রায়পুরা থেকে ময়মনসিংহ

পনেরো

দাদুর ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আমি কিছুটা স্বস্তি বোধ করলাম। এতোদিন অভিভাবকদের কাছে যা গোপন ছিল তা আর গোপন রইল না। আমি যে অজয় রায়কে নিয়েই আমার ভবিষ্যৎ জীবন সাজানোর পরিকল্পনা করেছি, এটা দাদু জেনেছেন। আর একজন বাম রাজনীতিকের জীবন যত অনিশ্চয়তায় ভরা হোক না কেন, আমি তাকেই স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। আমার মনের ভাব অনেকটা এমন : কঠিনেরে বাসিলাম ভালো, সে কখনও করে না বঞ্চনা।

দাদুর নীরব সম্মতি পেয়ে গেছি বুঝে আমার ভেতরটা অনেক হালকা হয়ে গেল। আবার অস্বস্তির কাঁটাও বুক থেকে পুরো সরলো না। কবে তিনি জেল থেকে ছাড়া পাবেন? কবে শুরু হবে আমাদের একসঙ্গে পথচলা?

দেশ ক্রমশ নির্বাচনমুখী হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পক্ষে এক ধরনের গণজোয়ার দেখা যাচ্ছে। মওলানা ভাসানী নির্বাচন নিয়ে একেকবার একেক রকম বক্তব্য দিচ্ছেন। প্রথমে নির্বাচন বর্জনের কথা বলে আবার পরে অংশগ্রহণের কথা বলছেন। তাঁর সঙ্গে থাকা গোপন চীনপন্থী কমিউনিস্টরা ‘ভোটের আগে ভাত চাই’ দাবি তুলে নির্বাচনবিরোধী প্রচারণায় নামে। অন্যদিকে মস্কোপন্থী হিসেবে পরিচিত কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ থাকায় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগবঞ্চিত। তবে ন্যাপ (ওয়ালী খান -অধ্যাপক মোজাফ্ফর) নির্বাচনের পক্ষে। কমিউনিস্টরা তখন মূলত এই ন্যাপের মধ্যেই কাজ করতেন। ন্যাপের এই অংশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেওয়ার দাবি তুললেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কোনো ধরনের নির্বাচনী ঐক্যের পক্ষে ছিলেন না। আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচন করলেই বেশি ভালো করবে – এই বিশ্বাস শেখ মুজিবের ছিল। তিনি সারাদেশ সফর করে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ-উদ্দীপনা দেখে নিজের বিজয় সম্পর্কে আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন। তবে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হতে দেবেন কি না, তা নিয়েও কারো কারো মধ্যে সংশয় ছিল।

তবে সব জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানের দুই অংশ মিলিয়ে জাতীয় পরিষদের মোট আসন ছিল ৩০০। এর মধ্যে পূর্ব বাংলায় জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় আসন ছিল ১৬২টি আর পশ্চিম পাকিস্তানে ১৩৮টি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। পশ্চিম পাকিস্তানে কোনো আসন না পেলেও পূর্ব বাংলায় ১৬২ আসনের মধ্যে ১৬০টিই আওয়ামী লীগের দখলে আসে। পশ্চিম পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি মোট ৮১টি আসন পায়। বাকি আসনগুলো পায় মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামি দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বামপন্থী ওয়ালী ন্যাপও চারটি আসন লাভ করে। পূর্ব বাংলায় আওয়ামী লীগ যে-দুটি আসন হারায় তার একটিতে জেতেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ থেকে পিডিপির নুরুল আমিন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে রাজা ত্রিদিব রায়।

নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হওয়ায় আওয়ামী লীগই পাকিস্তানে সরকার গঠন করবে – এটাই ছিল প্রত্যাশিত; কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির হাতে ক্ষমতা ছাড়তে অনাগ্রহী ছিল। শেখ মুজিবের বিস্ময়কর নির্বাচনী সাফল্যে পাকিস্তানি শাসকদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। নির্বাচনের রায় বানচালের জন্য শুরু হয় প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে হাত মেলান জুলফিকার আলী ভুট্টো। ইয়াহিয়া-ভুট্টোর গোপন ষড়যন্ত্র পাকিস্তানের রাজনীতিকে টালমাটাল করে তোলে। এদিকে নির্বাচনী রায় বাস্তবায়নের জন্য শেখ মুজিবও অত্যন্ত দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন। নির্বাচনে গণরায় পাওয়া শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা করা যে সম্ভব নয়, সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরও ইয়াহিয়া-ভুট্টো তাঁদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখেন। পার্লামেন্ট অধিবেশন ডাকতে গড়িমসি করা হয়। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ সংসদ অধিবেশন আহ্বান করেও আকস্মিকভাবে ১ মার্চ বেতারে ভাষণ দিয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তা স্থগিত ঘোষণা করেন।

প্রতিবাদে পূর্ব বাংলা ফুঁসে ওঠে। হয় শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা, না হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা – এই দাবি প্রবল হয়ে ওঠে। পার্লামেন্ট অধিবেশন স্থগিত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকাসহ সারাবাংলায় বিক্ষুব্ধ মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসে। ‘ইয়াহিয়ার মাথায় লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’, ‘ভুট্টোর মাথায় লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ – সেøাগান উচ্চারিত হয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে। জনরোষ প্রশমিত করার জন্য নামানো হয় পুলিশ-মিলিটারি। কিন্তু হত্যা-নির্যাতন মানুষকে দমাতে পারে না। সারাবাংলা পরিণত হয় বারুদের গোলায়। এতো বিদ্রোহ আগে কেউ কখনো দেখেনি।

শেখ মুজিবের নেতৃত্বে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তৈরি হয়। ৩ মার্চ ছাত্রনেতারা ঢাকায় সে-পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলনও করেন। ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখ লাখ মানুষের জনসভায় শেখ মুজিব ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তিনি বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো, ইনশাল্লাহ।’

সেদিন থেকেই কার্যত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সবকিছু চলতে থাকে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব পূর্ব অংশে অকার্যকর হয়ে পড়ে। ইয়াহিয়া খান, ভুট্টো এবং তাঁদের সমর্থকরা বাঙালির এই জেগে ওঠা, আত্মনিয়ন্ত্রণের পক্ষে সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলা পছন্দ করে না। তাঁরা শক্তি প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করেন। অন্যদিকে বাঙালি জাতিও শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ‘হয় স্বাধীনতা, না হয় মৃত্যু’ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে।

আন্দোলন বেগবান হয়ে ওঠায় বেসামাল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করে পূর্ব বাংলায় সামরিক শক্তি বাড়াতে থাকেন। কোনো কিছুতেই আন্দোলনের গতি কমাতে না পেরে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় গণহত্যা। ধ্বংসযজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে প্রতিরোধ যুদ্ধের ডাক দেন। পাকিস্তানের প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালি কার্যত ‘যার যা আছে তা-ই নিয়ে’ লড়তে শুরু করে।

সে এক ভীষণ অন্যরকম সময়। মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে সর্বস্তরের মানুষ পাকিস্তানিদের মোকাবিলায় নেমে পড়ে। ২৮ মার্চ ময়মনসিংহে ঘটে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা। ওইদিন ছাত্র-শ্রমিক-জনতা জেলখানা ভেঙে অজয় রায়সহ অন্য বন্দিদের মুক্ত করেন। দেশ শত্রুর কবলে কিন্তু অজয় রায় মুক্ত। তাঁর এই মুক্তির খবরে তাঁর রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা যেমন খুশিতে উদ্বেলিত, তেমনি আমার মনেও বয়ে যায় আনন্দের হিল্লোল। দেশ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে প্রিয়জনকে কাছে পাবো ভেবে নিরুদ্বেগ ভাবই আমার মধ্যে প্রবল হয়ে ওঠে।

