হলফনামা
‘আমি, নিজামালি মুঘল, জন্মদাতা গোলামালি মুঘল
হাল সাকিন হুকুমাসন, থানা কোতয়ালী, পেশা হুকুমর্বদার,
কর্মসূত্রে এবং ভোগদখলে বাংলাদেশের নাগরিক বটে;
দালাল আইনে আট নম্বরি ধারায় আমার আটকাদেশ নাই,
রাষ্ট্রবিধানের পরিপন্থি কোনো কর্মেও যুক্ত নহি –
তদুপরি তথাকথিত অস্ত্র ও বারুদ, মাদক ও ঘাতকের
সংস্পর্শ-রহিত,
হক-হালালের উপার্জনে প্রতিপালিত হয় বৈধ পরিবার;
মাথার উপরে মেঘ এবং পায়ের তলায় মাটি সমান-সমান
আল্লা-মেহেরবান, নাই কিছু ব্যত্যয়, নাই কোনো সংশয় –
জ্ঞান ও তাকৎ, বৃত্তি ও ভরসায় সর্বসত্য এই হলফনামায়।’
চৌহদ্দি
পশ্চিমে হুজুর কেবলা, সাত আসমান উঁচু আরশ-মিনার
পূর্বে পলিধৌত চরাচর, মাছ ও মহিষের যুগল বিস্তার
উত্তরে অখণ্ড চূড়া, সানুদেশে মওজুদ নিয়ামত অপার
দক্ষিণে নুনের ভাটা, ছাঁট লাগা ঢেউয়ের হ্লাদে টানা ঘাসবন –
স্বত্বভাগে সঙ্গে থাকে তস্য পিতা দুদালি মুঘল।
তফসিল
ক্যাডেস্ট্রাল জরিপ বলে উপমহাদেশের অংশবিশেষ
স্টেট অ্যাকুইজিশন শেষে পূর্ব ও পশ্চিমে অসম্পূর্ণ দুই দাগ
সংশোধিত নিষ্পত্তিনামায় ছিটমহল, নদ-নদী, সমুদ্রভাগ,
জাগা দ্বীপ ভাসা চর
বন ও পাহাড় মিলে এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার বর্গ কিলোমিটার।
বয়ান
নিজামালি মুঘল, অতঃপর কেবল মুঘল – শ্মশ্রু ও শিরস্ত্রাণে
ছয় ফুট পাঁচ, আক্বিদা ও তরিকায় নিত্য মান্য পিতার পয়গাম;
তোক্মা-পিস্তা মেশা মহব্বত বিশাল। কর্মযজ্ঞে যখন যান
পেট-পিত্ত ফাঁক করে দেন; বুক, মুখ, চোখ ও গর্দান
বিচূর্ণ হাড়ের মধ্যে কী অসুর, পালোয়ান ভেদাভেদ নেই,
নেই দয়া, ক্ষয়া চাঁদ অসস্ত গেলে সিমার-পাষাণ!
মুঘল ভূগোল জানে, ইতিহাসে কতোটুকু রক্তপাত হ’লে
শাসন-শোষণ মিলে বিজয়ের ঝান্ডা ওড়ে
সে হিসেব মুঘলের ঘরে। হেফ্জে-লব্জে তাঁর
উত্থানের অপার নীলিমা, ইহজন্মে একের সন্ধান।
মাকড়সা, টিকটিকি যতো সত্য ততো ধ্রুব দিঘির পুরাণ
কচ্ছপ-গজার বাড়ে, নড়ে কুমিরের শ্যাওলা-শরীর
চুন-সুরকি ফাঁক ক’রে বট ও দেবদারু দোলে, গম্বুজের গলি
উদয়-অস্তের কালে অন্ধ থাকে, – প্রলম্বিত হাত
দানা ছুড়ে বুঝে নেয় কাক ও কবুতরে মৌলিক তফাৎ;
জিসিমের জোশে বাড়ে কিসিমে-কিসিমে বংশ, মুঘল নির্ভয়!
বাণী ও পানির সঙ্গে স্নায়ু ও শিরা
একযোগে ব’য়ে গেলে কাটা-ধোয়া শেষ –
ছাগশিশু দুধ খাবে রশি হাতে ঘোরে তাঁর ঘড়েল সাঙ্গাৎ,
পাল্লায় ধানের মাপ, খেজুরের মণ্ড আর রুহ্-আফ্জায়
সহবতে এক পাতে ভোজ হবে মুঘলে-মাস্তানে;
মুঘল হুকুম মানে, মুঘল হুকুম চায় সবুজ-সাদায়!
ফরমান
নক্কারা বাজা মানে তোড়জোড়, সামন্ত-সামান নিয়ে
দিক বন্দ দেয়া – জারি করা মুঘলী ফরমান :
বাবুরের দোহাই লাগে, কসম জাফরের
হাঁটা পথে কাঁটা দিয়ে রক্ত চাই, লাশে-লাশে সীমানা প্রাচীর;
যুদ্ধক্ষেত্রে সংহার একমাত্র নীতি, বিবেচনা পক্ষ-বিপক্ষের;
মিত্র কেবলই তারা যারা করে বশ্যতা স্বীকার।
দুদালির হাত ধরে যে এমন সবুজ ভ্রমণ
সফেদ রক্তের সাথে তার মিল হোক, দিল হোক কওসরে শীতল;
দীর্ঘ হোক সাচ্চা পথ, জিন্দা থাক মুঘল-নিশান!
এ কবলা পাঁচ ফর্দে লেখা, সাক্ষী পঞ্চভূত
লেখক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, নিবাস ফরিদপুর
তারিখ পনেরো আগস্ট দুই হাজার চার খ্রিষ্টাব্দ,
মতে একত্রিশ শ্রাবণ চৌদ্দশত এগারো বঙ্গাব্দ।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.