নদী কারো নয়

সৈয়দ শামসুল হক
\ ১৭ \

মধ্যরাতের গাঢ় ঘুম অথবা সন্ধ্যাকাল থেকে তার ঘোর সুরাচ্ছন্নতা, কোনো একটি, অথবা দুটোই – মকবুল হোসেন অচিরে বিছানায় ঢলে পড়ে, যেন প্রবাহিত হতে থাকে – নদী যেমন, নদীর ঢল নামা স্রোতেই যেনবা সে ভেসে যায়, যেতে থাকে। অচিরকাল মাত্র, সে আবার স্বপ্নের ভেতরে ঢুকে পড়ে। মকবুল হোসেনের শরীরের ওপর দিয়ে কুসুম উষ্ণ জল বহে চলে। সে নিজেকে নদী পাড়ে আবিষ্কার করে। পাশে তার বাবাকে সে অনুভব করে ওঠে, যদিও বাবার স্মৃতি তার স্পষ্ট নাই, কেবল ফটোগ্রাফ থেকে। ক্বচিৎ আমাদের কাছে ফটোগ্রাফই জীবন্তের অধিক সত্যদৃষ্ট হয়ে থাকে বটে। কেবল অনুভবই তার, যদি পাশ ফেরে বাবাকে সে দেখতে পাবে, কিন্তু সে পাশ ফেরে না। তার এমনও ভাবনা হয়, পাশ ফিরলেই বাবা অন্তর্হিত হয়ে যাবেন। কিন্তু সে এটিও অনুভব করে, সে আর এখন তার এই বয়সে নয়, যেন বাল্যকালেই। বাবা তাকে বলছেন, কী দ্যাখো, মকবুল? নদী কেমন ফুলিয়া উঠিচ্ছে! পর্বত হতে ঢল নামিচ্ছে যে! পানির রংটাও দ্যাখো, মাতালের চক্ষুর মতো লাল, ঝ্যান জগৎ ভাঙি ফেলাইবে!
মাতাল! মাতালের চক্ষু! মকবুল হোসেন অপ্রতিভ হয়ে পড়ে। সে যে সুরা পান করে, আজ সন্ধ্যাকাল থেকে সে সুরায় মজে ছিলো, এই কথাটি কি বাবার গোচরে গিয়েছে? সে তৎক্ষণাৎ বলে ওঠে, যেন সুরা বা সুরায় মাতাল অবস্থা প্রাপ্তির বিষয়ে সে অজ্ঞই বটে, বলে – মাতাল কাকে কয়? – ও তুই এলাও বুঝিবার নও! গণিকে মনে আছে তোর? সেই যে গণি, জমিজমা সকল হারায়া হামার বৈঠকের গোড়ে দিনমান পড়ি থাকে! মেথরপাড়ায় যায়া কুপথ্য করি সড়কে সড়কে টলোমলো হাঁটে আর চিল্লাবিল্লা করে! সেই তারে মতো নদী এলা বেদিশা হয়া গেইছে! মকবুল বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে দ্যাখে নদীর বুকে ঘোর ঘূর্ণি, আর গুবগুব গুবগুব শব্দ। সেই ঘূর্ণিটা পাক খেতে খেতে তীরের কাছে এসে যায়, হঠাৎ ফেটে পড়ে, আর ধড়াস ধস শব্দ ওঠে, নদীর পাড় ভেঙে জলে যেই পড়ে, নদী যেন খলখল করে হেসে ওঠে। মাটির স্বাদ এত মিঠা নদীর কাছে। মাটি খেয়ে নদী আরো উন্মত্ত হয়ে ওঠে। নদীর বুকে ঘূর্ণি জাগে পুনরায়, ঘূর্ণিটা তুমুল বেগে নদীর মধ্যখানে ধাবিত হয়। মকবুল ভীত হয়ে পড়ে।
সে ভীত হয়, কারণ নদীর জল এখন আর জল বলে প্রতিভাত হয় না। যেন এ রক্তের নদী। টকটকে লাল রক্তপ্রবাহ ধরে নদী এখন উদ্দাম গতিতে দক্ষিণমুখী। মকবুল হোসেন এতটাই ভীত হয় যে, তার শরীর ঘেমে ওঠে; সে জানে এটি স্বপ্ন, বাস্তবে এর অস্তিত্ব নাই, অতএব যদি সে জেগে ওঠে তাহলেই ভয় থেকে সে পরিত্রাণ পেতে পারে। সে তুমুল চেষ্টা করে ঘুম থেকে জেগে ওঠার জন্যে। জলেশ্বরীর মাতাল গণি মিয়া পথে পথে চিৎকার করে ওঠে, আকাশে-বাতাসে তার আর্ত সাবধানবাণী আছড়ে পড়ে – সামাল! সামাল! পলান