প্রচ্ছদ-পরিচিতি

নাসরীন বেগম জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাচ্যরীতির কাজে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম তাঁর প্রাচ্যরীতির ফিগারেটিভ কাজে সৃষ্টির আশ্চর্য তন্ময়তা। চড়া রং তিনি কোনোদিন ব্যবহার করেননি। শারীরিক বিম্ব-গঠনের মুন্শিয়ানা তাঁর শিল্পরূপকে করে তুলেছিল গহনতা-সন্ধানী। একদিকে নারীর নিঃসঙ্গতা, নারীত্বের বেদনাকে উপলব্ধি করে এক বিষাদগীতি পটে অঙ্কন করেছেন তিনি, অন্যদিকে ‘নতুন জীবনের দরোজা’ শিরোনামের চিত্রগুচ্ছে জীবনের আশার উচ্চারণও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

নাসরীন প্রকৃতির ভেতরমুখী সৌন্দর্য ও নারীর বেদনা-অঙ্কনে সৃজনকুশলতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর ছবির বিষয় ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আমাদের নিয়ে যায় একটি বহুচেনা কিন্তু অল্প উপলব্ধ ভুবনে এবং চিনিয়ে দেয় এক সংবেদনশীল, অনুভূতিপ্রবণ শিল্পী-মানুষকে। প্রকৃতির কাছে তিনি ফিরে গেছেন কৈশোরকালীন অনুভাবনা থেকে; স্মৃতির নানা অনুষঙ্গ আছে এই প্রকৃতি-পাঠে। অধরা মাধুরী আর সৌন্দর্যের ধ্যানকল্পনা এখানে মিলেমিশে এক হয়েছে। প্রকৃতি, ফুল, লতাপাতা যেন এক ভালোবাসার আবেশ সৃষ্টি করেছে তাঁর চিত্রগুচ্ছে।
নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি কখনো প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য অবলোকনে কিংবা নিসর্গের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য তাঁর চোখে যেভাবে ধরা দেয় তার রূপ-উন্মোচন করেন তিনি ধারাবাহিক কাজের মধ্য দিয়ে। তাঁর চিত্রে প্রকৃতি নতুন মাত্রা নিয়ে উন্মোচিত হয়। অন্যদিকে তিনি আরো জিজ্ঞাসা সঞ্চার করে নারীর অন্তর্দহনকে নিজস্ব পরিপ্রেক্ষিতজ্ঞানে ক্যানভাসে তুলে এনেছেন আরো তীব্র, তীক্ষ্ণ উপলব্ধির মধ্য দিয়ে, যা হয়ে ওঠে জীবন-যন্ত্রণার এক অনাবিল সৌন্দর্য। এখানে আত্মজিজ্ঞাসা আছে, আত্ম-অবলোকনও কম তীব্র নয়।
নাসরীন বেগমের জন্ম ১৯৫৬ সালে, বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গায়।