ব্ল্যাকবোর্ড

পাঁচ ফুট উচ্চতার দেয়ালের ঠিক ওপাশে দু-জোড়া চোখ স্থির তাকিয়ে থাকে স্কুলভবনটির দিকে। তাদের দৃষ্টিতে গীতা মাসির চলে যাওয়ার অপেক্ষা। গীতা মাসি বড়নখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আয়া। প্রতিদিন সকাল নয়টার পর স্কুলে আসে, শিক্ষকদের বসার রুমের তালা খুলে রুম পরিষ্কার করে। রুমের সামনেই রঙ্গন ফুলের কয়েকটি কচি গাছ, প্রতীক্ষা করছে লালচে আলো ছড়ানোর। গাছগুলোতে প্রতিদিন পানি দেয় গীতা মাসি। কখনো কখনো স্কুলের শিক্ষকরা আসেন। ঘণ্টাখানেক থাকেন তারপর চলে যান। যেদিন অন্য কোনো কাজ থাকে না সেদিন সকাল দশটার মধ্যেই স্কুলের সদর দরজায় ছোট একটা তালা লাগিয়ে চলে যায় গীতা মাসি। পরদিন এসে তালা খুলেও সেই একই কাজ। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে বন্ধ স্কুলে এই হলো গীতা মাসির দৈনন্দিন কাজ।

দেয়ালের ওপাশ থেকে দু-জোড়া চোখের দৃষ্টি ক্রমশ পশ্চিম থেকে দক্ষিণে পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রিতে ঘুরে নিশ্চিত হয় স্কুলের সদর দরজায় তালা ঝুলিয়ে গীতা মাসির চলে যাওয়া। সঙ্গে সঙ্গে অন্যজনকে ইশারা দিয়ে দেয়াল টপকে প্রথমে স্কুলের সীমানায় পা রাখে টগর। রঞ্জনা বরাবরই টগরের কাঁধে পা রেখে দেয়ালের উঁচু থেকে মাটির দূরত্ব অর্ধেকটা কমিয়ে তারপর লাফিয়ে স্কুলের মাটিতে পা রাখে। আজ সে টগরের কোনো রকম সাহায্য ছাড়াই দেয়াল টপকে পা রাখল স্কুলের মাটিতে। টগরের কাছে এ এক ম্যাজিক। স্কুলমাঠের পূর্বদিকে সারি করে গর্জন গাছ। দুজনে সর্পিল ভঙ্গিমায় এক গাছ থেকে অন্য গাছের দূরত্ব দৌড়াতে দৌড়াতে মাড়িয়ে বারান্দা পেরিয়ে এসে দাঁড়ায় তাদের শ্রেণিকক্ষের সামনে। পঞ্চম শ্রেণি ‘ক’ শাখা। তাদের ক্লাসে ঢোকা ও বের হওয়ার দুটি দরজা। একটি দরজা ভেতর থেকে বন্ধ, অন্যটিতে ছোট্ট একটি তালা। দুজনে জানালার ভাঙা কাচের ফাঁকে উঁকি দেয় ক্লাসরুমের ভেতর।

কতদিন হলো ক্লাসে ঢুকি না, ইস্ কবে যে স্কুল খুলবে! – আক্ষেপ করে টগর।

– ক্লাসে ঢুকবি? চল তালা ভেঙে ঢুকি! রঞ্জনার সোজা জবাব।

– ওই ভীতুর ডিম, তোর এতো সাহস কোথা থেকে হলো? অবাক প্রশ্ন টগরের।

– আমি ম্যাজিক করে ভেতরে ঢুকে যাব, ঢুকবি?

