বিজয়ের দিনে : চুয়াল্লিশ বছর আগে

তমিজ উদদীন লোদী

 

মাঠ ভরে গিয়েছিল সর্ষে ফুলে। আর কোথা থেকে যে এত মৌমাছি এলো!

সজনেগাছের আড়াল থেকে উঁকি দিলো পিউকাঁহা

এত পাখি এলো কোথা থেকে, এত প্রজাপতি!

আর ঘাসের ডগায় এত শিশির! এত স্নিগ্ধতা চারপাশে!

 

টিলার আড়াল থেকে উঠে এলো মতি ভাই

ঘাড়-অবধি চুল, কাঁধে অস্ত্র, যেন চে গুয়েভারা

আর এলো সূর্য, এলো আমাদের বাড়ির উঠোনে।

 

যদিও তখনো ছাই উড়ছে, ভস্ম থেকে ভাপ উঠছে

যদিও তখনো মাটিচাপা স্বজনের লাশ

নদীতে দুর্গন্ধ, পচা মাংসের বিবমিষা।

যদিও চাপাকান্না, তখনো থম ধরে আছে আকাশ।

 

তবু আমাদের মনে হলো জানালা খুলে গেছে, দরজা খুলে গেছে

আকাশ-অবধি রোদের পিচকিরি, হাওয়ার পাগলামি

আমাদের আঙিনা ভরে গেছে ঘাসে, ফুলে

আর অজস্র পাখি এসে ডানা ঝাপটে যাচ্ছে অবিরাম।

 

আমাদের হাসি ফিরে এসেছে, আমাদের প্রত্যয়

আমাদের মাটি ফিরে এসেছে, আমাদের ভাই ফিরে এসেছে

আমাদের বরাভয়।

 

মতিভাইয়ের অস্ত্র নিয়ে আমরা আকাশের দিকে গুলি ছুড়ি

আমরা আনন্দে লাথি দিই, ছিটকে যায় পাথর, নুড়ি। আর

আমাদের বধূরা, আমাদের বিধবারা কান্না চেপে এসে দাঁড়ায় দুয়ারে।

 

আমাদের উঠোনে গলগল করে জ্যোৎস্না নামে, রোদ নামে

ছাতিম ও হাসনুহানার গন্ধে ভরে উঠে বাতাস।