বাংলা ভাষা ও সাহিত্য : ধ্রুপদী মানের উপাদান প্রসঙ্গে

কথা শুরুর আগে

বাংলা ভাষা-সাহিত্যের বয়স হয়েছে প্রায় এগারোশো বছর। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর প্রকাশিত চর্যাপদের সময়টা হিসাবে নিলে বয়সটা সেরাম হওয়ার কথা। কিন্তু এই ভাষা-সাহিত্যের বয়স কি সত্যিই তাই? সম্ভবত নয়। সাধারণ একটা ধারণা যদি মেনে নিই যে, যে-কোনো ভাষার সমৃদ্ধ একটা সাহিত্য তখনই তৈরি হতে পারে, যখন ভাষাটি যথেষ্ট উন্নত ও সাহিত্যের ভাব-প্রকাশের উপযোগী হয়ে ওঠে। কাজেই, ভাষা আগে, সাহিত্য পরে। বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও কথাটা খাটে। যাকে আমরা বাংলা ভাষা-সাহিত্যের প্রাচীনকাল বলে ধরে নিই, তা আসলে উপাদান আর উদাহরণ না-পাওয়ার কারণে পিছিয়ে আনা ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু মানতেই হবে, শুধু সেকালে নয়, একালেও বঙ্গদেশের জলবায়ু সাহিত্য সংরক্ষণের অনুকূল নয়, যদি না এখনকার প্রযুক্তির দয়া-দাক্ষিণ্য স্বীকার করি। খরা, বন্যা ইত্যাদি তো আজো এদেশে লেগে আছে। বঙ্গীয় পুঁথিগুলি বাঁচবে কী করে! সঙ্গে বোধহয় দোসর ছিল শিক্ষিত বাঙালিদের পুরনো জিনিসপত্রের প্রতি  অবহেলা, উদাসীনতা ইত্যাদি।

সেকাল-একাল

বাঙালির সংস্কৃতাদি আর্যভাষার কিংবা পারসি ভাষার সাহিত্যচর্চা, আর এখন ইংরেজি ইত্যাদি আন্তর্জাতিক ভাষার কদর। আর এই ভারতীয় প্রাদেশিক ভাষা বাংলায় অনেক কাল আগে থেকেই সংকট তৈরি হয়েছিল। নিজের ভাষার উপাদানে কাজ হাসিল হয়নি বলে সমাজ ও সাহিত্যে নানা ভাষার উপাদান বগলদাবা করতেই হয়েছে একদা। অবশ্য সব ভাষাতেই তা
কম-বেশি হয়ে থাকে। চর্যায় অনার্য ভাষার উপাদানাদি গ্রহণ, ভারতচন্দ্রের ‘যাবনী মিশাল’ প্রবণতা ইত্যাদি সে-যুগে চলত, হাল আমলে বাংরেজি, হিংলা ইত্যাদি নানা মিশ্র রূপ হালে পানি পাচ্ছে। তবে তার সঙ্গে চলেছে কিছু বাংলা ভাষা চর্চাকারীর চরম আক্ষেপ। 

অবশ্য এখন বাংলা ভাষা-সাহিত্য নিয়ে ভাবনায় মোটামুটি দুটো প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ভারতীয় বাঙালিদের একপক্ষ এখন ভাবছেন, মাতৃভাষা বাংলার পিঠ এক্কেবারে দেয়ালে ঠেকে গেছে। অন্যপক্ষ আবার ভাবছেন, ঠেকেনি। বাংলাদেশের বাংলা ভাষার দিকে তাকিয়ে দেখুন না! আন্তর্জাতিক ভাষা বাংলা এখন বিশ্বের মধ্যে মধুরতম ভাষা, সিরিয়া লিওনের দ্বিতীয় ভাষা ইত্যাদি। নেতির সমর্থক ভারতীয় বাঙালিরা মনে করছেন, ধুস্! পিঠ যদি ঠেকেই থাকে, কী-আর এমন হবে। মাটির হোক আর পাকা হোক দেয়াল-ফেয়াল ভেঙে পিঠটাকে নিয়ে কিছু সামনে এগোলেই তো হয়! বিকল্প উপায়ও আছে, দেয়াল না ভেঙেও – নাইবা পিছালো সে-পিঠ। ঠেকে-যাওয়া পিঠটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসুক না! … এরকম ভাবনা যাঁরা ভাবছেন তাঁদের অবশ্য মুলুক ডুবে গেলেও একহাঁটু। তবে এদের আশা কিন্তু যায় যায় করেও মরছে না। মাতৃভাষা বাংলার ক্ষীণাশার সূত্রটুকু ধরে থাকতে এরা এখনো নাছোড়, ভাষার অন্ত্রে-তন্ত্রে তা সে যত যা-ই অঘটন-কুঘটন ঘটে যাক, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ইত্যাদি ভারতীয় অঙ্গরাজ্যে মাতৃভাষার প্রতি যতই বাংলাভাষীর অবহেলা ব্যক্ত হোক।

