বাঁক পেরিয়ে ঘুরতে ঘুরতে

শিউল মনজুর

অনেকদূর পথ হেঁটে এসে তোমাকে ছুঁয়ে দেখি মনোলোকের শাদামাটা ক্যানভাসে খেলা করছে হারানো দিনের বহুমাত্রিক জীবনলিপি। যদিও ঝরাপালকের মতো ঝরে যাচ্ছে সময় তবু শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনির ভেতর দিয়ে অবিরাম গান গাইছে শৈশবের রাঙা চড়ুই আর দুপুরের পুকুরজলে ডুব দিচ্ছে পাঠশালা পাঠের দুরন্ত মাছরাঙা।

অনেকদূর পথ হেঁটে এসে দেখি জংধরা পুরনো দরজা আজো আমার পদশব্দে খুলে যাচ্ছে। আয়নার সম্মুখে দাঁড়িয়ে দেখি; কৈশোরের বুলবুলি পাখিটা উড়ে যাচ্ছে দূরের বনের দিকে আর খোকাটি হাতের নাটাই সুতো রেখে দৌড়ে যাচ্ছে বুলবুলি পাখিটির খোঁজে। আর মনের ভেতরে প্রতিদিন অবিরাম একটি পানকৌড়ি নদীর গভীরে ডুব দিয়ে তুলে আনছে দাঁড়কিনা মাছের ছুটন্ত ভুবন।

হাঁটতে হাঁটতে পথের বাঁক পেরিয়ে ঘুরতে ঘুরতে সূর্যটা মধ্যগগনে এলে দেখি, মতিহারের আকাশে আর বাতাসে এলোমেলো একটি ঘুড়ি উড়ছে দিক্ভ্রান্ত অথবা গন্তব্যহীন। তুমি কি জানো, সেই রাঙাঘুড়ি কোথায় আছে, উড়তে উড়তে কোন আকাশে হারিয়ে গেছে? আমি আজো সেই রাঙাঘুড়ি হাঁটতে হাঁটতে খুঁজে যাই পথ থেকে পথের প্রান্তরে।

বিকেলের ছায়া নেমে এলে, ধীরপায়ে হেঁটে যাই নদীতীরে। কোথায় সেই নদী? নায়াগ্রার জলশব্দে ভেসে আসে শৈশবের প্রিয় নদী, স্বর্গজলের স্রোত নিয়ে চলে যাচ্ছে দূরের পথে এঁকেবেঁকে গ্রাম আর গঞ্জের হাট ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমার হৃদয়কে জলে ভাসিয়ে।

আজ পথ হারিয়ে পথ খুঁজতে খুঁজতে ছুটতে থাকি গাড়ির চাকায় কখনো ওয়াশিংটনে, কখনো আটলান্টায়, কখনো নিউইয়র্ক, আবার কখনো টরন্টো অথবা এক দেশ পেরিয়ে আরেক দেশের সীমানায়। তবু মন ভরে না, মন ভরে না …

অনেকদূরের পথ হেঁটে এসে আজো দেখি কাঁঠালিচাঁপার গন্ধে মন পড়ে আছে শত আন্দোলনের ছবি আঁকা মাতৃভূমির আঙিনায়।