মুর্তজা বশীর : বিরল প্রতিভা

এক
পনেরোই আগস্টেই যেতে হলো বাংলাদেশের এক শ্রেষ্ঠ সন্তান মুর্তজা বশীরকে। এবং তাও সকালের দিকেই। তাঁর জন্মও হয়েছিল আগস্ট মাসে, সতেরোই আগস্ট ১৯৩২। পনেরোই আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে শোকাবহ দিন। এই দিনেই বাংলার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও শিক্ষা জগৎ হারালো মুর্তজা বশীরকে। তাঁর মৃত্যুতে ব্যক্তিগতভাবে অসংখ্য জনের মতো আমিও দুঃখভারাক্রান্ত। আমি তাঁকে চিনতাম, জানতাম সেই ১৯৫০ সাল থেকে, যখন আমি কিশোর। তিনি আমার ছোট চাচা শিল্পী আবদুর রাজ্জাকের (১৯৩২-২০০৫) সহপাঠী ছিলেন, সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউটে ১৯৪৯ সাল থেকে। ইনস্টিটিউটের, সহজ করে বলি, ঢাকা আর্ট কলেজের দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র ছিলেন তাঁরা। আরো ছিলেন রশিদ চৌধুরী, কাইয়ুম চৌধুরী, জুনাবুল ইসলাম, এমদাদ হোসেন, একরামুল হক প্রমুখ। অতি উজ্জ্বল এক ব্যাচ। পরবর্তীকালে এই ব্যাচের অন্তত পাঁচজন সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য একুশে পদক পেয়েছিলেন, কাইয়ুম ও বশীর স্বাধীনতা পুরস্কারও পেয়েছিলেন। দেশের অহংকার এঁরা। সহপাঠীদের মধ্যে মুর্তজা বশীর দীর্ঘজীবী হয়েছিলেন, ৮৮-তে মৃত্যুবরণ করেছেন। দীর্ঘ জীবন তাঁর আকাঙ্ক্ষা ছিল। পেয়েছেন এবং প্রতিটি মুহূর্ত সৃষ্টিশীল কাজে ব্যয় করেছেন। সম্প্রতি বছর কয়েক ধরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল, তাতে মোটেও দমবার পাত্র ছিলেন না তিনি। শিল্পচর্চা অব্যাহত রেখেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত করোনা বা ‘কোভিড-১৯’ তাঁকে তুলে নিয়ে গেল, যেমন করে নিয়ে গেছে তাঁর দীর্ঘকালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে, ৮৩-তে, গত মে মাসের ১৪ তারিখে। মুর্তজা বশীরের প্রতি আমি আমার গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। বিরল প্রতিভাধর মানুষ ছিলেন তিনি।

দুই
১৯৫০-এর একেবারে শেষ থেকে বা বলা উচিত, ১৯৫১-এর প্রথম থেকে চাচা আবদুর রাজ্জাকের বন্ধু মুর্তজা বশীরকে দেখেছি। ’৫২ সালে তাঁরা ভাষা-আন্দোলন ও চিত্রকলা-প্রদর্শনী আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। আমাদের কাপ্তান বাজারের ছোট বাসায় চাচার বন্ধুরা রাত জেগে পোস্টার লিখতেন। পাশাপাশি ঢাকা আর্ট গ্রুপের দ্বিতীয় প্রদর্শনীর আয়োজনে ব্যস্ত থাকতেন। একুশে ফেব্রুয়ারিতে নিমতলীতে ঢাকা জাদুঘরে প্রদর্শনীর উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। সেদিনই ঘটলো আন্দোলনকারী ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণ, গুলিবিদ্ধ বরকত মুর্তজা বশীরের বুকে, রক্তে রঞ্জিত তাঁর জামা (ও বিখ্যাত ‘রুমাল’), বরকতকে হাসপাতালে নেওয়া হলো, বশীরকে পরে রিকশা করে তাঁর সহপাঠী আবদুর রাজ্জাক বশীরদের বেগম বাজারের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসেন।
