সামসুল ওয়ারেস
দ্বিজেন শর্মার চিন্তা, কর্ম ও জীবনযাপনে দুটি ধারা লক্ষণীয়। একটি ধারায় আছে বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদ, মানুষ ও সমাজচিন্তা এবং মার্কসীয় সমাজতন্ত্র। অন্য ধারাটিতে আছে আবেগ, নিসর্গ প্রেম ও শিশুসুলভ আত্মজিজ্ঞাসা। এ দুটি ধারার সম্পর্ক, ব্যবধান ও ভারসাম্য রক্ষাই যেন ছিল তাঁর সারাজীবনের পথ ও পাথেয়। বিজ্ঞান, সমাজ ও রাজনীতি ব্যাখ্যায় তিনি যতটা বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তি-আশ্রয়ী, উদ্ভিদ, উদ্যান ও প্রকৃতি প্রসঙ্গে তিনি ততটাই আবেগপ্রবণ, যেখানে বোধ ও অনুভূতির সূক্ষ্মতা গুরুত্ব পায়। তাঁর এই দ্বৈত অবস্থান থেকে যে সত্যটুকু বেরিয়ে আসে তা হচ্ছে : শুধু যুক্তি মানুষকে রোবটে পরিণত করে। কিন্তু মানুষ রোবট নয়, তার আছে আবেগ। দ্বিজেন শর্মা ঈশ্বরকেন্দ্রিক চিন্তা থেকে সরে এসেছিলেন ছাত্রাবস্থা থেকেই। ক্রমে মানুষকেন্দ্রিক চিন্তা থেকে সরে এসে একদিকে শোষণমুক্ত সাম্যবাদী সমাজ, অন্যদিকে প্রকৃতির সব অনুষঙ্গের (গাছপালা, পশুপাখি, নদী, মাটি, বাতাস ইত্যাদি) সমঅধিকার ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে চিন্তায় নিবিষ্ট হন। তাঁর সব লেখা ও কর্মকা- এই ভারসাম্যকে কেন্দ্র করে নির্মিত। তবে তাঁর সাম্যবাদী ও সমাজতান্ত্রিক মানসিকতা সবকিছু ছাপিয়ে প্রকাশ পায়।
প্রকৃতির সঙ্গে আছে মানুষের নিবিড় ও মহান সম্পর্ক। মানুষ প্রকৃতির অংশ আবার মানুষ নিজেই প্রকৃতি। মানুষ ও প্রকৃতি বস্ত্তত এক এবং অবিচ্ছিন্ন। এই সত্যটি রবীন্দ্রনাথ গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। এ-কারণেই তিনি বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন কলকাতা শহরের ব্যস্ততা ও বস্ত্তবাদ থেকে অনেক দূরে,
প্রকৃতির নিবিড়তায়, শামিত্মনিকেতনে। মানুষের অযথা হস্তক্ষেপবিহীন আদি প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে, শিক্ষার্থীরা যেন মৌলিক চিন্তায় ও সাধনায় ব্রতী হতে পারে। পার্থিব বাস্তবতার ঊর্ধ্বে গিয়ে তারা যেন সত্য, শুদ্ধ ও সুন্দর জ্ঞানলাভে প্রবিষ্ট হয়। শিক্ষার্থী নিজেই সরাসরি প্রকৃতি থেকে এ অভিজ্ঞান আহরণ করবে। কলকাতায় সামাজিক নিয়মকানুন ও বিধিনিষেধের বেড়াজালে থেকে যেন শেখানো বুলি না শেখে। প্রকৃতি এখানে যেন আদি ও অকৃত্রিম শিক্ষক।
দ্বিজেন শর্মা ছিলেন রবীন্দ্রনাথের উদ্ভিদ-চেতনা দ্বারা প্রভাবিত এবং বেঙ্গল রেনেসাঁস দ্বারা অনুপ্রাণিত। সম্ভবত এ-কারণেই তাঁর চরিত্রে ও কর্মকাণ্ড বহুমাত্রিকতা লক্ষ করা যায়। তিনি একাধারে ছিলেন উদ্ভিদ সংগ্রাহক, উদ্যান নির্মাতা, প্রকৃতি সংরক্ষক, পরিবেশ সংগ্রামী, প্রকৃতিবিদ, শিক্ষক, লেখক, পর্যটক ও অনুবাদক। ‘উদ্ভিদ উদ্যান ঐতিহ্য’ শীর্ষক প্রবন্ধে দ্বিজেন শর্মা লিখেছেন : ‘তরুনির্ভরতা নিয়তিকল্প বলেই হয়তো প্রকৃতির এই মৌলবস্ত্তটি আমাদের কাছে এতটা মুগ্ধকর। সভ্যতার অগ্রগতি মানুষের স্বাধীনতা বহুদূর প্রসারিত করলেও প্রকৃতির আওতা থেকে পূর্ণ মুক্তির দিন আজো অস্পষ্ট। আমাদের খাদ্যবস্ত্তর এক ও অনন্য জোগানদার এই তরুরাজ্য। অধুনাতম বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এ-পথে বিকল্পের সন্ধান দিতে পারেনি। এই নির্ভরতার শেষ কবে কেউ জানে না।