হে, পলান! নদী সব গ্রাস করি নিবে! গণির দৌড়ের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হতে থাকে সারাবিশ্বে। এমনকি, কী আশ্চর্য, মকবুল তার লেখা উপন্যাসের পাতাগুলোর ভেতরেও অক্ষরের উচ্চারণ নয়, কেবলি ধপ্ ধপ্ শব্দ শুনতে পায় গণির উন্মত্ত পদচারণার। এবং পৃষ্ঠাগুলো ফরফর করে উড়তে উড়তে নদীর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকে। এই তবে আত্মহত্যা? এভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া? তার বাবা মইনুল হোসেন মোক্তার তবে এভাবেই আত্মহত্যাই করেছিলেন আধকোশাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে? ওটি দুর্ঘটনা নয়, স্বেচ্ছায় তবে অপঘাত বরণ করা ছিলো তাঁর? মকবুল শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বালিশে তার মাথা আছাড়িবিছাড়ি করতে থাকে, কিন্তু জেগে ওঠা আর হয় না। বরং স্বপ্নের বা দুঃস্বপ্নের আরো গভীরে পতিত হতে হতে এবার সে তার বাড়ি-পলাতক মেয়ে প্রিয়লির চিৎকার শুনতে পায় – বাবা! বাবা! আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও! এবং কোথা থেকে যেন রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ বইটির পৃষ্ঠগুলো তার সমুখে বিশাল আকার ধারণ করে ফরফর করে উলটে এসে স্থির হয় একটি সেই পাতায় – সে স্মরণ করে ওঠে, যেন তার চিত্ত-গভীরে ধ্বনিত হয়ে ওঠে ‘ক্ষুধিত পাষাণে’র সেই বন্দি যুবতীর আর্ত উচ্চারণ – তুমি আমাকে উদ্ধার করিয়া লইয়া যাও – কঠিন মায়া, গভীর নিদ্রা, নিষ্ফল স্বপ্নের সমস্ত দ্বার ভাঙিয়া ফেলিয়া, তুমি আমাকে ঘোড়ায় তুলিয়া, তোমার বুকের কাছে চাপিয়া ধরিয়া, বনের ভিতর দিয়া, পাহাড়ের উপর দিয়া, নদী পার হইয়া তোমাদের সূর্যালোকিত ঘরের মধ্যে আমাকে লইয়া যাও। আমাকে উদ্ধার করো।
আমি কে! আমি কেমন করিয়া উদ্ধার করিব? গল্পগুচ্ছের পৃষ্ঠা থেকে হতাশাচ্ছন্ন ওই বাক্য দুটি ঘুমের ভেতরে নিজেই উচ্চারণ করে ওঠে মকবুল হোসেন। সে এবার জেগে ওঠে। সত্যিই তো! আমি কে? হাঁ, আমি প্রিয়লির জন্মদাতা। কিন্তু পিতৃত্বের শক্তি তো কেবল মমতায়, বাস্তব বিচারে মমতার কোনো শক্তি নাই। মমতা ক্রন্দনের জন্ম দিতে পারে, মমতা আমাদের মেরুদন্ড উত্থিত করবার বদলে ভূলুণ্ঠিতই করে। প্রিয়লিকে তার বর্বর স্বামীর হাত থেকে উদ্ধারের পথ তবে তাবিজ। কন্ট্রাক্টর সাইদুর রহমান আজই সন্ধ্যাকালে বলছিলেন হরিষালের মাজারের কথা। সেখানে গাছের ডালে লাল সুতা বেঁধে দিলে বন্ধ্যা নারী গর্ভবতী হয়। কন্ট্রাক্টর আরো বলছিলেন ওয়াহেদ ডাক্তারের কথা – হরিষালে হোমিওপ্যাথি করে, সাথে সাথে তাঁই তাবিজ-কবচও দ্যায়, তার তাবিজে যাবত মুশকিল আসান হয়, হারাইনা সন্তান ফিরি আসে, গুপ্তধনও অনেকে পায়, পাইছে বলি জানা যায়!
