জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের ছোট উপন্যাস

ইতালীয় লেখক জোভানি বোক্কাচ্চো ১৩৫৩ সালে লেখেন ডিকামেরোন। ১৩৪৮ সালে ফ্লোরেন্সে ভয়াবহ প্লেগ দেখা দিলে সাতজন পুরুষ ও তিনজন নারীর একটি দল, অন্য অনেকের মতো, শহর ছেড়ে পালাতে থাকে। যাত্রাপথে তারা প্রত্যেকে পালাক্রমে গল্প বলে। সপ্তাহে একদিন বিশ্রাম আর একদিন প্রার্থনা করা ছাড়া দুই সপ্তাহের ভ্রমণকালে দশদিনই তারা গল্প বলে কাটায়। এভাবে তারা যাত্রাপথে একশটি গল্প বলে। এই কাহিনিই ডিকামেরোন। এটিকে নভেলা বলে অভিহিত করা হয়। ইতালীয় শব্দ নভেলা মানে নতুন। এ থেকেই উপন্যাসের একটি নতুন ফর্ম তৈরি হয়, যেটি নভেলা নামে পরিচিতি পায়। ফ্রান্সের লেখকরা এই ফর্মটিকে গ্রহণ করেন এবং এই ফর্মে লিখতে শুরু করেন। এভাবেই নভেলা নামের একটি ফর্ম গদ্যসাহিত্যে দাঁড়িয়ে যায়, যেটি কলেবরের দিক থেকে গল্পের চেয়ে বড়; কিন্তু উপন্যাসের চেয়ে ছোট। নভেলার চেয়ে দৈর্ঘ্যের দিক থেকে আরো খানিকটা ছোট একটি কাঠামো ইউরোপে তৈরি হয়, যেটি ‘নভেলেট’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এটিও উপন্যাস গোত্রের রচনা, তবে নভেল বা নভেলার চেয়ে ছোট; কিন্তু গল্পের চেয়ে বড়। নভেলেটের আরো একটি বৈশিষ্ট্য কালক্রমে তৈরি হয় – গল্পের মধ্যে ভাবাবেগ থাকতে হবে। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে নভেলেটকে আমার কাছে ছোটগল্পের মতোই মনে হয়।

বাংলাসাহিত্যে উপন্যাসিকা বলা হয় কলেবরে ছোট উপন্যাসকে, এছাড়া নভেলা বা নভেলেটের অনুকরণে তেমন কোনো কাজ হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে আমাদের দেশে পাঁচ-ছয় ফর্মার যে-উপন্যাসগুলো রচিত হয়, বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের আবেগময় উপন্যাস, এগুলোকে আমরা অনায়াসেই ‘নভেলা’ বা ‘নভেলেট’ গোত্রে ফেলতে পারি। যদিও হুমায়ূন আহমেদসহ কোনো লেখকই তাঁদের এ-জাতীয় রচনাকে উপন্যাস ছাড়া অন্য কোনো নামে প্রকাশ করেননি। প্রথমবারের মতো একজন বাঙালি লেখক, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, প্রকাশ করলেন, তিনি শূন্য নভে ভ্রমি, অমল তরণী তার, স্বপ্নের সীমানায় পারাপার এবং সুখবাস নামে যে চারটি ছোট গ্রন্থ রচনা করেছেন এগুলো উপন্যাস নয়, গল্প নয়, বড়গল্প নয়, এগুলো হচ্ছে ‘ছোটো উপন্যাস’। তিনি উপন্যাসের বা গল্পের এই আঙ্গিককে বলছেন একটি ভিন্ন শিল্পমাধ্যম। তিনি বলেন, ‘বিসত্মৃত জীবনজমিনের খবরও

 