আমি আশা করেছিলাম, জেল থেকে বেরিয়ে অজয় রায় প্রথমে আমাদের বাসায় আসবেন। আমাকে দেখা দিয়ে উৎকণ্ঠামুক্ত করবেন!  কিন্তু না, তিনি তা না করে সোজা গিয়ে হাজির হন সংগ্রামী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের কাছে। ময়মনসিংহ মহাকালী গার্লস স্কুলে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যে কন্ট্রোলরুম স্থাপিত হয়েছে, সেখানে গিয়ে তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার কাজে লেগে পড়েন। আমি সেখানে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করি। শুধু চোখের দেখা। একান্তে কথা বলার অবস্থা সেখানে ছিল না। তিনি দেশ অন্তপ্রাণ মানুষ। দেশের ডাকই তাঁর কাছে বড়। তবে তখন আমার কি একটুও অভিমান হয়নি? তাঁর জন্য আমার যে-ব্যাকুলতা তা কি তিনি বুঝতে পারেননি? নাকি প্রাণের টান আর কর্তব্যের টান সবার কাছে সবসময় একরকম গুরুত্ব পায় না?

একটু গুছিয়ে নিয়ে আমাদের বাসায় তিনি যাবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করলেন।

এদিকে ময়মনসিংহ শহরে অবাঙালি বা বিহারি বলে পরিচিতদের বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ শুরু করে কিছু সুযোগসন্ধানী বাঙালি দুষ্কৃতকারী। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনকে সহায়তার কাজে অজয় রায় তখন মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী ময়মনসিংহ দখলের জন্য আসছে – এই খবর ছড়িয়ে পড়ে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে। তখন একদিন অজয় রায় আমাদের বাসায় আসেন। দাদুকে বলেন, শহরের অবস্থা ভালো নয়। এখানে থাকা আর নিরাপদ নয়। আমি জয়ন্তীকে আমার সঙ্গে নিয়ে যেতে চাই।

দাদু কিছু একটা ভাবলেন। তখন আমার মা দাদুর বাসায় ছিলেন না, রায়পুরায় আমাদের বাড়িতে ছিলেন। আমার দুই ভাই, ছোট বোন এবং দিদিমা একসঙ্গে ছিলাম। সবার উপস্থিতিতে দাদু অজয় রায়কে বললেন, আমি আমার নাতনিকে তোমার হাতে সঁপে দিতে চাই। আনুষ্ঠানিকতা করার সময় নেই। আর আমি আনুষ্ঠানিকতায় তেমন বিশ্বাসও করি না। আমি শুনেছি, তোমরা পরস্পরকে পছন্দ করো, ভালোবাসো।

দাদু একটি সিঁদুরের কৌটা আনলেন। তাঁর আরাধ্য সাধক পুরুষ মনোমোহন দত্তের ছবির সামনে আমাকে আর অজয় রায়কে দাঁড় করিয়ে বললেন, আজ থেকে তোমরা স্বামী-স্ত্রী হয়ে থাকবে। অজয় রায় আমার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিলেন। দাদু বাগান থেকে কয়েকটি গোলাপ এনে আমাদের দুজনের হাতে দিলেন। জেলের  ভেতর গোলাপ দিয়ে আমাকে তাঁর প্রেমের কথা জানিয়েছিলেন অজয় রায়, আর আমার ঋষিতুল্য দাদু আমাদের দুজনের হাতে সেই গোলাপ তুলে দিয়েই নতুন জীবনযাত্রায় আশীর্বাদ করলেন। কোনো পুরোহিত নেই, নেই মন্ত্র-উচ্চারণ, উলুধ্বনি, ঢাকের বাদ্য; আমার দাদুই আমাকে সম্প্রদান করলেন অজয় রায়ের হাতে। মুক্তিযুদ্ধের সূচনাতেই এক নতুন জীবনযুদ্ধে আমরা শামিল হলাম দাদু-দিদিমাকে প্রণাম করে। সেদিন কি জানতাম, আমার সুখের দাম্পত্য জীবন দীর্ঘ ৪৬ বছর স্থায়ী হবে?