এসব ঘটনার কথা নবাবপুর সরকারি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া আমি শুনেছি (পরে মুর্তজা বশীরের লেখাতেও পেয়েছি)। আর ১৯৫৪ সালে যখন নবম শ্রেণিতে পড়ি, মুর্তজা বশীর আমাদের ড্রইং মাস্টার হিসেবে যোগদান করেন (তার আগে ১৯৫১ থেকে ১৯৫৪ পর্যন্ত ছিলেন মোহাম্মদ কিবরিয়া)। তিনি ছিলেন বছরখানেক, সেই স্বল্প সময়ে স্কুলের ছাত্রদের আঁকা ছবির একটা প্রদর্শনীর আয়োজন করেন, উদ্বোধক ছিলেন জয়নুল আবেদিন (বশীরের শিক্ষক)। মুর্তজা বশীরকে আমি চাচার বন্ধু ও স্কুলের শিক্ষক, দুভাবে পেয়েছিলাম। অত্যন্ত আকর্ষণীয় মানুষ ছিলেন। পরবর্তীকালে খুব একটা ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ পাইনি, তবে তাঁর এবং অন্যদের প্রদর্শনীতে কিছুটা সান্নিধ্য পেয়েছি। প্রায় এক যুগ আগে এশিয়াটিক সোসাইটিতে আমি চিত্রকলাবিষয়ক একটি সেমিনার আয়োজন করেছিলাম, এতে তাঁকে সভাপতি হিসেবে পেয়েছিলাম, চিত্রকলা নিয়ে তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত বক্তব্য রেখেছিলেন।
তিন
মুর্তজা বশীরের নানা সত্তা। পরম শ্রদ্ধেয় আনিসুজ্জামানের ভাষায় ‘যাকে বলা হয় বহুমুখী প্রতিভা, মুর্তজা বশীর (জ. ১৯৩২) তা-ই’ (‘ভূমিকা,’ মুর্তজা বশীর : মূর্ত ও বিমূর্ত, চট্টগ্রাম, পূর্বা, ২০০১)। চিত্রশিল্পী সত্তার পাশাপাশি তিনি ছিলেন (প্রথম জীবনে) রাজনৈতিক কর্মী, ভাষা-আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী, কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক, চিত্রনাট্যকার, সহকারী চিত্রপরিচালক, প্রবন্ধকার, গবেষক ও শিক্ষক।
তাঁর সাহিত্যকর্ম আনিসুজ্জামান মনে করেছেন ‘একেবারে উপেক্ষা করার মতো ব্যাপার নয়।’ (মুর্তজা বশীর : মানুষ ও শিল্পী, ২০১৭)। আমরা যারা সাহিত্যের সাধারণ পাঠকমাত্র, এরপর আমাদের আর কিছু বলার থাকে না, ভাবনারও নয়। বশীরের সাহিত্যকর্মের একটি সংকলন (সম্পূর্ণ অবশ্যই নয়), মুর্তজা বশীর : মূর্ত ও বিমূর্ত, (চট্টগ্রাম, পূর্বা, ২০০১) অথবা : মুর্তজা বশীর, আমার জীবন ও অন্যান্য, (বেঙ্গল পাবলিকেশন্স, ঢাকা, ২০১৪) বইগুলো পড়ে মুগ্ধ হই। শিল্পচর্চা ও সাহিত্যকর্ম সম্পাদন ছাড়া তিনি অনেকের কাছেই স্মরণীয় তাঁর অসাধারণ কথক গুণের জন্য। বিভিন্ন সময়ে সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর জীবন, কর্ম ও দর্শন নিয়ে যেভাবে কথা বলেছেন তা পড়ে চমৎকৃত হয়েছি।
বাংলাদেশের শিল্পীরা অনেকেই বশীরের মতো শিল্পচর্চার পাশাপাশি সৃজনশীল সাহিত্য-সৃষ্টিতেও মনোযোগী ছিলেন। উদাহরণ, বশীরের সতীর্থ রশিদ চৌধুরী ও কাইয়ুম চৌধুরী। তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদেরও কেউ কেউ এমন প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন, রফিকুন নবীর কথা বলতেই হয়, অথবা মতলুব আলীর কথা। আবুল মনসুর অবশ্য এখন মূলতই লেখক। উলটো দৃষ্টান্তও কম নয়, অর্থাৎ কবি বা সাহিত্যিক শিল্পচর্চায় উৎসাহী ও পারঙ্গম। উল্লেখ করা যায় মুর্তজা বশীরের সুহৃদ সব্যসাচী সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হকের কথা, অথবা কবি নির্মলেন্দু গুণ কিংবা হুমায়ূন আহমেদের কথা, বুলবন ওসমানকেও স্মরণ করি।
