাটা রপ্ত করে নেওয়াটা একান্ত প্রয়োজনীয়।

পরিকল্পনামতো ক্লিন্টন বুথ সিলি ÔDoe in heat : a critical biography of the Bengali poet Jibananda Das (1989-1954) with relevant literary history from the mid 1922s to 1950Õ এই বিষয়ে গবেষণার কাজ শুরু করে দেন। এ-ব্যাপারে বাংলাদেশের তরুণ লেখক, কবি ও গবেষক আবদুল মান্নান সৈয়দের শুদ্ধতম কবি ক্লিন্টকে প্রভূত উৎসাহ জোগায়। যদিও প্রথমে বাঙালির স্বভাবসুলভ সর্বোচ্চ মাত্রাসূচক শুদ্ধতম শব্দটির এই ব্যবহার ক্লিন্টের তেমন মনঃপূত না হলেও পরে আরো গভীরে ঢুকে কাজ করতে গিয়ে ক্লিন্টও মান্নান সৈয়দ-ব্যবহৃত শব্দবন্ধটির সারবত্তা স্বীকার করে নেন।

১৯৫৪ সালে দুর্ঘটনাকবলিত আকস্মিক মৃত্যুর পর জীবনানন্দ-বিষয়ে কেমন যেন একটা নিস্পৃহ উদাসীনতা বিরাজ করতে থাকে। একমাত্র ওই বাংলায় অম্বুজ বসুর একটি নক্ষত্র আসে এবং এই বাংলায় আবদুল মান্নান সৈয়দের শুদ্ধতম কবি ছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না। তবে জীবনানন্দ-শতবার্ষিক উদ্যাপনের প্রাক্কালে আবার নতুন করে কলকাতায়, বিশেষ করে জীবনানন্দের মৃত্যুকালে যেসব তরুণ ভক্তমণ্ডলী হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কবির কাছাকাছি ছিলেন – যাঁদের মধ্যে ময়ূখ-গোষ্ঠীর সমর বসু, স্নেহাকর ভট্টাচার্য (দুজনই প্রয়াত), জগদিন্দ্র ভৌমিক, সরিৎ তোপদার এবং ভূমেন্দ্র গুহ – এঁদের ভূমিকাই ছিল উল্লেখযোগ্য। তাঁরাও দীর্ঘদিন যাবৎ নিজের নিজের জীবন, পরিবার নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থেকেছেন বলে এবং তার চেয়েও বড় কথা জীবনানন্দ দাশের হঠাৎ মৃত্যু বলতে বাংলা সাহিত্য থেকে অত বড় প্রতিভার প্রস্থান তাঁরা যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। দুর্ভাগ্য এমনই যে, এর মধ্যে কবির স্ত্রী, বোন, পুত্র, কন্যা, ভ্রাতা, ভ্রাতৃবধূ একে একে সবারই জীবনাবসান ঘটে। থাকার মধ্যে এক ভ্রাতুষ্পুত্র অমিতানন্দ দাশ ও তাঁর স্ত্রী ছাড়া কবির সরাসরি রক্তের আর কেউই বেঁচে নেই।

শতবর্ষে এসে দেখা গেল একই বছরে কাজী নজরুল ইসলামেরও শতবর্ষ। আবার নতুন করে স্বভাবলাজুক জীবনানন্দ দাশ হঠাৎ বহুল আলোচিত হয়ে উঠলেন। এবং এর পেছনে কবি ভূমেন্দ্র গুহ, সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উৎসাহ-উদ্দীপনায় জীবনানন্দ-চর্চা ও গবেষণার সমৃদ্ধি ঘটল। তাছাড়া তরুণ কবিদের মধ্যেও জীবনানন্দ-বিষয়ে একটা নতুন উন্মাদনা পরিলক্ষিত হয়।