ষোলো

অজয় রায়ের হাত ধরে আমি এবং আমার ছোট বোন ওই রাতেই ময়মনসিংহ ছাড়লাম। যাওয়ার আগে দাদু অজয় রায়ের হাতে দিলেন কিছু টাকা এবং পরিবারের সঞ্চিত ৪০ ভরি স্বর্ণালংকার। এতো সোনার গহনা নিয়ে যাওয়াটা অনিরাপদ মনে করে অজয় রায় দ্বিধা করলে দাদু বলেন, তোমার কাছে আমার নাতনি নিরাপদ থাকলে এই সোনার গহনাও নিরাপদ থাকবে। অজয় রায়ের আর সোনার পুঁটুলি গ্রহণ না করে উপায় থাকে না। প্রয়োজনীয় কিছু কাপড়চোপড়ের সঙ্গে ওই স্বর্ণালংকার নিয়ে আমরা দাদুর বাড়ি থেকে বের হই।

রাতের অন্ধকারে নদী পার হয়ে পূর্বপরিচিত এবং ছাত্র ইউনিয়নের নেতা সুলতানদের বাড়িতে আশ্রয় নিলাম। সুলতানের বোন হেলেনও ছাত্র ইউনিয়ন করত। পরে ময়মনসিংহ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী হয়েছিল। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে আমরা ওই বাড়িতে পৌঁছি। আমাদের জন্য অত রাতেও রান্না করা হয়। গরম ভাত, মুরগির মাংস এবং আলু ভর্তা দিয়ে ক্ষুধার পেটে বেশ পরিতৃপ্তির সঙ্গে খেয়েছিলাম।

আমাদের সঙ্গে ওই রাতে ময়মনসিংহ ছেড়েছিল ইসমাইল, মকবুল, হাশেম, প্রদীপ চক্রবর্তী এবং হান্নান। এরা সবাই ছিল ছাত্র ইউনিয়নের নেতা। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে তারা বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। আমার মনে হয়েছিল, আমাদের বিয়েতে এরাই যেন হয়েছিল বরযাত্রী-কনেযাত্রী। অনিশ্চিত এক যাত্রা। তারপরও সবাই ছিল হাসিখুশি। দেশকে শত্রুমুক্ত করার দুর্জয় প্রতিজ্ঞা সবার অন্তরে। অজয় রায় সবারই নেতা। তিনি গন্তব্য ঠিক করবেন, পথ দেখাবেন।

পরদিন সকালে আমরা কিশোরগঞ্জের কাছাকাছি মসুলি দেওয়ানজি বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করি। ওটা ছিল অজয় রায়ের মামাবাড়ি। কিছুটা গরুর গাড়ি, কিছুটা রিকশায় করে অজয় রায়, আমি আর আমার ছোট বোন মসুলি যাই। আমাদের সঙ্গে আর যারা ময়মনসিংহ ত্যাগ করেছিল, তারা কোথায় কীভাবে যাবে সে-নির্দেশনা অজয় রায় তাদের দিয়েছিলেন।