– তোর এখন আর ম্যাজিক করতে হবে না। চল বরং স্কুলের পেছনের ঝোপের দিকে। বৈঁচি পাই কি না দেখি।

টগর আর রঞ্জনা দুজনেই এই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্কুলের পাশেই লরিখড়া গ্রামে তাদের বাড়ি।

রঞ্জনা বলে, তুই একটা বোকা, ম্যাজিক করার কথা শুনে ভয় পাচ্ছিস, আমি আছি তো তোর সঙ্গে! আচ্ছা ঠিক আছে তুই পেছনের জঙ্গলের দিকে যা, আমি আসছি। – বলে টগর দ্রুত পা বাড়ায় সেদিকে। রঞ্জনার যাওয়ার তাড়া নেই।

চৈত্রের শুরুর দিকে স্কুলের পেছনের ঝোপে বৈঁচি গাছে ফুল ফোটে। অন্য সময়ে টগরের চোখ সবসময় পাহারা দেয় কখন সে-গাছে ফুল আসে। স্কুলে একটাই বৈঁচি গাছ। দুষ্টু ছেলেদের কারণে পাকা বৈঁচি ফল কি আর গাছে থাকে! স্কুল থেকে শুরু করে চারপাশের ফলের গাছগুলোতে দলবেঁধে কাঁচা, পাকা, আধপাকা ফল ছেঁড়ার নেতৃত্বে থাকে টগর। দুষ্টুমির জন্য সে ক্লাসের প্রথমদিকে স্থান করতে না পারলেও  ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী রঞ্জনার সঙ্গেই তার বন্ধুত্ব। বৈঁচি গাছটি আর আগের মতো নেই। কয়েক বছর আগেও এ-গাছটিতে অনেক ডালপালা, কতশত পাতা ছিল। এখন কেমন শুকিয়ে গেছে। গাছে ফলও আগের মতো হয় না। এ-কদিনে গীতা মাসি নিশ্চয় গাছের পাকা ফলগুলো পেড়ে নিয়ে গেছে। টগর বৈঁচি গাছে উঠতে থাকে। ততক্ষণে তার পেছন পেছন এসে দাঁড়ায় রঞ্জনা।

– সাবধানে উঠিস টগর, গাছে অনেক বড় বড় কাঁটা। সতর্ক করে রঞ্জনা।

খানিকটা উঠতেই গাছের বড় কাঁটা বিঁধে যায় টগরের ডান হাতে। ব্যথায় চিৎকার করে ওঠে সে।

– টগর গাছ থেকে তাড়াতাড়ি নেমে আয়। তোকে আর বৈঁচি পাড়তে হবে না। এবার ধমকে ওঠে রঞ্জনা।

টগরের ডান হাতের পেছনে নিচের দিকে রক্ত ঝরছে, দেখে রঞ্জনা টগরের ক্ষতস্থানে কচি ঘাস ছিঁড়ে হাতের তালুতে ঘষে লাগিয়ে দেয়। নিমেষেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়।

-তোর আর গাছে উঠে কাজ নেই। ঘোষণা করে রঞ্জনা।

– দেখছিস না ওপরের দিকে পাকা পাকা বৈঁচি! টগরের কণ্ঠে আক্ষেপ ঝরে।

– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি উঠছি গাছে। রঞ্জনার এমন কথায় অবাক হয় টগর।

– তুই গাছে ওঠা কবে শিখলি! দেখছিস না গাছে কত কাঁটা, তুই উঠবি বৈঁচি গাছে? কথাগুলো রঞ্জনাকে বলতে বলতে ব্যথায় ক্ষতজায়গাটা আবার দেখে টগর, আলতো হাত বুলায়।

টগরের কথায় রঞ্জনা বলে, তুই দেখ আমি গাছে উঠতে পারি কি না।

বলতে বলতে বৈঁচি গাছে উঠতে থাকে রঞ্জনা। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে টগর! এ কোন রঞ্জনাকে সে দেখছে। টগরের দৃষ্টি কেবলই রঞ্জনার দিকে আটকে থাকে।

– খুব সাবধানে ওঠ, দেখিস পড়ে যাবি কিন্তু। ওদিকটাকে অনেক কাঁটা। আর ওপরে উঠিস না। টগর কথাগুলো শেষ করার আগেই  নিমেষে গাছে উঠে পাকা ফল পাড়তে শুরু করে রঞ্জনা। টপাটপ বৈঁচি ছিঁড়তে থাকে সে।