সেখানে থাকে, কিন্তু শিল্পসৌকর্যের ব্যবহার, ভাষার ভিন্নতা তাকে স্বাতন্ত্র্য দেয়। সেই অর্থে আধুনিক ছোটোগল্পের সঙ্গেই তার মিল খুঁজে পাওয়া যায় বেশি। ইঙ্গিতপূর্ণ, ধ্বনিময়, প্রতীকী ভাষার ব্যবহারে আকস্মিক দৃশ্যপট উন্মোচনে বিসত্মৃত জীবনের চিহ্ন সর্বত্র ছড়ানো কিন্তু ছোটোগল্পের ভুবনেই তাঁর যাতায়াত বেশি।’

এই বিবেচনাকে সামনে রেখে ঢুকে পড়ি তাঁর ছোট উপন্যাসের ভুবনে। এই ধারায় তিনি প্রথম লিখেছেন শূন্য নভে ভ্রমি। এই আলোচনাটি ‘ছোটো উপন্যাস’ ধারণাকে কেন্দ্রে রেখে শূন্য নভে ভ্রমির জমিনে বিসত্মৃতি লাভ করবে।

গল্পটি তিনি শুরু করেন এভাবে – ‘বাপ-মায়ের চোখ এড়িয়ে একদিন এক তরুণী দূর প্রান্তরের সন্ধ্যায় ভিনদেশি একদা মুক্তিকামী, মুক্তিদাতা, এখন প্রবঞ্চিত এক যুবকের পাশে শুয়েছিল। কোনো সাড়া না পেয়ে প্রেমিকের মুখের দিকে চেয়ে দেখেছিল তাঁর শূন্যদৃষ্টি। জিজ্ঞাসা করেছিল, কী দ্যাহো তুমি? আকাশ, আকাশই দেখে বুঝি লোকটি, বলেছিল।’

হ্যাঁ, এক বোহেমিয়ান যুবক, কী তাঁর পরিচয়, কোত্থেকে এসেছে, কোথায় যাবে, কিছুই তার যায় না জানা। শুধু জানা যায়, সে ভালোবাসে আকাশ; শূন্য নীল আকাশ। মাটির বিছানায় শুয়ে দেখে সে শরতের নীল আকাশ। কখনো আকাশে যদি মেঘ করে, আকাশ যদি ঢেকে যায় দূরাগত মেঘে, তখন সে নিখোঁজ হয়ে যায়। চলে যায় দূরে কোথাও, যেখানে আছে স্বচ্ছ আকাশ, মেঘের আবর্জনাহীন, মুক্ত নীলাকাশ। আকাশই ভালোবাসে সে। আর কিছু নয়। আকাশই তাকে টানে। আর কিছু নয়। না সংসার, না সন্তান, না অন্য কোনো পার্থিব বন্ধন। এ-ই এই গ্রন্থের প্রতিপাদ্য। ভীষণ প্রতীকী। কিন্তু কী ভীষণ শক্তি নিয়ে ঢুকে পড়ে পাঠকের মনন-রাজ্যে, তছনছ করে দেয় বোধের জমিন। এই যে একজন মানুষ, কেউ জানে না তার পরিচয়, কোত্থেকে এসেছে, কোথায় সে যাবে, সবই অস্পষ্ট। স্পষ্ট যা তা হলো সে ভালোবাসে আকাশ। এর মধ্যে এই বিশ্ব চরাচরে মানুষের আসা-যাওয়ার খেলা খুঁজে পাই আমরা। আবার যখন সে খোঁজে মুক্ত আকাশ, তখন টের পাই এক স্বাধীনতাকামী সমাজের উপস্থিতি।