এর ভেতর ১৯৮৩ সালে ক্লিন্টন বুথ সিলির বহু পরিশ্রম আর একাগ্রতার ফসল আ পোয়েট অ্যাপার্ট নামে গবেষণামূলক বইটি বেরিয়ে বাংলা কাব্যানুরাগী মহলে প্রশংসা কুড়োয়। বইটির মার্কিনি সংস্করণ ব্যয়বহুল হওয়ার দরুন কলকাতার রবীন্দ্রভারতী থেকে পুনর্মুদ্রিত হয়ে বেরুলেও, সেটিও বর্তমানে দু®প্রাপ্য। আ পোয়েট অ্যাপার্ট গ্রন্থটি তৈরি করতে ক্লিন্টন বুথ সিলিকে প্রায় একযুগ সমগ্র বাংলাদেশ চষে বেড়িয়ে বহু দুর্লভ তথ্য সংগ্রহ করতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। তার ফলে বইটি হয়ে উঠেছে কবিতাপ্রেমীদের কাছে অমূল্য। বর্তমানে ক্লিন্ট বাংলা ভাষার ধ্রুপদী কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্যের স্বচ্ছ ও প্রাঞ্জল তরজমায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।

এবারে জানুয়ারি মাসে ক্লিন্টন বুথ সিলি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে এক সপ্তাহের জন্যে ঢাকা এসেছিলেন। বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ইউনিভার্সিটিতে ওরিয়েন্টাল ল্যাংগুয়েজ স্টাডিজের প্রধান। ঢাকায় তাঁর সংক্ষিপ্ত অবস্থানের সময়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনার নির্বাচিত অংশবিশেষ :

বেলাল চৌধুরী : সন্দেহাতীতভাবেই জীবনানন্দ দাশ রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতার প্রধানতম কবি। প্রকৃতপক্ষে তাঁর ছায়া বিগত শতাব্দের পঞ্চাশের দশকের সমগ্র বাংলা কবিতা আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর বাংলা কবিতার সঙ্গেও তাঁর অনুরূপ গভীর সম্পর্ক বজায় থাকবে বলে মনে হয় কি?

ক্লিন্টন সিলি : জীবনানন্দ দাশ একজন বিশ্বমানের মহৎ কবি এবং সকল মহৎ কবির মতোই জীবনানন্দ দাশের কবিতায়ও অর্থ ও ব্যঞ্জনার বহু স্তর রয়েছে, যা এখনো তাঁর শতবর্ষেও সম্পূর্ণভাবে উদ্ঘাটিত হয়নি। তাঁর মৃত্যুর পরবর্তীকালে প্রতিটি দশকেই জীবনানন্দ দাশের কবিতা বারংবার নিজস্ব অর্থে সমুদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। পাঠক তাতে আবিষ্কার করে নিয়েছে নতুন বার্তা। আশা করা যায়, একবিংশ শতাব্দীর বাঙালি কবিরাও তাঁর কবিতায় নিজেদের উপযোগী এক নতুন জীবনানন্দ দাশকে আবিষ্কার করবেন।

বেলাল : গত দু দশকে জীবনানন্দ দাশের ইতিপূর্বে অপ্রকাশিত বিপুলসংখ্যক ছোটগল্প ও উপন্যাস আবিষ্কৃত ও প্রকাশিত হয়েছে। এতে কি জীবনানন্দ দাশের সাহিত্যকর্মে সম্পূর্ণ নতুন কোনো মাত্রা সংযোজিত হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

ক্লিন্ট : জীবনানন্দ দাশ নিঃসন্দেহে প্রথমত ও প্রধানত একজন কবি। তবে গত দু দশকে তাঁর যে-সকল ইতিপূর্বে অপ্রকাশিত ছোটগল্প ও উপন্যাস আবিষ্কৃত ও প্রকাশিত হয়েছে, তারা তাদের অকল্পনীয় কাব্যগুণের জন্যই বাংলা সাহিত্যে এক বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে জীবনানন্দ দাশের ছোটগল্প ও উপন্যাসের কাব্যগুণ অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণমানের কবিতার কাব্যগুণকে অনায়াসে অতিক্রম করে যায়।