মুর্তজা বশীর যে শুধু সৃজনশীল সাহিত্যচর্চা করেছেন তাই নয়, তিনি পরিণত বয়সে একজন বিশিষ্ট মুদ্রাগবেষক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাঁর বেশ কিছু গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রতিষ্ঠিত জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বশীরের এই অর্জন শিল্পীমহলে অবশ্যই বিরল।

চার
তাঁর শিল্পী জীবন
শিল্পচর্চাতেও মুর্তজা বশীর ছিলেন বহুমাত্রিক। শিল্পকলার বিভিন্ন মাধ্যম – ড্রইং, পেইন্টিং, প্রিন্ট, জলরং, তেলরং, অ্যাক্রিলিক, ল্যাকার, কোলাজ, মিশ্রমাধ্যম সবই চর্চা করেছেন। স্মর্তব্য, তাঁর শিল্পীজীবন বেশ দীর্ঘ ছিল, ৭০ বছরের মতো, মাধ্যমে বৈচিত্র্য আনা সম্ভব ছিল। অবশ্য তাঁর শিক্ষক সফিউদ্দীন আহমেদেরও শিল্পীজীবন দীর্ঘ ছিল, তবে মাধ্যম বা আঙ্গিক বৈচিত্র্য সীমিতই ছিল। বশীর অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ মাধ্যম মোজাইক, ম্যুরাল, এমনকি অল্প কিছু ভাস্কর্যও করেছেন। শিল্পচর্চার মাধ্যমের বৈচিত্র্য তাঁর সমসাময়িক বা সহপাঠী অন্য শিল্পীদের মধ্যেও দেখা গেছে, যেমন আমিনুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, রশিদ চৌধুরী, কাইয়ুম চৌধুরী প্রমুখ। এঁরা প্রত্যেকেই একাধিক মাধ্যমে সৃজনশীলতা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। এঁরা আবার প্রত্যেকেই অত্যন্ত আন্তরিক ও দক্ষ শিক্ষক ছিলেন।
মুর্তজা বশীরের পড়াশোনা ও কাজের পরিধি ছিল ব্যাপক। তিনি পাশ্চাত্য সাহিত্যের অত্যন্ত মনোযোগী পাঠক ছিলেন, বাংলা সাহিত্যেরও। শিল্পকলার ইতিহাস ও তাত্ত্বিক বিষয়গুলোও তিনি গভীরভাবে আত্মস্থ করেছিলেন। শিল্পতত্ত্ব ও শিল্প-ব্যাকরণ সহজ করে শিক্ষার্থী ও উৎসাহী সাধারণ পাঠকের জন্য আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করেছেন – তাঁর চিত্রচর্চা গ্রন্থটিতে (জার্নিম্যান বুকস, ২০১৯)। বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে আর এ-ধরনের গ্রন্থ রচনা করেছেন হাশেম খান।
মুর্তজা বশীরের শিল্পশিক্ষা হয়েছে কয়েক পর্যায়ে। তিনি তাঁর আত্মকথায় ও বিভিন্ন স্মৃতিচারণে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি নিজ তাগিদে আর্ট কলেজে পড়তে আসেননি; তিনি তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন, পার্টি থেকেই তাঁকে আর্ট কলেজে ভর্তি হতে উৎসাহ দিয়েছিল। কলেজে প্রথম থেকেই তাঁর অনুশীলনে তিনি বেশ দুর্বল ছিলেন, তখন অধ্যক্ষ জয়নুল আবেদিন বশীরের এক ক্লাস ওপরের মেধাবী ছাত্র আমিনুল ইসলামের ‘শিষ্যত্ব’ গ্রহণের ব্যবস্থা করেন। পাঁচ বছরের কোর্সের শেষ পর্যায়ে বশীর ভালো করেন, প্রথম বিভাগে পাশ করেন। তাঁর সহপাঠী (বশীরের ভাষায়, ‘বন্ধু’ নন, আমার জীবন ও অন্যান্য, পৃ ৩৭৭) আবদুর রাজ্জাক প্রথম থেকেই ক্লাসের সবসেরা ছাত্র, চূড়ান্ত পরীক্ষাতেও প্রথম বিভাগে প্রথম হন।
