দুই হৃদয়ের নদী

ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর –

খ্যাতি হচ্ছ উঁচু কোনো দেয়ালের মতো

একপাশে প্রশংসার বহুবিধ ক্লান্ত কোলাহল

অন্যপাশে একাকিত্ব ন্যস্ত থাকে জোর পাহারায়

বলা যায়, আমি সেই দেশ, যার ভূগর্ভে রয়েছে

মূল্যবান কয়লার খনি, আছে – হীরে-সম্ভাবনা

লোভাতুর যারা, বনশ্রীকে পরিয়েছে রক্তরজ্জুফাঁস

আমার লেখার মূল্য ঈর্ষণীয় চড়া। তবু দেখি

ব্যক্তিমূল্য ঢেকে যাচ্ছে প্রশংসার এঁদো আস্তরণে

এর থেকে মুক্তি তবে পাওয়া যাবে কোন সাধনায়!

একাকিত্ব দূরে যাবে প্রেম যদি কাছে চলে আসে

মরুপথিকের তৃষ্ণা। পেয়ে গেছি জলের সন্ধান

আমার কী সাধ্য আছে সেই জল ঠোঁটে তুলে নিই!

শোনো জল, তুমি এসো, খুলে যাবে দ্বিধার আগল

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো –

আমার আবেগ আজ পশমের মাদুরের মতো

শৈত্যের আক্রোশ থেকে রক্ষা করি কবির চরণ

যতনে ছড়িয়ে দিই উত্তাপের চিহ্ন-সমারোহ

আশা করে থাকি – যদি পেয়ে যাই উষ্ণ আলিঙ্গন

আজন্ম কবিকে চিনি, না-দেখার মুগ্ধতা এখন

আরো বেশি মুগ্ধকর, দেখি তাকে সকল থাকায়

‘বিদেশ-বাসিনী’ আমি। কবি তবু সুরের মালায়

আমাকেই জড়ালেন। হৃদয়ের ছায়ার ভিতর

বসিয়ে, বসিয়ে রেখে লিখেছেন কবিতা ও গান

আত্মার আনন্দ আজ হেসে-থাকা পদ্ম-সরোবর

মানুষ যতটা আসে, তারও আগে প্রেম চলে আসে

ফুরালে প্রেমের স্থিতি, দূরত্বের অন্ধকার এসে

বিরহ জাগিয়ে দেবে। হয়তো হবে না দেখা। তবু

‘দুই হৃদয়ের নদী’ শান্তিযুক্ত এক মোহনায়