তখন কথাটা সে গুরুত্বের সঙ্গে নেয় নাই, নেবার কথাও তার নয়; তাগা তাবিজে বিশ্বাস স্থাপন করার মতো মানুষ নয় মকবুল হোসেন। নিতান্ত গল্পগুজব হিসেবেই সে তখন কন্ট্রাক্টরের কথা শুনে যাচ্ছিলো। বাংলাবাড়ির বারান্দায় বসে, নক্ষত্রপ্রতিফলিত নদীর দিকে চোখ পেতে, সুরা পান করতে করতে, মকবুল হোসেন বেশ জমিয়েই গল্পটা শুনছিলো; এমনকি গল্পটা এগিয়ে নেবার জন্যে সে দু’এক কথা যোজনা করে ঠেলাও দিয়ে চলেছিলো। এমনকি তখন তার মনে মনে নতুন একটি গল্প-ছকও উঁকি দিচ্ছিলো। সেটা এমন যে, এক কবি – সে তার প্রিয়তমাকে হারিয়ে হরিষালে আসে, নুন পূর্ণিমাকালে সে এসে উপস্থিত হয় মাজার প্রাঙ্গণে এবং ওই বিশাল গাছ, গাছের ডালে বাঁধা অজস্র লাল সুতা, মাজারের ছাউনিতে বন্ধ্যানারীদের সমাগম, খিচুড়ি ভোগের ঘ্রাণ, দোতারার ডোলোলং সংগীতধ্বনি, সেই সঙ্গে গুরু ভজনের গান, এসকলই সেই কবির কাছে, এবং মাথার ওপরে জ্বলজ্বলে নক্ষত্রমালা, পরাবাস্তব বলে মনে হয় এবং তার বিশ্বাস হতে থাকে প্রিয়তমাকে সে ফিরে পাবে, কিন্তু সেই সুখ-সম্ভাবনার বদলে কবি এক পরাবাস্তব সুখ আশায় ছিলিমের গোড়ে ঠোঁট রাখে এবং তখন তার মনে হতে থাকে – কে প্রিয়তমা? কার প্রিয়তমা? সে থাকলেই বা কী, গেলেই বা কী! নিতান্ত মন্দ হবে না গল্পটি। কিংবা একটি উপন্যাসই বয়ন করা দুঃসাধ্য হবে না মকবুল হোসেনের সাবলীল কলমে। সে আধেক শোনে কন্ট্রাক্টরের কথা, আধেক সে মনে মনে গল্পটি ফেঁদে চলে। তার বড় আরাম বোধ হয়। লেখক মাত্রই এই পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত – গল্প যখন করোটিতে আসে, তখন জগৎ একপাশে সরে যায়; মনের ভেতরে সুধা প্রবাহিত হতে থাকে; অমরত্বের জ্যোৎস্না তখন শিরে সম্পাতিত হবার অপেক্ষায় – এ অনুভূতি এমন যেন নির্জনে সুন্দর সুস্মিত যুবতী দৃষ্টে রমণ সম্ভাবনার কাতরতায় এক পুরুষ। কিন্তু এখন এই ঘোর নিশাকালে, স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নমথিত মকবুল হোসেনের করোটির ভেতরে প্রিয়লি আছাড় খেতে থাকে, তাকে উদ্ধার করে আনবার জন্যে সে তাগা তাবিজকেই একমাত্র উপায় বলে নির্ণয় করে ওঠে। হা, আমরা আপৎকালে এমতই যুক্তিহারা হয়ে পড়ি বটে। খরস্রোতে পতিত হয়ে আমরা যে খড়কুটা অাঁকড়ে ধরি, এমন লোকবচন তখন সত্য বলেই দেখা যায়। মকবুল হোসেনের সুরাচ্ছন্ন মস্তিষ্কে তখন সিদ্ধান্ত জেগে ওঠে আগামীকালই সে হরিষালে যাবে এবং ওয়াহেদ ডাক্তারের কাছে ধরনা দেবে! মকবুল হোসেনের সুরাচ্ছন্ন মস্তিষ্কে তখন ধরা পড়বার কথা নয় যে, ওয়াহেদ ডাক্তার এ-জগতে আর নাই, বহুকাল নাই।