বেলাল : আমরা জানতে পেরেছি যে, ঢাকায় আসার আগে আপনি কলকাতায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে আপনার সঙ্গে জীবনানন্দ-গবেষক ভূমেন্দ্র গুহের দেখা হয়েছিল। জীবনানন্দ দাশের অপ্রকাশিত ডায়েরি-প্রসঙ্গে ভূমেন্দ্র গুহ যে-কাজ করছেন সে-বিষয়ে আপনাদের কোনো কথা হয়েছে কি?

ক্লিন্ট : বিষয়টির ব্যাপকতা প্রসঙ্গে ইতিপূর্বে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। কিন্তু ভূমেন্দ্র গুহ আমাকে জানালেন যে, জীবনানন্দ দাশের অপ্রকাশিত ডায়েরি প্রায় ১৫৭টি খাতায় ধরে আছে, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইংরেজিতে লেখা। আশা করা যায়, এসব ডায়েরি ক্রমশ প্রকাশিত হলে জীবনানন্দ দাশের ব্যক্তিজীবন ও লেখক-জীবনের নতুন মাত্রা উন্মোচিত হবে।

ক্লিন্টন বুথ সিলির সঙ্গে এখানে আমাদের অনেকেরই বহুকালের বন্ধুতা। ক্লিন্ট এবার এসেছিলেন খুব অল্পদিনের জন্য এবং বেশ ব্যস্ততা নিয়ে। এরই মধ্যে প্রথমে আনিসুজ্জামানের কাছ থেকে ও পরে ক্লিন্টের টেলিফোন পেয়ে ওঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ওঁর ভেতর তেমন কোনো পরিবর্তনই পরিলক্ষিত হলো না। বললেন, একটা সুযোগ পেলাম তাই চলে এলাম। কলকাতায় এবং এখানে অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়ে বেশ লাগছে।

শুধোলাম, এর মধ্যে তো তোমার মাইকেলের মেঘনাদবধ কাব্যের তরজমা বেরিয়ে গেছে। বইটি সম্পর্কে তোমার নিজের মতামত কী?

: তা ভালোই বলতে পারো। বইটির যে-কপি নিয়ে এসেছিলাম সেগুলো এর মধ্যে একে-ওকে দিয়েই শেষ হয়ে গেছে।

ক্লিন্টের পুরনো বন্ধু আবদুল মান্নান সৈয়দকে খবর দিতেই মান্নান একটি চমৎকার প্রস্তাব করলেন। যেহেতু সামনে জীবনানন্দ দাশের জন্মজয়ন্তী, সে-উপলক্ষে চ্যানেল আইয়ের সাগরকে বলে একটা অনুষ্ঠানের বন্দোবস্ত করা যায় কিনা? এসব ব্যাপারে বরাবরের মতোই সাগরের না নেই। শুধু একটু আগে থেকে বলে নিতে হবে, আপনারা কখন, কবে অনুষ্ঠান করতে চান। আর কারা থাকবেন। মান্নানই প্রস্তাব করলেন, বেশ ভালোই হলো। আমাদের কবিতানুরাগী, বিশেষ করে জীবনানন্দ দাশপ্রেমী, তরুণ বন্ধু ফয়সল শাহরিয়ারকে রাখলে কেমন হয়?

অতিশয় উত্তম বলে আমরা তক্ষুনি এই সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে নিলাম তরুণ লেখক আমীরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে।

কথাপ্রসঙ্গে মান্নান বললেন, ক্লিন্ট, আপনি তো এর আগে বহুদিন ধরে জীবনানন্দ দাশেই মগ্ন ছিলেন, এখন একেবার বিপরীত মেরুর মাইকেলকে নিয়ে কাজ করতে কেমন লাগছে?