… রৌদ্রের তাপ, বাত্যার প্রহার, ক্ষুধার দাহ থেকে অব্যাহতির জন্য সভ্যতার এ প্রোজ্জ্বল মধ্যাহ্নেও আমরা তরুমুখাপেক্ষী। লাখ লাখ বছরের এই সংযোগ কখনো সখ্যে, কখনো শত্রম্নতায় আমাদের জৈবিক উত্তরাধিকারের গভীরে যে মূল বিস্তার করেছে, অবচেতন থেকে চেতনে, এষণা থেকে ঐতিহ্যে তা প্রোথিত।’ ওই প্রবন্ধেই অন্যত্র লিখেছেন, ‘প্রকৃতি ও মানুষ এদেশবাসীর ধারণায় একই প্রাণলীলার আধার এবং সেজন্য এক ও অবিচ্ছিন্ন। জগতের সীমাহীন বৈচিত্র্যে তাঁরা অনুসন্ধান করেছেন চৈতন্যের ঐক্যসূত্র। প্রতিটি অস্তিত্ব এখানে চেতনার বিপুল ত্বরণে স্পন্দিত। সুন্দর তাই শুধু ইন্দ্রিয়ধৃত বাস্তব নয়, আত্মধৃত পরম সত্যও। জল-স্থল-নিখিলের এক সার্বিক ঐক্যবোধই এদেশীয় দর্শনচিন্তার ভিত্তি। বৃক্ষ-লতা-তৃণ এখানে তরুমাত্র নয়, ‘ধরণীর ধ্যানমন্ত্রের ধ্বনি, প্রাণের আনন্দরূপ তাদের শাখায় শাখায়, প্রথম প্রীতির বন্ধনবিহীন প্রকাশ এর ফুলে ফুলে’।’ প্রকৃতি ও মানুষ বিষয়ে তাঁর অনেক গভীর চিন্তাযুক্ত প্রবন্ধ-নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। এ-কারণে তাঁকে নিসর্গসখা, বৃক্ষসখা, প্রকৃতি-পুত্র ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
দ্বিজেন শর্মার জন্ম ১৯২৯ সালের ২৯ মে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার শিমুলিয়া গ্রামে। পাথারিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও পাথারিয়া পাহাড়ের অপরূপ নৈসর্গিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা, যার গভীর ছাপ তাঁর মনে আজীবন রয়ে গেছে। ১৯৪৭ সালে করিমগঞ্জ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫১ সালে ত্রিপুরা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। কলকাতা সিটি কলেজ থেকে ১৯৫৪ সালে জীববিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে যোগ দেন বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞানের প্রশিক্ষক হিসেবে। ওই ১৯৫৮ সালেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে এমএসসি পাশ করেন। ১৯৬০ সালে বিয়ে করেন। ১৯৬২ সালে ব্রজমোহন কলেজে শিক্ষক থাকাকালে তৎকালীন জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য গ্রেফতার হন এবং তিন মাসের জন্য কারাবাসে থাকেন। ১৯৬৪ সালে ঢাকার নটর ডেম কলেজে যোগ দেন এবং ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সেখানে শিক্ষকতা করেন। ওই সময় নটর ডেম কলেজ প্রাঙ্গণে তিনি ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন করে বেশকিছু গাছ লাগান, যার কিছু এখনো রয়ে গেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘প্রথিতযশা এক শিক্ষক ছিলেন দ্বিজেন শর্মা। তিনি ক্লাসে যা পড়াতেন তা আর দ্বিতীয়বার পড়তে হতো না। আমার প্রিয় শিক্ষক দ্বিজেন শর্মা একেবারে সাদামাটা জীবনযাপন করলেও নীরবে-নিভৃতে অজস্র গবেষণা করে গেছেন।’
১৯৭৪ সালে দ্বিজেন শর্মা সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রকাশনা সংস্থা প্রগতি প্রকাশনের অনুবাদক হিসেবে যোগ দিতে মস্কোয় যান। রাশিয়ায় থাকাকালে (১৯৭৪-৯২) তিনি বিজ্ঞান, অর্থশাস্ত্র, সমাজবিদ্যা এবং অন্যান্য বিষয়ে ইংরেজিতে লেখা প্রায় ৪০টি বই বাংলায় অনুবাদ করেন। মস্কো থেকে তিনি বিলাতে বেড়াতে গিয়ে ডারউইনের জন্মস্থান (মাউন্ট হাউস, শ্রম্নব্যারি), কিউ গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেনগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। অবশ্য অনেক বছর পরে তিনি লন্ডনের হাইগেট সেমিটারিতে গিয়ে কার্ল মার্কসের সমাধিও দর্শন করেন। দ্বিজেন শর্মার ইচ্ছা ছিল রিজেন্ট পার্ক ও সেইন্ট জেমস পার্কের আদলে বাংলাদেশে একটি উদ্যান নির্মাণ করার। ঢাকা শহরকে তিনি একটি উদ্যান-শহর হিসেবে কল্পনা করতেন, যেখানে বুড়িগঙ্গার তীরে শিশুদের জন্য আছে খোলামেলা খেলার জায়গা ও নদীর পার ঘেঁষে আছে সর্বসাধারণের জন্য বেড়ানোর ব্যবস্থা।