বশীর ঢাকার সরকারি আর্ট কলেজ থেকে কোর্স শেষ করে কলকাতার আশুতোষ মিউজিয়ামে সংক্ষিপ্ত কিন্তু অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি ‘আর্ট অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স’ গ্রহণ করেন। কোর্সটি বশীরের জীবনে বেশ প্রভাব রেখেছে, অন্যান্যের মধ্যে শিল্পী পরিতোষ সেনের সঙ্গে তখন তাঁর ভালো পরিচয় হয়। কলকাতা থেকে ফিরে নবাবপুর সরকারি স্কুলে বছরখানেক (১৯৫৪-৫৫) শিক্ষকতা করেন। তখন ঢাকায় অনুষ্ঠিত পাকিস্তান আর্টস কাউন্সিল-আয়োজিত ‘অল পাকিস্তান আর্ট একজিবিশনে’ (১৯৫৪) ১১টি ছবি নিয়ে অংশগ্রহণ করেন (ড্রইং, তেলরং ইত্যাদি)। ক্যাটালগে মুদ্রিত গুটিকয়েক ছবির মধ্যে বশীরের একটি স্কেচ ছিল, আমিনুল ইসলাম ও আবদুর রাজ্জাকেরও ছিল। ১৯৫৬ সালে বশীর ইতালি যান উচ্চতর শিক্ষার জন্য, পিতা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ পুত্রের বিদেশে পড়ার খরচ বহন করেন। বশীর তাঁর বিভিন্ন লেখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যে, প্রথম বিভাগে পাশ করা সত্ত্বেও জয়নুল আবেদিন তাঁকে চাকরি দেননি। কলেজে চাকরি তখন প্রথম বিভাগে প্রথম হওয়া আবদুর রাজ্জাকও পাননি। তিনি চাকরি করেছেন ম্যালেরিয়া ইনস্টিটিউটে, স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে এবং এক বছর পর প্রতিযোগিতামূলক ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান (১৯৫৫), দু-বছরে মাস্টার্স অব ফাইন আর্টস (এমএফএ) ডিগ্রি নিয়ে ফেরার পর আর্ট কলেজে চাকরি পান। বশীর তখন ইউরোপে। রাজ্জাক অবশ্য আর্ট কলেজে নিজ তাগিদেই পড়তে এসেছিলেন ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে আইএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগ পেয়ে। তাঁর সতীর্থ বশীর, রশিদ, কাইয়ুমরা সবাই ছিলেন ম্যাট্রিক পাশ, সেটাই তখন ন্যূনতম যোগ্যতা থাকতে হতো।
আর্ট কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ঢাকার ছেলে হামিদুর রাহমান দু-বছর পড়ার পর পারিবারিক খরচে ইউরোপ চলে যান (১৯৫০)। আমিনুল ইতালি যান ১৯৫৩ সালে, ইতালি সরকারের বৃত্তি নিয়ে। বশীর তখন (১৯৫৬-তে) নিজ খরচে ইউরোপ না গেলে পরে বৃত্তি নিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ পেতেন। যেমন পেয়েছিলেন সৈয়দ জাহাঙ্গীর, কাজী আবদুল বাসেত বা মোহাম্মদ কিবরিয়া। জয়নুল আবেদিন রশিদ ও রাজ্জাককে বৃত্তি পাইয়ে দিয়েছেন, বশীরকে নয়, এরকম আক্ষেপ বশীর প্রায়ই প্রকাশ করেছেন। তাঁর এ-দাবি অমূলক। তাছাড়া বশীর একবারও বলেন না, তাঁর অপর এক সহপাঠী কাইয়ুম চৌধুরী জীবনে কখনোই বৃত্তি নিয়ে (বা বৃত্তি ছাড়া) বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেননি, তাতে খুব বড়মাপের শিল্পী হতে তাঁর সমস্যা হয়নি, বশীরের মতোই তিনি একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার (বশীরের আগে) পেয়েছেন, পাকিস্তান আমলে জাতীয় প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ পুরস্কার পেয়েছেন।
বশীর ১৯৫৬-৫৮-তে ইতালির ফ্লোরেন্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন, নিজের চিত্র আঙ্গিক দাঁড় করিয়েছিলেন। ’৫৮-তে বেশ কয়েক মাস (মে থেকে অক্টোবর) লন্ডনে শিল্পচর্চা করেছেন, তাঁর শিক্ষক সফিউদ্দীন আহমেদসহ পাকিস্তানের আধুনিক পাঁচ শিল্পীর সঙ্গে প্রদর্শনীও করেছেন, প্রশংসিত হয়েছেন।