– যা পেড়েছিস ওগুলো নিয়েই নেমে আয়। তাড়া দেয় টগর।

টগরের কোনো কথাই রঞ্জনা কানে তোলে না। এ যেন বিষাক্ত কাঁটাময় বৈঁচি গাছ নয়, মনে হয়  রঞ্জনা বাড়ির উঠোনে বৌচি বা কানামাছি খেলছে, গাছের এ-ডাল থেকে ও-ডালে যায় সে, যেন শূন্যে ভাসে তার পলকা শরীর।

রঞ্জনা গাছ থেকে নেমে এলে টগর তার হাত-পায়ের দিকে ভালো করে খেয়াল করে কোথাও কাঁটা ফুটেছে কি না। টগর যত বিস্মিত হয় রঞ্জনা তত মুচকি হাসে। রঞ্জনার এমন হাসি আগে কখনো দেখেনি টগর। জামার পকেট থেকে পাকা বৈঁচি বের করে সে টগরকে দেয়। টগর মুখে দিতে যেতেই রঞ্জনা তাকে না ধুয়ে খেতে নিষেধ করে। স্কুলের টিউবওয়েলের পানিতে বৈঁচি ধুয়ে মুখে দেয় টগর। পাকা আর রসালো বৈঁচি।

– নে, ধর। অনেক মিষ্টি। বলে টগর।

– না রে তুই খা! উত্তর দেয় রঞ্জনা। দুজনে স্কুলের রুমের বারান্দা ধরে তাদের ক্লাসরুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। ক্লাসের পেছনের দরজায় রঞ্জনা ধাক্কা দিতেই  দরজাটা খুলে যায়, সেদিকে খেয়াল  করে না টগর।

– টগর দেখ, ক্লাসের দরজাটা খোলা।

বৈঁচি খাওয়া থামিয়ে বোকার মতো সেদিকে তাকিয়ে থাকে টগর। কী বলবে বুঝে উঠতে পারে না। দরজাটা তো ভেতর থেকে বন্ধ ছিল, তাহলে খুলল কীভাবে! টগরের বিস্ময়ের কারণ বুঝতে পারে রঞ্জনা। বলে,

– দরজাটা আগে থেকে খোলা ছিল রে, আমরা বুঝতে পারিনি। এই যে ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। চল ক্লাসের ভেতর।

– না, খোলা ছিল না। আমি তো আগে ধাক্কা দিয়ে দেখেছি! টগর বলে।

– তাহলে ধরে নে ম্যাজিক! রঞ্জনা হেসে উত্তর দেয়।

দুজনে তাড়াহুড়ো করে ক্লাসে ঢোকে।

– কতদিন পর আমাদের ক্লাসে ঢুকলাম! রঞ্জনা হাসি-হাসি মুখে কথাগুলো বলে টগরকে।

ক্লাসে ঢুকেই ধুলোজমা টেবিল-চেয়ারের ওপর দু-বন্ধু ছোটাছুটি করতে থাকে। শিক্ষকের গলা নকল করে রঞ্জনা বলে, ‘টগর! দুদিন স্কুলে আসিসনে কেন?’

টগর বলে, ‘রঞ্জনা! যারা দুষ্টামি করবে তাদের নাম লিখে রাখ, আমি ১০ মিনিট পর আসছি, কেউ কথা বলবি না।’

ছোটাছুটি থামিয়ে রঞ্জনা হঠাৎ স্থির হয়। সে বলে, ‘টগর তোকে একটা কথা বলি, মায়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। আমার মা অনেক সুন্দর। একদম আমার মতো ফর্সা। মা কী বলল জানিস, এতো দেরি করে তোর সঙ্গে দেখা হলো রে মা! এখন থেকে তুই আমার সঙ্গেই থাকবি। এখানে তোর একটুও ভয় নেই। আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদল।’