লেখক শূন্য নভে ভ্রমণ করাতে করাতে আমাদের নিয়ে যান বাংলাদেশের অন্তরের ভেতরে। রাতের অন্ধকারে মাছ শিকারে বেরিয়েছে গ্রাম্যবালা। ছোটাছুটির সুবিধার জন্য অন্ধকারের আড়াল উপজীব্য করে গায়ের দীর্ঘ বসন খুলে রাখে ডাঙায়, নেমে পড়ে জলে, মাছের খোঁজে। এরপর কী হলো তা লেখকের বর্ণনায় দেখে নেওয়া যাক, ‘খাঁচাটি মাটিতে নামিয়ে খালুই হাতের কাছে আনে প্রায়-বিবসনা, তারপরে ভারইয়ের সরু খোলা মুখে হাত ঢুকিয়ে শক্ত মুঠিতে মাছের মাথা ধরে টেনে নিয়ে আসে বাইরে এবং সাগ্রহে হাতের দিকে চোখ রেখে মুহূর্তে চাঁপা চিৎকার, শব্দহীন আর্তনাদের সঙ্গে – যা কেবল তার মুখ ও চোখেই স্পষ্ট ছিল, সে হাতের সংগ্রহ ফেলে দিতে চায় কিন্তু পারে না। মাছের সন্ধানে জলে ঢোকা জলজ ক্লেদ তখন তাঁর বাহু পেঁচিয়ে ধরেছে। ততক্ষণে আক্রোশী পুরুষ ঠিক তার পেছনে। নিশীথের ওই সংগ্রহ তারই, এই ভাবনায় হাত বাড়িয়েছিল, কিন্তু ওই চিৎকার ওই আর্তনাদ তাকে ভিন্ন পথে নিয়ে যায়। বিদ্যুৎগতিতে হাত বাড়িয়ে মেছো সাপটির লেজ ধরে ক্ষিপ্র টান দেয় এবং প্রবল শক্তিতে আবছা আকাশের গায়ে কালো রঙের সোনালি ধানের মাঠে ছুড়ে দেয়।

রমণী তখন কম্পিতা। সিক্ত দুই করতলে সে ভয়ে মুখ ও শরীর উভয় ঢাকার চেষ্টায় প্রায় জ্ঞানশূন্য, বিহবল। সম্ভবত তার শরীর মাটির দিকে সামান্য টলেও পড়ে, তখনই রক্ষাকারী তাকে শক্ত করে ধরে দুই হাতে এবং এমন বরফের মতো শরীর, এমন হিম শরীর, এই ভাবনায় সে শরীরটিকে আলগোছে তুলে ধরে নিয়ে যায় শুকনো ডাঙায়। মাটি ও আকাশ তখনো পরস্পরকে ছাড়েনি। অন্ধকার ও আলোর সীমানাও তেমনি।

হিম শরীরে হাত ঘষতে থাকে সে। কিছু উষ্ণতা আসুক। প্রতিবেশী-প্রতিবেশিনী পরস্পরকে চিনবে নিশ্চয়ই। পুরুষ পরস্বাপহারীর পরিচয় পূর্বেই অনুমান করেছিল। তাই সে কামুক। তবুও জীবন উভয়েরই কাম্য।

রমণী তখন প্রকৃতই বিবসনা ও বাক্যহীন। তবে শরীরে ক্রমে উষ্ণতা সঞ্চারিত হতেই পারে। সে জন্যই অঙ্গ শিথিল। একটু দূরে রাখা খালুইয়ের দিকে তাকায় সে আর ঠিক সেই মুহূর্তে পুরুষ নিজ স্থান গ্রহণ করে তাকে বিদ্ধ করে। বারবার।’

(পৃ ৩৬-৩৭)

এই গ্রন্থের চরিত্রদের কোনো নাম নেই। অনামিকা চরিত্রেরা তারপরও স্বমহিমায় উজ্জ্বল। আমাদের চিনতে কোনো অসুবিধা হয় না। জীবন এবং জীবিকার টানাপড়েন অল্প কিছু বাক্যে উঠে এসেছে, গ্রামবাংলার একটি স্বচ্ছ এবং প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

অঙ্কিত হয়েছে নিখুঁতভাবে। নারী-পুরুষের দেহ ও মনের যে স্বাভাবিক চাহিদা তা-ও উপেক্ষিত হয়নি। সবকিছুর ভেতর দিয়ে এই গ্রন্থে রক্তসঞ্চালনের মতো বহমান নভো-ভ্রমণ, সেই বোহেমিয়ান যুবকের।