মসুলির আত্মীয়বাড়ির সামনে যাওয়ার পর আমাদের দেখতে পেয়ে একটি ছোট মেয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে, মা মা দেখো চুনীদা কাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। অজয় রায়ের ডাকনাম যে চুনী সেটা আমার জানা হয়ে গেল। বাড়ির ভেতরে যাওয়ার পর সবাই আমার প্রতি কৌতূহলী হয়ে উঠল। পথে নিরাপত্তার কথা ভেবে আমাকে একটি বোরকা পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অজয় রায়ের সঙ্গে বোরকা পরা মেয়ে – কৌতূহল হওয়াটাই স্বাভাবিক। বাড়ির লোকদের যখন জানানো হয় যে, আমি অজয় রায়ের স্ত্রী, আমাদের বিয়ে হয়েছে, তখন তো সবাই আনন্দে আত্মহারা। বধূবরণের তোড়জোড় শুরু হয়। আমার এক কাকিশাশুড়ি উলুধ্বনি দিয়ে, শঙ্খ বাজিয়ে ধানদূর্বা দিয়ে বধূবরণ করেন। ওই বাড়িতেই হয় আমার বউভাত এবং বাসরশয্যা। বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ ব্যবস্থা। অজয় রায় সংসার করতে যাচ্ছেন জেনে তাঁর আত্মীয়রা বেজায় খুশি। ওই বাড়িটি ছিল বনেদি এবং অভিজাত। ওখানেও গোপন কমিউনিস্ট পার্টির মিটিং হতো বলে আমি পরে শুনেছি। কমিউনিস্ট নেতা খোকা রায়ের ওই বাড়িতে আসা-যাওয়া ছিল। ওই বাড়িতে চার-পাঁচদিনের অবস্থানকালে আমি বেশ স্বস্তিতেই ছিলাম। নিজেকে বিবাহিত নারী বলেই মনে হচ্ছিল। তবে নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা আরো নিভৃত এলাকায় চলে যাই। তাড়াইলে কৃষক সমিতির নেতা রাজ্জাক সাহেবের বাড়িতে গিয়ে উঠি। রাজ্জাক সাহেবরা জোতদার। সাত ভাই। বড় পরিবার। তাঁর মা-ও জীবিত। রাজ্জাক সাহেবরা আমাদের পরিচয় জানতেন। তবে অন্যদের কাছে আমরা মুসলমান পরিচয় দিতাম। অজয় রায় ছিলেন শরিফ সাহেব। তাঁর পেশা অধ্যাপনা।

রাজ্জাক সাহেবের বাড়ির লাগোয়া একটি পুকুর ছিল। পুকুরের অদূরে ছিল একটি মসজিদ। কেউ যাতে সন্দেহ না করে সেজন্য রাজ্জাক সাহেবের স্ত্রী তাঁর সঙ্গে আমাকে নামাজ পড়তে বলতেন। কীভাবে নামাজ পড়তে হয়, আমি জানতাম না। রাজ্জাক সাহেবের স্ত্রী বলতেন, আমি যা যা করি, আপনি তা-ই অনুসরণ করবেন। তাহলেই কেউ বুঝতে পারবে না।

রাজ্জাক সাহেবের ভাগ্নি আমাকে মামানি বলত। একদিন ভোরে ওই ভাগ্নি আমাকে স্নানের জন্য পুকুরে নিয়ে যায়। আমিও অনেকদিন পর খোলা পরিবেশে সাঁতার কাটার সুযোগ পেয়ে খুশিই হয়েছিলাম। আমাদের পুকুরে সাঁতার কাটতে দেখে মসজিদের ইমাম সাহেবের মনে কেন যেন সন্দেহ হয় যে আমি হিন্দু। রাজ্জাক সাহেবের ভাগ্নে মিরাজকে ডেকে ইমাম সাহেব বলেন, তিনি আমার বিয়ের ব্যবস্থা করবেন। একজন হিন্দু মেয়েকে মুসলমান করে বিয়ে দিলে সোয়াব হবে ভেবে ইমাম সাহেব এটা করতে চান।

ওই জায়গা আমাদের জন্য নিরাপদ নয় মনে করে আমরা আবারো জায়গাবদলের সিদ্ধান্ত নিই। যাওয়ার আগে রাজ্জাক সাহেবের মায়ের হাতে অজয় রায় আমাদের সোনার গহনার পুঁটুলি তুলে দেন। তিনি বলেন, আমি বেঁচে থাকলে তোমাদের গহনাও থাকবে। মানুষের প্রতি মানুষের কি গভীর আস্থা-বিশ্বাস। রক্তের সম্পর্ক নয়, তবু অতগুলো সোনার গহনা একজন নারীর হাতে রক্ষার দায়িত্ব কি আজকাল কেউ দেবেন? এখন আমাদের ভরসার জায়গা কমেছে। কে কীভাবে কাকে ঠকিয়ে ফায়দা লুটবে তারই প্রতিযোগিতা চলছে।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ওই গয়না আমরা ফেরত পেয়েছি। রাজ্জাক সাহেবের মা একটি পাতিলের মধ্যে ভরে ওই গয়নাগুলো তাঁর শোবার ঘরে মাটির নিচে পুঁতে রেখেছিলেন।