রঞ্জনার কথাগুলোর মাথামুণ্ডু কিছুই খুঁজে পেল না টগর। টগরের হাবভাব দেখে রঞ্জনা বলল, ‘তুই বিশ্বাস করছিস না তো, আমি কিন্তু সত্যি বলছি। আমার মায়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে।’

টগর ফ্যালফ্যাল করে রঞ্জনার দিকে তাকিয়ে থাকে। খুব ছোট বয়সে রঞ্জনার মা মারা গেছেন, তার বাবা আরেকটা বিয়ে করেছেন। সৎমা রঞ্জনাকে ভালোবাসত খুব। দু-বছর আগে একটি ভাই হয়েছে রঞ্জনার। ভাই জন্মানোর পর মায়ের সব আগ্রহ ভাইয়ের দিকে, তবে ভাইকে পেয়ে রঞ্জনা খুব খুশি। স্কুল ছুটি হলেই তার বাড়ি ফেরার তাড়া। মন পড়ে থাকে ভাইয়ের দিকে। বাবা ইব্রাহিম খলিল। এলাকায় সবাই তাকে খলিল মিয়া নামে ডাকে। স্থানীয় একটি ফ্যাক্টরির সহকারী সুপারভাইজার। করোনায় ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকায় বেতন বন্ধ। মাসের পর মাস এভাবে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা রঞ্জনার বাবার। পরিবারে প্রায়ই অশান্তি। অশান্তির কেন্দ্রবিন্দু পরিবারের টানাটানি থেকে শেষে রঞ্জনাতে গিয়ে স্থির হয়েছে। করোনার পর থেকে মায়ের সংসারে রঞ্জনা ক্রমশ বোঝা হয়ে যাচ্ছে। করোনার প্রকোপ যত বাড়ছে, খলিল মিয়ার অসহায়ত্বও বাড়ছে। বাবা-মায়ের ঝগড়া শুরু হলে মনে হয় আকাশ ভেঙে মাটিতে পড়ছে যেন। রঞ্জনা খুব ভয় পায় এসব। সে ভাইকে কোলে নিয়ে ঘরের এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে থাকে। মা তার কোল থেকে ভাইকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তখন। মা এতোটাই রেগে যায় যে, একদিন বঁটি নিয়ে বাবাকে মারার জন্য মাকে ছুটে যেতে দেখে রঞ্জনা। সাম্প্রতিক এ-ঘটনাগুলো টগরের একার নয়, গ্রামের অনেকেরই জানা। কথাগুলো রঞ্জনার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার মনে পড়ে টগরের।

ক্লাসরুমে পুরনো, ভাঙা চক চোখে পড়ে রঞ্জনার। সেখান থেকে একটি চক তুলে নিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে কিছু একটা আঁকতে শুরু করে সে। মুহূর্তেই তার আঁকা ছবিতে ফুটে ওঠে বাবার পাশে দুটো শিশু। একটি ছেলে, অন্যটি মেয়ে। ছেলে শিশুটি অনেক ছোট, সে বাকি দুজনের মাঝখানে। তাদের মুখে হাসির ছটা। ছবির পাশে রঞ্জনা লেখে, ‘মা তুমি খুব পচা!’

লেখাগুলোর কোনো অর্থই বুঝে উঠতে পারে না টগর। লেখাগুলো লিখতে লিখতে রঞ্জনা হঠাৎ কেমন অস্বাভাবিক আচরণ করে। টগরের মনে হয়, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে রঞ্জনার। টগর জিজ্ঞেস করে, ‘কী রে রঞ্জু, এমন করছিস কেন?’

রঞ্জনা বলে, ‘ইদানীং একটা স্বপ্ন দেখি জানিস, কেউ একজন আমার গলা চেপে ধরেছে, আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না। আমি মরে যাচ্ছি টগর, আমি মরে যাচ্ছি!’