ইতালি থাকার সময় তাঁর ছবির বিষয়বস্তু ছিল মূলত সাধারণ কর্মজীবী মানুষ, আঙ্গিক অনেকটাই কিউবিজম-প্রভাবিত, যদিও তেমনভাবে কিউবিস্ট নয়।
পরবর্তী সময়ে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে (মুক্তিযুদ্ধের কারণে) ‘জীবন বাঁচানোর’ তাগিদে সপরিবারে প্যারিসে চলে যান ও ১৯৭১ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭৩-এর জুলাই পর্যন্ত সেখানে প্রায় পৌনে দু-বছর অবস্থান করে ম্যুরাল, মোজাইক, এচিং ইত্যাদিতে শিক্ষা গ্রহণ করেন। দেশে ফিরে আগস্ট মাস (১৯৭৩) থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগদান করেন। সেখানে তখন তাঁর সহপাঠী রশিদ চৌধুরী বিভাগীয় প্রধান। পুরনো বন্ধু দেবদাস চক্রবর্তীও সেখানে শিক্ষক। বশীর চট্টগ্রাম থেকে ২০০৩ সালে অবসরের পর ঢাকাবাসী হিসেবে স্থায়ী হন, আমৃত্যু। মাঝে বিভিন্ন সময়ে গবেষণা, সেমিনার, প্রদর্শনী ইত্যাদি উপলক্ষে নানা দেশ ভ্রমণ করেন।
মুর্তজা বশীর ১৯৫৮ সালে (ডিসেম্বরে) ইউরোপ থেকে দেশে ফেরেন, কিন্তু সুবিধামতো চাকরি না পেয়ে করাচি চলে যান, সেখানে ১৯৫৯ সাল থেকে একক প্রদর্শনী করতে থাকেন। কয়েক বছর (পশ্চিম) পাকিস্তানেই থাকেন। মাঝে দেশে এসে (১৯৬২ সালের মে মাসে) বাবা-মায়ের পছন্দমতো বাঙালি মেয়ে বিয়ে করেন। আবার (পশ্চিম) পাকিস্তানে চলে যান, লাহোরে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজের আনুকূল্যে আর্ট কাউন্সিলের গ্যালারিতে কাজ পান। প্রচুর ছবি আঁকেন। সে-বছরই (১৯৬২) ডিসেম্বর মাসে লাহোরে প্রদর্শনী করেন। পরে করাচি, পিন্ডি, সারগোদা ইত্যাদি জায়গায়ও প্রদর্শনী করেন। ‘দি লিজার্ড’ (‘গিরগিটি’), ‘দেয়াল’ ইত্যাদি সিরিজ ছবি আঁকেন। স্মর্তব্য, বশীরের পাকিস্তানে অবস্থানের সময়েই লাহোরে শেখ মুজিবের লাহোর প্রস্তাব পেশ (১৯৬৬) ও বাংলাদেশে মুজিবের বিরুদ্ধে আগরতলা মামলায় তাঁকে কারারুদ্ধকরণ ও গণআন্দোলন, তাঁর মুক্তি – এসব ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানে তাঁর একান্ত শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবী আমলা আলতাফ গওহর, কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজ, রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টো (বা বিশেষ করে বলা যায়, তাঁর স্ত্রী নুসরাত ভুট্টো)। ভুট্টোরা বশীরের ছবি কিনেছিলেন, ‘গিরগিটি’। ছবিটি তাঁদের শোবার ঘরে টানানো হয়েছিল।
মুর্তজা বশীরের আত্মজৈবনিক লেখা পড়ে আমার এমন ধারণা হয়েছে যে, পাকিস্তানের সুধীমহলে তিনি বেশ সমাদৃত ছিলেন (১৯৫৯-১৯৭০, মাঝে ১৯৬৩-১৯৬৬ সময়ে ঢাকায় সিনেমা বানাতে ব্যস্ত)। কারো কাছ থেকে কোনোরকম অশোভন বা বৈষম্যমূলক আচরণের অভিজ্ঞতার কথা বলেননি। দীর্ঘদিন পাকিস্তানে কাটানো শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরের অভিজ্ঞতাও সম্ভবত অনুরূপ ছিল। অথচ ১৯৭১-এ পাকিস্তানিরা কী পশুত্বের পরিচয়ই না দিয়েছে এবং তাদের এক বড় নেতা মি. ভুট্টো, শিল্পানুরাগী!