আর হ্যাঁ-পক্ষ ভাবছেন, কেনইবা ঠেকবে না ও-পিঠ! কাক হয়ে কাকের মাংস খাচ্ছে যে অবিবেচক বাঙালি! বাঙালি হয়েও মাতৃভাষাকে এক্কেবারে হেলাফেলা করতে চাইছে! চালাতে চাইছে ভাষাটির ওপর রক্ত-ঝরানো অত্যাচারের নানা রোলার! সেই কবে থেকে চলছে এই শত নীরব-সরব অত্যাচার-অনাচার। এখন তা জমতে জমতে হয়েছে প্রায় পর্বতপ্রমাণ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সুগ্রীব দোসর – বড় দুই ভাষা ইংরেজি ও হিন্দির দ্বিমুখী সাঁড়াশি আক্রমণ আর ‘চাপট’১। সেইসঙ্গে চরম ভাষাদূষণ তথা একাধিক ভাষার মিশ্রণজাত খিচুড়ি, অর্থহীন ভাষাবিকার ইত্যাদির উইপোকাও বাংলা ভাষাকে এখন কুরে কুরে খাচ্ছে। আর সেজন্যই তো বাংলা ভাষার প্রকৃত রোগলক্ষণ চিহ্নিত করে এরা অনেকে সঠিক চিকিৎসা দিতে বদ্ধপরিকর। এরা বাংলা ভাষার ভাবীকাল নিয়ে প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন! অতএব, এদের মধ্যে যথেচ্ছ হাপিত্যেশও প্রকট হচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই। তাই বাংলা ভাষা-সংস্কৃতিকে বাঁচাতে এখন কতিপয় স্থানে বিতর্কসভার আয়োজন করছেন এদেরই অনেকে। অবশ্য কিছু হচ্ছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে, কিছু গোষ্ঠীগত বা সম্মিলিত প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়াসে। তবে এই প্রয়াসে অভিমত ব্যক্ত হচ্ছে নেতিবাচক ও ইতিবাচক দ্বিমুখী বিভাজনে। কিংবা না-ভোটে, নিরপেক্ষতায়। কিন্তু এটা তো দ্বিধাহীনভাবে সত্যি যে, বাংলাদেশ বাদ দিলে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, কর্ণাটক, ছত্তিশগড়, আন্দামান, দিল্লি ইত্যাদি ভারতীয় রাজ্য তথা ভারতীয় নানা অঞ্চলের বাংলা ভাষার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো নেই। পাথরচাপা আলো-বাতাস-জলহীন ঘাসের মতো অস্বাভাবিক ফ্যাকাসে, নিষ্প্রভ হয়ে যাচ্ছে আমাদের এই ভাষা-সংস্কৃতি। অন্তত আম-শিক্ষিত বাঙালির মুখে ও কলমে, গণমাধ্যমে, সোশ্যাল সাইট ইত্যাদিতে। সত্যি বলতে, এখন অর্থাৎ একুশ শতকের তৃতীয় দশকের শুরুতে ভারতীয় রাজ্যগুলির বাংলা ভাষা নানা দুর্বিষহ ব্যাধিতে জরাজীর্ণ।

করণীয়-কর্তব্য

কিন্তু এই বাংলা ভাষাকে নিয়ে আমরা যদি সংগঠিতভাবে এখনো না ভাবি, স্ব-উদ্যোগ না নিই তবে ভাবীকালে ভাষাটির সসম্মানে বেঁচে-থাকা সম্ভব তো! অবশ্য এ নিয়ে বাঙালিদের অবিচ্ছিন্ন ও সংগঠিত ভাবনা বেশি করে ফলপ্রসূ করতে পারা সম্ভব, যদি বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার ও বাংলাদেশ সরকারকে ভাবিয়ে তুলতে পারা যায় (কারণ, পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ইংরেজি প্রাইমারি স্কুলের স্বীকৃতি ইত্যাদি বাদ দিলে এই পশ্চিমবঙ্গের সরকার বাংলা ভাষা, বাঙালি-ঐতিহ্য, লোকসংস্কৃতি ইত্যাদির আঞ্চলিক ও বৈশি^ক উন্নয়ন তথা ‘বিশ^বাংলা’ নিয়েও যথেষ্ট ‘সিরিয়াসলি’ই ভাবছে। এখন আবার বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী করতে সরকারি উদ্যোগও তৈরি হচ্ছে)। যেহেতু বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলা ভাষাটির ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার যোগ্যতা আছে (আমাদের আলোচনা ভারতীয় পরিপ্রেক্ষিত ধরে এগোবে)। এই স্বীকৃতি আদায়ের উদ্যোগ যদি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নেওয়া হয়, তাহলে অন্তত ভারতীয় ভাষা-অরণ্যের [ছোট-বড় ভাষা মিলিয়ে ভারতে প্রায় শ’দুয়েক (১৭৯ অথবা ৫৪৪)-এর মতো ভাষা আছে] মধ্যে বাংলা ভাষার একটা সাংবিধানিক গুরুত্ব তৈরি হয়। আরো আন্তর্জাতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।

