নীল অপরাজিতা

একটা কুমারী ফুল, সদ্য ফুটেছে, কারো নজরে পড়েনি, যেমন কোমল রং, তেমন মৃদু পুরুত্ব, সে কেবল হাসছে, আর তার চারপাশে যা যা আছে, গাছ-পাতা, দূরের সূর্য, বাগানের মালি, প্রজাপতি, সবাইকে ডাকছে, বলছে – দেখো আমি ফুটেছি আমি ফুটেছি, আমাকে একবার ছুঁয়ে দাও;

একটা গন্ধগোকূলের ইচ্ছে অপরাজিতা ফুলের সঙ্গে দেখা করবে; ফুল তো কুমারিত্ব হারানোর ভয়ে তটস্থ; রোদ বাড়লে তার রং নষ্ট হবে, ত্বক অমসৃণ হয়ে যাবে, অকালে ঝরেও যেতে পারে; তাই, ফুল শর্ত দেয়, তোমাকে চন্দনের বনে গিয়ে ঘ্রাণ পাল্টাতে হবে; ক্ষুদ্র প্রাণী কি আর করবে? এক ছুটে চন্দনের বনে চলে যায়, কিন্তু বারবার তার পথ ভুল হয়; কিছুতে তার গন্ধ দূর হয় না; মাখনের পুকুরে সাঁতার কেটেও তার শাপমোচন হয় না;

গন্ধগোকুলের কিচ্ছু করার নেই, সে কেবল অপরাজিতা ফুলের কাছে তার সময় বন্ধক রাখে; দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, সাদা ফুল ক্রমে নীল হয়ে যায়; তার সৌন্দর্য আরো বাড়ে; নাভীপদ্মের মতো, আরো নিচে, আরো গভীরে, আরো নীলে, একটা গোপন সিন্দুক যেন, ঢাকাই মিহি মসলিন, পাঁপড়ির মতো পাতলা, চারপাশে কেবল ঐশ^র্য ছড়ায়;

নীল অপরাজিতা, অমরত্বের প্রতিষেধক, একবার ছুঁয়ে দিলে মৃত্যুর যন্ত্রণা চিরকালের মতো উপশম হয়;

কিন্তু সেই ফুল স্পর্শের আগেই ঝরে যায়;