দ্বিজেন শর্মা ছাত্রাবস্থায়ই বাম সমাজব্যবস্থার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ ছিল। অনেকটা তীর্থে যাওয়ার মতোই। মস্কোতে বসবাসের দীর্ঘ সময় তাঁর কাছে শুধু নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের বিষয় ছিল না; এ সময়টা অনুবাদকর্মের পাশাপাশি তিনি প্রয়োজনীয় পড়াশোনার মাধ্যমে নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তিকে সংগঠিত, সংযত ও শানিত করেছেন। একই সঙ্গে মস্কোতে শর্মা-দম্পতির আবাস হয়ে ওঠে বাংলাদেশ থেকে আগত ছাত্রছাত্রীদের জন্য পরম নির্ভরতার স্থান। রাজনৈতিক নেতাকর্মী, শিল্পী, লেখক, পর্যটক যাঁরাই মস্কোতে গিয়েছেন, তাঁরা সবাই দ্বিজেন শর্মাকে পেয়েছেন বন্ধু-অভিভাবকহিসেবে। সমাজতন্ত্রের দেশে তিনি গিয়েছিলেন মার্কসবাদ-লেনিনবাদের তাড়নায়। সোভিয়েত সমাজের অভ্যন্তরীণ সংকটগুলো তিনি অবলোকন করেন। ক্রমশ সমাজতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থার পতনের সাক্ষী হয়ে দ্বিজেন শর্মা আহত হয়েছেন, কিন্তু মানুষের প্রতি বিশ্বাস তিনি হারাননি। একই সময় বিশ্বব্যাপী পরিবেশের বিপর্যয় তাঁকে পীড়িত করেছে, কিন্তু তিনি হতাশাগ্রস্ত হননি। তাঁর বোধ ও চিন্তাধারা ক্রমশ সব সংকীর্ণতা পরিহার করে হয়ে ওঠে আরো গভীর, সংবেদনশীল ও উদার। ১৯৯৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্তির পর তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং গবেষণা ও লেখালেখিতে মনোনিবেশ করেন। রাশিয়ায় অবস্থানকালে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার নিবিড় পর্যবেক্ষক হিসেবে দ্বিজেন শর্মা তাঁর দীর্ঘ দুই দশকের সোভিয়েত-বাসের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি লিপিবদ্ধ করেন সমাজতন্ত্রে বসবাস নামে এক অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ গ্রন্থে। এছাড়াও বাংলাদেশের সমাজ, শিক্ষাব্যবস্থা, পরিবেশ ও উদ্ভিদ নিয়ে তিনি প্রায় ৩০টি বই লিখেছেন। ‘স্বপ্ন ও সাধ্যের ফারাক’ প্রবন্ধে তিনি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার ওপর লিখেছেন – ‘বাংলাদেশ পুঁজিতন্ত্রের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে; পুরনো সমাজকাঠামো ভেঙে পড়ছে এবং সেই সঙ্গে সাবেকি নীতিনৈতিকতাও। পুঁজি সবকিছুকে পণ্যে রূপান্তরিত করে এবং শিক্ষাও কোনো ব্যতিক্রম নয়। অতঃপর চিরকালের বঞ্চিত দারিদ্র্যপীড়িত শিক্ষকেরা যদি বিদ্যার দোকান খুলে বসেন, তাতে তাঁদের খুব বেশি দোষ দেওয়া যায় কি? লুটেরাদের এই রাজত্বে তাঁরা একইভাবে নৈতিকতার ধারক ও বাহক হয়ে থাকবেন – এমন দাবি যৌক্তিক নয়।’ একই প্রবন্ধে অন্যত্র তিনি লিখেছেন – ‘সব রাস্তা যেমন রোম নগরে পৌঁছায়, তেমনি আমাদের সব সমস্যাও শেষাবধি পুঁজিতন্ত্রে গিয়ে ঠেকে। প্রাথমিক পুঁজি সঞ্চয়ের এ যুগ অবাধ লুণ্ঠনের যুগ আর তাতে যথেচ্ছ লুণ্ঠিত হয় শ্রমশক্তির সঙ্গে