তবে কেবল কবিগুরুর ভাষা, আন্তর্জাতিক বা মধুর ভাষা বলে ভেবে বসে থাকলে চলবে না, এটিকেও ‘একটি’ করে তোলা দরকার। তার জন্য যে-কাজটি করতে হবে তা হলো, ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক যখন ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতির জন্য আবেদন (Call for Classical languages) গ্রহণ করে, তখন পশ্চিমবঙ্গের সরকার বা সরকারের সংস্কৃতি দপ্তরকে যথাসময়ে আবেদনটুকু করতে বা করাতে হবে (বাংলাদেশ এ-ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে কি না জানা নেই)। আর তা না হলে, ভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতে যেমন ক্ল্যাসিক ভাষার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রাচীন ভাষা পালি (প্রাকৃত, পারসি, আরবিও)  ক্ল্যাসিক হিসেবে স্বীকৃত হয়নি, তেমনি হবে এই ভাষার অবস্থা। আর এমন হলে কতিপয় প্রধান ভারতীয় ভাষার মধ্যে আন্তর্জাতিক ভাষা, সিরিয়া লিওনের ‘অফিসিয়াল’ ভাষা বাংলারইবা স্বাতন্ত্র্য থাকে কী করে!

তবে মনে রাখা ভালো যে, কেবল যেমন-তেমন করে একটা আবেদনপত্র পূরণ করে পাঠালেই এই ভাষা ধ্রুপদী স্বীকৃতি পাবে না। এর জন্য যথাসম্ভব আন্তরিক প্রাক্‌-প্রস্তুতি জরুরি। কারণ ধ্রুপদী ভাষার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে লিখিতভাবে, পুস্তিকা বানিয়ে, ‘ডকুমেন্টেশন’ করে। অবশ্যই ইংরেজি ভাষায়। এই লিখিত পুস্তিকা তৈরির জন্য একটি কমিটি এবং পণ্ডিতমণ্ডলীর প্রয়োজন। প্রয়োজন যাঁদের অতীত ও বর্তমান বঙ্গসংস্কৃতি ধারা সম্পর্কে নানা স্তরীয় দক্ষতা তথা পাণ্ডিত্য আছে। এই কাজের জন্য প্রয়োজনে আসতে পারেন একাধিক ভাষাসহ বাংলা ভাষাবিজ্ঞানে পারঙ্গম ব্যক্তিগণ, প্রাজ্ঞ বাঙালি ঐতিহাসিক-সংস্কৃতিতাত্ত্বিকরা, ইংরেজি ভাষা-জানা বাঙালি সুপণ্ডিত ব্যক্তিরাও (বাংলাদেশের বিজ্ঞজন এখানে অংশ নিলে ভালোই হবে)। যাঁরা একজন কমিটি-প্রধানের (বাঙালি হওয়া উচিত, নইলে এই ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি মানসিক দরদ-সহানুভূতি থাকতে নাও পারে) অধীনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের স্বাতন্ত্র্য দেখাতে প্রয়াস করবেন। আর তা দেখাতে গিয়েও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এই প্রদর্শনের জন্য যেহেতু একটি স্থায়ী যৌক্তিক ইতিহাস তৈরি হবে, তা যেন কেবল অমূলক কল্পনা না হয়, তা যেন মালয়ালম ভাষার ক্ল্যাসিক স্বীকৃতি আদায়ের মতো বিতর্কিতও না হয় – মামলা-মোকদ্দমা না হয়ে যায়, তাও খেয়াল রাখতে হবে। এমন সতর্কভাবে এই কাজটি করা চাই, যাতে ধ্রুপদী ভাষার যোগ্যতা নির্ণায়ক মানদণ্ডগুলি যথাযথভাবে আলোকিত হয়। নিছক অনুমান-নির্ভরতা দিয়ে কাজটা সম্পন্ন হওয়া উচিত নয়, তথ্যনির্ভর সুযুক্তি বা যুক্তিজালের যথাযথ ক্রম থাকা বাঞ্ছনীয়। আর তাহলেই তৃতীয় ভারতীয় আর্যভাষা (সংস্কৃত ও ওড়িয়ার পর) হিসেবে বাংলা ভাষাই হয়ে উঠতে পারে সপ্তম ভারতীয় ধ্রুপদী ভাষা (এখানে দক্ষিণ ভারতীয় চারটি দ্রাবিড় ভাষার ক্ল্যাসিক স্বীকৃতিও স্মর্তব্য)। বলা বাহুল্য যে, বাংলা ভাষার ক্ল্যাসিকত্ব প্রমাণের মালমসলা কিন্তু আংশিক মজুদ রয়েছে।