আমি বলব, এটি জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের একটি সার্থক সৃষ্টি। চরিত্রদের নাম ব্যবহার না করে সাবলীলভাবে গল্পকে টেনে নিয়ে যাওয়া কেবল একজন সমর্থ লেখকের পক্ষেই সম্ভব। এটি পড়তে পড়তে আমার লেখা ক্রিয়াপদহীন কবিতার কথা বারবার মনে পড়ছিল।

এ-গ্রন্থের ভাষা অতিমাত্রায় পরিশীলিত, শুদ্ধ প্রমিতরীতিতে লেখা। যে-কারণে এটি গণমানুষের সাহিত্য হয়েও কুলীন, হরিজন-পাঠক একে ছুঁতে পারবে না। বারবারই আমার মনে হচ্ছিল সাহিত্যের ভাষাকে কি গণবিচ্ছিন্ন করে ফেলা হচ্ছে? এই সংশয় আমার কাটেনি। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি ভাষাটি উপভোগ করেছি। ভাষাটির প্রতি আমার ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্বের কারণে আরো একটু উদ্ধৃতি দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। ‘আকাশ আর মাটি তখন নিজ নিজ সীমা স্পষ্ট করে। বৃক্ষাশ্রিত লতা কি তরুশাখা ক্রমে ক্রমে নিজ নিজ অবয়ব ফিরে পায়। দিগন্তের অপস্রিয়মাণ কৃষ্ণসীমায় আলোর রেখা ক্রমে বিসত্মার লাভ করে। বৃক্ষবাসী সবাই দিগন্তবিসত্মৃত শূন্যে ডানা মেলে দেয়।

বাতাসে সুগন্ধ ভাসে। শিমুল কি শিউলির ঘ্রাণ। ঝিলে ফোঁটা শাপলা কি সুবিলের পদ্ম কি বাড়ির উঠোনে ফুটে থাকা টগর-গন্ধরাজ তারাও কিছু গন্ধ রাখে বাতাসে। রাসত্মায় উঠে সামনের দিকে তাকায় সে, দেখে স্পষ্ট হচ্ছে পদরেখা। স্পষ্ট হচ্ছে নীলিমা। তবু সে আকাশের দিকে তাকায় না।’

(পৃ ৫৬)

আধুনিক কবিতার একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পঙ্ক্তিগুলোর মধ্যে পারম্পর্য ভেঙে দেওয়া। অথচ বাক্যের মধ্যে পারম্পর্য তৈরি করাই আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যের লক্ষ্য। যে কারণে আমাদের কথাসাহিত্য বেশ সরল। পশ্চিমের গদ্য-লেখকরা অবশ্য আধুনিক কবিতার ফর্মটিকেই অনুসরণ করেন। বাক্যের মধ্যে, প্যারাগ্রাফের মধ্যে বা অধ্যায়ের মধ্যে পারম্পর্য ভেঙে দিয়ে তাঁরা পাঠককে কিছুটা সময়ের জন্য বিভ্রান্ত করেন। এতে পাঠকের ভাবনার নদীতে ঢেউ ওঠে, পাঠক ভাবতে থাকেন, ইত্যবসরে ভেঙে যাওয়া পারম্পর্যগুলো একটি সুবৃহৎ ক্যানভাসে নিয়ে জুড়ে দেন লেখক, দাঁড় করান একটি পূর্ণাঙ্গ অবয়ব। লেখক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত তাঁর ছোট উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে এই কাব্যিক ভাষা এবং কাঠামোটি অনুসরণ করেছেন।