কন্ট্রাক্টর সাইদুর রহমান লণ্ঠনের আবছা আলোয় কুসমির মুখখানি নির্ণয় করবার চেষ্টা করেন। চেষ্টা কী, গ্রাস করবারই সাধ। রমণীর মুখ এত মধুর, এই প্রথম তাঁর বোধ হয়। এক বিবাহ এবং তারপর দীর্ঘ বৈধব্য রমণীর সৌন্দর্য হরণ করতে পারে নাই, বরং বৃদ্ধিই পেয়েছে তার রূপ তাপ। সম্মোহিতের মতো কন্ট্রাক্টর তাকিয়ে থাকেন। বাস্তবতা লোপ পেতে থাকে। সংসার উচ্ছন্নে যায়। ঘরণীর কথা আর মনেও আসে না। যৌবন মনে পড়ে। যৌবনকালে এমন শোভা বিফলে কি যেতো? কুসমি অস্থির হয়ে পড়ে। প্রথমত, এখনো সে জানে না, এখনো তার দিশা পাওয়া হয় নাই, কেন আজ তার সঙ্গে এমন অঘোর রাতে কন্ট্রাক্টর সাহেব দেখা করতে আসেন এবং আগেভাগেই খবর দিয়ে। তদুপরি, লোকটির কথাবার্তার ভাবও বোঝা যাচ্ছে না। কী কথায় কী কথা! কোথায় কুসমির সম্পত্তির বিষয়ে কথা বলবেন বলে তার আশা ছিলো, তার বদলে দেশভাগের কথা তুললেন তিনি – এবং এক উন্মাদের কথা। কিন্তু সেই উন্মাদের কথাও ক্রমেই সরে সরে যাচ্ছে বয়ান থেকে, যেন নদীর ঢেউ পাড়ে এসে ফিরে ফিরে যাচ্ছে। কুসমি বলে, রাত অধিক হয়া যায়। – রাইতের আর কাম কী কন, কুসমি? রাইত তো গভীর হইবেই! রাইত তো বসি থাকিবার নয়। কালের গতিও তদ্রূপ! – হইলেও বা! এই প্রথম কুসমি নারীবোধের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করে, মাইনষে বা কী কয়! লোকজনের নজর ভালো নয়! – এতরাতে ঘরে এক পুরুষের উপস্থিতি অপবাদের জন্ম দিতে পারে, এটা কুসমির সুচারু মুখে শুনতে পেয়ে কন্ট্রাক্টর সাবধান হবার বদলে আরো ঘন হয়ে ওঠেন। বলেন, লোকজনের কথা ছাড়ি দেও। তবেই তো তোমাক্ কই, মোছলমান হয়া যাও, নিকার বিষয়ে রাজি হয়া যাও। – এগুলা কী কথা কন, অ্যালা ওঠেন তো! – এই উঠিমো। ওয়াহেদ ডাক্তারের বিত্তান্ত যবে মনে পড়ি গেইলো, শ্যাষ করি যাঁও। শোনো তবে, কলিকাত্তা হতে ওয়াহেদ ডাক্তার হয়া ফিরিলো। হোমিও ডাক্তার। কালা একখান হাত বাকসো, তাতে ঔষধ, আর গলায় টেথিস্কোপ। টেথিস্কোপ চিনিস তো? বুকের পরে ধরি বুকের ধুকধুক শুনিবার যন্তর। কথাটা বলবার সঙ্গে সঙ্গে কুসমির বুকের দিকে নজর যায় কন্ট্রাক্টরের। এখনো উদ্দাম পুষ্ট সরস দুটি স্তন তার।
এই স্তন কি পুরুষের উপভোগ করবার, নাকি কোলের শিশুর জন্যে খাদ্য জোগাবার? আহা, কত নারী সন্তানের জন্যে ব্যাকুল হয়, কিন্তু সন্তান হয় না। সন্তানের জন্যে ব্যাকুল নারী স্বামীর শয্যায় শরীর পেতে রাখে রাতের পর রাত, বীজ রোপিত হয়, বীজ ব্যর্থ, সন্তান আসে না। জলেশ্বরীর নারীরা তখন শেষ গতি হরিষালে যায়। গাছের ডালে লাল সুতা বাঁধে, তিন রাত্রি মাজারে যাপন করে তারা। সেই তিন রাতে কী হয় কে জানে। নারীকে রাতের মজলিশে হাজিরা দিতে হয়। নারীকে ডাবজল পান করানো হয়। সেই ডাবজলে কী জাদু আছে, নারী ঘোর অচেতন হয়ে পড়ে; ভোরে যদিবা তার বোধ হয় নিম্নাঙ্গ সিক্ত, বেদনার্ত, স্রাবিত – তবে বিস্মিত হয় কিংবা হয় না, এ সবই অলৌকিক তদবির বলে গ্রহণ করে তারা, কিংবা সকলেই করে না; কেউ কেউ দ্রুত হরিষাল ত্যাগ করে, কেউবা পরবর্তী রাতে আবার ডাবজল গ্রহণ করে, আবার চেতনহারা হয়, আবার ভোরে সেই সিক্ততা অনুভব করে ওঠে। ওয়াহেদ ডাক্তার বলে, তেরাত্তির শ্যাষে হামার ঔষধ নিয়া যাইবেন, অ্যাক সপ্তা ঔষধ সেবন করিবেন, গভ্ভ তোমার নিশ্চয় হইবে। ওষুধের মূল্য হিসাবে ওয়াহেদ ডাক্তারকে নারীরা টাকা দেয়, কেউ কানের পাশা খুলে দেয় কারণ তাদের নগদ টাকা নাই, কেউ বা ধানচাল দেয়। তবে, ওয়াহেদ ডাক্তারের রোজগার এই পথে শুধু নয়। মূল চিকিৎসাও তার আছে। বিশেষ করে বসন্তের ওষুধ তার অব্যর্থ বলে স্থানীয় নামডাক আছে। সেই সেকালেই পাঁচ টাকা, ব্রিটিশ আমলের পাঁচ টাকা সে বসন্ত রোগের ওষুধের মূল্য আদায় করে। সে ওষুধে রোগ নিরাময় হয় বিধায় গরিব মানুষ রক্তপানি করা পাঁচ টাকাও তাকে ধরে দেয়, এ আমরা শুনেছি।