বাংলা ভাষার ধ্রুপদী রসদ

এবার আসা যাক, ধ্রুপদী ভাষা নির্ণায়ক ভারতীয় মানদণ্ডগুলি প্রসঙ্গে। সাধারণভাবে ভাষাটি ক্ল্যাসিক হতে হলে, সেই ভাষা ও তার সাহিত্যের সমৃদ্ধিকাল হতে হয় অন্তত দেড় থেকে দু-হাজার বছরের। তার থেকে বেশি হলেও ক্ষতি নেই, কিন্তু কম হলে চলবে না। ভাষাটির নিজস্বতা বা স্বাতন্ত্র্য থাকা বাঞ্ছনীয়, অন্য ভাষাসংস্কৃতি থেকে ধার-করা ঐতিহ্য এক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত নয়। আবার ভাষাটির প্রত্নরূপের সঙ্গে আধুনিক রূপের বিচ্ছিন্নতা থাকতেই পারে। তবে ভাষাটির আধুনিক রূপ পর্যন্ত ধরলে এর নানা স্তর-উপস্তর বা ভাঁজভোজ থাকতেই পারে। উপর্যুক্ত প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে অনায়াসসুলভ। অন্তত অনেকখানি। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর আবিষ্কৃত চর্যাপদকে ধরে (যদিও সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখের মতে, চর্যাপদের ভাষা আসলে পশ্চিমবঙ্গের প্রত্নবাংলার রূপই) নিলেও কালিক হিসাব বাড়তে পারে। ধরা কর্তব্য এই জন্য যে, কিছু কিছু চর্যার সৃষ্টিকাল যদি সপ্তম শতাব্দী (আধুনিক বাংলাদেশের বিদ্বজ্জন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, হিন্দি সাহিত্যের দাবিদার রাহুল সংকৃত্যায়ন প্রমুখের মতে) ধরা হয়ও২, তবে বাংলা ভাষার বয়ঃকাল প্রায় দেড় হাজার বছরের কাছাকাছি চলে যায়। তবে, চর্যাপদের দাবিদার অনেক ভাষা-সংস্কৃতি, যথা ওড়িয়া (২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত), মৈথিলী, হিন্দি, মগহী, অসমিয়া, অপভ্রংশ-অবহট্‌ঠ ইত্যাদি। চর্যার ওপর ওড়িয়া ভাষা-সাহিত্যের দাবি ইতোমধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ভারতে স্বীকৃতও হয়েছে। ভারতীয় সংবিধান তা মেনেও নিয়েছে। তবু ওই সাহিত্য নমুনাটি প্রকৃতপক্ষে যে কার, এ-বিতর্ক আজো সচল। ভাবীকালেও চলবে হয়তোবা। তবে এটা ঠিক যে, উপাদানের প্রয়োগ শতকরা হারে বিবেচনা করলে চর্যার ওপর বাংলা ভাষার দাবিই বেশি, যতই ওড়িয়াভাষীরা তা ছিনিয়ে নেওয়ার প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়াস করুক।