মুর্তজা বশীর ’৭১-এ পাকিস্তানিদের পশুত্বের চিত্ররূপ দিয়েছেন আটটি মিনি স্কেচে (১৯৭২), যদিও সম্ভাবনা ছিল তাঁর মতো শিল্পীর হাতে তাঁর প্রিয় পাবলো পিকাসোর মতো একটি ‘গুয়ের্নিকা’ অঙ্কনের। বশীর অবশ্য একাত্তর প্রকাশ করেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে, ‘শহীদ শিরোনাম’ বা ‘এপিটাফ ফর দি মার্টায়ার্স’ শীর্ষক অসাধারণ এক সিরিজ চিত্র সম্ভারে। এর আঁকার কাজ শুরু প্যারিসে ১৯৭৩, শেষ চট্টগ্রামে ১৯৭৭-এ।
বাংলাদেশে মুর্তজা বশীর ব্যতিক্রমী শিল্পী হিসেবে সম্মানিত তাঁর ‘সিরিজ’ চিত্রমালার জন্য। এগুলো নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞ আলোচক লিখেছেন, ভবিষ্যতেও অনেকে লিখবেন। অনেকগুলো সিরিজ করেছেন। তাঁর ‘দেয়াল’ সিরিজ (১৯৬৭-১৯৭২) অতি দীর্ঘ এবং ব্যাপকভাবে আলোচিত। প্রায় সম্পূর্ণ বিমূর্ত, তাঁর মতে ‘বিমূর্ত বাস্তবতা’, তাঁর তৎকালীন একাকিত্ব ও বিদ্যমান রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের প্রতীক। মিশ্র রং আর টেক্সচার বা বুনটের কুশলতা। এগুলোর আগে একটি সিরিজ করেছিলেন, জ্যামিতিক ক্ষেত্র বিভাজন ও উজ্জ্বল উষ্ণ রঙের বিন্যাস ঘটিয়ে। সঙ্গে আধা বিমূর্ত মানব-মানবীর মুখ বা অবয়ব। ‘শহীদ শিরোনাম’ সিরিজটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, অসাধারণ চিত্রকর্ম। একটি ছোট সিরিজ ‘জ্যোতি’ বাংলার ইসলামি প্রতীকাশ্রয়ী, (১৯৭৯)। তাঁর ‘কলেমা তৈয়বা’ শীর্ষক সিরিজ (২০০২-) নিয়ে বেশ বিতর্ক হয়েছে, এতটা ধর্মাশ্রয়ী হলেন কেমন করে এককালের কমিউনিস্ট, উদারমনা মুর্তজা বশীর! সে-সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শিল্পী। তাঁর সাম্প্রতিক একটি সিরিজ (২০০৩-) বাঙালি ঘরোয়া ‘নারী’ বিষয়ক। এতে তাঁর ‘গৃহকর্ত্রী’ ও ‘কন্যাদ্বয়ে’র ছবিও আছে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে পূর্বেকার এক বিমূর্ত বাস্তববাদী শিল্পী বস্ত্রাবৃত নারীর চমৎকার উত্তরাধুনিক চিত্র অঙ্কন করেছেন। এতে ইউরোপীয়, ভারতীয় ও বাংলার চিত্রাঙ্কন আঙ্গিক ও শৈলীর মিশ্র ঐতিহ্য পাওয়া যায় এবং শেষ অবধি ভালো লাগার ছবি। এই সিরিজের পরেও মুর্তজা বশীর নতুন কাজ করেছেন, বিশেষ করে কোলাজ মাধ্যমে, কিছু কাজ যুদ্ধের।
বশীরের পিতা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ তাঁর আঁকা ‘ডেড লিজার্ড’ (১৯৬১) দেখে বলেছিলেন, ‘জানো তোমার সেই ছবিটা আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না। আমার ভেতরটা নড়ে ওঠে। সেদিন আমার মনে হয়েছিল, আমার পক্ষে এর চেয়ে আর বড় সম্মান হয় না।’ (মুর্তজা বশীর : মূর্ত ও বিমূর্ত, পৃ ১০৪)।
