বন্যা

‘শিল্পগুরু’ সফিউদ্দীন আহমেদ এদেশের আধুনিক শিল্পকলা চর্চায়, বিশেষত ছাপচিত্রের আধুনিকায়নে, পথিকৃতের ভূমিকা রেখেছেন। তাঁকে বাংলাদেশের আধুনিক ছাপচিত্রের ‘জনক’ বলা হয়।

তিনি ছিলেন সর্বদাই পরিবর্তন-প্রয়াসী। গত শতকের চল্লিশের দশকে পশ্চিমবঙ্গে সাঁওতালদের জীবন ও প্রকৃতি নিয়ে যে-আঙ্গিকের কাজ করেছেন, পঞ্চাশের দশকে এসে তা পরিবর্তন করেছেন। নতুন চিত্রভাষা উপহার দিয়েছেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এবং বানভাসি মানুষ বিষয়ক কাজের ক্ষেত্রে তিনি চোখ ও নৌকার গলুইতে যে-আঙ্গিক ব্যবহার করেছেন, সেখানেও পরিবর্তনের নিরীক্ষা স্পষ্ট। এমনকি জীবনের শেষ পর্যায়ের কাজগুলোতেও বাঁক বদল করেছিলেন তিনি।

মাধ্যমগত নিরীক্ষায় ব্রতী হওয়ার বিষয়টিও তাঁর শিল্পবৈশিষ্ট্যের অংশ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে করেছেন ড্রইং আর তৈলচিত্র। ছাত্রজীবনের পর আর জলরঙে ছবি আঁকেননি। উড এনগ্রেভিং মাধ্যমে চর্চা শুরু করেছিলেন সেই ছাত্রজীবনেই, যা তাঁর লন্ডন যাওয়ার আগে পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। কলকাতায় শিক্ষকতা কোর্সে অধ্যয়নকালে ড্রাই পয়েন্ট করেছিলেন, তারপর আর করেননি। ওই সময়েই কোর্সের প্রয়োজনে লিথোগ্রাফ ও মু্যুরালও করেন।

কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে তিনি চারুকলায় স্নাতক এবং ১৯৫৮ সালে যুক্তরাজ্যের সেন্ট্রাল স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস থেকে এচিং ও এনগ্রেভিংয়ে ডিপ্লোমা করেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাপচিত্র বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ দেশ-বিদেশে বহু পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন।

তাঁর জন্ম ১৯২২ সালে কলকাতায়; মৃত্যু ২০১২ সালের ২০ মে, ঢাকায়।

প্রচ্ছদের চিত্রটি ১৯৫৬ সালে উড এনগ্রেভিং পদ্ধতিতে ছাপচিত্র মাধ্যমে আঁকা।

সংগ্রাহক আবুল খায়ের।