তবে বাংলা ভাষার আরো পুরনো, আরো স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ অতীত-সূত্রও আছে। কিছু কিছু উদাহরণ দেওয়া যায়। বাঙালি, ভারতীয়, এমনকি আন্তর্জাতিক পুরাতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক, লিপিতাত্ত্বিকদের অনেকেই প্রমাণ করেছেন যে, পাণ্ডুক রাজার ঢিবির (স্থান পশ্চিমবঙ্গের ভেদিয়া রেলস্টেশনের নিকটবর্তী, আনুমানিক কাল খ্রিষ্টপূর্ব ১৬০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ অব্দ) পূতলিপি (hieroglyphs) ও চিত্রাক্ষর (pictographs) আসলে বর্তমান বাঙালির প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রত্ন-ভাষা-সম্পদ। রিডলের মতে, এখানে প্রাপ্ত একটি শিলমোহরে রয়েছে AETEEAH বা আতিয়া (AE = জল, TEE = মাছ ও AH = শিরোস্ত্রাণ) নামক নাবিকের নাম। তবে আর এক আলোচক প্রীতিমাধব রায়ের মতে, শিলে আঁকা মাছের ছবি প্রশান্ত মহাসাগরীয় ইস্টার দ্বীপপুঞ্জের বঙ্গো চিত্রলিপির মাছের সঙ্গে বেশি মেলে। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের সেলিবিস দ্বীপের বুগী সম্প্রদায়ের বুগীলিপির সঙ্গেও শিলের লিপির আশ্চর্য মিল বিদ্যমান। এটি ব্রাহ্মী গোষ্ঠীর তুলনায় কম জটিল লিপি। তাঁর মতে, বাঁদিক থেকে রেখলিপিকে সাজালে ‘ন দ ঙগ ক ত’ (অর্থাৎ নদঙ্গ কতঃ, অর্থ হলো নদীর জল পরিষ্কার করা নিমলি ফল)। তা অবশ্যই, এরান মুদ্রা বা প্রাচীন মৌর্যলিপি অপেক্ষা প্রাচীন।৩ তবে অন্য এক আলোচক বঙ্কবিহারী চক্রবর্তী এই রেখলিপিকে ‘পণ্যভূম’ হিসেবে পাঠ করেছেন। তিনি মনে করেছেন, নাগার্জুনকোণ্ডা ও উবয়ুরে প্রাপ্ত শিলালিপির সঙ্গে এর মিল রয়েছে। যাই হোক, ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, উৎখননে প্রাপ্ত উক্ত ঢিবির মৃৎপাত্রসমূহের সু-অঙ্কিত লিপিগুলি ‘বাংলাদেশে প্রাচীনযুগে প্রচলিত অক্ষর’ই। প্রায় সমকালের এই ধরনের সমতুল আরো কিছু সভ্যতার নমুনা, ‘পাথরের পুঁথি’ পাওয়া গেছে, যা পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষার অতীতকে করেছে যথেষ্ট গৌরবান্বিত। এমন কিছু নমুনা বাংলাদেশ আমাদের উপহার দিতে পেরেছে কি না আমার জানা নেই। পেরে থাকলে ভারতে বাংলা ভাষাকে আরো মর্যাদাবান করা সম্ভব।

খ্রিষ্টপূর্ব ২০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টীয় ৪০০ অব্দ নাগাদ সৃষ্ট বৌদ্ধগ্রন্থ মহাবস্তুতে বঙ্গলিপির উল্লেখ রয়েছে। এই লিপির আবিষ্কারক নাকি বোধিসত্ত্ব (মহাবস্তু ১, সপ্তম ভূমি ১০৭)। অন্য বৌদ্ধগ্রন্থ ললিতবিস্তার সূত্র (খ্রিষ্টীয় ৩০০ অব্দ)-তেও এই বঙ্গলিপির উল্লেখ বিদ্যমান। শিক্ষক বিশ্বামিত্রের কাছে শিক্ষার্থী বোধিসত্ত্ব জানতে চান, কোন্‌ লিপি তিনি (বিশ্বামিত্র) শেখাবেন – ব্রাহ্মী, খরোষ্ঠী … বঙ্গ ইত্যাদি কোন্‌ লিপি (অধ্যায় ১০)?  অনুমান করা যায়, বাংলালিপি প্রচলিত ছিল, তার মানে বাংলা ভাষার মৌখিক কিছু উপ-বৈচিত্র্য নিশ্চয় প্রচলিত ছিল। তৎকালীন শিষ্ট ভাষা বাংলার উন্নত সাহিত্যও সেকালে হয়তোবা সৃষ্টি হয়েছিল (তবে এ হয়তো নিছক অনুমানই)।      

আবার খ্রিষ্টীয় ৫০০ অব্দ নাগাদ কিছু বাংলা শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। তবে সংস্কৃতায়িত হয়ে, সংস্কৃত ভাষার মোড়কে। যথা পল্লী-নাম, কিছু তদ্ভব ও দেশি শব্দ। ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তা আমাদের বিশ্লেষণ করে, উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন (এখানে উদাহরণ নিষ্প্রয়োজন)। এই ধরনের বাংলা শব্দের কতিপয় প্রয়োগ সম্ভবত কোনো বাঙালিই করেছিলেন। তার মানে অনুমান করা যায়, একধরনের কথ্যবাংলা সম্ভবত তখন প্রচলিত ছিল। এও আন্দাজ করা যায়, এই সময়ে ভাষাটির লোকসাহিত্য নিদেনপক্ষে সৃষ্টি হয়েছিল! 