বশীরের আরেকটি অতি দীর্ঘ সিরিজ ‘পাখা’ বা ‘উইংগ্‌স’ (১৯৯৮)। প্রজাপতির পাখার প্রাকৃতিক নকশার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, নানা রঙের ডিজাইন। বিশাল বিশাল এনলার্জমেন্ট। রং ও ফর্মের জাদুকরী সমাবেশ ঘটিয়েছেন। এছাড়া বশীর বিভিন্ন সময়ে আত্মপ্রতিকৃতি এঁকেছেন, প্রধানত ড্রইং বা স্কেচ। আর এঁকেছেন নিজের বাবা, মা, বান্ধবী, কন্যার মুখ – খুবই দক্ষ হাতের ড্রইং।
এককালের রাজনৈতিক কর্মী বশীর কি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছবি আঁকেননি? ‘আগামী দিনের অপেক্ষায়’ (১৯৫৫) নাকি ইলা মিত্রকে বিষয় করে আঁকা। তরুণ বয়সে কমিউনিস্ট নেতাদের প্রতিকৃতি এঁকে পোস্টার করেছেন, এ-কথা লিখেছেন তিনি তাঁর জীবনকাহিনিতে। অবশ্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবকে কখনোই দেখি না তাঁর পেনসিল বা তুলিতে। তাঁর ৪৫০ পৃষ্ঠার আমার জীবন ও অন্যান্য গ্রন্থে দু-জায়গায় বঙ্গবন্ধুর নাম এসেছে (পৃ ২৭৮ ও ৩৪৩), খুব সংক্ষিপ্তভাবে মাত্র সাত ছত্রে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের যথাযথ স্বীকৃতি ও সম্মান জানিয়েছেন (পৃ ২৭৮)। অবশ্য মুর্তজা বশীরের প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে একমাত্র কাইয়ুম চৌধুরী ছাড়া আর কারো ক্যানভাসে বঙ্গবন্ধুকে কোনো ভূমিকায় দেখি না। তাঁদের গুরুজনদের ছবিতেও না। তাঁদের উত্তর প্রজন্মের অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে তাঁদের ক্যানভাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র করেছেন, প্যারিসপ্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ অবশ্যই এক্ষেত্রে পথিকৃৎ। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শাহাবুদ্দিনের ধ্যান-জ্ঞান।
মুর্তজা বশীরের অনেক কাজই দর্শকের ‘ভেতরটা নাড়া দেয়’। কখনো গোটা একটি সিরিজ, কখনো কোনো একটি বিশেষ কাজ। আমার অত্যন্ত প্রিয় কাজ তাঁর ‘অক্ষয় বট’ বা Martyr’s Tree ‘(মার্টায়র্স ট্রি)’। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে প্রথম যখন ‘অক্ষয় বট’ (১৯৭৪) শিল্পকর্মটি দেখি, আমি অত্যন্ত অভিভূত হয়েছিলাম। সহজ প্রতীকী দ্যোতনা, সৃষ্টিক্ষম নারীর হাত থেকে শহিদের জন্য আশীর্বাদ, পাশে মহীরুহ, মুক্তিযোদ্ধার উদাত্ত ঘোষণা, ওপরের ডান কোণায় বিশাল তারকা, সম্ভবত এরকমই বিষয়, কিন্তু বিষয় নয় শুধু, আমি আকৃষ্ট হয়েছি মোজাইকের ব্যবহৃত উপকরণ-বৈশিষ্ট্য দেখে, পাথর, ইট – সাধারণ পোড়া ইট, অতি পোড়া বা ঝামা কালো ইট – এসবের প্রকাশ ক্ষমতা দেখে। এত সুদক্ষভাবে প্রাকৃতিক রংগুলোর বিন্যাস ঘটিয়েছেন, ভাবা যায় না, বর্ণনা তো করাই যায় না। অথচ এমন মাধ্যমে কাজ তিনি আগে বা পরে খুব একটা করেছেন, আমার মনে পড়ছে না। অসাধারণ শিল্পকর্ম। আমার মতে, বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্মের একটি।