টগর টেবিলের ওপর বসে বোকার মতো তাকিয়ে থাকে রঞ্জনার দিকে, সে কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। হঠাৎ ঠান্ডা বাতাস তাদের গায়ে লাগে। রঞ্জনা আস্তে আস্তে লম্বা নিশ্বাস নেয়। এতোক্ষণে টগর খেয়াল করে চারপাশ কালো মেঘে ঢেকে গেছে। যে-কোনো সময় বৃষ্টি নামবে।

– রঞ্জু বৃষ্টি শুরু হবে। চল বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়ি। দ্রুত কথাগুলো বলে যায় টগর।

– তুই যা, আমার এখন বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না। উত্তর দেয় রঞ্জনা।

ততোক্ষণে টগর রঞ্জনার হাত ধরে টেনে ক্লাসরুম থেকে বের করে আনে। তাদের আপাতত গন্তব্য দেয়াল টপকে ওপারে যাওয়া। টগর টপাটপ দেয়াল টপকে ওপারে চলে আসে। ততোক্ষণে বৃষ্টি শুরু হয় জোর।

– রঞ্জু! কই? তাড়াতাড়ি দেয়াল টপকে আয়। চিৎকার করে বলে টগর।

বৃষ্টির ফোঁটায় দেয়াল ভিজে গেছে। রঞ্জনা দেয়াল টপকাতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পায়। টগর দেখে পা থেকে রক্ত ঝরছে রঞ্জুর। ভেজা দেয়ালে তার পায়ের ঝরা রক্তের ওপর পড়ে লাল হয়ে উঠছে বৃষ্টির ফোঁটা। এত রক্ত দেখে ভয়ে চিৎকার করে ওঠে টগর, ‘রঞ্জু! রঞ্জু! …’

মাঝরাতে ঘুমের ঘোরে টগরের ‘রঞ্জু রঞ্জু’ চিৎকারে মায়ের ঘুম ভাঙে। টগরের গায়ে হাত রেখে তাকে জাগিয়ে দিয়ে স্নেহের স্বরে বলেন, ‘কী রে বা? রঞ্জুকে স্বপ্নে দেখলি?’

– মা, এখন কয়টা বাজে?

– ছয়টা হবে হয়তো।

ঘুম-ঘুম কণ্ঠে  উত্তর দেন মা।

একলাফে বিছানা থেকে নেমে দ্রুত হাতে লাইট জ্বালে টগর। গেঞ্জি পরে নেয়।

– কী রে? এতো ভোরে কোথায় যাচ্ছিস? তোর না বাড়ি থেকে বের হওয়া বারণ! চারদিকে করোনায় লোকজন মারা যাচ্ছে।

– মা, আমি একটু স্কুলে যাব!

– স্কুলে কেন?

মা টগরকে টেনে বুকের ভেতর আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেন। মায়ের মনে আতঙ্ক। কদিন আগে রঞ্জনা মারা গেছে হঠাৎ। লোকজন বলাবলি করছে, করোনায় মারা গেছে! পুলিশও এসেছিল দাফনের জন্য। চেয়ারম্যান এসে সব সামাল দিয়েছেন। তারপর থেকে খলিল মিয়া পাগলপ্রায়। পুরো গ্রামে এখনো শোক। টগর মায়ের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়াতে থাকে স্কুলের দিকে। তার মনে হয়, স্কুলে নিশ্চয়ই রঞ্জনা এসেছিল। যেভাবেই হোক তাকে ক্লাসরুমে ঢুকতে হবে, দেখতেই হবে ক্লাসের ব্ল্যাকবোর্ড। পেছন থেকে মায়ের নিষেধ আর শুনতে পায় না টগর। সে দৌড়ায় আর ভাবে, রঞ্জুকে কি কেউ মেরে ফেলল? ব্ল্যাকবোর্ডে কি তেমন কিছু লিখে গেছে রঞ্জু! মসজিদে শিশুদের আরবি পড়ার কলরোলে ঘোর ভাঙে টগরের, থমকে সেদিকে বোবাচোখে তাকিয়ে থাকে সে।