ক্লিন্টের সাফ উত্তর : দেখুন মাইকেলের কাব্যে শব্দের ব্যবহার খুবই ভারিক্কি হলেও অভিধানের সাহায্য নিয়ে বুঝতে তেমন একটা অসুবিধায় পড়তে হয় না। উলটোদিকে জীবনানন্দের সৃষ্টিকে আপাত সহজ-সরল বলে মনে হলেও ভেতরে ঢুকলে বোঝা যায়, তাঁর শব্দচয়ন, উপমা, উৎপ্রেক্ষা কতটা সুদূর, অতল রহস্যময়। মাইকেলের তরজমা করতে আমার তেমন কোনো অসুবিধাই হয়নি। দেখলে নিশ্চয় বুঝতে পারবে।

আমরা তিনজনই প্রায় সমবেতভাবে বলে উঠলাম, দেখ, তুমি কিন্তু বাংলা কবিদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এমন দুজনকেই বেছে নিয়েছ যাঁদের দুজনই বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ কবিদ্বয়। বাংলাদেশের জন্য এটা খুবই শ্লাঘার বিষয়, এ ব্যাপারে তোমার কী মত? তুমি কি নিজে থেকেই ভেবে নিয়েছিলে যে, শুধু বাংলাদেশের কবিদের নিয়েই কাজ করবে?

এ প্রশ্নে ক্লিন্টও আমাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে সমবেত কণ্ঠে হেসে উঠে বললেন, এটাকেই তো কাকতাল বলো তোমরা?

ক্লিন্টের ব্যক্তিগত জীবনের প্রশ্ন তুলতেই সহাস্যে জানালেন, দীর্ঘকালের বান্ধবী গুয়েনের সঙ্গে তাঁর উদ্বাহু বন্ধন সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে। তাঁরা শিকাগোর অদূরে একটা লগ হাউসে বসবাস করেন।

তাহলে তুমি একবার গুয়েনকে সঙ্গে করে নিয়ে আসলে না কেন?

এবার স্মিতহাস্যে জানালেন, প্রথমে পয়সা, পরে গুয়েনের পালিত শ দেড়েক বিড়াল এবং তাদের প্রতিবেশী অতিথিদের পরিচর্যা করবে কে?

ধন্যবাদ ক্লিন্ট। কালি ও কলম কীরকম লাগছে?

অত্যন্ত শোভন ও রুচিসম্পন্ন সাহিত্যপত্রিকা, ক্লিন্টের সপ্রতিভ উত্তর।

ক্লিন্টের কথা : জীবনানন্দ আবার নতুন তাৎপর্যমণ্ডিত হয়ে উঠবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এই যেমন বনলতা সেন পড়তে গিয়ে মালয় সাগর বলতে আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, মালয় সাগর বুঝি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়ের প্রসঙ্গক্রমে বলেছেন জীবনানন্দ। কিন্তু পরে দ্বিতীয় পাঠের পর দেখলাম সেটা ভারতেরই দক্ষিণ মালয় উপকূলের কথাই বলেছেন। যে পথ ধরে মশলা ব্যবসায়ী থেকে বিভিন্ন ধর্মের লোকেরাও ভারতে পদার্পণ করেছিল। সুতরাং জীবনানন্দ শুধু একবার পাঠেই ফুরিয়ে যাওয়ার কবি নন। পরতে পরতে তাঁর কত যে রহস্য-রোমাঞ্চ! তার বুঝি কোনো তুলনা নেই। জীবনানন্দ সত্যি সত্যিই কী জীবনের আনন্দ না বেদনা? নির্ণয় করা ভারী মুশকিলের। ৎ

* এই লেখাটি কালি ও কলমের দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যায় (ফেব্রুয়ারি ২০০৫/ ফাল্গুন ১৪১১) প্রকাশিত হয়েছিল।