উপন্যাস থেকেই যেহেতু ছোট উপন্যাস ধারণার জন্ম তাই জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের চারটি গ্রন্থের প্রতিপাদ্য প্রচলিত উপন্যাসের আলোকে বিশেস্নষণ করে দেখা যেতে পারে এগুলোর অবস্থান কোথায়। উপন্যাস হচ্ছে একটি কল্পিত উপাখ্যান, যা মানব-মানবীর জীবনযাপনের বাস্তবতাকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়। অর্থাৎ বাস্তব জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, আনন্দ-বেদনা, জন্ম-মৃত্যু,
স্বপ্ন-প্রত্যাশা উপন্যাসের উপকরণ। উপন্যাস রচয়িতা এসব উপকরণ এক বা একাধিক কাহিনির আলোকে একটি ক্যানভাসে আঁকেন, তৈরি করেন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনাখ্যান। উপন্যাসের গল্প মানব-মানবীর জীবনযাপনের বাস্তবতা অবলম্বনে নির্মিত কল্পিত আখ্যান, যা পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য বিশেষ বিন্যাসসহ গদ্যে লিপিবদ্ধ হয়। উপন্যাসের প্রধান উপজীব্য যেহেতু মানুষের জীবন, তাই উপন্যাসের কাহিনি হয় বিশেস্নষণাত্মক, দীর্ঘ ও সমগ্রতাসন্ধানী। জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের চারটি গ্রন্থে এই বৈশিষ্ট্যের আভাস আছে; কিন্তু সমগ্রতা নেই এবং ততটা বিশেস্নষণাত্মকও নয়। প্রচলিত উপন্যাসের তুলনায় কলেবরের দিক থেকেও রচনাগুলো যথেষ্টই ছোট। প্রতিটি গ্রন্থ ষাট থেকে সত্তর পৃষ্ঠায় সীমিত। বিশেস্নষণের বদলে তিনি বেছে নিয়েছেন ইঙ্গিতময়তা; কিন্তু স্পর্শ করেছেন জীবনের সবদিক। আরো একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা আগেই উলেস্নখ করেছি, তিনি সুকৌশলে চরিত্রদের নাম আড়ালে রেখেছেন, ব্যবহার করেছেন সর্বনাম। এই বৈশিষ্ট্য রচনাগুলোকে বিশেষ স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে।

আমার বিবেচনায় এই চারটি গ্রন্থের মধ্য দিয়ে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ‘ছোটো উপন্যাসে’র একটি স্বতন্ত্র কাঠামো দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন, যা তাঁকে বাংলা কথাসাহিত্যের আলোচনায় বারবারই টেনে আনবে। তিনি ছোটগল্পের অনুকরণে এর নাম ছোট উপন্যাসই রাখবেন নাকি স্বতন্ত্র কোনো নাম দেবেন তা বিবেচনা করে দেখতে পারেন। একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অনেকেই নতুন কাঠামো নিয়ে এসেছেন; কিন্তু তা তখনই টিকে গেছে যখন সে-কাঠামোতে সমসাময়িক শক্তিমান লেখকরা লিখেছেন। জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত-উদ্ভাবিত ‘ছোটো উপন্যাস’ ফর্মে যদি সাম্প্রতিক কথাসাহিত্যিকরা না লেখেন তাহলে এই ফর্মটি টিকে থাকবে না। ইতালীয় লেখক জোভানি বোক্কাচ্চোর উদ্ভাবিত ‘নভেলা’ ফর্মে যদি সমসাময়িক ফরাসি লেখকরা লিখতে না শুরু করতেন তাহলে হয়তো ‘নভেলা’ বলে কথাসাহিত্যের কোনো ফর্ম দাঁড়াত না। বাংলা সাহিত্যের একজন কর্মী হিসেবে এই কাঠামোটি আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। ইতোমধ্যেই আমি ড. মাহবুব হাসানের সঙ্গে একাধিকবার এ-নিয়ে কথা বলেছি। এবং আমি উদ্বুদ্ধ হয়েছি এই ফর্মে কিছু গল্প রচনা করার, আমার কেন যেন মনে হয়েছে মাহবুব হাসান নিজেও এ কাজ করবেন।

বাংলা কথাসাহিত্যের এই নতুন ধারাকে আমি স্বাগত জানিয়ে এ-ধারায় মেধাবী লেখকদের চর্চা করতে উৎসাহিত করছি।