সেলিম মাহমুদ

  • ঘ্রাণ ফুল

    বাদামি-হলুদ দিন গত হলে সূর্য ডোবার মুহূর্তে দিলে সাড়া ঘর ছাড়া অলস রাতের ঘ্রাণ-ফুল। পীত সাগরে মাছের কোঠরে লাল শাপলার স্ফীত বক্ষটান। গোধূলির রঙে মিলনের দিন ফুরিয়ে আসছে বুঝি! বিরহের নদী ফুরাবে না যদি নীল মাছিটারে ডেকে নিও।

  • এক জীবন

    এক জীবন যাপন করার সাহস রাখি; রাত হলে শব্দবান্ধবে ভবনদী পাড়ি দিই; একমুখী কুটিরের রোদ-সোনা মেঝেতে দণ্ডমুণ্ডের কর্তাকে নিয়ে পাশ ফিরে শুই। এক জীবন গুহামুখী আঁধারে চারিধার; বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে, মন ভালো সহবত; বিষম বিস্ময়ে, বিস্মরণে, দিন গুজরানো; মধ্যে মধ্যে সামাজিক, বাকি দিন যাযাবর।

  • বিশালাক্ষী – সাতশত উনিশ

    কাঠে রাখা হলো এ-দেহের ভার কাটে পোকা সৌন্দর্যের সমাহার। এ-শরীর রাখে না বিগত চিহ্ন কোনো বৃথা লবেজান হয় পেতে সকাল সঘন। রূপ মরে ঘুরে তান, থাকে বেলা তামসিক চিদাকাশ শতরূপা, প্রব্রজ্যা গৈরিক।

  • বিদ্যাসাগর অমৃতকথা

    মাতৃভক্তি, শিশুদের পাঠ্যবই রচনা, দানশীলতা, বিধবা বিবাহ প্রচলন প্রভৃতি কর্মসম্পাদন দ্বারা বাঙালির মনের মণিকোঠায় বিদ্যাসাগর অবিস্মরণীয় এক সত্তা। বিদ্যাসাগর প্রসঙ্গে যেসব গুণপনা বহুচর্চিত,  সেগুলি হচ্ছে – বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যরীতির জনক, সমাজ-সংস্কারক, স্ত্রীশিক্ষার প্রবর্তক, সৃষ্টিশীল অনুবাদক ইত্যাদি। বাংলার শিক্ষা ও সমাজের ইতিহাসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উন্মুক্ত ও উদার মননের প্রতীক। তাঁর বিদ্যা ও দয়া কোনোটাই ভোলার নয়।…

  • গ্রীষ্মের সকালে

    গ্রীষ্মের সকালে হঠাৎ পলকে দেখা হয়ে গেল পড়েনি পা যদিও মাটিতে, ছিলে চাকার বাহনে দূরগন্তব্যের আহ্বানে, কেমন কপিশ কন্দরে আর যেন সকালের সারস্বত সম্মিলনে। ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে পথ যায় পথের কিনারে; তাড়াতাড়ি ছিপ ফেলে বসে থাকা চলে মগড়ার উজান গাঙে। সোমেশ্বরী বসে আছে প্রতীক্ষার বাষ্পীয় শকটে নদীর ঠিকানা কোনো ডায়েরিতে লেখা নাই।

  • পরান পোড়ে

    পরান পোড়ে পদ্মফুলে; পলাশ-শিমুল ডালপালা ছড়িয়েছে পথিক-জুড়াতে; প্রাণ  পোড়ে খালি খেয়ায় দাঁড়াতে! পদ্মাসনে নাশ করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা; সটান দাঁড়ালাম কোলাহল, হল্লা জয় করে নিতে! পাথরে প্রস্তুতিপর্ব সারি, সরবো না এখনই এতো ঘ্রাণ, এতো সমর্পণ কী করে হারাই!

  • চন্দ্রপল্লি পূর্ণদশায় প্রকাশিত

    চাঁদ দেখা যায় না, আড়ালে থাকে মুখ চন্দ্রপল্লি পূর্ণদশায় প্রকাশিত তার কিছুটা আঁচ করা যায় কার্তিকের গ্রামে। তবুও চাঁদ, মুগ্ধতা ছড়ানো হাসি দিয়ে বিলিয়ে দিলো রূপ ও রঙের মদিরা! আমাদের কাহিনি মোটে স্বল্পদৈর্ঘ্যরে গজফিতায় তার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ পরিমাপের নয়। একটি কাহিনি শেষ না হতেই অন্য এক দৃশ্যে চাঁদ দেখা গেল আলিঙ্গনের শুভ রাত্রিতে।

  • কপিলা কন্দলী

    সকালটা নগদে কিনে, বিকেলটা ধার-কর্জ করে সন্ধ্যায় ফুঁ দিলাম তন্দুরী-সেঁকা লাকড়ি-চুলোয়। রাতে আটা-সুজি নিয়ে হাতে গড়া খানতিনেক রুটি সাজালাম নিজ ডাইনিংয়ে। আউলা-ঝাউলা সময়টাকে গাণিতিক বাক্যে টানি আরো কিছু গুণিতক, গুণনীয়ক, ল,সা,গু করে তামসে সাজাই কলাবউ। বাস্তুশিল্পে ব্যস্ত মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে কপিলা কন্দলী ঘরে ঘরে তুলি।

  • এই রাত

    এই রাত পড়ে যাবে, তোমার কিছুই থাকবে না মনে ! উঁচুনিচু পাহাড়-পর্বত, অন্ধকারের ঢাকনা খোলা গিরিখাত স্পষ্ট হবে না কিছুই, প্রত্যুষের আলোর অভাবে। যারা ছিল হামাগুড়ি দিয়ে, ফিরে পেতে আলোর উৎসব তাদের কপালে পরাজয়ের চিহ্ন দেখা যায়! এই রাত ঘাম ঝরায় খামোখা, দূরে নেই কোনো বাতিঘর।

  • জন্মঋণ

    সেলিম মাহমুদ কত কিছুই তো পেলাম এই ফুল, ফল, নদী, গমের দানা, বাতাসের প্রণোদনা, ভোঁস ভোঁস জ্বালানির জ্বলা, কাঠের বাক্স, খাদ্যক্যালোরি, আইসক্রিম, মাংসের চাপ-কিমা। কত না পথ, কত দেশ, জনপদ, ইতিহাসের ঘোরানো সিঁড়ি, ফাটা ডিম, মনস্তাপ, আংটি, পাতকূপ, সোনালি ঈগল, এসব কিছু, এক জনমে। কত কিছুই পেয়েই যাই, শুশুক, শুশুনি, আশাবরী, কামদ, তিলক, ঘণ্টাধ্বনি, সবুর…

  • বোধে

    রোদে ছিল; বোধে ছিল না বাঁধলাম তাকে নিষিক্ত-প্রণয়ে সাধলাম সেই সাথে সুর আধা পাকাপাকি বাকি বিজলি বাতির কিনারায় নিয়ে দেখি, দেখা যায় কিনা? বোধে বাঁধি রাধিকারানি; কী জানি, কী চান্স, চলে চালাচালি হয়, পরিণয় নয়, পিঁপড়ার গুড় জমে বাড়িতে গদিতে, হিস্যা দুই আনা চার আনা ফিসফাস, কানাঘুষা, উপরি-ওপর হয়!