এইমতো অনেক দিন পার হয়। হঠাৎ রব শোনা যায়, পাকিস্তান হবে। জিন্নাহ সাহেবের পাকিস্তান। ইংরেজ তাঁকে ডেকে বলে, তোমার কথাই থাকিলো হে, ন্যান তোমার পাকিস্তান, হামরা দ্যাশ ছাড়ি চলি যাই। একদিন তারা চলেও যায়। সেই দিনগুলোর কথা জলেশ্বরীর মানুষ যারা প্রাচীন তারা ভোলে নাই। সেই স্মৃতি কি ভোলা যায়! নজির হোসেন ভোলে নাই, ছেচল্লিশের নির্বাচনে যিনি মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসাবে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের অভ্যুদয়কালে, একাত্তরের ষোলোই ডিসেম্বরে বিজয়ের দিনটিতে – তার কয়েকদিন আগেই জলেশ্বরী মুক্ত হয় পাকিস্তান বাহিনীর হাত থেকে – তখন বড় বিমর্ষ বোধ করেছিলেন নজির হোসেন। কোথায় সেই পাকিস্তান হওয়ার প্রথম দিনটি, প্রথম সেই ভোরবেলাটি – আহ্, কী যে ঝলমলে দিন ছিলো সেটি, আর এই একাত্তর! এই ষোলোই ডিসেম্বর – বারুদের গন্ধে আবিল, গলিত লাশের দুর্গন্ধে ভার বাতাস, গোরস্তানের নীরবতায় শংকুল, এর সঙ্গে কি তুলনা হয় সাতচল্লিশের চোদ্দই আগস্ট। হ্যাঁ, মসজিদে কোরান পড়া হয় একাত্তরের ষোলোই ডিসেম্বর – কিন্তু যেন সুরা ইয়াসিনের কেরাত নয়, ক্রন্দনের, বিলাপের ধ্বনি ওঠে আয়াতের পর আয়াত পাঠে। আর মনে করো, কাছারির মাঠে চোদ্দই আগস্ট হাফেজ সাহেবের সেই কেরাত – সুরা আর্-রহ্মান – তোমরা তাঁর কোন্ দান অস্বীকার করবে, হে মানুষ ও জ্বিন! – কী সংগীতই না ছিলো সেই স্বর্গীয় বাক্যসমূহে!
নিভে যাওয়া আগুনে ফুঁ দিলে যেমন আবার ধিকিধিকি জ্বলে ওঠে, দপ্ করে বা শিখা লাফিয়ে ওঠে, স্মৃতিও অবিকল তেমনি। মুসলিম লীগের নজির হোসেনের মনে পড়ে, আমাদেরও মনে পড়ে, যদিও আমরা তখন হয়তো জন্মলাভই করি নাই, কিন্তু পাকিস্তানের জন্মলাভ তখন সমাসন্ন, নতুন এই পাকিস্তানের নিশান তখন ঘোষণা হলো। কলকাতার আজাদ পত্রিকায় তার বিবরণ ছাপা হলো। জিন্নাহ সাহেবের মুসলিম লীগের নিশান ছিলো তেকোনা সবুজ, তার মধ্যে শাদা চাঁদতারা। ঘোষণায় পাওয়া গেলো – নিশান হবে চৌকোনা আর সেই নিশানের লাঠির প্রান্তে শাদা একটা ফালি থাকবে। এখন এতদিন তেকোনা নিশান ঘরে ঘরে, রাতারাতি চৌকোনা সবুজ কাপড় কোথায় পাওয়া যাবে? দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হয়েছে অল্পকাল। কাপড়ের বড় অভাব। তাও সবুজ কাপড়! ওদিকে ইংরেজেরও সময় নাই যে মানুষ নিশানের সবুজ কাপড় জোগাড় করবে তারপর তারা চলে যাবে। অগত্যা সেই তেকোনা নিশানের পাড়েই শাদা কাপড়ের ফালি সেলাই শুরু হয়ে যায়। জলেশ্বরীর আবদুল খলিফা আর শিশির খলিফার সেলাই মেশিনের শব্দে নিশীথ ভরে ওঠে। ফরফর ঘড়ঘড় করে চলতে থাকে মেশিন। জলেশ্বরীর ঘরে ঘরে তেকোনা সবুজ নিশান তার প্রান্তে শাদা ফালি নিয়ে সাতচল্লিশের চোদ্দই আগস্ট ওড়ে।