প্রকৃতির সম্পদভা-ারও। এখানে প্রেম প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই। শ্রমজীবীকে ‘ভাই’ এবং প্রকৃতিকে ‘মা’ বলা অর্থহীন আওয়াজ মাত্র। শোষণ ছাড়া পুঁজি সৃষ্টি হয় না আর পুঁজি ব্যতীত কোনো বৃহৎ নির্মাণও সম্ভব নয়। পুঁজি হলো উন্নয়নের চালিকাশক্তি।’
অনুবাদ-পুস্তক ছাড়াও দ্বিজেন শর্মা যে ৩০টি বই লিখেছেন সেসবের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য : শ্যামলী নিসর্গ ১৯৮০ (প্রথম প্রকাশ), ১৯৯৭ (দ্বিতীয় সংস্করণ), ২০১৫ (তৃতীয় সংস্করণ), সপুষ্পক উদ্বিদের শ্রেণীবিন্যাস (১৯৮০), ফুলগুলি যেন কথা ১৯৮৮ (প্রথম প্রকাশ), ২০০৪ (দ্বিতীয় সংস্করণ), ডারউইন ও প্রজাতির উৎপত্তি (১৯৯৭), সমাজতন্ত্রে বসবাস (১৯৯৯), নিসর্গ নির্মাণ ও নান্দনিক ভাবনা (২০০০), জীবনের শেষ নেই (১৯৮০ (প্রথম প্রকাশ), ২০০০ (দ্বিতীয় সংস্করণ), সতীর্থ বলয়ে ডারউইন ১৯৭৪ (প্রথম প্রকাশ), ১৯৮৪ (দ্বিতীয় সংস্করণ), ১৯৯৯ (তৃতীয় সংস্করণ), বাংলার বৃক্ষ (২০০১), বিজ্ঞান ও শিক্ষা : দায়বদ্ধতার নিরিখ (২০০৩), কিশোর সমগ্র (২০০৮), আমার একাত্তর ও অন্যান্য (২০০৮), গহন কোন বনের ধারে (১৯৯৪) ইত্যাদি।
দ্বিজেন শর্মার পড়ার অভ্যাস সবসময়ই ছিল। ৪২নং সিদ্ধেশ্বরী রোডে, যেখানে তাঁর স্ত্রী দেবী শর্মা এবং মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি বসবাস করেছেন, সেটা বাস্তবে একটি গ্রন্থাগার। দেবী শর্মা নিজেও মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে পিএইচ.ডি করেছেন এবং সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে অধ্যাপনা করে অবসরে আছেন। দ্বিজেন শর্মা প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি ‘তরুপলস্নব’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের সভাপতি ও আয়োজক হিসেবে তিনি তরুণ গবেষক ও স্বেচ্ছাসেবীদের প্রায়ই রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে যেতেন। গাছপালা ও বৃক্ষরাজির সঙ্গে তাঁদের পরিচয় করিয়ে দিতেন। শেখাতেন দেশি ফুলের জাতপাত ও রকমফের। শেখাতেন প্রকৃতিকে ভালোবাসতে ও শ্রদ্ধা জানাতে।
মননশীল লেখালেখির জন্য তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০০২ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী শিশু সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৫ সালে তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
দ্বিজেন শর্মার কাছে আনন্দের বিষয় ছিল বৃক্ষ, ফুল, বৃষ্টি, ভোরের আলো, তাঁর প্রিয় কুকুর টম ও নাতি-নাতনি। তিনি ছিলেন ভোগবাদ ও বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামী। লোভ ও লালসার ঊর্ধ্বে সহজ-সরল, আনন্দময় অথচ কর্মঠ ও বুদ্ধিদীপ্ত জীবনই ছিল তাঁর আরাধ্য। বাংলাদেশের এই মহান, গুণী মানুষটি ৮৮ বছর বয়সে গত ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাতে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে প্রকৃতি তার সখাকে হারাল, আমরা হারালাম এক অভিভাবক। তিনি মৃত্যুর অনেক আগেই জয় করেছিলেন মানুষের হৃদয়। রূপকথার এক জীবন্ত নায়ক ছিলেন তিনি। মৃত্যুর পর যত দিন যাবে, তাঁর অভাব ততই অনুভূত হবে। তবে আশার কথা, তাঁর অগণিত ভক্ত ও শিষ্য আছে যারা তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আলোর পথ দেখাবে। r
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.