কিছু কিছু চর্যাপদকে সপ্তম শতাব্দীর সৃষ্টি ধরলে এই সময়ে বাংলা ভাষার আরো প্রয়োগ-নমুনাও প্রাপ্তব্য। যেমন এই সময় সংকলিত একটি সংস্কৃত-চীনা ভাষার অভিধানে (প্রবোধচন্দ্র বাগচী-সম্পাদিত) বেশ কয়েকটি বাংলা শব্দের প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এই শব্দের বিবরণ দিয়েছেন তাঁর বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত এনে। সমকালে এই ধরনের নমুনা আরো কিছু পাওয়া সম্ভব বলেই আমাদের বিশ্বাস।

অবশ্য বাংলা ভাষা-সাহিত্যের এমন অতীত (যে-অতীত অন্তত দেড় হাজার বছর আগের) নিয়ে আরো তন্বিষ্ঠ অধ্যবসায় ও গবেষণা দরকার। এ-ব্যাপারে সহায়ক হতে পারেন বাংলাদেশের গবেষকগণও। যাই হোক, উপর্যুক্ত তথ্য ও যুক্তির ভিত্তিতে দেখালে ও দেখলে, বাংলা ভাষার বয়সকাল অন্তত দেড় হাজার হয়ে যায়। তবে আরো বিশদ তথ্য ও যুক্তি গ্রন্থাকারে নির্মাণ হওয়া বিধেয়। তাহলে, এই স্বীকৃতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়।

বাংলা ভাষা-সাহিত্য আলোচকদের অভিমত

আমাদের উপর্যুক্ত বক্তব্যের সমর্থনে বাংলা ভাষাতত্ত্ব, বাংলা সাহিত্য এবং ইতিহাসের প্রখ্যাত আলোচকদের নানা অভিমত উদ্ধার করা যেতে পারে। সেগুলি দেখা যাক। প্রখ্যাত বাঙালি ভাষা-মনীষা সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, ‘আমাদের অতীত কিছু অগৌরবের নয় – মোটে দুহাজার, দেড় হাজার বছরের হলই বা?’ (বাংলা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা)। আট-নয় খণ্ডে যিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস  লিখেছেন সেই গবেষক অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ও মনে করেন, ‘বাংলার জনজীবন অন্তত দেড় হাজার বছর ধরে গ্রহণ-বর্জন ও আত্তীকরণ-রূপান্তরীকরণের দ্বারা ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বিবর্তিত হয়ে আধুনিক বাঙালি-সমাজ, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের মণিহর্ম্য নির্মাণ করেছে’ (বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, প্রথম খণ্ড)। তাছাড়া, অধ্যাপক সুকুমার সেন তাঁর বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রথম খণ্ড)-এ বাংলা ভাষার সূচনাকাল খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দী জেনেও সন্দেহান্বিত, অনেকটা মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র মতো। সেজন্য তাঁর গ্রন্থটির প্রথম খণ্ডতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সূচনাকাল চিহ্নিত করেছেন সুনীতিকুমারের মতো ‘?’ দিয়েই। যাই হোক, ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার আরো অতীতে পিছিয়ে যেতে চান। তাঁর মতে, ‘অন্ততঃ তিন হাজার বছর অথবা তাহারও পূর্বে’ ‘সুসভ্য জাতি বাস করিত’ বাংলা দেশে (বাঙলা দেশের ইতিহাস, প্রথম খণ্ড)। আরো নানা বিদগ্ধজনের অভিমত আমাদের সমর্থনে উদ্ধার করাই যায় তবে আপাতত তার প্রয়োজন নেই।

বাংলা ধ্রুপদী ভাষা হলে …

যাই হোক, বাংলা ভাষার ভারতীয় ক্ল্যাসিকত্ব আদায়ের জন্য ভারতের ও বাংলাদেশের সকল শিক্ষিত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সরকার, সকলের আন্তরিক শ্রম জরুরি। কারণ এ-ব্যাপারে সমৃদ্ধ তথ্য ও যুক্তি প্রয়োজন। সেইসঙ্গে এখন দরকার তথ্য-তত্ত্বের অনুসন্ধানী অসাধারণ কিছু বাঙালি প্রতিভার। প্রতিভাদের খোঁজ শুরু হোক। শুরু হোক এই কাজে ক্রমশ শিক্ষিতদের জ্ঞানগম্যি অনুসারে নেমে-পড়া। একটু একটু করে এগোতে পারলেই কাজটা অনায়াসে করা সম্ভব। আর তা সম্ভব হলে তখন অন্তত ভারতীয় বাঙালিদের বাংলা ভাষা নিয়ে গেল-গেল রব তোলার দরকার পড়বে না, ভাবতে হবে না ‘ভাষা পুলিশ’ (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়) নিয়োগ ইত্যাদির কথা। আলোচনা সভা ডেকে ভোটাভুটির প্রয়োজন হবে না। ‘বাংলা ভাষা বাঁচাও’ কমিটি করে ভাষা বাঁচানোর খুব একটা দরকার তখন পড়বে কি? বরং এরূপ স্বীকৃতি এলে ভারতীয় প্রেক্ষাপটে ভাষাটির একটা স্থায়ী প্রাতিষ্ঠানিক হিল্লে পাওয়া অন্তত সম্ভব হবে। যেহেতু ভাষাটি ক্ল্যাসিক হলে কেন্দ্রীয় সরকারই তা বাঁচাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে [রেজলিউশন নং. ২-১৬/২০০৪-ইউ এস (আকাডেমিজ), তাং. ১লা নভেম্বর, ২০০৪] এবং ওই সরকারই সে-ভাষা চর্চার জন্য ভাবে – সংশ্লিষ্ট রাজ্যে একটি কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান (বিশ্ববিদ্যালয় বা Centre of Excellence for Studies in Classical Languages) প্রতিষ্ঠা করে দেয়, বেশ কিছু অধ্যাপক পদও তৈরি হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি আয়োগের দ্বারা। সেই সঙ্গে বার্ষিক আর্থিক অনুদান তো আছেই। এই ভাষায় দক্ষ গবেষকরা ফিবছর আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়ে থাকে। আরো বিশেষ বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পায় স্বীকৃত ক্ল্যাসিক ভাষাটি।   