এবার আমরা আগরতলা যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে অজয় রায়ের জন্মস্থান বনগ্রামের দিকে রওনা হই। তখন রাস্তাঘাট খুব ভালো ছিল না। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হলে হাঁটাই ছিল প্রধান উপায়।

বনগ্রাম যাওয়ার পথে একজন অজয় রায়কে চিনতে পেরে তাঁর বাড়িতে যাওয়ার জন্য আবদার করে। ওই ব্যক্তির সঙ্গে জেলখানায় অজয় রায়ের পরিচয়। সে ছিল দুর্ধর্ষ ডাকাত। বশা ডাকাত নামে সে পরিচিত। গাল-ঠোঁট কাটা বিদ্ঘুটে চেহারার বশা ডাকাতকে দেখলেই ভয় লাগে। তাকে এড়ানোর চেষ্টা করেও আমরা সফল হই না। বশা অজয় রায়কে সম্মান করে। বলে, দাদা, আমি এখন আর ডাকাতি করি না। আমি বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ করব। আমার বাড়িতে একটু পায়ের ধুলো দিয়ে যাবেন। ভয় পাবেন না। আমরা বিশ্বাসঘাতক নই।

কিছুটা নিরুপায় হয়েই আমরা তার বাড়িতে স্বল্প সময়ের আতিথ্য গ্রহণ করি। মুড়ি-বাতাসা দিয়ে আমাদের আপ্যায়ন করা হয়। দুপুরে খাওয়ার জন্য জোরাজুরি করলেও আমরা তা রক্ষা করিনি। বিদায় দেওয়ার সময় বশা অজয় রায়কে বলে, আমি আপনাদের কোনো কাজে লাগলে জানাবেন। বশা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে জীবন দিয়েছে বলে পরে জেনেছি। এভাবে কত মানুষের রক্ত আমাদের দেশকে শত্রুমুক্ত করতে সাহায্য করেছে তার সব তথ্য কি আমাদের জানা আছে? স্বাধীনতার সুফল ভোগের জন্য যারা এখন বেপরোয়া তারা জানেও না কত মানুষের আত্মত্যাগ এই স্বাধীনতার বেদিতে উৎসর্গিত হয়েছে।

সতেরো

বনগ্রামে অজয় রায়ের আদি বাড়িতে এসে আমরা এক জ্ঞাতির বাড়িতে উঠলাম। তার নিজের কেউ তখন ওই গ্রামে ছিলেন না। সবাই হয় কলকাতা বা অন্য কোথাও চলে গেছেন। এলাকার মানুষ অনেকেই অজয় রায়ের নাম জানে; কিন্তু তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ-পরিচয় নেই। যে-বাড়িতে উঠলাম তারা আসলে বিশিষ্ট বাঙালি মননশীল লেখক ও চিন্তাবিদ নীরদচন্দ্র চৌধুরীর আত্মীয়। নীরদ চৌধুরীও দীর্ঘদিন থেকে এলাকাছাড়া। তিনি কলকাতায় লেখাপড়া করেছেন এবং একপর্যায়ে লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতে লেখালেখি করে নীরদ চৌধুরী খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বাঙালির ভণ্ডামি এবং কপটতা দেখে তিনি মর্মাহত হয়ে অনেক তীর্যক মন্তব্য করে আলোচিত এবং সমালোচিত হয়েছেন। নীরদ চৌধুরীও অজয় রায়ের আত্মীয় ছিলেন।