জলেশ্বরীতে মহকুমা হাকিম তখন নায়েবউল্লাহ্ সাহেব। শোনাশোন কথা তিনি কাদিয়ানি মুসলমান। কাদিয়ানিরা মুসলমান কি মুসলমান নয়, এ প্রশ্ন তখন ওঠে নাই, এ নিয়ে যে কোনোদিন দাঙ্গা-ফ্যাসাদ হতে পারে, মানুষেরা তখন স্বপ্নেই ভাবে নাই। বরং এর আগে বাটলার সাহেব নামে এক ইংরেজ যে মহকুমা হাকিম জলেশ্বরীতে ছিলেন, তার বদলির পরে নায়েবউল্লাহ্ যখন হাকিম হয়ে আসেন, মুসলমানেরা বড় খুশি হয়েছিলো। মাথায় লাল ফেজটুপি, কালো ঝলমলে ঝালর তার একপাশে কান ছুঁয়ে নেমেছে, গালে ঘন চাপদাড়ি, দাড়িতে টকটকে মেহেদির রং, মেরুদন্ড ইস্টিশানের থামের মতো সটান সোজা খাড়া, আর চোখ দুটোই বা কী! – জ্বলজ্বল করছে নুরানি দীপ্তিতে। হাকিমের বাংলাবাড়ি থেকে মাটির রাস্তা সোজা গেছে কাছারির দিকে, সকালে দফতর শুরুর কালে হাকিম নায়েবউল্লাহ্ সেই রাস্তা দিয়ে এক মাইল পথ চকচকে জুতো পায়ে হেঁটে যখন কাছারি যেতেন, মানুষজন সম্ভ্রমে তাকিয়ে থাকতো, দোকানে দোকানে মহাজনেরা বেরিয়ে এসে সালাম দিতো, পথচারীরা পথ ছেড়ে দূরে দাঁড়িয়ে পড়তো – সে দৃশ্য কি ভোলা যায়! ইংরেজ হাকিম বাটলার সাহেবও যখন ওই হেঁটে হেঁটেই কাছারি যেতেন তখনো মানুষেরা এমন করেই সরে দাঁড়াতো, তাকিয়ে থাকতো বিস্ফারিত চোখে, কিন্তু সেটি ছিলো শাদা মানুষ দেখার কৌতূহলে আর অনেকটাই ভয়ে-ভয়ে। কিন্তু নায়েবউল্লাহ্ তো এদেশীয়, তদুপরি মুসলমান, তাই ভয়ের বদলে মুগ্ধতাই লক্ষ করা যেতো মানুষজনের ভেতরে। তবে, সবার ভেতরে নয়। রাজেনবাবুর দোকানে যে নিত্য সমাগম হয় জলেশ্বরীর হিন্দু মানুষদের, আনন্দবাজার পত্রিকা নিয়ে কাড়াকাড়ি করে পড়া হয় নিত্য বিকালে – দুপুরের ট্রেনে কলকাতা থেকে আগের দিনের পত্রিকা আসে এই দূর মফস্বলে, অতএব আসরটা বিকালেই বসে – তারা নায়েবউল্লাহ্র আগমনে পাকিস্তানের আসন্ন জন্মই যেন প্রত্যক্ষ করে ওঠে; তারা বিমর্ষ বোধ করে, ঈষৎ ভীতও হয়, তবে তারাও মুসলমান হাকিমকে এক নজর দেখে নিতে চায়, যেন ওই দেখার ভেতর দিয়েই তারা ইতিহাসের পরিবর্তনটা প্রত্যক্ষ করতে চায়।
সেই নায়েবউল্লাহ্, পাকিস্তান জন্ম-মুহূর্তে জলেশ্বরীর হাকিম সাহেব, চোদ্দই আগস্টের সকাল আটটায় কাছারির মাঠে, কাঁটাতার ঘেরা ট্রেজারির সমুখে আমকাঠের চৌকি জোড়া দিয়ে রচিত মঞ্চে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশের নিশান নামিয়ে পাকিস্তানের নিশান তোলেন। ভোরের মুখে মঞ্চের পাশে বাঁশের দন্ডে পুলিশেরা ব্রিটিশের নিশানটি শেষবারের মতো তুলেছিলো। অন্য সকালে ব্রিটিশের নিশান তোলার সময়ে সারি দিয়ে পুলিশেরা দাঁড়াতো, বিউগল বাজানো হতো, তবে উঠতো নিশান; আজ পুলিশও সারি দিয়ে দাঁড়ায় নাই, বিউগলও বাজানো হয় নাই, কে যে কখন ব্রিটিশের নিশান শেষবারের মতো উঠিয়ে রাখে, কেউ দেখে নাই। রোজার