বশীরের প্রথম জীবনের বাস্তবধর্মী সাধারণ মানুষের জীবনভিত্তিক কাজগুলো ভালো লাগে। মুগ্ধ হয়েছি তাঁর ছাত্রকালীন সময়ের প্লাইউডের ওপর তেলরং কাজ ‘বুড়িগঙ্গায় হোটেল’ (১৯৫৩) দেখে। রং নির্বাচন ও আঙ্গিক কুশলতা – দুভাবে বিশিষ্ট। ১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে বিষয় করে করা তাঁর লিনোকাট ছোট ছাপাই ছবিটিও চোখে ভাসে। ‘তরুণী ও পাখি’, (১৯৬১), ‘তরুণী ও টিকটিকি’ (১৯৬১) এসব আধা বাস্তববাদী ছবিও। ‘দেয়াল’ সিরিজ আমাকে খুব একটা আলোড়িত করে না, এতদিন ধরে এত কাজ (৯২টি) করলেন, ‘ভেতরে নাড়া দেয়’ কটি? বরং তাঁর স্বল্পস্থায়ী চিত্রমালা আধা বিমূর্ত ‘নারী ও ফুল’ (১৯৬৭) হয়তো একটি অর্থপূর্ণ ধারা তৈরি করতে পারতো। পরবর্তী সিরিজ ‘শহীদ শিরোনাম’, বিস্ময়কর, এই সিরিজে অনেকগুলো ‘নাড়া দেবার’ মতো কাজ রয়েছে ‘শিরোনাম ১৯’ (১৯৭৩/ ১৯৭৫) অথবা বহুল প্রচারিত ১৯৭৭ সালে আঁকা ‘শহীদ শিরোনাম’ বিভিন্ন আকৃতির পাঁচটি ফর্ম নিয়ে কম্পোজিশন, স্মরণীয়। ‘কলেমা তৈয়বা’ সিরিজের (২০০২) ৩৭ নম্বর কম্পোজিশন (বেগুনি রঙের নানা টোনে আঁকা) উল্লেখযোগ্য। তবে আমার মনে দাগ কাটার মতো নয়। বরং ২০০৩ থেকে আঁকা তাঁর ‘নারী’ (বাঙালি নারী ও গৃহপরিবেশ) খুব ভালো লাগে। নারী-অবয়বে ইউরোপীয় (বিশেষ করে মদিলিয়ানি ঢংয়ের), ভারতীয় ধ্রুপদী নারীমুখের আদল ও সামগ্রিক বাঙালিয়ানা, ছবিগুলোতে অসাধারণত্ব এনেছে। প্রতিটিতে অন্তত একটি ফুল, অথবা কিছু সজীব পাতা সংযোজন খুবই অর্থপূর্ণ দ্যোতনা দেয়। এমনিতে মুর্তজা বশীর প্রাকৃতিক দৃশ্য বা নিসর্গ আঁকায় খুব উৎসাহী ছিলেন না, একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে ছাড়া। জীবনের একেবারে শেষ পর্যায়ে বশীর বেশ কিছু কোলাজ কম্পোজিশন করেছেন, নিশ্চয়ই এগুলো করে তিনি আনন্দ পেয়েছেন, সেটা কম কথা নয়। শিল্পচর্চা ও নতুন আঙ্গিক নিরীক্ষা ছিল মুর্তজা বশীরের কাছে জীবনচর্চার সমার্থক।

পাঁচ
সীমিত পরিসর বর্তমান নিবন্ধে শিল্পী মুর্তজা বশীরের অতি আংশিক পরিচয় মাত্র আলোচনা করতে পেরেছি, অনালোচিতই থেকে গেল বেশিটা। আবুল হাসনাত-সম্পাদিত শিল্প ও শিল্পী সাময়িকীর অক্টোবর ২০১৮ সংখ্যায় প্রকাশিত আমার ‘সতীর্থ শিল্পী চতুষ্টয় : রাজ্জাক, রশিদ, কাইয়ুম ও বশীর’ শীর্ষক প্রবন্ধটি শেষ করেছিলাম এভাবে, ‘অসামান্য প্রতিভাধর মুর্তজা বশীর দীর্ঘ ৭০ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে মূল্যবান শিল্প সৃষ্টি করেছেন, এখনো করছেন। স্বাধীনতা পুরস্কার তাঁর একান্তই প্রাপ্য।’ অত্যন্ত সুখের বিষয়, মাসছয়েক পরে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন মুর্তজা বশীর, তাঁর প্রায় ৮৭ বছর বয়সে। তিনি একুশে পদক পেয়েছিলেন ১৯৮০ সালে, মাত্র ৪৮ বছর বয়সে।