বনগ্রামে আমাদের রেখে অজয় রায় কোথায় যেন চলে গেলেন। তাঁর সঙ্গী রাজ্জাক সাহেব। মুক্তিযুদ্ধে তরুণ-যুবকদের অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার রাজনৈতিক কর্তব্য পালনের জন্যই  তিনি কাছাকাছি অন্য কোনো এলাকায় গিয়েছিলেন বলে আমার ধারণা। দেশের ডাক তাঁর কাছে বড় ছিল। তাই নববধূকে রেখে যেতে তিনি একটুও দ্বিধা করেননি। আমার যে একটু খারাপ লাগেনি তা নয়। তাঁর সঙ্গ তখন আমি চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তাঁর রাজনৈতিক কর্তব্যকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এটাই যে তাঁর জন্য স্বাভাবিক ছিল সে-কঠিন সত্য আমি সহজভাবেই মেনে নিয়েছিলাম। রবীন্দ্রনাথকেই আবার মনে পড়ছিল :

মনেরে আজ কহ যে,

ভালো মন্দ যাহাই আসুক

সত্যরে লও সহজে।

অনেক ঝঞ্ঝা কাটিয়ে বুঝি

এলে সুখের বন্দরেতে,

জলের তলে পাহাড় ছিল

লাগলো বুকের অন্দরেতে …

বনগ্রামে আমাকে এবং আমার বোনকে দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলেন ‘বীর’ মান্নান এবং তারা মাস্টার নামে দুই কৃষক ও কমিউনিস্টকর্মীর ওপর। মান্নান সাহেবের নামের আগে বীর শব্দটি কেন যুক্ত হয়েছিল তা আমি জানি না। অনুমান করি, তিনি সাহসী বা বীরত্বপূর্ণ কোনো কাজ করেছিলেন বলেই হয়তো এলাকাবাসী তাঁকে বীর মান্নান বলে সম্বোধন করত। তাঁরই এক আত্মীয় আব্দুল মান্নান একসময় বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।

তারা মাস্টারও এলাকায় বেশ পরিচিত ছিলেন। তিনি হয়তো শিক্ষকতার পাশাপাশি বাম রাজনীতি করতেন। বনগ্রামে গিয়ে স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। এর মধ্যে রমণীমোহন দেবনাথের কথা মনে আছে। তাঁর বাড়িও ওই এলাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। পরে তিনি ব্যাংকার হিসেবে এবং লেখালেখি করে সুনাম কুড়িয়েছেন। অজয় রায়ের সঙ্গে রমণী দেবনাথের শেষ পর্যন্ত ঘনিষ্ঠতা এবং যোগাযোগ ছিল।

বনগ্রামে কদিন থেকেই হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। কারণ ওখানে

 আমার কিছু করার ছিল না। রেডিওতে খবর শুনে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অবগত হওয়ার চেষ্টা করতাম। নানাভাবে বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার খবরও কিছু কিছু কানে আসত। পাকিস্তানি বাহিনী প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বাঙালি জনবসতিতে আক্রমণ চালিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। নারী ধর্ষণের ঘটনাও ঘটছে। কোটি কোটি মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুঃসময়।

একদিকে প্রতিরোধ যুদ্ধ চলছে, অন্যদিকে জীবন বাঁচানোর জন্য হাজার হাজার মানুষ দেশত্যাগ করছে বলেও খবর পাচ্ছি। পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের মূল টার্গেট আওয়ামী লীগ এবং হিন্দু সম্প্রদায়। সত্তরের নির্বাচনে যাঁরা নৌকায় ভোট দিয়েছেন তাঁদের পাকিস্তানের শত্রু মনে করে নিধনযজ্ঞ শুরু করা হয়েছিল।

দেশত্যাগে বাধ্য অসহায় মানুষজন সর্বস্বান্ত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠনের খবর শুনে উৎসাহ বোধ করি।