মাস। আর দুদিন পরেই ঈদ। সেহেরি খেয়ে মানুষেরা ফজর নামাজ কামাই হয়ে যায় তবু ঘুমে পড়ে আছে, তাই শেষবারের মতো ব্রিটিশের নিশান তোলার সাক্ষী মুসলমান কেউ ছিলো না; আর হিন্দুরা যখন জেনে গেছে জলেশ্বরী পড়েছে পাকিস্তানের ভাগে, আজ পাকিস্তানের নিশান উড়বে জলেশ্বরীতে, বাড়ি থেকে তারা বের হয় নাই। মহকুমা হাকিম নায়েবউল্লাহ্ কাছারির মাঠে আসেন সকাল সাড়ে সাতটায়। এসে দেখেন মাঠ ভরে আছে মানুষে, দলে দলে আরো মানুষ আসছে পাকিস্তান জিন্দাবাদ জিন্নাহ সাহেব জিন্দাবাদ ধ্বনি দিতে দিতে। ওই আসছে মজিবর দেওয়ান, শহরের তরুণ নেতা, তার পেছনে হাই ইশকুলের ছেলেরা। ওই আসছেন নজির হোসেন মিয়া, জলেশ্বরীর মুসলিম লীগ নেতা, লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য, তার পেছনে শহরের মুসলমান উকিল মোক্তার। কাপড় ব্যবসায়ী হায়দার মিয়ার পেছনে বাজারের সব মুসলমান দোকানি ও সবজিওয়ালারা। মসজিদের হাফেজ সাহেবও আসছেন, আজ তার মাথায় ঈদের দিনের মতোই বেগুনি ছোট ছোট ফুল ছাপা শাদা পাগড়ি বাঁধা।
ট্রেজারির পেতলের ঘণ্টায় ঢংঢং করে আটটার ঘণ্টা পড়ে। মজিবর আগের রাতেই কাছারির মাঠে গর্ত করে বারুদ পুঁতে তোপ তৈরি করে রেখেছিলো, সে এখন এসে তোপের পাশে দাঁড়ায়। নেয়ামতউল্লাহ্ মঞ্চে উঠে দাঁড়ান। পুলিশেরা তাঁর সমুখে সারি দিয়ে দাঁড়ায়। বিউগল বেজে ওঠে। জলেশ্বরীর আকাশে বিউগলের আচমকা শব্দে কাকপক্ষী ডানা ঝটপট করে উড়ে যায়, চক্কর দিতে থাকে মাথার ওপরে। নেয়ামতউল্লাহ্র ইশারায় মসজিদের ইমাম হাফেজ সাহেব মঞ্চে উঠে আসেন; তিনি একপাশে সরে দাঁড়িয়েছিলেন, হাকিম সাহেব তাঁর হাত ধরে পাশে এনে দাঁড় করিয়ে দেন, তারপর ধীরে নামিয়ে আনেন ব্রিটিশের নিশান। পাখির পালকের মতো বাতাসে হেলতে দুলতে দুলতে নিশানটি ডানাভাঙা হয়ে পায়ের কাছে পড়ে যায়। আবার বিউগল বেজে ওঠে – ভ্যাঁ পোঁ পোঁ, ভ্যাঁ-অ্যাঁ-অ্যাঁ, ভ্যাঁ পোঁ পোঁ, ভ্যাঁ-অ্যাঁ-অ্যাঁ। ধীরে উঠে আসে পাকিস্তানের সবুজ নিশান। আর সঙ্গে সঙ্গে মজিবর মিয়া তোপ দাগে – বুম বুম বুম করে তিনবার সেই গম্ভীর নিনাদ জলেশ্বরীর আকাশ কাঁপিয়ে তোলে। সম্ভবত বারুদ বিস্ফোরণের কারণে বাতাসে লাগে বেগ; সে বাতাসে নিশানটি পতপত করে উড়তে থাকে। মানুষেরা সপ্রশংস দৃষ্টিতে দেখে, না, এ নিশান তেকোনা নয়, বিধিসম্মত চৌকোনাই বটে; পাশের একফালি শাদাটি নিশানে বড় নতুন লাগে তাদের কাছে। হাঁ, নতুনই বটে। নতুন, নতুন সব। মানুষেরা জিন্দাবাদ ধ্বনি দিয়ে ওঠে। রাজেনবাবুরা ভিড়ের একপাশে ছিলেন। তাঁদের দিকে স্মিতমুখে নেয়ামতউল্লাহ্ তাকান ও ইশারায় ঘন হয়ে আসতে বলেন। তাঁদের কেউ কেউ দু’এক পা অগ্রসর হয় বটে, কিন্তু তা নিতান্ত হাইকম সাহেবের সম্মান রক্ষার্থে। হাফেজ সাহেব সুরা আর্-রহ্মান থেকে আয়াত পাঠ করতে শুরু করেন – করুণাময় আল্লাহ্, শিক্ষা দিয়াছেন কোরআন, সৃষ্টি করিয়াছেন মানুষ, শিক্ষা দিয়াছেন বর্ণনা, সূর্য ও চন্দ্র হিসাব অনুসারে চলে, এবং তৃণলতা ও বৃক্ষাদি সেজদায় রত, তিনি আকাশকে করিয়াছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করিয়াছেন তুলাদন্ড, যাতে তোমরা সীমা লঙ্ঘন না করো তুলাদন্ডে।