অবশেষের নটেগাছটি

আমরা আমাদের বাংলা ভাষার বেঁচে-থাকা নিয়ে ভাবতে বসে কেবল বাংলাদেশে ভাষাটির একাধিপত্যের কথা ভেবে সন্তুষ্ট থাকব, নাকি এই বেশ আছে আমাদের ‘আ মরি বাংলা ভাষা’! আর ঘরে-বাইরে, রন্ধ্রে-অন্ত্রে চলতে থাকবে ভাষাটির এক্কেবারে হাড়ে-মজ্জায় সব্বোনাশ। তার চেয়ে ভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতে ভাষাটির একটা স্থায়ী সমাধান হোক, সার্বিক প্রয়াসে ক্ল্যাসিকত্বটা অন্তত আসুক! আমরা বেশ জানি, চালুনি দিয়ে জল এনে সম্পূর্ণ তেষ্টা নিবারণ সম্ভব নয়। কিন্তু এর তলায় দুই হাত দিয়ে কিছুটা জল আটকে গলাটাকে সিক্ত রাখা যায়ই। নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো নয় কী! অতএব, ওই দাবি আদায় হলে ভারতীয় বাঙালির ভাষা-সংস্কৃতিটিরই কিছুটা হলেও ভালো তো হবে। আরো ভালো হবে ‘ইতিহাস বিস্মৃত’ (?) বাঙালি জাতিটার। তা সে ভারতীয়ই হোক, বা বাংলাদেশীয়।   

আসুন, আমরা এই প্রয়াস আজ থেকেই তাহলে আরম্ভ করি। অবশ্যই হোক তা কাগজে-কলমে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের মর্যাদাকে ভারতীয় প্রেক্ষাপটে আরো সমুন্নত করে তুলতে, ভাষাটিকে ভারতীয় সংবিধানে, একটি সম্ভাব্য বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টাটুকু অন্তত শুরু করি। আশা করা যায়, তাহলেই ভাষাটি সকল বাঙালির মুখে ও সাহিত্যে সসম্মানে বেঁচেবর্তে থাকবে আরো অনেককাল। অতএব, বাঙালি শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের অধীনে বাংলা ভাষার অতীতনির্ভর যেসব তথ্য গুপ্ত-সুপ্ত আছে, তা পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় গণমাধ্যমগুলিতে (সম্ভব হলে পত্রপত্রিকাতে) ‘শেয়ার’ করার কাজ এখন থেকেই শুরু হোক। অবশ্যই তা পেশ হোক লিখিত আকারে। এভাবে সামনে আসুক বাংলা ভাষার সুদূরাতীতের প্রকৃত সত্য, জানা যাক ভাষা-সাহিত্যটির যথাযথ আনুমানিক নির্ভরযোগ্য বয়সও। মোটকথা, ভাষাটির ক্ল্যাসিক স্বীকৃতি আদায় ফলপ্রসূ হোক বা না-ই হোক, অন্তত ভাষাটির যথাযথ তথ্য-সত্যনির্ভর অতীত ও ইতিহাস উন্মোচিত তো হোক। জানা যাক, ভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতে ধ্রুপদী ভাষা-সংস্কৃতির যোগ্যতামান বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির সত্যিই আছে, নাকি এক্কেবারে নেই-ই?

নাকি বাংলাদেশের তথ্য-যুক্তি ইত্যাদিতেই এর একটা হিল্লে হবে?