একদিন খবর পাওয়া গেল, বনগ্রামের কাছাকাছি কোথাও পাকিস্তানি বাহিনী ঢুকে পড়েছে। তাই ওই এলাকা নিরাপদ মনে না করে বীর মান্নান এবং তারা মাস্টার আমাকে ও আমার বোনকে রায়পুরায় আমাদের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। নৌকায় করে আমরা রায়পুরায় পৌঁছলাম। মেঘনা পাড়ের মেয়ে আমি। মেঘনাকে ছেড়ে গিয়েছিলাম ব্রহ্মপুত্রের কিনারে। জীবনের এক বিশেষ মুহূর্তে আবারো মেঘনায় ভেসে মায়ের কোলে ফিরে এসে চরম স্বস্তি বোধ করলাম। অনেকদিন পর মা-বাবার সঙ্গে দেখা হওয়ার শান্তিই আলাদা। আমার দাদু, দিদিমা এবং বড় ভাই বিকাশ পাল অবশ্য ততোদিনে দেশত্যাগ করেছেন। তাঁরা আসামের গোয়াহাটিতে আমার মাসির কাছে চলে গিয়েছেন।

রায়পুরা ছিল কৃষক সমিতির শক্ত ঘাঁটি। ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের অনেক নেতাকর্মী ঢাকা থেকে রায়পুরায় আশ্রয় নিয়েছেন। সবারই উদ্দেশ্য, ওখান থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতযাত্রা। তখন পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনী রায়পুরায় হানা দেয়নি।

আমরা রায়পুরা আসার দু-একদিন পর অজয় রায়ও আমাদের বাড়িতে আসেন। নতুন জামাইকে পেয়ে ওই দুঃসময়েও আমার মা খুব খুশি হন। জামাই বলে কথা! জামাইকে বরণ করতে চেষ্টার ত্রুটি করলেন না মা।

মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে আমাদের অনেকেই তখন উন্মুখ হয়ে ছিলেন। তাই আমাদের রায়পুরা ছাড়ার সিদ্ধান্ত হলো। জুনের প্রথমদিকে আমরা একদিন একটি বড় নৌকা নিয়ে আবার মেঘনার বুকে ভাসলাম। এবার লক্ষ্য আগরতলা। নদীপথে আগরতলা পৌঁছতে আমাদের দুদিন লেগেছিল। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে আমাদের এই যাত্রায় আরো কয়েকজন ছিলেন। তারা সবাই ছাত্র

ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাদের নাম আগেও বলেছি, আবার বলছি : ইসমাইল, নজরুল, প্রদীপ, হান্নান। পথে বিপদের আশংকা ছিল পদে পদে। কারণ ততোদিনে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকরা পাকিস্তানি বাহিনীর হয়ে দালালি শুরু করেছে। যাঁরা দেশ ছাড়ছিলেন তাঁদের সঙ্গে থাকা সামান্য

টাকা-পয়সা, সোনাদানা লুটপাটের জন্যও গড়ে উঠেছিল লুটেরা বাহিনী। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার আশংকা তো ছিলই।

ধরা পড়লে যাতে কোনো নির্যাতনের শিকার হতে না হয় সেজন্য অজয় রায় আমাকে একটি বিষের কৌটা দিয়েছিলেন। তিনি কোথা থেকে ওই বিষ সংগ্রহ করেছিলেন তা আর জিজ্ঞেস করা হয়নি। শুধু নির্দেশ ছিল, মিলিটারি বা দালালদের হাতে ধরা পড়লে ওই বিষ পান করে আত্মাহুতি দেওয়ার।

তবে আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়ে বড় কেনো বিপদ বা ঝামেলায় পড়তে হয়নি। আমরা দেশের মাটি ছেড়েছিলাম, দেশকে ভালোবেসেই। দেশকে শত্রুমুক্ত করার প্রতিজ্ঞা ছিল আমাদের সবার অন্তরে।

আমরা পরাজিত হবো না। আমরা বীরের বেশে দেশে

ফিরব – এ-বিশ্বাস আমাদের সবারই ছিল। যাত্রাপথে তাই সারাক্ষণই কানে বাজছিল বঙ্গবন্ধুর সেই অবিনাশী উচ্চারণ : ‘আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে

পারবে না।’ (চলবে)