অতঃপর নেয়ামতউল্লাহ্ সাহেব ভাষণ দান করেন – আজ থেকে আজাদ এই মাটি, আজাদ আজ মুসলমান, আজাদির চেয়ে মিঠা লব্জ আর ইনসানের জবানে নাই! আমরা পেছন ফিরে দেখবো, না, মুসলমানের কথা বলা হয়, বাঙালির কথা নেয়ামতউল্লাহ্র জবানে আসে নাই। আজাদ মানে যে মুক্ত, এই শাদা বাংলা শব্দটি সেদিন নেয়ামতউল্লাহ্র জিহবায় ফোটে নাই। ইনসান মানে যে মানুষ, সেই মানুষের ভাষায়, বাংলাভাষায় সেদিন জলেশ্বরীতে সরকারি ভাষণ উচ্চারিত হয় নাই। মহকুমার হাকিম নেয়ামতউল্লাহ্ সাহেব সেদিন প্রথম দু’চার বাক্য অমন আধা বাংলায় বলে সরাসরি উর্দুতে চলে যান – ইয়ে আজাদি আজ মুসলমান কো লিয়ে এক নয়া ইশারা লেকে হাজির হুয়া। ইয়ে খোদা কি শান হ্যয় কে মুসলমান আজ ছে আজাদ হ্যয়। আল্লাহ্ জিন্না সাহাব কো হায়াত দরাজ করে! আইয়ে হাম দরুদ পড়হে, দোয়া মাঙ্গে, আল্লাহকে দরবার মে হাত উঠাকে শুকরিয়া আদা করহে! হাত ওঠান নেয়ামতউল্লাহ্। হাফেজ সাহেব বিভ্রান্ত বোধ করেন। মোনাজাতের হাত যে উঠেছে, ওই যে সমস্ত মানুষ হাত উঠিয়েছে, দোয়া পরিচালনা কি হাকিম সাহেব করবেন, নাকি তাঁকেই করতে হবে? – কেয়া হয়া, হাফেজ সাহাব? আপ চুপ কেঁউ? আইয়ে, দোয়া শুরু কিজিয়ে!
তখনকার দিনে জলেশ্বরীতে মাইকের ব্যবস্থা ছিলো না। এদিকে হাফেজ সাহেব জবরদস্ত হলেও কণ্ঠটি তাঁর ছিলো ক্ষীণ, প্রায় নারীর মতো। তিনি যথাসম্ভব উচ্চৈঃস্বরে দোয়া মোনাজাত পড়তে থাকেন, কিন্তু স্বরগ্রামের অস্বাভাবিক উচ্চতা সংগ্রহের চেষ্টায় কণ্ঠটি চিরে যেতে থাকে তাঁর, ফলে কিছুই ভালো করে কানে পশে না কারো। মোনাজাত শেষে মহকুমা হাকিমের তরফে দাওয়াত উচ্চারিত হয় নজির হোসেনের কণ্ঠে – আইজের দিন রোজার দিন বলিয়া শিন্নি এলায় নয়, ইফতারের সময়, তখন সক্কলে আসিবেন ইশকুলের মাঠে, মসজিদে যারা যাইবেন তাঁরাও পাইবেন সেইখানে, বাজার কমিটির তরফে বাজারেও আয়োজন করা আছে, সরকারের তরফে সবায়কে আইজ ইফতার করান হইবে। কই হে মজিবর, বলি দেও মানুষজনকে। আরো বলি দেও, হিন্দুভাইদের মন্দিরে ভোগরাগ হইবে, তারাও ঝ্যান আসে।
হা হা করে হাসে ওয়াহেদ ডাক্তার। পাকিস্তানে হিন্দুর মন্দিরে পূজাপাঠ হইবে পাকিস্তানের তরক্কী কামনা করি! বোঝেন তবে লীলাখান! পাগলা মোখলেছ কাছারির মাঠে জামগাছ তলায় বসে ছিলো। ওয়াহেদ ডাক্তার তার পাশে বসে এক কথার উত্থাপন করে। – এই যে বিটিশ দ্যাশ হতে চলি গেইলো, এই যে হাকিম সায়েবে কইলো আজ ছে আপলোগ আজাদ হ্যয় – কথাটা কী বুঝিলো তুঁই? কিছুক্ষণ থম্ ধরে থেকে মোখলেছ বলে, যা বোঝার তা বুঝিছোঁ। – না, তুই বুঝিস নাই। বুঝিবি দুইদিন বাদে। আমি হরিষাল ফিরি যাই। সেথা হতে আজাদির নয়া ঘোষণা মুঁই দেমো। আমরা আতান্তরে পড়ে যাবো ওয়াহেদ ডাক্তারের এ কথা শুনে। পাগল  কি মোখলেছ না ওয়াহেদ ডাক্তার – আমরা অচিরেই দেখে উঠবো। r (চলবে)