শেষকথায় বলি, আগ্রহী শিক্ষিত বাঙালিদের উপর্যুক্ত কাজে আন্তরিক প্রয়াস যদি ফলপ্রসূ হয় তবে শুধু আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উৎযাপনেতিহাসে তা বাঁচবে না, যে-ভাষাটির জন্য এই দিবস স্বীকৃত হয়েছে সেই ভাষাটিও ভারতীয় ক্ল্যাসিক ভাষার ইতিহাসের ধারায় প্রাণভরে বাঁচার অক্সিজেন পাবে। এইভাবে উদ্যোগ নিয়ে আমরা দুই বঙ্গের বাঙালি মিলে ভারতের বাংলা ভাষাকে কি সজীব করে তুলতে পারি না?

টীকাসূত্র

১।       চাপ ও দাপট যোগে শব্দটি গঠিত। 

২।       সিদ্ধান্ত ‘ঢালিয়া সাজিতে’ গিয়ে সুকুমার সেনও এই সময়ে যেতে চান।

৩। আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩১শে শ্রাবণ, ১৩৭৮ বঙ্গাব্দ।

ঋণ স্বীকার

১. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, প্রথম খণ্ড, ২০১০-১১, মডার্ন বুক এজেন্সি প্রা. লি., কলকাতা, পৃ ৩-১৭২।

২. গোপাল হালদার, বাঙ্‌লা সাহিত্যের রূপ-রেখা, প্রথম খণ্ড, ১৩৮০ বঙ্গাব্দ, এ. মুখার্জী অ্যান্ড কোং প্রা. লি., কলকাতা, পৃ ৩-৩২।

৩. ড. অতুল সুর, বাঙলা ও বাঙালীর বিবর্তন, ১৯৮৬, সাহিত্যলোক, কলকাতা, পৃ ১৭-১৬৭। 

৪. ড. কৃষ্ণপদ গোস্বামী, বাংলা ভাষাতত্ত্বের ইতিহাস, ২০০১, করুণা প্রকাশনী, কলকাতা, পৃ ১৬৯। 

৫. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত, ১৯৯৮, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, পৃ ১১-৪৮।

৬. নীহাররঞ্জন রায়, বাঙ্গালীর ইতিহাস, আদি পর্ব, ১৪১৬ বঙ্গাব্দ, সপ্তম সং., দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা।

৭. যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী, বর্ধমান ইতিহাস ও সংস্কৃতি, প্রথম খণ্ড, ১৯৯৫, দ্বিতীয় সং., পুস্তক বিপণি, পৃ ৯৬-৯৯।

৮. রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঙ্গালার ইতিহাস, প্রথম খণ্ড, ১৯৭৪, দ্বিতীয় সং., নবভারত পাবলিশার্স, কলকাতা।

৯.  রায়বাহাদুর দীনেশচন্দ্র সেন, বৃহৎ বঙ্গ, দ্বিতীয় খণ্ড, ১৯৯৩, দে’জ পাবলিশিং, পৃ ৯৫৯-৯৮৮।

১০. মৃণাল নাথ, চর্যাপদ, ২০১১, এবং মুশায়েরা, কলকাতা, পৃ ২৫-৪৪।

১১. ভূদেব চৌধুরী, বাংলা সাহিত্যের ইতিকথা, প্রথম পর্যায়, ১৯৯৫, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, পৃ ১-৬০।

১২. রমেশচন্দ্র মজুমদার, বাংলা দেশের ইতিহাস, প্রথম খণ্ড, ১৩৭৩ বঙ্গাব্দ, জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যাণ্ড পাবলিশার্স প্রা. লি., পৃ    ১২৩-১৪২।

১৩. সুকুমার সেন, বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস, প্রথম খণ্ড, ১৯৯১, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, পৃ ১-৩৭।

১৪. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, বাঙ্গালা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা, ১৯৯৬, কলিকাতা বিশ^বিদ্যালয়, কলকাতা, পৃ ১-৪১।

১৫. সুহৃদকুমার ভৌমিকের দু-একটি গ্রন্থ,

          Gangaridai নিয়ে আলোচনা আগ্রহী পাঠক দেখতে পারেন –

          ‘https:// en.wikipedia.org/ wiki/GangaridaiÕ. Mahbastu, Vol. I, Translated by J. J. Jones, 1949, Luzac & Company Ltd., London, e-book, Web: file:///F:/Mahabastu.html, Dt. 12.08.2017.

The Play in Full Lalitavistara, Translated by the Dharmachakra Translation Committee, file:///F:/lalitavistara-sutra.pdf, Dt. 12/08/2017. r

[দ্রষ্টব্য : প্রবন্ধটি পশ্চিমবঙ্গের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা]